মুশাররফ হোসাইন চৌধুরী। চেয়ারম্যান অফ সাউথওয়ার্ক মুসলিম ফোরাম, লন্ডন। জুমার নামাজে দেখা হলে বললেন এই রোববার লোকাল চার্চের খৃস্টান মিশনারিদের লোক আসবে আমাদের সাথে ইফতার করতে। খুশি হলাম মনে মনে যে লোকাল ভিন্ন কমিউনিটির সাথে সাক্ষাতের বিরাট সুযোগ। দাওয়াতি কাজটাও হয়ে যাবে। ইফতারের ঘন্টা খানিক আগে গিয়ে দেখলাম সবাই আসতে শুরু করেছেন। আমাদের পেকহাম জামে মসজিদে আছে মোট তিনটি ফ্লোর। একসাথে তিনহাজার মুসল্লি নামাজ পড়তে পারেন। বর্তমানে তিনটি ফ্লোর বা তালা আছে।নীচ তালায় মেহরাব মিম্বর। ২য় তালায় ইফতারির আয়োজন।৩য় তালা বেশিদিন হয়নি বানানো হয়েছে। বিশেষ বিশেষ দিনে কাজে লাগে। আজ মাল্টি কালচারের লোকদের নিয়ে উপরের তালায় হয়েছে আয়োজন।
সাউথওয়ার্ক মুসলিম ফোরাম একদশক যাবত খোলা মাঠে ঈদ জামাতের আয়োজন করে বিরাট প্রশংসা কুড়িয়েছে।প্রতি বছর লোক সমাগম বাড়ছেই। এমনকি ঈদ মাঠে অনেকে ইসলাম কবুলের ঘটনা ঘটে। ছেলে মেয়ে নারী পুরুষ সবাই মিলে এক মহা আনন্দের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। শিশুর কিশোর বড়রা প্রাণ খোলে আনন্দ উপভোগ করেন। বিশাল পার্কে বসে স্টলের আয়োজন।নানান কিসিমের খাবার বই সহ রকমারি আয়োজন। ইনশাআল্লাহ এবারের ঈদের বিস্তারিত নিউজ কমাশিসায় পরিবেশন হবে।
মসজিদের উপরের তালায় জনাবিশেক শাদা লোক তশরিফ নিয়ে আসলেন।সাথে আছেন বিভিন্ন মুসলিম কমিউনিটির লোক। নারী পুরুষ ও আছেন। অর্থাৎ সাউথওয়ার্ক মুসলিম ফোরামের মেনেজিং বডির প্রায় সবাইর আগমন। গুল হয়ে বসা হলো। মুশাররফ ভাই ডক্টর মুসাকে শুরু করতে অনুরোধ জানালেন।তিনি আল্লাহ তায়ালার হামদ ছানা শেষে রামাদ্বানের ইতিবৃত্ত বর্ণনা করলেন।মিনিট পাঁচেক শেষে আমাকে বলা হলো দুটি কথা বলার জন্য।হামদ ও ছানার পর সালাম ও গ্রিটিং শেষে শুরু করলাম কথা বলা। বললাম-প্রথমেই আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি যে ইংলিশ হলো আমার ২য় ভাষা, তাই হয়তো তোমাদের মতো করে বলতে পারবোনা। তবে চেষ্টা করবো বিষয় বস্তু ফুটিয়ে তুলতে।
আমি বললাম যে, এই মাস হলো শাহরু রামাদ্বান। কোরআন নাজিলের মাস। শুধু কোরআন নয় পুরাতন সকল কিতাব এই মাসেই নাজিল হয়েছে। এই ইঞ্জিল তাওরাত যবুর সবি নাজিল হয়েছে রামাদ্বানে। বরকতময় এই মাস। কেন নাজিল হয়েছে? হুদাল-লিন্নাস, মানুষের হেদায়েতের জন্য।মানুষ যাতে সঠিক রাস্তা খোঁজে পায়।আল্লাহ হচ্ছেন রাব্বুল আলামীন, রাসুল হচ্ছেন রাহমাতাল লিল আলামীন। কোরআন হচ্ছে হুদাল লিল আলামীন।এই কোরআন রাসুল রব কেবল মুসলমানেদর জন্য নয় সারা পৃথিবীর জন্য। সকল সময় ও সকল কালের সকল সুসাইটির জন্য। পুরোহিত্য ইসলামে নেই। তাই তুমি নিজে এই কোরআন খোলে পড়ে দেখতে পারো এখানে কি লিখা আছে। আল্লাহ তায়ালা আহব্বান করেন- আসো তোমরা সকলে একটি কমন বিষয়ের উপর যেখানে সকলের ইন্টারেস্ট সমান, আর তা হলো আমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদত করবোনা। তাই আমরা এখানে আজ আমাদের কমন ইস্যু নিয়েই বসেছি। আশা করি এখানে কোন দ্বীমত থাকবেনা।
আমরা বলে থাকি বা সকলেই জানি ওল্ড টেস্টামেন নিউ টেস্টামেনের কথা।ইহুদী-খৃস্টানরা নিজেদের কিতাবের কথা এভাবেই বলে থাকেন। কিন্তু যে আল্লাহ আদম নুহ ইবরাহীম মুসা ঈসাকে প্রেরণ করেছেন সেই আল্লাহ লাস্ট টেস্টামেনে কি বলেছেন তা কি আমরা খোলে দেখবোনা? এই মনে করুন আমার হাতে আইফোন ৬। এখন বের হয়েছে ৬প্লাস। প্রতি বছর নিউভার্সন বেরুচ্ছে। আমরা সাদরে গ্রহন করি নিচ্ছি। সবাই নিউ ভার্সনের অপেক্ষায় থাকি। তাহলে এই কোরআন তো হলো সর্বশেষ মর্ডাণ ভার্সন। পবিত্র কোরআনের আলৌকিকতা হলো, প্রতি যুগে প্রতি কালে প্রতিটি মুহুর্তে প্রতিদিন প্রতি সপ্তায় বার মাসব্যাপী অটো আপডেটেড। তাই ভাবনার কিছু নাই। কোরআন প্রতিটি যুগের সাথে অতি বিষ্ময়কর ভাবে নিজেকে মানিয়ে নিতে সক্ষম।
একজন মুসলমান কখনো তার ঈমান কম্প্লিট হতে পারেনা যতক্ষণ না সে ইব্রাহীম মুসা ও ঈসার উপর ঈমান এনেছে। অতএব ঈসা আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর সর্বশেষ যিনি এসেছেন খোদার পক্ষথেকে তিনি হলেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এই কোরআনই হলো আল্লাহর পক্ষথেকে লাস্ট এবং ফাইনাল রেভ্যুলেশন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে একবার কেউ ভুল বশতঃ ইঞ্জিল নীচে রেখে দিয়েছিলো, তাতে তিনি নারাজি পেশ করে বললেন উপরে সম্মানের সাথে রাখতে। ইসলাম কখনো কোন আসমানি কিতাবের অবমুল্যায়ন শিখায়না। এমনকি পবিত্র কোরআন মজীদে এসেছে যারা মুর্তি পুঁজা করে তাদেরকে গালি না দিতে। কারণ সে আবার ভুল করে তোমার আল্লাহ কে গালি দিয়ে বসবে। তাই আমি আপনাদের আহব্বান জানাবো কোরআন পড়ে দেখুন তাতে কি লিখা আছে। এখানে আছে শিফা বা হিলিং। তোমাদের কেউ যদি ডিপ্রেশনে ভোগ তাহলে কোরআন পড়ে দেখতে পারো। ভারতের প্রখ্যাত এক্টর অমিতাভ বচ্চন কোরআন পড়ে প্রশান্তি লাভ করছে।
রোজা বা সিয়াম হলো ইসলামের একটি স্তম্ব।মানে বিরত থাকা বা নিজের মাঝে কন্ট্রোলিং সিস্টেম সৃষ্টি করা। জাগতিক ও পারলৌকিক উভয়ের কল্যাণ আছে রোজাতে। মেডিকেল সাইন্স বলে মানুষের ডাইজেস্ট সিস্টেম একমসয় দুর্বল হয়ে পড়ে। শরিরে অতিরিক্ত মেধ চর্বি জমা হয়। বাড়তি কেলোরি পোড়ানোর জন্য উপবাস খুবই উপকারী। ধীরে ধীরে জমতে থাকা ডিজিজ ও জ্যাম গুলো রোজার মাধ্যমে ক্লিয়ার হতে থাকে। টেস্টের মাঝেও আসে বৈচিত্র ও নতুনত্ব। অর্থাৎ শরিরের পুরো সিস্টেম রিনিউ হয় রিফাইন হয় রোজার দ্বারা। এমনকি স্নায়ুবিক ও মানসিক অনেক রুগ এমনিতেই কমে যায় রোজার মাধ্যমে। আর আখেরাতের সওয়াবতো আর রয়েই গেলো।
পরিশেষে আসলো প্রশ্নোত্তর পর্ব। একজন শাদা ইংরেজ ভদ্র মহিলা জানতে চাইলেন আল্লাহ কে কি অন্য নামে ডাকা যাবে? কারণ বিভিন্ন ধর্মে ভিন্ন ভাবে ডাকা হয়। বললাম হ্যাঁ গড ইশ্বর খোদা সৃষ্টি কর্তা স্রষ্টা বিধাতা ইত্যাদি নামে ডাকা হয়। তবে আল্লাহ ই হচ্ছে সবচেয়ে খাটি ও নির্ভেজাল । যা পবিত্র কোরআনে সৃষ্টিকর্তা নিজেই তাঁর জন্য চয়েজ করেছেন, আর বলেছেন সে নামে ডাকতে।শাদা লোক গুলো জানতে চাইলো কোরআন কি অন্য ভাষায় পড়া যাবে? বললাম অবশ্যই কেন নয়? তোমার হাতের মুবাইলে টিপ দিলেই আপ্স খুলে ইংরেজি বা যো কোন তোমার পছন্দের ভাষায় কোরআন পড়ে নিতে পারো।
সবশেষে তারা তাদের ভাল লাগা গুলো জানালো। আমরা প্রিত হলাম। তারা আমাদেরকেও তাদের ওখানে যাওয়ার আমন্ত্রণ দিলো। আশা করছি সুযোগ পেলে খোদ চার্চে গিয়েও ইসলামের বাণী পৌছিয়ে দিয়ে আসবো ইনশাআল্লাহ।