আবুল হুসাইন আলেগাজী : বিস্ময়কর মনে হলেও একেবারে সত্য যে, জীম আদ্যাক্ষর দ্বারা গঠিত উপরোক্ত তিনটি শব্দের সাথে পারস্পরিক গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। প্রকৃত মুজাহিদের জন্য যেমন জান্নাতে বিশেষ পুরস্কার রয়েছে, তেমনি উগ্র, বেয়াদব, চোর, ধ্যৈর্যহীন, বধির ও নির্দয় প্রকৃতির জিহাদীদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের কঠোর শাস্তি। কেয়ামতের দিন সবার আগে যে তিন প্রকারের লোককে সর্বপ্রথম উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে, তাদের প্রথম প্রকার হচ্ছে শহীদ তথা জিহাদে নিহত ব্যক্তি। আরেকজন জ্ঞানী ও আরেকজন দানশীল। (ছহীহ মুসলিম, হাদীছ নম্বরঃ ১৯০৫)।
বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম facebook এ প্রচুর তরুণ ও যুবককে জিহাদের কথা বলতে দেখা যায়, যাদের মধ্যে কিছু ভদ্র ফ্যামিলির প্রতিবাদী যুবক, আর কিছু ফেসবুকের লাইকাসক্ত স্ট্যাটাসবাজ নিম (অপূর্ণাঙ্গ) মাওলানা এবং আর কিছু হতভাগা ফালতু বেয়াদব তথা খারেজী ফ্যানবয়। হ্যা! মজলুমের পক্ষে জালিম কাফিরদের বিরুদ্ধে আক্রোশ কিংবা মুসলিম সমাজে ইসলামী সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য কারো মনে জিহাদের অনুভূতি সৃষ্টি হওয়া নিশ্চয় ঈমানের পরিচায়ক। কিন্তু সমস্যা হলো, এ ধরণের তরুণ-যুবকদের অনেকেই নফল ও সুন্নত নামায, জিকির, মসনূন দোয়া, নবীজির প্রতি নিয়মিত দরুদ, কোরআন তেলাওয়াত, হাদীছ পাঠ, বড়দের জীবনী অধ্যয়ন ইত্যাদির উপর কোনো গুরুত্ব দেয় না। এমনকি অনেকে প্রচুর হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত ওয়াজিব বিষয় ‘দাড়ি লম্বা করা’র প্রতিও কোনো খেয়াল রাখে না। অনেক সময় তারা ফালতু বিষয়ে আড্ডায় সময় নষ্ট করে। রাগ না করা ও রাগ এলে হজম করা ওয়াজিব হওয়া সত্ত্বেও তারা অল্পতে রেগে যায়। আবার অনেকে মিথ্যাচার, গীবত ও জেনা-সমকামিতা করতেও পরোয়া করে না। অপছন্দের ব্যক্তির অধীনে চাকুরিরত বা অভিভাবকের ভরণ-পোষণের উপর নির্ভরশীল এ ধরণের চরিত্রের যুবকেরা যখন জিহাদের কথা বলে, তখন আমার কাছে সেটি আবেগ, চিন্তার ভারসাম্যহীনতা, উগ্রতা কিংবা হিরোইজম (সমাজে নিজেকে হিরো হিসেবে দেখানোর চেষ্টা) তাড়িত বিষয় বলে মনে হয়।
উপর্যুক্ত চরিত্রের তরুণ-যুবকেরা জিহাদী হতে পারে; কিন্তু দীনের পথের প্রকৃত ত্যাগী মুজাহিদ হতে পারে না। হবেই বা কি করে। মানুষে ‘হুজুর’ বা ‘মোল্লা’ বলবে এ ভয়ে যে যুবক ‘দাড়ি লম্বা করা’র নবীজির (ছ.) নির্দেশ মানতে পারে না, সে কি কখনো আল্লাহর ওয়াস্তে নিজের জান ও মাল কোরবান করার মত সাহসী ও ত্যাগী কাজ করতে পারবে ? আমার তো মনে হয় না। এরা যদি কখনো জিহাদে অংশগ্রহণ করে, তাহলে তাদের নিয়ত নিয়ে প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক। কারণ, যুদ্ধক্ষেত্রে এমন অনেক মুজাহিদও থাকে, যারা দুনিয়ার লোভ, ক্ষোভ, যৌন অপরাধ ও হিরোইজমসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। এ জন্য মহান আল্লাহ তার দাসত্বের পরীক্ষায় মানুষের সফলকাম হবার যে শর্ত আরোপ করেছেন, তা জিহাদ নয়। তাহলো আত্মশুদ্ধি তথা শয়তান ও নফসের বিপরীত চলতে থেকে নিজেকে শুদ্ধ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। আল্লাহ বলেছেন, قد أفلح من زكاها “যে নিজেকে শুদ্ধ করেছে, সে সফলকাম হয়েছে।” তিনি বলেননি قد أفلح من جاهد “যে জিহাদ করেছে, সে সফলকাম হয়েছে।” কারণ, জিহাদ যেমন নারী ও অসুস্থ-অক্ষমের উপর ফরজ হয় না, তেমনি ইখলাছ ছাড়া কেউ এটি করলে আত্মশুদ্ধি অর্জনেরও কোনো সম্ভাবনা নেই।
নীচে আমি এমন কিছু হাদীছ তুলে ধরার চেষ্টা করলাম, যাতে প্রকৃত মুজাহিদ ও দুনিয়াবী উদ্দেশ্যতাড়িত জিহাদীদের পরিচয় ও পরিণাম সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে বলে আশা করি।
عنْ أبي مُوسى رضي اللَّه عَنْهُ ، أَنَّ أعْرَابيّاً أَتى النبي صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم فَقَال : يا رسول اللَّه ، (1) الرَّجُلُ يُقَاتِلُ لِلْمَغْنمِ ، (2) والرَّجُلُ يُقَاتِلُ ليُذْكَرَ ، (3) والرَّجُلُ يُقاتِلُ ليُرى مكانُه ؟ وفي روايةٍ : (4) يُقاتلُ شًَجاعَةً ، (5) ويُقَاتِلُ حَمِيَّةً . وفي روايةٍ : (6) ويُقاتلُ غَضَباً، فَمْنْ في سبيل اللَّهِ ؟ فَقَالَ رسولُ اللِّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم : « مَنْ قَاتَلَ لتكُونَ كَلِمَةُ اللَّه هِيَ العُلْيا ، فَهُوَ في سبيلِ اللَّهِ » أخرجه البخارى (6/2714 ، رقم 7020) ، ومسلم (3/1513 ، رقم 1904) ، وأبو داود (3/14 ، رقم 2517) والترمذى (4/179 ، رقم 1646) ، والنسائى (6/23 ، رقم 3136) ، وابن ماجه (2/931 ، رقم 2783) ، وأحمد (4/392 ، رقم 19511) .
অর্থঃ হযরত আবু মুসা আল-আশআরী রদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক বেদুইন এসে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করল, কোন লোক গনীমতের জন্য লড়াই করে (১), আর কোন লোক আলোচিত হওয়ার জন্য লড়াই করে (২), আর কোন লোক তার অবস্থান দেখিয়ে দেওয়ার জন্য লড়াই করে (৩), আরেক বর্ণনায় রয়েছে, কেউ লড়াই করে বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য (৪), আর কোন লোক লড়াই করে উত্তেজনাবশত (৫), আরেক বর্ণনায় রয়েছে, কেউ লড়াই করে রাগবশত (৬)। তো এদের মধ্যে কে আল্লাহর পথে লড়াইকারী? রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “যে (সবার কথার উপর) আল্লাহর কথার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করে, সেই আল্লাহ পথে লড়াইকারী।” সূত্রঃ ছহীহ বোখারী (হাদীছ নম্বরঃ ৭০২০) ও ছহীহ মুসলিম (হাদীছ নম্বরঃ ১৯০৪) ও অন্যান্য হাদীছগ্রন্থ
শিক্ষাঃ এ হাদীছে ৭ ধরণের মুজাহিদের কথা আলোচিত হয়েছে। তম্মধ্যে শেষোক্ত মুজাহিদ ছাড়া বাকীদের কেউই আল্লাহর পথের মুজাহিদ নয়। অতএব, জিহাদী বন্ধুরা সাবধান এবং স্থিরচিত্ত্বে কথা বলুন।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ الله عَنْهُ ، قَالَ : شَهِدْنا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم حُنَينًا-وفي رواية خيبر-، فَقالَ لِرَجُلٍ مِمَّنْ يَدَّعِي الإِسْلامَ: « هذا مِنْ أَهْلِ النَّار »، فَلَمّا حَضَرَ الْقِتالُ قاتَلَ الرَّجُلُ قِتالاً شَديدًا فَأَصابَتْهُ جِراحَةٌ، فَقِيلَ يا رَسُولَ اللهِ الَّذِي قُلْتَ إِنَّهُ مِنْ أَهْلِ النَّارِ فَإِنَّه قَدْ قاتَلَ الْيَوْمَ قِتالاً شَدِيدًا، وَقَدْ مَاتَ، فَقالَ صلى الله عليه وسلم: « إِلى النَّارِ » قَالَ فَكادَ بَعْضُ النَّاسِ أَنْ يَرْتابَ؛ فَبَيْنَما هُمْ عَلى ذلِكَ إِذْ قِيلَ إِنَّهُ لَمْ يَمُتْ وَلكِنَّ بِهِ جِراحًا شَدِيدًا، فَلَمّا كانَ مِنَ اللَّيْلِ لَمْ يَصْبِرْ عَلى الْجِراحِ فَقَتَلَ نَفْسَهُ: فَأُخْبِرَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بِذلِكَ، فَقالَ: « اللهُ أَكْبَرُ أَشْهَدُ أَنّي عَبْدُ اللهِ وَرَسُولُهُ » ثُمَّ أَمَرَ بِلالاً فَنادى في النَّاسِ: « إِنَّه لا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ إِلاّ نَفْسٌ مُسْلِمَةٌ، وَإِنَّ اللهَ لَيُؤَيِّدُ هذا الدِّينَ بِالرَّجُلِ الْفاجِرِ » أخرجه البخارى (3/1114 ، رقم 2897) ، ومسلم (1/105 ، رقم 111) .
অর্থঃ হযরত আবু হুরাইরা রদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে হুনাইনের যুদ্ধে -আরেক বর্ণনায় রয়েছে খয়বারের যুদ্ধে- অংশগ্রহণ করেছিলাম। এতে তিনি মুসলিম হওয়ার দাবীদার এক লোকের ব্যাপারে বললেন, “এ জাহান্নামী।” অতঃপর যখন যুদ্ধেও সময় হল, তখন লোকটি খুব কঠিন ভাবে যুদ্ধ করল এবং আহত হল। রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানানো হল যে, আপনি যে লোককে জাহান্নামী বলেছেন, সেতো আজ খুব কঠিন ভাবে লড়াই করেছে এবং মারা গেছে। তিনি বললেন, “সে জাহান্নামে গেছে।” এ কথায় কেউ কেউ সন্দিহান হয়ে পড়ে (অর্থাৎ, তার জাহান্নামী হওয়ার কথায় বিশ্বাস স্থাপন করতে পারছিল না)। এ অবস্থায় হঠাৎ বলা হল যে, লোকটি মারা যায়নি। বরং সে প্রচন্ডভাবে আহত হয়েছিল এবং ব্যথায় ধৈর্য্যধারণ করতে না পেরে রাতে সে আত্মহত্যা করেছে। অতঃপর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এ খবর পৌঁছানো হলে তিনি বললেন, “আল্লাহ সবচেয়ে মহান। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি আল্লাহর বান্দা ও রসূল।” অতঃপর তিনি হযরত বেলালকে মানুষের মাঝে এ কথা ঘোষণা কর দেওয়ার জন্য আদেশ দেন যে, “মুসলিম (আল্লাহর নির্দেশের সামনে আত্মসমর্পনকারী) প্রাণ (অর্থাৎ, ব্যক্তি) ব্যতীত আর কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং আল্লাহ তাআলা ফাজির (খারাপ) লোক দ্বারা এ দ্বীনকে সাহায্য করেন।” সূত্রঃ ছহীহ বোখারী (হাদীছ নম্বরঃ ২৮৯৭) ও ছহীহ মুসলিম (হাদীছ নম্বরঃ ১১১)
عن عبد الله بن عبَّاسٍ رضي اللَّه عنْهُ ، قَالَ : حدثني عمر بن الخطاب ، قال : لما كان يوم خيبر أقبل نفر من صحابة النبي صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم فقالوا : فلان شهيد وفلان شهيد حَتَّىْ مروا على رجل فقالوا : فلان شهيد . فقال رسول الله صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم : « كَلاَّ إنِّيْ رَأيتُهُ فِيْ النَّارِ فِيْ بُرْدَةٍ غَلَّهَا أوْ عَبَاءَةٍ » ثم قال رسول الله صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم: « يـَا ابْنَ الْخَطَّابِ اذْهَبْ فَنَادِ فِيْ النَّاسِ أنَّهُ لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ إِلاّ الْمُؤمِنُوْنَ ثَلاَثًا » قال : فخرجت فناديت ألا إنه لا يدخل الجنة إلا المؤمنون ثلاثا . أخرجه مسلم (1 ، رقم 114) ، والترمذى (4/139) ، وابن ماجه (2/950) .
অর্থঃ হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস রদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাকে হযরত ওমর জানিয়েছেন,, খাইবারের যুদ্ধের দিন নবীজির কিছু ছাহাবী এসে বললো, অমুক শহীদ হয়েছে, অমুক শহীদ হয়েছে। এক পর্যায়ে তারা এমন এক ব্যক্তির নামও উল্লেখ করল, যা নাম শুনে নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “কখনোই না। আমি তাকে গনীমত থেকে একটি চাদর/জামা চুরির কারণে জাহান্নামে দেখেছি।” অতঃপর নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “হে খত্তাবপুত্র! যাও লোকজনের মাঝে গিয়ে তিনবার ঘোষণা করো যে, খাঁটি মুমিন ছাড়া কোনো লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” তো আমি গিয়ে মানুষের মাঝে তিনবার ঘোষণা করে দিলাম যে, খাঁটি মুমিন ছাড়া কোনো লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে না। সূত্রঃ ছহীহ মুসলিম (হাদীছ নম্বরঃ ১১৪), সুনানে তিরমিজী (৪/১৩৯) ও সুনানে ইবনে মাজা (২/৯৫০)
عَنْ أبي هُريْرَةَ رضي اللَّه عنْهُ قَالَ : سمِعْتُ رَسُولَ اللَّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم يَقُولُ : « إنَّ أوَّلَ النَّاسِ يُقْضَى يوْمَ الْقِيامَةِ عَليْهِ رجُلٌ (1) اسْتُشْهِدَ ، فَأُتِىَ بِهِ ، فَعرَّفَهُ نِعْمَتَهُ ، فَعَرفَهَا ، قالَ : فَمَا عَمِلْتَ فِيها ؟ قَالَ : قَاتَلْتُ فِيكَ حَتَّى اسْتُشْهِدْتُ : قالَ كَذَبْت ، وَلكِنَّكَ قَاتلْتَ لأنَ يُقالَ جَرِيء ، فَقَدْ قِيلَ ، ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلى وَجْهِهِ حَتَّى أُلْقِىَ في النَّارِ . وَرَجُل (2) تَعلَّم الْعِلّمَ وعَلَّمَهُ ، وقَرَأ الْقُرْآنَ ، فَأتِىَ بِهِ ، فَعَرَّفَهُ نِعَمهُ فَعَرَفَهَا . قالَ : فمَا عمِلْتَ فِيهَا ؟ قالَ : تَعلَّمْتُ الْعِلْمَ وَعَلَّمْتُهُ ، وَقَرَأتُ فِيكَ الْقُرآنَ ، قَالَ : كَذَبْتَ ، ولكِنَّك تَعَلَّمْت الْعِلْمَ وَعَلَّمْتُهُ ، وقَرَأتُ الْقرآن لِيقالَ : هو قَارِىءٌ ، فَقَدْ قِيلَ ، ثُمَّ أمِرَ ، فَسُحِبَ عَلى وَجْهِهِ حَتَّى أُلْقِىَ في النَّارِ ، وَرَجُلٌ (3) وسَّعَ اللَّه عَلَيْهِ ، وَأعْطَاه مِنْ أصنَافِ المَال ، فَأُتِى بِهِ فَعرَّفَهُ نعمَهُ ، فَعَرَفَهَا . قال : فَمَا عَمِلْت فيها ؟ قال : ما تركتُ مِن سَبيلٍ تُحِبُّ أنْ يُنْفَقَ فيهَا إلاَّ أنْفَقْتُ فيها لَك . قَالَ : كَذَبْتَ ، ولكِنَّكَ فَعَلْتَ ليُقَالَ : هو جَوَادٌ فَقَدْ قيلَ ، ثُمَّ أمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وجْهِهِ ثُمَّ ألْقِىَ في النار » أخرجه مسلم (3/1513 ، رقم 1905) ، وأحمد (2/321 ، رقم 8260) ، والنسائى (6/23 ، رقم 3137) .
অর্থঃ হযরত আবু হুরাইরা রদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শনেছি, “কেয়ামতের দিন যাদের বিচার প্রথমে করা হবে, তাদের মধ্যে একজন হচ্ছে শাহাদত বরণকারী লোক। তাকে নিয়ে আসা হবে এবং তাকে প্রদত্ত নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হবে। সে তা স্বীকার করবে। আল্লাহ বলবেন, এ নেয়ামত পেয়ে তুমি কি করেছো? সে বলবে, আপনার জন্য লড়াই করেছি এবং এক পর্যায়ে শাহাদত বরণ করেছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছো। তুমিতো লড়াই করেছো তোমাকে সাহসী বলার জন্য। আর (দুনিয়াতে) তা তোমাকে বলা হয়েছে। অতঃপর তাকে মাথা ধরে টেনে নিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার নির্দেশ দেয়া হবে। ২. (কেয়ামতের দিন যাদের বিচার প্রথমে করা হবে) তাদের মধ্যে আরেকজন হচ্ছে জ্ঞান অর্জনকারী ও জ্ঞান শিক্ষাদানকারী ও কুরআনের কথা প্রচারকারী লোক (অর্থাৎ, আলিম)। তাকে নিয়ে আসা হবে এবং তাকে প্রদত্ত নেয়ামতসমূহের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হবে। সে তা স্বীকার করবে। আল্লাহ বলবেন, এ নেয়ামত পেয়ে তুমি কি করেছো? সে বলবে, আপনার জন্য জ্ঞান অর্জন করেছি ও জ্ঞান শিক্ষাদান করেছি এবং কুরআনের কথা প্রচার করেছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছো। তুমিতো জ্ঞান অর্জন করেছো ও জ্ঞান শিক্ষাদান করেছো এবং কুরআনের কথা প্রচার করেছো তোমাকে আলিম বলার জন্য। আর (দুনিয়াতে) তা তোমাকে বলা হয়েছে। অতঃপর তাকে মাথা ধরে টেনে নিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার নির্দেশ দেয়া হবে। ৩. (কেয়ামতের দিন যাদের বিচার প্রথমে করা হবে) তাদের মধ্যে আরেকজন হচ্ছে সে লোক, যাকে আল্লাহ সচ্ছল বানিয়েছেন এবং বিভিন্ন প্রকার সম্পদ দান করেছেন। তাকে নিয়ে আসা হবে এবং তাকে প্রদত্ত নেয়ামতসমূহের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হবে। সে তা স্বীকার করবে। আল্লাহ বলবেন, এ নেয়ামত পেয়ে তুমি কি করেছো? সে বলবে, আপনি দান করা পছন্দ করেন এমন কোন ক্ষেত্র বাকি নেই, যেখানে আমি আপনার জন্য দান করিনি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছো। তুমিতো দান করেছো তোমাকে দানশীল বলার জন্য। আর (দুনিয়াতে) তা তোমাকে বলা হয়েছে। অতঃপর তাকে মাথা ধরে টেনে নিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার নির্দেশ দেয়া হবে।” সূত্রঃ ছহীহ মুসলিম (হাদীছ নম্বরঃ ১৯০৫), সুনানে নাসায়ী (হাদীছ নম্বরঃ ৩১৩৭) ও মুসনদ আহমদ (হাদীছ নম্বরঃ ৮২৬০)
শিক্ষাঃ এ হাদীছ দ্বারা বুঝা যায়, লোকদেখানো জিহাদী/শহীদদেরকে লোক দেখানো হুজুরদের আগেই জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। ফেসবুকে যারা মানুষকে দেখানোর জন্য লেখালেখি করছে, তাদের নিয়েও আশঙ্কা আছে।
عَنْ عُتْبَةَ بْنِ عَبْدٍ السُّلَمِيْ رَضِيَ اللَّه عنْهُ قال : قَالَ رسُوْلُ الله صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم : « الْقتْلَىْ ثَلاثَةٌ رِجَالُ ، رَجُلٌ مُؤْمِنٌ جَاهَدَ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ في سَبِيْلِ الله حَتَّى إذَا لَقِيَ الْعَدُوَّ قاتَلهُم حَتَّىْ يُقْتَلُ ، فَذَلِكَ الشَّهِيْدُ الْمُمْتَحَنُ فَيْ خِيْمَةِ الله تَحْتَ عَرْشِهِ لاَ يَفْضُلُهُ النَّبِيُّونَ إلاَّ بِدَرَجَةِ النُّبُوَّةِ ، وَرَجُلٌ مُؤْمِنٌ اقْتَرَفَ علَىْ نفْسِهِ مِنَ الذَُنُوْبِ والْخَطَايَا جَاهَدَ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ في سَبِيْلِ الله حَتَّى إذَا لَقِيَ الْعَدُوَّ قَاتَلَ حَتَّىْ يُقْتَلُ ، فَتِلْكَ مُـمَصْمِصَةٌ مَحَتْ ذُنُوْبَهُ وَخَطَايَاهَ إنَّ السَّيْفَ مَحَّاءٌ لِلْخَطَايَا وَأدْخِلَ مَنْ أيِّ أبْوَابِ الْجَنَّةِ شَاءَ فإنَّ لَهَا ثَمَانِيَةُ أبْوَابٍ وَلِجَهَنَّمَ سَبْعَةُ أبْوَابٍ وَبَعْضُهَا أسْفَلُ مِنْ بَعْضٍ. وَرَجُلٌ مُنَافِقٌ جَاهَدَ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ في سَبِيْلِ الله حَتَّى إذَا لَقِيَ الْعَدُوَّ قاتَلَ حَتَّىْ يُقْتَلُ ، فَذَلِكَ فِيْ النَّارِ إنَّ السَّيْفَ لاَ يَمْحُوْ النِّفَاقَ » أخرجه ابن المبارك فى الجهاد (رقم 7) ، والدارمي (رقم 2411) ، والطيالسي (2/596/1363)، و أحمد(4/186)، و الطبراني في “الكبير”(17/26/311)، و ابن حبان (10/519/4663)، و البيهقي في الكبرى (9/164).
অর্থঃ হযরত ওতবা বিন আব্দ আসসুলামী রদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহর পথে নিহতরা তিন প্রকার। ১. একজন সে মুমিন, যে তার সম্পদ ও দেহ দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে এবং যখন শত্রুর মুখোমুখি হয়েছে, তখন তাদের সাথে লড়াই করে নিহত হয়েছে। আর সে হচ্ছে আল্লাহর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ঐ শহীদ, যে আল্লাহর আরশের নীচে তাঁর (বিশেষ) তাঁবুতে অবস্থান করবে। শ্রেষ্ঠত্বের দিক দিয়ে নবীগণ তার শুধু এক স্তর উপরে থাকবেন। ২. (আল্লাহর পথে নিহতদের মধ্যে) আরেকজন হচ্ছে সে লোক, যে (ব্যক্তি পর্যায়ে সীমাবদ্ধ আল্লাহর কোন নির্দেশ -যেমন জেনা থেকে বেঁচে থাকা- অমান্য করে) নিজের বিরুদ্ধে পাপাচারে লিপ্ত হয়েছে এবং তার সম্পদ ও দেহ দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে এবং যখন শত্রুর মুখোমুখি হয়েছে, তখন তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে নিহত হয়েছে। তো সেটা (সম্পদ ও দেহ দ্বারা আল্লাহর পথে তার জিহাদ) হচ্ছে মার্জনাকারী। নিশ্চয় তরবারী (লড়াই) হচ্ছে পাপ মোচনকারী। আর তাকে জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছুক প্রবেশ করতে দেয়া হবে। কারণ, জান্নাতের রয়েছে আটটি দরজা এবং জাহান্নামের রয়েছে সাতটি দরজা। আর এ (দরজা) গুলোর একটি আরেকটির চেয়ে নীচে। ৩. (আল্লাহর পথে নিহতদের মধ্যে) আরেকজন হচ্ছে সে মুনাফিক, যে তার সম্পদ ও দেহ দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে এবং যখন শত্রুর মুখোমুখি হয়েছে, তখন তাদের সাথে লড়াই করে নিহত হয়েছে। আর (মুজাহিদদের মধ্যে) সেই হচ্ছে জাহান্নামী। নিশ্চয় তরবারী (পাপ মোচনকারী হলেও) নিফাককে মোচন করে না।” সূত্রঃ ছহীহ ইবনে হিব্বান (হাদীছ নম্বরঃ ৪৬৬৩), মুসনদ আহমদ (৪/১৮৬), ইমাম ইবনুল মোবারকের আল-জিহাদ (হাদীছ নম্বরঃ ০৭) ও দারেমীর আসসুনান (হাদীছ নম্বরঃ ২৪১১) প্রভৃতি
শিক্ষাঃ এ হাদীছ থেকে স্পষ্ট যে, গলাবাজ জিহাদীই শুধুই নয়; জিহাদের নামে মাঠে যারা মারা পড়ছে/নিহত হচ্ছে, সেখানেও ভূয়া মুজাহিদ তথা মুনাফিক থাকতে পারে।
عن معاذ رَضِيَ اللَّه عنْهُ ، قال : قَالَ رسُوْلُ الله صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم : « الْغَزْوُ غَزْوَانِ : فَأَمَّا مَنِ ابْتَغَى وَجْهَ اللهِ ، وَأَطَاعَ الإِمَامَ ، وَأَنْفَقَ الْكَرِيمَةَ ، وَيَاسَرَ الشَّرِيكَ ، وَاجْتَنَبَ الْفَسَادَ ، فَإِنَّ نَوْمَهُ ، وَنُبْهَهُ ، أَجْرٌ كُلُّهُ ، وَأَمَّا مَنْ غَزَا فَخْرا وَرِيَاءً وَسُمْعَةً ، وَعَصَى الإِمَامَ ، وَأَفْسَدَ فِي الأَرْضِ ، فَإِنَّهُ لَمْ يَرْجِعْ بِالْكَفَافِ »أخرجه أبو داود (3/13 ، رقم 2515) ، والنسائى (6/49 ، رقم 3188) ، ومالك (2/466 رقم 998) ، وأحمد (5/234 ، رقم 22095) ، والطبرانى (20/91 ، رقم 176) ، والحاكم (2/94 ، رقم 2435) .
অর্থঃ হযরত মোআয রদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যুদ্ধ (অর্থাৎ, যোদ্ধা) দুই ধরণের। এক. যে আল্লাহর সন্তুষ্টি তালাশ করেছে, আমীরের কথা মান্য করেছে, প্রিয় বস্তু ব্যয় করেছে, সহকর্মীর সাথে সহজ আচরণ করেছে এবং বিশৃঙ্খলা থেকে আত্মরক্ষা করেছে। এরকম হলে তার ঘুম ও জাগ্রতবস্থা উভয়ই প্রতিদানযোগ্য হবে। দুই. অন্যদিকে যে গৌরব, লোক দেখানো ও সুনামের আশায় যুদ্ধ করেছে, আমীরের অবাধ্য হয়েছে এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে, তাহলে সে বিনিময় নিয়ে ফিরতে পারেনি।” সূত্রঃ মোআত্তা মালিক (হাদীছ নম্বরঃ ৯৯৮), সুনানে আবু দাউদ (হাদীছ নম্বরঃ ২৫১৫), সুনানে নাসায়ী (হাদীছ নম্বরঃ ৩১৮৮) ও মুসনদ আহমদসহ অনেক হাদীছগ্রন্থ
عن حذيفة بن اليمان رضي الله عنه ، قال : قال رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « إِنَّ مَا أَتَخَوَّفُ عَلَيْكُمْ رَجُلٌ قَرَأَ الْقُرْآنَ حَتَّى إِذَا رُئِيَتْ بَهْجَتُهُ عَلَيْهِ ، وَكَانَ رِدْئًا لِلإِسْلاَمِ ، غَيَّرَهُ إِلَى مَا شَاءَ اللَّهُ ، فَانْسَلَخَ مِنْهُ وَنَبَذَهُ وَرَاءَ ظَهْرِهِ ، وَسَعَى عَلَى جَارِهِ بِالسَّيْفِ ، وَرَمَاهُ بِالشِّرْكِ » قال : قُلْتُ : يَا نَبِيَّ اللهِ ، أَيُّهُمَا أَوْلَى بِالشِّرْكِ ، الْمَرْمِيُّ أَمِ الرَّامِي ؟ قَالَ : « بَلِ الرَّامِي » أخرجه ابن حبان في صحيحه برقم 81 وأبو يعلى في مسنده كما في المطالب العالية للحافظ برقم 4473 والطحاوي في مشكل الآثار (1/ 495) والبزار في مسنده برقم (175) قال الحافظ الهيثمي في المجمع (1/188): إسناده حسن.
অর্থঃ হযরত হোজাইফা রদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের জন্য অমার আশঙ্কার বিষয়গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে ওই লোক, যে কোরআনের জ্ঞান অর্জন করেছে। অতঃপর যখন তার মাঝে ওই জ্ঞানের সৌন্দর্য প্রকাশ পেল এবং সে ইসলামের একটি সহায়ক শক্তি হলো, তখন সে তা থেকে পৃথক হয়ে তাকে পিছনে ফেলে দিল (তেলাওয়াত, চর্চা ও শিক্ষাদান বন্ধ করে দিল) এবং তার প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে শিরকের অপবাদ দিয়ে তার উপর তরবারী নিয়ে চড়াও হলো।” আমি বললাম, ইয়া রসূলুল্লাহ, ওদের দুইজনের মধ্যে শিরকের উপযুক্ত/অধিক নিকটবর্তী কে? আরোপকারী না ভিকটিম? বললেন, “আরোপকারীই।” সূত্রঃ ছহীহ ইবনে হিব্বান (হাদীছ নম্বরঃ ৮১), মুসনদে বাজ্জার (হাদীছ নম্বরঃ ১৭৫), তাহাবী (১/৪৯৫) ও মসনদে আবু ইয়ালার উদ্ধৃতিতে ইমাম ইবনে হাজরের আল-মাতালিবুল আলিয়া (হাদীছ নম্বরঃ ৪৪৭৩)। ইমাম হাইছামী মজমাউজ জাওয়ায়েদে (১/১৮৮) বলেছেন, হাদীছটির সনদ হাসান।
উল্লেখ্য, বর্তমানে এ হাদীছটি শয়তানের শিং তাকফীরি শায়খ নজদী ও তার জঙ্গী অনুসারীসহ সকল তাকফীরি জঙ্গী গোষ্ঠীগুলোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
আল্লাহ আমাদেরকে খারেজী, আবেগী, ক্ষোভী ও উদ্দেশ্যতাড়িত জিহাদী না বানিয়ে দীনের পথের প্রকৃত ত্যাগী মুজাহিদ হবার তৌফীক দান করুন। আমীন।
২০. ০৬. ২০১৬ সোমবার