মাথা ব্যথা হলে প্রথম কাজ হচ্ছে, এটি কোনো ধরনের মাথা ব্যথা, তা চিহ্নিত করা। এর পরের কাজ সে মাথা ব্যথা সারানোর চিকিৎসা চালানো।
টেনশন হেডেক হচ্ছে সবচেয়ে সাধারণ ধরনের মাথা ব্যথা। নাম থেকেই বোঝা যায় টেনশনের ফলেই এ ধরনের মাথা ব্যথা হয়। এই মাথা ব্যথা এক সপ্তাহ স্থায়ী হতে পারে। এই ব্যথার সময় মনে হয়, কেউ যেন এক ধরনের আঁটসাঁট বাঁধন দিয়ে মাথাটাকে চেপে ধরেছে। এই চাপটা সব সময় লেগে থাকে। মনে হতে পারে কেউ যেন মাথার খুলিটার ওপর আঘাত করছে। এতে অরুচি বা বমি বমি ভাব হয় না।
মানসিক পীড়ন, গোলমেলে শব্দ, পানিশূন্যতা, গ্যাস বা বায়ুর উগ্র গন্ধও এর কারণ হতে পারে। টেলিভিশন কিংবা কম্পিউটারের পর্দার সামনে বেশি সময় থাকলে এ ধরনের মাথা ব্যথা হতে পারে। এখানে স্মরণ রাখা খুবই দরকার, এ ধরনের মাথা ব্যথা খুব একটা বিপজ্জনক নয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ওষুধের দোকানের মাথা ব্যথার সাধারণ ওষুধ সেবন করেই তা সারিয়ে তোলা যায়।
মাইগ্রেন হেডেক নামে আরেক ধরনের মাথা ব্যথা আছে। আমরা একে বলি আধকপালে মাথা ব্যথা। মাথার এক পাশে এই ব্যথা থাকে। এ মাথা ব্যথার সময় কখনো কখনো বমি আসে। উজ্জ্বল আলো এই মাথা ব্যথার রোগীরা সহ্য করতে পারে না। এই মাথা ব্যথার লক্ষণ ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত চলতে পারে। পীড়ন, হরমোন ও কিছু খাবার এর কারণ হতে পারে। অতএব এ ব্যাপারে যথাসম্ভব জেনে সতর্ক থাকতে পারলে ভালো।
অপর দিকে সাইনোসাইটিস হেডেক নামে আরেক ধরনের মাথা ব্যথার কথা আমরা জানি। এই মাথা ব্যথা সহজেই চেনা যায়। এ মাথা ব্যথার সময় শ্বাসনালীতে সংক্রমণ দেখা দেয়। সাথে থাকে ঠাণ্ডার জ্বর। নাক ও চোখ দিয়ে পানি ঝরে। নাাক দিয়ে গরম বাষ্পগ্রহণ ও ডিকনজেসটেন্ট (নাক বন্ধরোধকারক) এ মাথা ব্যথায় উপকারী। সংক্রমণ দূর করতে কখনো কখনো অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয়। যদি এই মাথা ব্যথা কয়েক দিন থাকে তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ক্লাশ্চার হেডেক মাইগ্রেন নয়। এই মাথা ব্যথা পুরুষের চেয়ে নারীদের বেশি হয়। সাধারণত ৩০ বছর বয়স পেরোনোর পরপর কারো কারো মধ্যে এর ব্যথার সূচনা হতে দেখা যায়। ৩৫ বছর বয়স পেরোলে সাধারণত এ মাথা ব্যথা থাকে না। যারা বেশি বেশি ধূমপান করেন, তাদের মধ্যে এই মাথা ব্যথা বেশি। এটি স্থায়ী হয় আধ ঘণ্টা থেকে দেড় ঘণ্টা। এই ব্যথা এক চোখের চার পাশে বেশি থাকে। এর অন্য একটি লক্ষণ হলো, চোখ থেকে প্রচুর পানি ঝরে এবং নাকের এক পাশ বন্ধ হয়ে যায়। বমির ভাব হতে পারে। এই মাথা ব্যথাটা দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে হয়। ব্যথানাশক ও মাইগ্রেন্টের ওষুধ সেবনে সামান্য আরাম পাওয়া যায়। বেশি যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতিতে লিথিয়াম কার্বোনেট সহায়ক হতে পারে। কিন্তু এই বিষাক্ত ওষুধ বমনেচ্ছা ও শরীরে শিহরণ বা কাঁপুনি সৃষ্টি করতে পারে। এই মাথা ব্যথার ওপর সচেতনভাবে নজর রাখা দরকার।
ট্রিগেমিনাল নিউরালজিয়া দেখা দিতে পারে ট্রিগেমিনাল নার্ভ ধ্বংস হয়ে গেলে। মুখের মূল সেন্সরি নার্ভ হচ্ছে এই ট্রিগেমিনাল নার্ভ। এই নার্ভ নষ্ট হয় নানা কারণে। এর মধ্যে রয়েছে : কটিদাদের মতো সংক্রমণ ও মাল্টিপল স্কে¬রোসিস রোগ। এই মাথা ব্যথা কখনো কখনো হঠাৎ অসহ্য হয়ে উঠতে পারে। এই মাথা ব্যথা স্থায়ী হয় মাত্র কয়েক সেকেন্ড। তবে তা দেখা দিতে পারে দিনে কয়েকবার। এর কার্যকর চিকিৎসা চলতে পারে ট্রাইসাইক্লিক অ্যান্টিডিপ্রেসার অথবা অ্যান্টি কনভালসেন্ট দিয়ে। কিন্তু ওষুধ প্রয়োগে এর চিকিৎসা ব্যর্থ হলে সার্জারির প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করা যেতে পারে।
আপনার চিকিৎসককে লক্ষণগুলো যথাযথভাবে বলার চেষ্টা করুন। একটি ডাইরিতে লিখে রাখুন
মাথা ব্যথার সঠিক চিকিৎসা
কত সময় পরপর এই মাথা ব্যথা হয়?
মাথা ব্যথার প্রকোপ কেমন?
এটি কি সাধারণ ধরনের মাথা ব্যথা?
না মারাত্মক ধরনের কোনো মাথা ব্যথা?
কখন এই মাথা ব্যথার শুরু?
মাথা ব্যথা কি হঠাৎ শুরু হয়?
ব্যথা কি সারাক্ষণ লেগে থাকে?
মাথা ব্যথা কি থেমে থেমে হয়?
থেমে থেমে হলে কতক্ষণ পরপর?
ব্যথা কোন সময়টায় শুরু হয়?
ব্যথার পরিস্থিতি কি দিন দিন খারাপ হচ্ছে?
মাথা ব্যথা কি চিন চিন করে হয়?
ব্যথা কি পুরো মাথাজুড়ে?
ব্যথা কি মাথার নির্দিষ্ট কোনো স্থানে?
ব্যথাটা মাথার কোন জায়গায় হয়?
কোনো কিছু কি ব্যথাটা বাড়িয়ে দেয়?
কাশি দিলে কি ব্যথা বেড়ে যায়?
কোনো খাবার কি ব্যথা বাড়িয়ে তোলে?