বৃহস্পতিবার, ১০ই অক্টোবর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ দুপুর ১২:৫৮
Home / আকাবির-আসলাফ / একজন জাহানাবাদী
বেফাক মহাসচিব আল্লামা আবদুল জব্বার জাহানাবাদী

একজন জাহানাবাদী

আকাবির আসলাফ ৩৬

বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের (বেফাক) মহাসচিব, বর্ষিয়ান আলেমদ্বীন, লেখক, গবেষক, কওমি অঙ্গনের ক্ষণজন্মা মনীষী মাওলানা আবদুল জাব্বার জাহানাবাদী রাহ. গত শুক্রবার সকাল ৯.৫৫ মিনিটে ইন্তেকাল করেন। তার মৃত্যুতে গোটা বাংলাদেশের আলেমসমাজ আজ অভিভাবক শূন্যতার কথা বলছেন। একটি সুবিশাল ছায়াবৃক্ষের বিদায়ে আলেম ত্বোলাবাদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তিনি ছিলেন উম্মাহর কাজ পাগল এক কর্মবীর মনীষা।


্র অসুস্থ ছিলেন
১৮ নভেম্বর শুক্রবার সকাল ৯.৫৫ মিনিটে ঢাকার মগবাজারের হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। মাওলানা আব্দুল জাব্বার বেশ কিছুদিন ধরে কিডনি সমস্যা, হার্ট ও শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে ভুগছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে তার স্বাস্থ্যের অবস্থা মারাত্মক অবনতি ঘটে। এরপর থেকে তিনি চিকিৎসকের নিবিড় পর্যবেক্ষণে ছিলেন। সম্প্রতি কওমি সনদের সরকারী ইস্যু নিয়ে নানান মূখি রাজনৈতিক চাপে তিনি অনেকটা ভেঙ্গে পরেছিলেন। এতে করে ক্রমশ তিনি শারিরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন।

কওমির জন্য একটি জীবন দিয়েছেন
অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হবার পর থেকে ডাক্তারগণ তার উন্নত চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা করার জন্য ও বিদেশ প্রেরণের জন্য বলছিল।
আজীবন কওমি মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতির জন্য তিনি নিরলস কাজ করেছেন। পাগলের মতো কওমি শিক্ষা সংস্কার ও আধুনিকরণে তার ঐতিহাসিক ভুমিকা জাতী আজীবন স্মরণ করতে হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় সরকারের পক্ষ থেকে বা বেফাক কিংবা আলেমদের পক্ষ থেকে এই সহজ-সরল মুখলেস শিক্ষাবিদ আলেমের উন্নত চিকিৎসার জন্য কোন বড় পদক্ষেপ নেয়া হয় নি। স্বরাষ্টমন্ত্রীর কয়েকদিন পূর্বে তাকে হাসপাতালে দেখে আসলেও তার উন্নত চিকিৎসার জন্য কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করা ছিল দুঃখজনক। আজীবন কওমি শিক্ষাব্যবস্থা ও বেফাকের জন্য কাজ করতে গিয়ে তিনি ব্যক্তিগত কোন সহায়সম্পত্তি অর্জন করতে পারেন নি। খুব কষ্টে চলতো তার অভাবের সংসার।

ঠিকানাহীন ছাত্রসমাজ
বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার মহাসচিব আল্লামা আবদু্ল জাব্বার জাহানাবাদী ছিলেন এদেশের কওমি শিক্ষার্থীদের আশা ভরসা ও সুখ দুঃখের ঠিকানা। কাজপাগল ও চিন্তাশীল একজন মানুষ সারাক্ষণ ভাবতেন কেবল শিক্ষা আর শিক্ষার্থীদের উন্নয়ন নিয়ে। আলোচনা-সমালোচনা শেষে তার কাছে যেয়ে অন্তত মনের কথা কিংবা পরিকল্পনার কথাটা বলতে পাররতেন যে কেউ নিসংকোচে। ব্যস্ততাকে পাশে রেখে, মান-অভিমান ভুলে তিনিও কথাগুলো শুনতেন পরম দরদের সাথে। যে কেউ তার সাথে সহজে দেখা করতে পারতেন, মিশতে পারতেন, প্রাণখুলে কথা বলতে পারতেন। যে কোন পরার্মশ দিতে ও গ্রহণ করতে পারতেন। সেই পরম দরদী ঠিকানাটাও আজ হারিয়ে গেছে।
হাজার হাজার মুহাদ্দিস মুফাসসির মুফতি ও মাওলানাদের সনদের সত্যায়নে স্বাক্ষরকারী কর্মবীর এই মানুষটি মহান প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়েছেন।

যেভাবে বেড়ে উঠা
মাওলানা আবদুল জাব্বার জাহানাবাদী ১৯৩৭ সালের আগস্টে বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানাধীন সহবতকাঠি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম শেখ নাসিমুদ্দীন। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে মাওলানা আবদুল জাব্বার দ্বিতীয়। মাওলানা আবদুল জাব্বারের একজন বোনও আছেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি ৩ মেয়ের জনক।

শিক্ষাজীবন
আবদুল জাব্বার ঢাকার বড় কাটারা মাদরাসাসহ একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাজীবন শেষ করেন। তার শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন, মাওলানা মোহাম্মদ উল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর, মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী, শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক, ফরজী হুজুর প্রমূখ মনীষাগণ। তাঁদের হাতেগড়া ছাত্র মাওলানা আব্দুল জব্বার জাহানাবাদী।

বর্ণাঢ্য কর্মজীবন
কর্মজীবনে তিনি গৌরবময় অধ্যায় রচনা করেছেন বেফাকুল মাদারিসিলি আরাবিয়ায় বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে। সর্বশেষ তিনি ত্রিশ বছরের বেশি সময় ধরে কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি বাংলাদাশের অনেক মাদরাসা প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার সঙ্গে জড়িত। বিভিন্ন ইসলামি সংগঠন ও আন্দোলনে তার ভূমিকা অসামান্য।
কওমি মাদরাসা শিক্ষা ব্যাবস্থার উন্নায়নে তার ঐতিহাসিক, অসামান্য অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

কওমি সনদের স্বীকৃতির পুরোধা
তার চিন্তা চেতনা, ধ্যান -জ্ঞান ছিল কওমি মাদরাসার উন্নতি , অগ্রগতি ও সাফল্য। কওমি মাদরাসা শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি নিয়ে অনেক সময় অনেক জন কাজ করেছেন, কিন্তু সর্ব প্রথম বেফাকের সাবেক সভাপতি আল্লামা নুরুদ্দীন গহরপুরী রহ.-এর নির্দেশে তিনি কাজ শুরু করেন। কওমি মাদরাসার স্ব্রীকৃতি আমরা কেন চাই, নামে তিনি একটি পুস্তকও রচনা করেন। সরকারি দপ্তরে তিনিই সর্বপ্রথম কাগজপত্র দাখিল করেন। বর্তমান প্রস্তাবিত কওমি সনদের সিলেবাস এটা তার হাতেই তৈরি। কওমি সনদের সরকারি স্বীকৃতির তিনিই ছিলেন প্রথম পুরোধা ব্যক্তিত্ব।

লেখালেখি ও গবেষণা
লেখক হিসেবেও তার বেশ সুনাম রয়েছে। কওমি মাদরাসার পাঠ্যবই সম্পাদনায় তিনি কালজয়ী ভূমিকা পালন করেছেন। অসংখ্য পাঠ্যবইয়ে তার রচিত ছড়া কবিতা গল্প ও প্রবন্ধ-নিবন্ধ রয়েছে। জাহানাবাদীর লিখিত গ্রন্থের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো, ১. ইসলাম ও আধুনিক প্রযুক্তি ২. মাদরাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ৩. ভারত উপমহাদেশে মুসলিম শাসন ও তাদের গৌরবময় ইতিহাস ৪. ইসলামে নারীর অধিকার ও পাশ্চাত্যের অধিকার বঞ্চিতা লাঞ্ছিতা নারী ইত্যাদি।

তিনি তার কর্মের মাধ্যমে অনন্তকাল বেচে থাকবেন কওম আর কওমির মাঝে। দয়াময়, তোমার এই প্রিয় বান্দা, আমাদের এই অভাবাবককে তুমি ক্ষমা করে দিয়ে জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান কর। আমিন।

লেখক : তরুণ কবি ও গবেষক

আরও পড়ুন : আকাবির আসলাফ ৩৫। শায়খুল হাদীস আল্লামা মুজ্জাম্মিল শায়খে বায়মপুরী রাহ.

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...