শাইখ ওলীউল্লাহ আরমান:
সড়ক দুর্ঘটনায় কেন্দ্রীয় ছাত্র জমিয়তের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আবু সুফিয়ান নিজামের ইন্তেকাল ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন
নতুন জীবনের স্বপ্নে বিভোর আবু সুফিয়ান নামটি এখন কেবলই স্মৃতি
তিন বছর পূর্বে ফেসবুকে পরিচয়৷ মৌলভিবাজার জেলাধীন কমলগঞ্জ উপজেলা শাখা ছাত্র জমিয়তের দায়িত্বশীল৷ দু’বছর পূর্বে মেশকাত জামাতে পড়তে চলে এলো আমাদের ভাঙ্গাচোরা মাদরাসা জামিয়া আরাবিয়্যা দারুল উলূম নতুনবাগে৷
চোখে লাজুকতা, পদক্ষপে জড়তা, কথায় আঞ্চলিক সরলতা৷ মেশকাতের পর গতবছর দাওরায়ে হাদীসও সমাপ্ত করলো নতুনবাগ জামিয়া থেকেই৷
দুইবছরে অনেক স্মৃতি আর নিত্য নতুন সব অভিজ্ঞতা ভাণ্ডারে যুক্ত হলো৷ নেতা আর কর্মীর পরিচয় ছাপিয়ে গুরু-শিষ্য হয়ে গেলাম আমরা৷ প্রথম বছর ‘দেওবন্দ আন্দোলন:ইতিহাস, ঐতিহ্য, অবদান’ বইটির পর গতবছর ‘সুনানে ইবনে মাজাহ’র সবক পড়ালাম৷
বৃষ্টি শুরু হলে আমাদের সমন্বিত দৌড়ঝাঁপ, বিছানা-কিতাব সংরক্ষণে ছুটোছুটি, ছাত্র শিক্ষক সবাই একই রান্না খেয়ে দিন কাটানো, আরো কতো কি!!
নিজ পরিশ্রম, মেধা এবং যোগ্যতায় সাংগঠনিকভাবে প্রমোশন পেয়ে আবু সুফিয়ান এখন কেন্দ্রীয় ছাত্র জমিয়তের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছিলো৷
জমিয়তের আভ্যন্তরীণ ভালোমন্দ নিয়ে কতো আক্ষেপ, গুরুশিষ্যের কতো অভিমান, হাহাকার, দুয়েকবার পরস্পর আবেগভরা চোখের অশ্রুও ঝরিয়েছি৷
দাওরায়ে হাদীস সমাপ্ত করে এবছর ইফতা পড়ার পাশাপাশি সহপাঠী বন্ধুদের নিয়ে রামপুরা বনশ্রী এলাকায় ছোট্ট পরিসরে মাদরাসাও চালু করেছিলো৷
সর্বশেষ গত শনিবার ১১ সেপ্টেম্বর নতুনবাগ জামিয়ার ছাত্রদের আয়োজনে ইসলামী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দেখা৷ পুরো অনুষ্ঠান স্বার্থকতায় পৌঁছাতে শেষ পর্যন্ত ছিলো৷ দুয়েকবার মাইকে কথাও বলেছে৷ বিদায়ের পূর্বে আজ বাদজু্মা অনুষ্ঠিতব্য তার বিয়ের দাওয়াত দিলো৷ কিন্তু অন্য ব্যস্ততার কারণে দাওয়াত না রাখতে পারলেও মনখুলে দোয়া করেছিলাম৷
পরদিন আসরের পূর্বে রামপুরা ওয়াপদা রোডে চলতি পথে দেখা হলেও কথা বলার মওকা মেলেনি৷
আজ বাদজুমা তার বিয়ে হবার কথা ছিলো৷ দুপুর বারোটা থেকে অন এবং অফনেটে নানারকম সংবাদ পেলেও মনের কোণে টিমটিম করে আশার প্রদীপ জ্বলছিলো, হয়তো আবু সুফিয়ান বেঁচে যাবে আল্লাহর অসীম কৃপায়৷ কিন্তু জুমার ঠিক আগমুহূর্তে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে আবু সুফিয়ানের নিষ্প্রাণ দেহের পাশে দাড়িয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র জমিয়তের সম্পাদকমণ্ডলির অন্যতম সদস্য মাওলানা ইমতিয়াজ আহমদ যখন ভাঙ্গাকণ্ঠে বলল, “ওয়ালী উল্লাহ ভাই! আবু সুফিয়ান সহ ওর পরিবারে আরো সাত সদস্য ঢাকা-সিলেট হাইওয়েতে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মারা গেছে” একথা শোনার পর কিছু সময়ের জন্য আমি নিশ্চল হয়েছিলাম৷ চেহারার রং বদলাতে দেখে সামনে বসে থাকা আমার মেয়ে এবং ভায়ের মেয়ে আঁতকে উঠে জানতে চায়, “কি হলো?”
আমি আর কিছু ভাবতে পারছি না৷ চোখের সামনে ভেসে বেড়াচ্ছে, একটা দুর্ঘটনা, কিছু লোকের রক্ত-মাংস রাস্তায় পিষে যাওয়া, জীবনের অন্তিম নিঃশ্বাস নিতে নিতে হয়তো আবু সুফিয়ান নিজাম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে এই নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে অনন্তের পথে ছুটে চলেছে৷
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদের সকলকে জান্নাতে সুউচ্চ মাকাম দান করেন সেই প্রত্যাশায় আপনাদের সবার কাছে দোয়ার মিনতি রাখছি৷