মুর্শেদ আলম : এখন যে বিশ্ব ব্যবস্থায় আমরা বাস করছি তা এক বছর পূর্বে এরুপ ছিলো না। আবার এখন যেরূপ আছে আগামীকাল সেরুপ থাকবে কি না তার নিশ্চয়তা নেই। আগে আলেমরা কিছু বললে মানুষ বিনা বাক্যে মেনে নিত। বিশেষ করে ধর্মীয় ক্ষেত্রে অনেক ছোটখাটো বিষয়ে আলেমদের কথামতো জনগণ অনেক সময় ভাগ হয়ে যেতো শুধুমাত্র তাদের কথার মর্যাদা দিতে। সময় এখন বদলে যাচ্ছে। শিক্ষার হার বাড়ার সাথে সাথে মানুষের মাঝে যুক্তিবোধ কাজ করছে প্রবলভাবে। মিলাদ-কিয়াম অথবা এ জাতীয় চিন্তার পক্ষে-বিপক্ষের বাহাস আগামী দিন জনগণের কাছে কোন আবেদন সৃষ্টি করবে না। তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব ও মতবাদ অধ্যয়ন মানুষের মনে প্রশ্নের সৃষ্টি করছে। তারা এখন সহজেই ইসলামের অর্থ দর্শনের জীবন্ত দিক নিয়ে প্রশ্ন করার প্রয়াস পাচ্ছে। নারী ,শ্রমিক ,সংখ্যালঘু ইত্যাদি ইস্যুতে সিরিয়াস ভাবে চ্যালেঞ্জ করছে ইসলাম পন্থীদের্। অর্থাৎ ভাবাবেগ দিয়ে তাড়িত হবার দিন শেষ হয়ে আসছে।
এমতাবস্থায় চ্যালেঞ্জ নেয়ার জন্য তৈরি হতে হবে আলেমদের্। বিশ্ব মানের সিলেবাস তৈরি করা ছাড়া এখন আর কোনো গত্যন্তর নেই। যা আমরা পূর্বে আলোচনা করেছি।
মৌলভীবাজার জেলায় মাস্টার্স কলেজ আছে মাত্র একটি। কামিল মাদরাসাও আমার জানামতে শুধুমাত্র একটি। অতচ শুধুমাত্র মৌলভীবাজার শহরের ভেতরেই টাইটেল মাদরাসা আছে ছয়টি! গোটা জেলায় ডজনেরও বেশি মাদরাসায় ৪/৬ জন ছাত্র নিয়ে দাওরার ক্লাস নেয়া হয়। এ ধরণের Environment থেকে কি ভাবে দক্ষ আলেম তৈরি করা সম্ভব? আপনি চিন্তা করুন ,যদি প্রতিটি জেলা শহরে একটিমাত্র মাদরাসায় দাওরা পড়ানোর অনুমোদন থাকত আর শ দেড়শ ছাত্র এক সাথে ক্লাস করতো তখন কেমন হতো শিক্ষার মান? কোনো ধরনের প্রতিযোগিতা হতো? অতএব আমরা সুপারিশ করতে পারি –
১. জেলা সদরে মাত্র একটি করে মাদরাসায় দাওরা ক্লাস পরিচালনার অনুমোদন দেয়া হোক।
২. প্রতি উপজেলায় কেবল মাত্র একটি করে মাদরাসায় ফজিলত পর্যন্ত ক্লাসের অনুমোদন দেয়া হোক।
৩. ইউনিয়ন পর্যায়ে সর্বোচ্চ একটি প্রতিষ্ঠান হোক HSC লেভেল এর্।
৪. গ্রাম পর্যায়ের মাদরাসা হোক SSC লেভেল পর্যন্ত।
৫. রাজধানী ও বিভাগীয় শহরের একাধিক প্রতিষ্ঠানের অনুমোদনের জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠান স্থাপন আইনের অনুরুপ আইন করা যেতে পারে।
এ ছাড়াও-
১. প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ উন্নয়নের প্রতি গুরুত্ত্বারুপ করা জরুরী। অফিসিয়াল ম্যানেজমেন্ট আধুনিক করা উচিত।
২. ধাপে ধাপে ক্লাস প্যাটার্নটিকে মাল্টিমিডিয়া করা হোক।
৩. মাদরাসা লাইব্রেরী সমূহকে সচল রাখা চাই।
৪. পরীক্ষা পদ্ধতি ,মানবন্টন এবং ফলাফল পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা জরুরি। পরীক্ষা পদ্ধতি সৃজনশীল করা উচিত। উপযুক্ত বিষয়ে তত্ত্বীয় ,ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষা রাখা চাই। শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন ধাপে প্রচলিত সমস্যার শরই সমাধানের বিষয়ে অন্তত ২০০ নম্বরের মাঠ গবেষণা রাখা যেতে পারে। এতে করে ছাত্ররা সমস্যার গভীরতা অনুধাবন করতে পারবে। সকল পরীক্ষার ফলাফল গ্রেডিং পদ্ধতিতে ইংরেজি ভাষায় প্রকাশ করা হোক। কারণ যে কোনো দেশে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে Shaw করানোর জন্য এর কোন বিকল্প নেই।
৫. বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ কর্তৃপক্ষের (NCRTA) ন্যায় শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে একটি কর্তৃপক্ষ করা যেতে পারে। যেখান থেকে উত্থীর্ণ প্রার্থীরাই কেবল কওমী মাদরাসায় শিক্ষকতা করতে পারবে।
৬. শিক্ষকতার একটি বয়স নির্ধারণ করে দেয়া যেতে পারে। এতে করে অতি বৃদ্ধ আলেম যারা বয়সের ভারে ন্যুজ তারা একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের পর অবসরে থাকবে।
৭. শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সিস্টেম চালু করা যেতে পারে।
উপরে যা কিছু বলা হলো ,স্বীকৃতি হোক বা না হোক শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তার প্রয়োজন আছে। না হয় এই ব্যবস্থা অপাঙ্ক্তেয় হওয়ার দায়ে অভিযুক্ত হবে আলেম সমাজ। কাজগুলো স্বল্প ,মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় বেফাক বাস্তবায়ন করতে পারে। স্বীকৃতির জন্য পাগলপ্রায় লোকদের একথা মনে রাখতে হবে যে ,এতদসংক্রান্ত সব কাজ করতে হবে বেফাকের মাধ্যমে। কেননা ,সংস্থাটি জাতীয় পর্যায়ে প্রতিনিধত্বশীল একমাত্র বৈধ কর্তৃপক্ষ। উল্লেখিত অধিকাংশ কাজ স্বীকৃতির পূর্বেই করা উচিত। এ লক্ষে বেফাক একটি প্রস্তাবনার আহ্বান করতে পারে। এর পর প্রাপ্ত প্রস্তাবনার উপর জাতীয় পর্যায়ের সেমিনারের আয়োজন করে মাদরাসা পর্যায়ে গণভোটের ব্যবস্থা করা হোক। প্রস্তাবনার উপর মতামত এবং বিকল্প প্রস্তাবনা জমা করে একটি চূড়ান্ত প্রস্তাবনা তৈরি করে জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে তা পাশ করে কার্যকর করা যেতে পারে।
২২-০৮-২০১৬ তারিখে প্রদত্ত লেখকের ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে ।