শনিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ দুপুর ১:০৬
Home / আকাবির-আসলাফ / বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল, একদিন তিনি মাওলানা তর্কবাগীশের মতো হবেন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল, একদিন তিনি মাওলানা তর্কবাগীশের মতো হবেন

বঙ্গবন্ধুর অন্যজীবন-পর্ব ৩

সৈয়দ আনোয়ার আবদুল্লাহ:
13962668_138925656548755_74324739690243067_nদুজন মাওলানা আমাদের জাতি গঠনের ইতিহাসে কিংবদন্তি হয়ে আছেন। বঙ্গালির প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রাম তাদের রয়েছ বলিষ্ঠ অবদান। এই দুজনই আবার বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক গুরু। এর একজন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, অন্যজন মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ।

মাওলানা তর্কবাগীশ ছিলেন একজন আজীবন সংগ্রামী মানুষ। তর্কবাগীশ একাধারে জাতীয় নেতা, স্বাধীনতা সংগ্রামের রক্তসিড়ি সলঙ্গা বিদ্রোহের মহানায়ক, ঋণসালিশী বোর্ড প্রবতর্নের পথিকৃৎ, বর্গা আন্দোলনের অবিসংবাদিত কান্ডারী, মহান ভাষা আন্দোলনের প্রাণপুরুষ, ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বৃটিশবিরোধী আন্দোলনের বীরযোদ্ধা, দেশ ও জাতির প্রয়োজনে অকুতোভয় যোদ্ধা এবং আজীবন গণমানুষের নেতা। তিনিই প্রথম পাকিস্তান পার্লামেন্টে বাংলায় বক্তৃতাকারী বীর। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে প্রকাশ্য প্রতিবাদকারী। তিনি ছিলেন অনলবর্ষী বক্তা। তেজস্বী ছিল তার ভাষণ। যে ভাষণের সীমাহীন ভক্ত ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি স্বপ্ন দেখতেন তিনি একদিন, তর্কবাগীশের মতো বক্তৃতার মন্ত্রে বাঙ্গালি জাতির সুপ্তি ভাঙ্গাবেন।

১৯৫৬-২৯৬৭ সাল পর্যন্ত একটানা দশ বছর মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কাবগীশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমান তখন, যুগ্ম সম্পাদক, পরে সাধারন সম্পাদকের দ্বায়িত্ব পালন করেন তর্কবাগীশের সাথে। শেখ মুজিবুর রহমানের মানস গঠনে তর্কবাগীশের প্রতক্ষ্য প্রভাব ছিল। তার রাজনৈতিক দর্শন, বক্তৃতার ষ্টাইল, মানুষের প্রতি ভালবাসা, নিসার্থ দেশপ্রেম সবই ছিল তর্কবাগীশের প্রভাবে আচ্ছন্ন। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের বড় একটা অংশ কেটেছে এই মাওলানার সান্নিধ্যে। তিনি মাওলানাকে কাছে তাকে দেখেছিলেন। আর মাওলানা প্রিয় সহকর্মী, প্রিয় শিষ্যকে কাছে থেকে গড়ে তুলে ছিলেন। দুজনের জীবনের নানন স্মৃতি কথা কিংবদন্তির ন্যায় ছড়িয়ে আছে, জড়িয়ে আছে ইতিহাসের পরতে পরতে।

এমনি একটি স্মৃতিকথা নিচে তুলে ধরা হল,
‘বঙ্গবন্ধু আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন। উনি আমাকে আগে থেকেই চেনেন। আমাদের দিনাজপুরের বাসায় দেখা হয়েছে। মাওলানা তর্কবাগিশ আমার নাম জিজ্ঞেস করলেন। নাম বললাম। আব্বা আমাকে বললেন, উনি তোমার মাওলানা তর্কবাগিশ চাচা।’ এরপর সেই ৩৬ মাইলের বর্ণনা দেন মুজতবা আহমেদ মুরশেদ, ‘ঠাকুরগাঁ থেকে ৩৬ মাইল পথভেঙে গাড়ি ছুটছে। বঙ্গবন্ধু গুনগুন করেরবীন্দ্র সঙ্গীতের সুর ভাঁজছেন। মাইল কয়েকপরপরই জনতার ঢেউ। বঙ্গবন্ধুকে ভাষণ দিতেই হবে। গাড়ি থামছে এবং বঙ্গবন্ধু সাদা হ্যাণ্ড মাইকহাতে মিনিট তিন চারেক করে ভাষণ দিচ্ছেন। আবার ছুট।’‘ চলন্ত গাড়িতে বঙ্গবন্ধু, আব্বা, মাওলানা তর্কবাগিশ মাঝে মাঝেই নির্বাচন বিষয়ে কিছু কিছু কথা বিনিময় করছেন।

এমন সময় হঠাৎ প্রসঙ্গ বদলে মাওলানা তর্কবাগিশ আমাকে প্রশ্ন করলেন, বড় হয়ে কি হতে চাও?একমুহূর্তে আমার হয়ে বঙ্গবন্ধু উত্তর দিলেন, ও তর্কবাগিশ হবে।’ আমি বাদে উনারা একসাথে হোহো করে দিলখোলা হাসি হেসে নিলেন। তর্কবাগীশ বললেন, মুজিব তুমি সবাইকে তর্কবাগীশ বানিয়ে দিবে নাকি। আব্বাকে বললেন, সে নিজেও তর্কবাগীশ হতে চায়। মওলানা তর্কবাগিশ বঙ্গবন্ধুর টোকাটুকু উপভোগ করেছেন।’‘বিষ্ময়কর এই যে, পরবতী সময়ে আমি জাতীয়পর্যায়ে বিতার্কিক হয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক সংঘের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি।উনারা কেউ নেই আজ। আমার বুকের ভেতর আছে কেবল প্রতিধ্বনী।’-(বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ৩৬ মাইল মুজতবা আহমেদ মুরশেদ১৫ আগষ্ট ২০১৫। চ্যনেল আই)

মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশেরর নাতি সৈয়দ হাদী তর্কবাগীশ একুশের সংকলনে “অগ্নীগর্ভে একুশ” প্রবন্ধে লিখেছেন “শেখ মুজিবুর রহমান যেদিন প্রথম তর্কবাগীশের সাথে দেখা হয় সেদিন বলেছিলেন, নেতা আমি আপনার মতো বক্তা হতে চাই।” হা একদিন তিনি এমন এক বক্তৃতা দিলেন, তর্কাবগীশের বক্তৃতা হার মানাল। তিনি বঙ্গবন্ধুতে পররিণত হলেন। তার সেই বক্তৃতা তাকে তর্কবাগীশ হবার স্বপ্ন কেবল নয় তার চেয়ে অনেক উঁচুতে পৌছে দিয়েছিল।

৭মার্চের বক্তৃতার স্টাইলে তর্কবাগীশের প্রভাব ছিল। তিনি গুরুর মতো এক কিংবদন্তির ভাষণে উদ্ভেলিত করলেন পুরো জাতিকে। সেই ৭ই মার্চের অমর ভাষণ পৃথিবীর সেরা বক্তৃতার একটা। এটি শুধু কোন বক্তৃতা নয়। এক অমর কবিতা। এক অমর ইতিহাস।

কবির ভাষায়, একটি কবিতা লেখা হবে তার জন্য কি দারুণ অপেক্ষা আর উত্তেজনা নিয়ে লক্ষ লক্ষ উন্মত্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছে ভোর থেকে, জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে: ‘কখন আসবে কবি’?….শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে রবীন্দ্রনাথের মত দৃপ্ত পায়ে হেঁটে অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন…. কে রোধে তাঁহার বজ্রকণ্ঠ বাণী? গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর-কবিতাখানি: ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের।”

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কে সেই আনাস মাদানি? কি তার পরিচয়?

কমাশিসা ডেস্ক: ১৬ সেপ্টেম্বের ২০২০ইং ঘটনার সুত্রপাত। বাংলাদেশের প্রাচিনতম ও বৃহৎ কওমি মাদ্রাসা দারুল উলুম ...