খতিব তাজুল ইসলাম:
২২ আগস্টের মিটিং এবং কিছু কথা
গত ২২শে আগস্ট হাটহাজারি মাদরাসায় কওমি সনদের স্বীকৃতির বিষয়ে বিস্তর আলোচনার জন্য এক জরুরি সভার আয়োজন করা হয়। হজরত আহমদ শফি দামাত বারাকাতুহুমের সভাপতিত্বে উপস্থিত উলামায়ে কেরাম যার তার মতামত পেশ করেন। বিশেষ করে আল্লামা জুনাইদ বাবু নগরী সাহেব বর্তমান শিক্ষনীতি ২০১৬ বাতিল না হলে কওমি সনদের স্বীকৃতি নেবোনা বলে মতামত ব্যক্ত করেন। তিনি আশংকা প্রকাশ করে বলেন যে, এই শিক্ষানীতি বাস্তবায়িত হলে দেশে ইসলামের নাম নিশানা আর বাকি থাকবেনা। হেফাজতে ইসলামের খলনায়ক মুফতি ফয়জুল্লাহ গং হজরত মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেন।অধিকাংশ উলামাগণের স্বীকৃতির পক্ষে মতামত আসায় আল্লামা আহমদ শফি দামাত বারাকাতুহুম আপাতঃ কোন কর্মসুচি বা বিবৃতি না দেয়ার সিদ্ধান্ত দেন। সাথে সাথে বলেন হজরত ফরিদ উদ্দিন মাসউস সাহেবের সাথে যোগাযোগ রেখে বিষয়কে গভীর পর্যবেক্ষণে রাখতে।
ধুম্রজাল সৃষ্টির পায়তারা, কার লাভ কার ক্ষতি!
অথচ আমরা দেখি হজরত আহমদ শফির নাম ভাংগিয়ে জামাত বিএনপির উচ্ছিষ্ট ভুগিরা অপপ্রচার চালাচ্ছে। বলছে যে, বিতর্কিত শিক্ষানীতি বাতিল না হলে কওমি সনদের স্বীকৃতি নেয়া যাবেনা।তারা গিয়েছিলো ধোকা দিয়ে হেফাজতের ঢাকার কামিটিকে বৈধতা দানের স্বাক্ষর নিতে। কিন্তু আল্লামা আহমদ শফি তাদের সেই ফাঁদে পাড়া দেননি। অবশেষে যেনতেন করে হেফাজতের আলোচান ঢেকে রেখে স্বীকৃতির কথাবার্তা বলে ফিরে আসেন।
আমাদের প্রশ্ন হলো কওমি সনদের সাথে বির্তকিত শিক্ষানীতির কি সম্পর্ক? হজরত বাবু নগরি বলছেন যে, কওমি সনদের স্বীকৃতির নামে সরকার উলামাদের পায়ে শেকল পরাতে চাইছে! ঠিক আছে আমরা কওমি সনদের স্বীকৃতি নিলাম না। বিতর্কিত শিক্ষানীতি বহাল থাকলো। এভাবে সময় অতিবাহিত হলে কার লাভ কার ক্ষতি? আমরা যে দুরদর্শিতার পরিচয় দেইনা এই বক্তব্যই তার প্রমাণ।
বিনয়ের সাথে জিজ্ঞাসা
আমরা বিনয়ের সাথে জিজ্ঞেস করতে চাই যে হজরাত উলামায়ে কেরাম! বিতর্কিত শিক্ষানীতিতে কি কি অসুবিধা আছে? কোথায় কোথায় জাতিকে ধংস করার বক্তব্য? ঈমান বিনাশের আর্টিকেল ? তা পরিষ্কার করে কেন সামনে নিয়ে আসা হয়না? যেহেতু ৯৫% বাংলাদেশের প্রজন্মরা স্কুল কলেজে পড়ে তাদেরকে ভ্রষ্ট নীতিমালার হাওলা করে শুধু বললাম যে না কওমি সনদের স্বীকৃতি নেবোনা। তাতে কি ঐ বিতর্কিত শিক্ষানীতি এমনি এমনি বাতিল হয়ে যাবে? কিংবা কওমি সনদের স্বীকৃতি না হলে উলামারা স্বীকৃতিহীন ভাবে স্বাধীন থেকে আরো বেশি কার্যকর ভুমিকা রাখতে পারবেন? যদি রাখতে পারেন তাহলে এখন কোন ভুমিকা রাখছেন না কেন? শুধু বলছেন যে, কওমি সনদের স্বীকৃতি নেবোনা। তাতে সরকারের কি লস হবে? দেশ ও জাতির কি ফায়দা হবে?
বিতর্কিত শিক্ষানীতর কি পরিণতি তাহলে?
বিগত দিনগুলোতে আমরা দেখেছি শুধু রাস্তায় সমাধান খোঁজা হয়েছে। রাস্তা থেকে সমাধান বের করে নেয়ার এমন সামর্থ্য কি আমাদের আছে? হেফাজতের শাপলা চত্বরের খলনায়করা ্আবার কলকাটি নাড়ছে বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারনা। নতুবা সুন্দর সমন্বিত প্রয়াস কেন চালানো হয়না? বিতর্কিত শিক্ষানীতি বাতিল এবং দেশও জাতি বান্ধব একটি শিক্ষানীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য কওমি উলামাদের পক্ষথেকে সরকারের সাথে আলোচনা পর্যালোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পরিবেশ তৈরির জন্য একটি কমিটি কেন গঠন করা হয়না? এভাবে এলোমেলো মিটিং নেবোনা মানিনা মার্কা কথার কোন মুল্য আছে? আপনারা ৫% ভাগের ঈমান ও আক্বীদা নিয়ে চিন্তিত! তাহলে ৯৫% আম জনতার ঈমান আক্বীদা রক্ষার কোন জিম্মাদারী সম্মানিত উলামায়ে কেরামের দায়িত্বে আসেনা?
শেকল পরার স্বীকৃতি এবং কওমি সিলেবাস সংস্কার
সনদের স্বীকৃতি হলে হাতে শেকল পরানো হবে। উলামারা আর হক্বের কথা আগের মতো করে বলতে পারবেন না।আচ্ছা আমরা স্বীকৃতির কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললাম। বর্তমান কওমি শিক্ষার অবস্থা কেমন তাহলে? আমরা কেন একক একটি বোর্ডের জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে পারিনা? অলিতে গলিতে টাইটেল মাদরাসার ছড়াছড়ি। লেখাপড়ার মান বলতে যার মন যা চায় সেভাবে পরিচালনা। আজকাল ১০% কওমির তালাবারা আরবি ্এবারত পড়তে পারেনা। সাধারণ জ্ঞানের বই না থাকার কারণে বৈশ্বিক জীবনে তারা পদে পদে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। আর্থিক পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। কোন প্রকার নিয়ম কানুন না থাকার কারণে এক মাদরাসায় নাহু ছরফ পড়ে অন্য মাদরাসায় গিয়ে ফজিলতের জামাতে ভর্তি হচ্ছে। উসতাজের চেয়ে ছাত্রের কদর বেশী। এমন পরিস্থিতিতে আজকাল ভাল মুফতি ভাল মুহাদ্দিসের আকাল দেখা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠান খোলার কোন ধরা বাধা কানুন না থাকার কারণে রাতারাতি মাটি থেকে আকাশে উড়া হচ্ছে। ইলম আমল জ্ঞানের অরাজকতা যেন চলছে।এহেন পরিস্থিতিতে অন্ততঃ পক্ষে তামাম উলামায়ে কেরাম এক হয়ে নিজেদের মধ্যে সংস্কার কার্যক্রম কি পরিচালনা করতে পারেন না? একক বোর্ড হলে কওমি মেধাবীদের ডেকে এনে সিলেবাসের পুর্ণমুল্যায়ন করে নতুন করে নিজেদের মধ্যে আলাপ ্অলোচনার মাধ্যমে সুদূরপসারী পরিকল্পনা নিলে স্বীকৃতি স্বীকৃতি করে গলা ফাটানোর তো জরুরত পড়তোনা। স্বীকৃতিও নিবেন না সংস্কারে হাত দিবেন না। সমস্যায় জর্জরিত তৃণমূল আলেমদের দুখঃ দুর্দশার কথাও শোনবেন না ইহা কেমন করে হয়?
পরিস্থিতির নাজুকতা অনুধাবনের চেষ্টা করুন
একদিকে জংগীবাদের বদমান। বিশ্বব্যাপী ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র। তাই যেভাবে আমাদের দ্বীনী দরসগাহর হেফাজতের দরকার তেমনি দরকার গোটা সমাজকে কুফরের চংগল থেকে রক্ষার কলা কৌশল। আর তা ফলপ্রসু করতে হলে বর্তমান জালিম সরকারের সাথে সম্মুখ বিরোধে না গিয়ে কৌশলে এগুতে হবে। এই কৌশলের প্রথম দাপ হবে অনতিবিলম্বে সকল কওমি মাদরাসাকে একক বোর্ডের ছায়াতলে নিয়ে আসুন। ২য় দাপ হবে প্রয়োজনীয় সংস্কার। কওমি সিলেবাসে কার্যকর আরবি বাংলা বাংলা ইংরেজী অংক বিজ্ঞানের অনুপ্রবেশ। ১০ম পর্যন্ত এভাবেই চলুক। যারা চায় দাখিল মেট্রিক দিক কারিগরি শিক্ষা গ্রহন করুক। ১০মের পর চলবে শুধু কওমি আরবির দারর্স। প্রতিটি মাদরাসা একটা কাঠামোর ভিতর চলে আসুক। নিজেদের মধ্যে ঐক্য সহমর্মিতা জানাজানি খুব দরকার। ময়দানের ভ্রষ্ট রাজনৈতিক পেঁচাল থেকে দ্বীনি এই সমস্ত প্রতিষ্ঠান গুলোকে হেফাজত করুন।
সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে তাই আশু উদ্যোগ গ্রহনের জন্য সম্মানিত উলামায়ে কেরামের দরবারে জোর দাবি জানাচ্ছি।