শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ বিকাল ৫:০২
Home / ইতিহাস ঐতিহ্য / ৭ মার্চের ভাষণ শুরু হয়েছিল যে মাওলানার কোরআন তেলাওয়াতে

৭ মার্চের ভাষণ শুরু হয়েছিল যে মাওলানার কোরআন তেলাওয়াতে

বঙ্গবন্ধুর অন্য জীবন- পর্ব ৬

Bangobandhu6সৈয়দ আনোয়ার আবদুল্লাহ : বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে এই মাওলানা জড়িয়ে পড়েছিলেন আমাদের স্বাধীকার আন্দোলনে। বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা বাস্তবায়ন আন্দোলনের এক লড়াকু বীর। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার অমর বক্তৃতার আগ মুহূর্তে তিনি কোরআনে করিম তেলাওয়াত করেন। তার পর ঐতিহাসিক সমাবেশ ও ভাষণ শুরু করেছিলেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। ২৫ মার্চ কালো রাতে একাই ছিলেন আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। সাড়া দেশ থেকে নেতা কর্মীরা করণীয় জানতে পার্টি অফিসে কল দিচ্ছিল। আর এই মাওলানা মরণপন লড়াইয়ের নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তারপর কলকাতাতে ট্রেনিং নিতে চলে যান। সেখানে স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রে শব্দ সৈনিক হিসাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করেন। ৭১-এর মুক্তি সংগ্রামের অনেক ঘটনার স্বাক্ষী এই জীবন্ত কিংবদন্তি মাওলানা শেখ উবায়দুল্লাহ বিন সাঈদ জালালাবাদী।

৬ দফা আন্দোলন নিয়ে সারাদেশ তখন টালমটাল। এমনি সময় সিলেটে এলেন বঙ্গবন্ধু। জালালাবাদীর সাথে পরিচয় হলো। বঙ্গবন্ধু বললেন। মাওলানা স্বাধীকার আন্দোলনের পক্ষে আলেমদের জনমত গড়ে তুলুন। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন। তারপরের ইতিহাস একটি কিংবদন্তির গল্পের মতো। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে, সাহচর্যে মাওলানা
আব্দুল্লাহ জালালাবাদী হয়েওঠেন মুক্তিযুদ্ধের এক অসামান্য অবদান সৃষ্টিকারী বীর।

৬ দফা আন্দোলনের সময় মাওলানা ঢাকাতে পা রাখেন। বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বার বাড়িতে যান। বঙ্গবন্ধু জিজ্ঞাসা করেন মাওলানা, ৬ দফায় ইসলাম বিরোধী কোন কিছু আছে কি না? প্রতিউত্তরে তিনি বলেন, আপনি ৬ দফা কর্মসূচির মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানেরর বাঙ্গালিদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের দাবি জানিয়েছেন, এটা ইসলামের পরিপন্থি নয়।, বরং সহায়ক। এরপর বঙ্গবন্ধুর আহবানে ইসলামের দৃষ্টিতে ৬ দফা কর্মসূচি যে ন্যায্য ও সঙ্গত তা জনমনে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই “বন্ধুবর মাওলানা অলিউর রহমান খোরাসানী’কে নিয়ে “আওয়ামী ওলামা পাটি” নামে ঐতিহাসিক সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। যে সংগঠনের ব্যাপক তৎপরতায় এদেশের বহু দীনদার মানুষ ও আলেম-উলামা ৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামীলীগের পক্ষে ঝাপিয়ে পরেন।

আমাদের মুক্তিসংগ্রামে সবার অবদান সমান ছিল না এ কথা ধ্রুব সত্য। এ ক্ষেত্রে আলেমসমাজের অবদান কিংবা অংশগ্রহণ আশানুরূপ ছিল না এটা স্বীকার করে নিতেও কারো কুন্ঠিত হওয়ার কথা নয়। কিন্তু এই সীমিত অবদানকে তুচ্ছ করা এবং তাদের সংশ্লিষ্টতাকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বসা, বড় ধরনের অবিচার। এটা জলজ্যান্ত কোনো সত্যকে গলা টিপে হত্যা করারই নামান্তর। একথা কে না জানে, আলেম মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা বিশাল না হলেও নগণ্য নয়। এদেশের আনাচে-কানাচে এখনো অনেক আলেম খুঁজে পাওয়া যায় যারা নিজেদের জীবনবাজি রেখে সরাসরি সম্মুখসমরে অংশগ্রহণ করেছেন। দেশমাতৃকার টানে মুক্তিসেনাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছেন হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে।
‘রাত তখন পৌনে একটা। শুরু হলো প্রচণ্ড গোলাগুলি। আকাশ রক্ত বর্ণ হয়ে উঠছে আগুনের লেলিহার শিখায়। ঘন ঘন ফাটছে কামানের শেল। পাকিস্তানী ফৌজ অতর্কিত হানা দিয়েছে আমাদের ক্যাম্পে। মাথার ওপর দিয়ে সাঁই সাঁই ছুটছে গুলি। আমরা টিলার গর্তে ঢুকে, গাছের আড়ালে থেকে গড়ে তুললাম তুমুল প্রতিরোধ। ঘন্টা দেড়েকের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে আমরা সফল হলাম। ইতোমধ্যে তাদের কয়েকজন খতমও হয়ে গেলো।’ জালালাবাদী স্মৃতিকথায় উঠে এসেছে উদ্ধৃতাংশটি। তিনি সম্মুখসমরে যুদ্ধ চালিয়ে গেছেন নয় মাস। তার সহযোগী হিসেবে ছিলেন একাধিক আলেম।

তথ্য সুত্রঃ আলেম মুক্তিযোদ্ধার খোজে, শাকের হোসেন শিবলিমী।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, বেলাল মুহাম্মদ।

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...