কমাশিসা নিজস্ব প্রতিনিধি, সিলেট: ১৬ আগস্ট ২০১৬ মঙ্গলবার। বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ সিলেট জেলা কমিটি গঠনের জন্য জেলা প্রতিনিধিদের নিয়ে সিলেট জেলাপরিষদ মিলনায়তনে এক গুরুত্বপুর্ণ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১১ টায় শাইখুল হাদিস আল্লামা আব্দুস সাত্তার হেমুর সভাপতিত্বে মাওঃ মুসলেহ উদ্দীন রাজু সাহেব জাদায়ে গহরপুরী রহ.-র পরিচালনায় পবিত্র কুরআনুল করিম থেকে তেলাওয়াতের মাধ্যমে সভার কর্যক্রম শুরু হয়। তেলাওয়াত করেন সিলেট দারুস সালাম খাসদবির মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা হাফিজ মন্জুর আহমদ ৷ প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বেফাকের মহাসচিব মাওঃ আব্দুল জব্বার জাহানাবাদী ৷ বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বেফাকের সহকারী মহাপরিচালক মাওঃ অধ্যাপক যুবায়ের আহমদ চৌধুরী, মাওঃ মুফতি শফিকুর রাহমান কাজির বাজার, মাওলানা মজদুদ্দিন সাহেব ভার্তখলা, মাওঃ শায়খ হাবিবুর রাহমান ফারুক সাহেব বিশ্বনাথ মোহাম্মদিয়া, মাওঃ আব্দুস সালাম হেতিমগনজী, মাওঃ আবুল হাসান জকিগন্জ লামার গ্রামী ৷ মাওঃ মুফতি ফারুক আহমদ আমতৈলীম, মাওঃ নুরুল হক শাহজীর গাও, মাওঃ আঃ খালিক দারুসসালাম, মাওঃ কাজী মুহাম্মাদ হানিফ ঢাকা, মাওঃ জুলফিকার মাহমুদী সহ সিলেট জেলার বিভিন্ন মাদরাসার মুহতামিম, নাজিমে তা’লিমাত ও শিক্ষক প্রতিনিধি বৃন্দ ৷
স্বাগত বক্তব্য প্রধান করেন বেফাকের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল জব্বার জাহানাবদি। বক্তব্যে তিনি উপমহাদেশের ইসলামী শিক্ষার ইতিহাস বর্ননা করেন ৷ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে আমরা কওমি শিক্ষার স্বীকৃতি চাই না।’
তার এ বক্তব্য দেওয়ার সাথে সাথে উপস্থিত আলেমদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভ দেখা যায় ৷ প্রধান অতিথির স্বাগত বক্তব্যের পরপর চলে প্রশ্নোত্তর পর্ব ৷ প্রশ্নোত্তর পর্বে উপস্থিত আলেমগণ বেফাকের মহাসচিবকে প্রশ্নবানে জর্জরিত করেন৷ মাওঃ নাইম আহমদ প্রশ্ন করেন, আজ আপনি বললেন স্বীকৃতি চাই না অথচ কওমির হাজার হাজার উলামা তুলাবা নিয়ে শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ.-এর নেতৃত্বে আমরা কেন আন্দোলন করলাম? বেফাক কর্তৃপক্ষ দেখা যায় একদিকে মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ সাহেবের সাথে যোগাযোগ রাখে। বিভিন্ন বৈঠকে তাকে আহব্বান করে সলাপরামর্শ করে এবং সরকারের মনোভাব জানার চেষ্টার করে। অন্যদিকে মাঠে ময়দানে মহাসচিব সাহেব বলে বেড়ান স্বীকৃতির প্রয়োজন নেই। বেফাকের এই দ্বিমুখী নীতি কেন? এ নিয়ে তুমুল হৈচৈ হয়। অনেকে প্রচণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেন। নেতৃস্থানীয় আলেমগণ বেফাক কর্তৃপক্ষকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন যে, যদি বেফাক স্বীকৃতির বিষয়ে কার্যকর কোন উদ্যোগ গ্রহণ না করে তাহলে বৃহত্তর সিলেটবাসিকে নিয়ে ভিন্ন চিন্তা করতে তারা বাধ্য হবেন।
মাঠ পর্যায়ে তরুণ মেধাবী আলেমে দীন শিক্ষক ও শিক্ষাসচিবদের কঠোর মনোভাব দেখে বেফাক কর্তৃপক্ষ উপস্থিত সময় তাদের দাবী অনুযায়ী :
-ফার্সি উর্দুকে অবিলম্বে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব গ্রহণ করেন।
-১০ম পর্যন্ত মেট্রিক সমমানের সিলেবাস প্রণয়নও বাস্তবায়নের তড়িৎ উদ্যোগ গ্রহণের তাকিদ।
-স্বীকৃতির জন্য যথাযথ উদ্যোগ গ্রহন ও বাস্তবায়ন।
– বাংলা আরবি ইংরেজীকে বিশেষ গুরুত্ব প্রদানের দাবী গৃহিত হয়।
-একক কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড গঠনের জন্য বাস্তব ্উদ্যোগ গ্রহনের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
-১০ম বা মেট্রিকের সমমান বজায় রেখে কওমি ছাত্রদের সরকারি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে।
সাথে সাথে মাওলানা মুসলেহ উদ্দীন রাজু সাহেব বেফাকের সাংগঠনিক কার্জক্রম নিয়েও প্রশ্ন তোলেন৷ জনাব মুসলেহ উদ্দীন রাজু এক পর্যায়ে বলেন, আমাকে বেফাকের মূল কমিঠির সাংগঠনিক সম্পাদক বানানো হয়েছে অথচ বছরের পর বছর অতিবাহিত হলো, সাংগঠনিক পদ কী তাও বুঝি নাই, আমাকে আমার পদ ও দায়িত্ব আজ পর্যন্ত বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি ৷ ক্ষোভের এক পর্যায়ে মুসলেহ উদ্দীন রাজু সাহেব বলেন, গত কয়েকদিন আগেও ঢাকাতে বেফাক উলামা সম্মেলন করে, যেখানে উপস্থিত ছিলেন বেফাকের মহাসচিব সহ আল্লামা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ দাঃবাঃ। এখানে স্বীকৃতির ব্যাপারে আলোচনা হলো। ফরিদ উদ্দীন মাসউদকে এ ব্যাপারে সরকারের সাথে আলোচনা করতে বলা হলো ৷ আজ যখন ফরিদ উদ্দীন মাসউদ আলোচনা করে সরকারের সম্মতি আদায় করলেন সেখানে বেফাকের মহাসচিব সাহেব কেন এখানে এসে বিপরীত ঘোষণা দিলেন যে, আমরা স্বৃকীতি চাই না ! কেন এই দোদুল্যমনতা ? কাকে খুশি করার জন্য?
উপস্থিত ডেলিগেট আলেমগণের সকলেই একই মত পোষণ করেন। বিষ্ফোরণন্মুখ পরিস্থিতি সামাল দিতে শেষ পর্যন্ত উপস্থিত আলেম-উলামার উদ্যেশ্যে বক্তব্য প্রদান করেন অধ্যাপক যুবায়ের চৌধুরী ৷ তিনি আলোচনার সারসংক্ষেপ হিসাবে বলেন- আমরা কওমির স্বকীয়তা বজায় রেখে শুধু দাওরা হাদিসকে এমএ (মাস্টার্স)- মান দিলে স্বীকৃতি নেবো । প্রশ্নোত্তর পর্বে শিক্ষাবর্ষ আরবির বদলে ইংরেজী মাস জানুয়ারী থেকে শুরু করারও প্রস্তাব পেশ করা হয় ৷ টেন বা ১০ম পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় শিক্ষার সাথে সামঞ্জস্য রেখে সিলেবাস প্রণয়নের জোরালো দাবী জানানো হয়। প্রাথমিক সমাপনি পরিক্ষা মাদরাসার ছাত্ররা যাতে স্কুল বোর্ডে দিতে পারে সে ব্যবস্থাও নাকি প্রক্রিয়াদিন আছে বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক যুবায়ের চৌধুরী।বেফাক চেয়েছিলো তাদের একটি পকেট কমিটি ঘোষণা দিতে।কিন্তু উপস্থিতিদের জোরালো ভূমিকার কারণে তা ভেস্তে যায়।
পরিশেষে প্রতিনিধিদের সর্বসম্মতিক্রমে তরুণ আলেমে দীন, সাহেবজাদায়ে গহরপুরির যোগ্য উত্তরসুরী মাওঃ মুসলেহ উদ্দীন রাজুকে সভাপতি ও মাওঃ মুফতি আবুল হাসানকে সম্পাদক করে জেলা কমিটি গঠন করা হয় ৷