বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ৮:৪০
Home / প্রতিদিন / ‘আইএসে তরুণদের যোগ দেওয়ার সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক নেই’
আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

‘আইএসে তরুণদের যোগ দেওয়ার সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক নেই’

আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ব্যাপারটা আসলে আমার জন্য বলাও বেশ কঠিন। কারণ, আমি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে থাকি। কিন্তু আইএসে যারা যাচ্ছে বাংলাদেশ থেকে, বেশিরভাগই দেখা যাচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের। তারপরও আমার কাছে মনে হয়, যারা যাচ্ছে তারা সবাই বিত্তবানের সন্তান এবং অভিজাত বেসরকারি ও ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র। আমি যে ব্যাপারটা খেয়াল করেছি, সেটা হলো এরা জীবনের শুরুতেই সবকিছু পেয়ে যায়। আমাদের মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্নবিত্ত পরিবারের কথা যায়-ই বলি না কেন, এখান থেকে উঠে আসা সন্তানরা সবসময়েই চিন্তা করে তাদেরকে পড়তে হবে, চাকরি করতে হবে এবং পরিবারকে সাহায্য করতে হবে। সবমিলিয়ে অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে এসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চিন্তা নিয়ে সে এগিয়ে চলে। যার জন্য, তার মানসিকতায় কোনো শূন্যতা থাকে না। এজন্য আমি দেখতে পারছি, যারা এসব জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে, তারা সবাই কোনো না কোনোভাবে শূন্যতায় ভোগে। সেই শূন্যতাটার কারণ হয়তো, তাদের সামনে সুনির্দিস্ট কোনো লক্ষ্য হাজির করা যায়নি। পরিবার থেকেও কোনোরকম চাহিদা তাদের থাকে না। তখনই এসব বিত্তবানের সন্তানরা চিন্তা করে সামনে কী করার আছে। ঠিক এই সময়টাই বেছে নেয় জঙ্গি সংগঠনগুলো। খুব সহজেই তখন এদেরকে সম্মোহিত করে ফেলা যায়। আর অনেক টাকা আছে বলেই যখন তাদের বলা হয় তুরস্কে চলে যাও, তখন এগুলো করতে সমস্যা হবে না।

এইভাবে এমন সব পরিবারের ছেলেমেয়েরা জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেবে আমরা কখনই তা চিন্তা করিনি। কিন্তু তারা যাচ্ছে! সবচেয়ে বড় কথা, এদের সঙ্গে ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই। এদের উদ্দেশ্য হলো একটাই, মানুষ হত্যার মাধ্যমে তাদের যে জঙ্গি কার্যক্রম সেগুলো সফল করা।

কীভাবে এগুলো থেকে বের হয়ে আসা যায়? সেটার জন্য অনেককিছু করা যেতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা, এদের সামনে আমাদের কিছু আদর্শ তুলে ধরতে হবে। যেমন—লেখাপড়াই সবকিছু নয়; এখানে দেশপ্রেম, মূল্যবোধ ইত্যাদিও শিক্ষার অংশ। আর মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানরা যেমন নিজেদের স্বার্থকে একটা সুনির্দিস্ট জায়গায় নিতে পারে, বিত্তবান পরিবার থেকে আসা এসব ছেলেমেয়েরা তা পারে না। কিন্তু এটা ঠিক যে, তাদেরকে আরও উপরের পর্যায়ে নেওয়া যায়। তাদেরকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অভিভাবকরা এসব শিক্ষা দিতে পারত যে, দেশের অনেক ছেলেমেয়ে আছে যারা পড়তে পারে না কিংবা খেতে পারে না। এসব মানুষকে তোমাদের সাহায্য করতে হবে। তোমাদের যে সম্পদ আছে এবং লেখাপড়ার যে সুযোগ আছে সেগুলো নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। ‘বিলগেটস ফাউন্ডেশন’-এর মতো পৃথিবীকে সাহায্য করে এমন কিছু করতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এ ধরনের উচ্চস্তরের আশা যদি তাদের সামনে নিয়ে আসা যেত, তাদের নৈতিকতার জায়গা যদি আরও দৃঢ় করা যেত, তাহলে আমার ধারণা তাদেরকে এত সহজে প্রলুব্ধ করা সম্ভব  হতো না।

আইএসে বাংলাদেশের যেসব ছেলেমেয়েরা যাচ্ছে, তাদের পিছনে দায়ীদের কথা বলতে গেলে, জঙ্গি সংগঠনগুলোর কথাই আগে বলব। তারাই মূলত দায়ী। পরোক্ষভাবে আবার আমরা সবাই হয়তো দায়ী। আমরা যারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করি তারাও দায়ী। অভিভাবকরাও দায়ী। তারা শুধু ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই দিচ্ছেন, কিন্তু আর খোঁজ রাখছেন না। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, এসব জঙ্গি সংগঠনগুলোকে যারা আশ্রয় দিচ্ছে, যারা পরিচালনা করছে, নেতৃত্ব দিচ্ছে তাদেরকে ধরে আইনের আওতায় আনাটা এখন আমাদের নিজেদের দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সৌজন্যে : দৈনিক ইত্তেফাক

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...