খতিব তাজুল ইসলাম:
কয়েকটি জিনিস প্রমাণিত হল ক’বছরে। শাপলা শিক্ষা দিয়েছে যে আমাদের ঘুরে দাঁড়াবার শক্তি নেই। স্বীকৃতির মুলা আমাদের শিক্ষা দিয়েছে এদেশে ভোটের অধিকার ছাড়া আলেম-উলামার আর বিশেষ কোনো অধিকার নেই। চামড়ার ধস নামিয়ে তারা প্রকারান্তে চ্যালেঞ্জই জানালো পারলে কিছু করো? কত অসহায় আমাদের অবস্থা। এমন এক মাইর এসে পড়লো যার কোন আওয়াজ নেই কিন্তু আছে হাহাকার। আছে বেদনা কষ্ট ও বিরহ!
চামড়ালব্ধ অর্থ কওমি মাদরাসার কত পার্সেন্ট কাজে আসে। আমি নিজে দু’টি মাদরাসর সাথে ওতপ্রোথভাবে জড়িত। হিসেব কষে দেখলাম একটিতে পুরো বৎসরের মাত্র ৭% এবং অন্য আরেকটি টাইটেল মাদরাসর মাত্র ৫-৬% ব্যয় ভার চলে। খোঁজ নিয়ে দেখলাম কোন কোন প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক খরচের মাত্র ২%। সর্বোইচ্চ ১০% এর উপরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। এই এতটুকু ব্যয় নির্বাহের জন্য কতটুকু যিল্লতি হাসিল করতে হয়? কত অপমান কত লাঞ্ছনা, কত বঞ্চনা?
আমরা কি একটিবার ভাববো?
ঐতিহ্যের অতীতকে একটুখানি খুঁজবো?
নিজেদের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠার চিন্তা করবো?
মনে রাখতে হবে দেশ রাষ্ট্র সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা মানে নিজে নিজে শৃংখলিত হওয়া। স্বীকৃতির লিপসায় কওমি শিক্ষার বারটা বাজতে পারে। কিন্তু স্বীকৃতি আমাদের চাই-ই। কিন্তু তা কীভাবে সম্ভব? আমাদের প্রয়োজন সংস্কার। কওমি সিলেবাস সংস্কার অপরিহার্য। স্বীকৃতি আবশ্যকীয়। দেশে চলমান স্বীকৃত দু’টি শিক্ষার যে কোন একটি ১০ম বা মেট্টি্ক পর্যন্ত গ্রহণ করলেই স্বীকৃতির পাঠ চুকে যায়। সংস্কার আমাদের স্বার্থে, নিজস্ব প্রয়োজনে। সংস্কার হলে ইলমি ইসতে’দাদ বাড়বে। আলেম উলামা আরো অগ্রসর হবেন।
এই সহজ সরল সমীকরণটাও যদি বুঝতে সমস্যা হয়, তাহলে আসমানের ফিরিস্তার জন্য অপেক্ষা করুন। তারা এসে জমিনের গলি গলি গিয়ে মাইক বাজিয়ে জানিয়ে দিয়ে দিবেন!
চামড়ার মূল্য ধসের সাথে সিলেবাস সংস্কার স্বীকৃতির সম্পর্ক কী ?একথা অনেকে জানতে চাইবেন। বস্তুতঃ অর্থই হলো প্রতিষ্ঠানের চালিকা শক্তি বা ইন্ধন। চুলায় লাকড়ি না থাকলে আগুন থাকা সত্বেও যেমন কিছু পাকানো যাবে না, তেমনি অর্থাভাবে যে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য। আমার পরিচিত অনেক বন্ধুবান্ধব অর্থাভাবের কথা বার বার বলেন। তাদেরকে বলি, সরকার স্বীকৃত শিক্ষাটুকু ছাত্রদের দেন না কেন? সন্তোষজনক জবাব পাই না।
আমি হিসেব করে দেখেছি অনেকের নিয়মিত বার্ষিক ব্যয় এক কোটির কাছাকাছি। কয়েক কোটি টাকার বিল্ডিং-এর কাজতো আছেই। মূলতঃ বর্তমান কওমি মাদরাসা কর্তৃপক্ষ লেখাপড়ার মানকে উন্নত করার চাইতে প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোর দিকে নজর ঢালেন বেশি। আসল কথা হলো সদিচ্ছার অভাব। নেক নিয়তের অভাব। সঠিক সিদ্ধান্তের অভাব।
আমার জানামতে দেশে হাতেগুনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আছে যারা চামড়া কালেকশনের জন্য ঈদের দিন বাড়ি বাড়ি ঘুরেন না।এলাকাবাসী নিজ উদ্যোগে মারাসায় এনে দিয়ে যায়। মানুষের ভেতর তারা যদি এই অনুভূতি জাগাতে পারলেন, অন্যরা কেন পারেন না! এই না পারার কারণটা কেউ তালাশ করতে চান না। সময় এসেছে তালাশ করার। আপনাকে সম্মানজনক সমাধানের দিকে যেতেই হবে।
দ্বিতীয় কথা হলো ২% থেকে ১০% অর্থের কারণে আমাদের নামের পিছনে চামড়াখোর কেন লিখাবো? আমার পরামর্শ হবে, দ্বীনী প্রতিষ্ঠান চামড়া কালেকশন করবে ঠিকই, তবে সেটা হবে সম্মানজনক পন্থায়। আর চামড়া লব্ধ অর্থ মাদরাসার গরিব ছাত্র ছাড়াও এলাকার গরীব, অসহায়, বিধবা, এতীম, বস্তির মানুষদের মাঝে ইনসাফ ভিত্তিক বণ্টন করুন। শহর ও গ্রামের গলিতে গলিতে গিয়ে ছাত্র উস্তাজগণ অসহায়দের নামের তালিকা তৈরি করুন। বণ্ঠনের সময় লোকাল মেম্বার, গ্রাম্য মুরব্বী, মহল্লার ইমাম সাহেবদের সাথে রাখুন। মাদরাসাগুলোর প্রতি মানুষের সিম্পেতি অনেক বেড়ে যাবে।
আপনি কি কখনো খোঁজ নিয়ে দেখেছেন জটরের জ্বালায় কত নারী ইজ্জত বিক্রি করছে? কত মানুষ ঈমান হারা হচ্ছে? আপনার এই খেদমত সমাজের মোড় ঘুরিয়ে দিবে। যে ২%-১০% ‘র জন্য আপমানিত হচ্ছিলেন, এখন থেকে আপনাকে তাঁরা সম্মানের চোখে দেখতে শুরু করবে। সাধারণ জনগণ আপনার প্রতিষ্ঠানের ১০০% জরুরত পুরা করে দেবার জন্য এক পায়ে খাড়া হয়ে যাবে। তাই দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে উম্মাহর আগামি বিনির্মাণের জন্য দয়া করে প্রয়োজনীয় সংস্কারে উদ্যোগী হবেন বলে আমি আশাবাদী।