চীনের হুয়াইশেং মসজিদ চীনের প্রাচীন মসজিদের একটি। মসজিদটি চীনের গুয়াংঝৌতে অবস্থিত। এটি ওই নগরের প্রধান মসজিদ। ওপরের ছবিটি সেই মসজিদেরই একটি পুরনো ছবি। এর পরের ছবিটি ২০০৭ সালের সংস্কারের পরের। ঐতিহাসিক এই মসজিদটি কয়েকবার সংস্কার করা হলেও চীনা নির্মাণ রীতি ও শৈলী অক্ষুন্ন রাখা হয়েছে।
ঐতিহাসিকদের তথ্যমতে মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতা হলেন হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর চাচা সাহাবি হজরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.)।
মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হয় ৬২৭ সালে, তার মানে এক হাজার তিন শ’ ঊননব্বই বছর আগে। এ সময় চীনে চলছিল তাং রাজবংশের রাজত্ব। বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর স্মরণে মসজিদটির নামকরণ করা হয় হুয়াইশেং (জ্ঞানী লোকটিকে স্মরণ)।
ইতিহাসের বিভিন্ন বাঁকে মসজিদটি পুনর্নির্মাণ করা হয়। তবে এর স্থাপত্যিক ঘরানায় চীনা প্রভাব থেকেছে সব সময়। হুয়াইশেং মসজিদ চীনের চারটি সুপরিচিত মসজিদের একটি। অপর তিনটি হচ্ছে- ইয়াংঝৌ ক্র্যান মসজিদ, কুয়ানঝৌ কিলিন মসজিদ ও হ্যাংঝৌ ফিনিক্স মসজিদ।
হুয়াইশেং মসজিদের আয়তন প্রায় দুই হাজার ৯৬৬ বর্গমিটার। ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ ভবন নিয়ে মসজিদটি গঠিত। এগুলো হচ্ছে ইমাম হল, ওয়াংয়ু চিলেকুঠুরি, ঢাকা করিডর, ইসলামি বইয়ের সংরক্ষণাগার, পাথরে খোদিত অভিলিখন প্যাভিলিয়ন ও আলোক বুরুজ।
মসজিদের আলোক বুরুজ এমন একটি স্থাপনা যা সিলিন্ডারের আকৃতির; এতে পাথর ও চুন-সুরকির নির্মাণকাজ রয়েছে। বুরুজের ভেতরে আছে সিঁড়িপথ। এমন ঘরানার বুরুজ চীনে আর নেই। এ বুরুজের কারণে মসজিদটির অপর নাম আলোক বুরুজ মসজিদ বা বাতিঘর মসজিদ।
এই বুরুজ বা মিনারটি ৩৬ ফুট উঁচু। আলোক বুরুজটি একসময় ঝুজিয়াং নদীতে চলাচলকারী নৌকার জন্য আলোকস্তম্ভ হিসেবে ব্যবহার হতো। হুয়াইশেং মসজিদ এখনো চালু আছে এবং গুয়াংঝৌর মুসলমান জনজীবনে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
মসজিদটি ১৩৫০ সালে পুনর্নির্মাণ করা হয় এবং ১৬৯৫ সালে এক অগ্নিকাণ্ডে ধ্বংস হয়ে গেলে এটিকে আবার নির্মাণ করা হয়।
উল্লেখ্য, যে সব দেশে ইসলামের শুরুর দিকে ইসলাম প্রবেশ করেছে তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চীন। চীনে ইসলামের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে সে দেশে বহু মসজিদও নির্মিত হয়েছে। দেশটিতে ৩০ হাজারের বেশি মসজিদ রয়েছে। এসব মসজিদে ইমামের সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে মিনার ও গম্বুজ শোভিত মসজিদগুলোর দিকে তাকিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে রয়েছেন বলে বিভ্রান্তও হতে পারেন।
সুত্র: বাংলাদেশ সময়