হাকীম সৈয়দ আনোয়ার আব্দুল্লাহ::
পাশাপাশি দুটি ধর্মের মানুষের বাস হাজার বছরের সম্প্রতির প্রগাঢ় বন্ধন। এই সুগভীর সম্প্রতি ছিল আমাদের পথ প্রদর্শক আকাবির উলামাদের মাঝেও। আমরা এক সাথে মিলে মুসলিমদের খেলাফত আন্দলন, হিন্দুদের অসহযোগ আন্দোলনকে একত্র করে বৃটিশ বিরোধী “খেলাফত-অসহযোগ” আন্দোলন করেছি। সংখ্যাগরিষ্ট হিন্দুদের সংগঠন “ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের” দশ বছরের সভাপতি ও মূল কান্ডারী ছিলেন আমাদের মাওলানা আবুল কালাম আযাদ। মাওলানা মাহমুদ হাসান দেওন্দীকে “শায়খুল হিন্দ” উপাধী দিয়েছিলেন করমচাঁদ মহাত্মা গান্ধি। আর খেলাফত কনফারেন্সে করমচাঁদ গান্ধিকে “মহাত্মা গান্ধী ” উপাধী দিয়েছিলেন শায়খুল ইসলাম সৈয়দ হুসাইন আহমদ মাদানী। ৪৭সালে হিন্দু মুসলিম দাঙ্গার সময় ভারত থেকে মুসলিম খেদাও ও মুসলিম নির্যাতনের বন্ধের প্রতিবাদ করে মহাত্মা গান্ধি দিল্লীতে দশদিন অনশন করেছিলেন।
এই সম্প্রতির কারনে ব্যবসায়িক , রাজনৈতিক. অর্থনৈতিক , সামাজিক বন্ধন গড়ে উঠায় এক ধর্মের প্রথা অন্য ধর্মে ইবাদত হিসেবেও পালন করতে দেখা যায়। হিন্দুধর্মের নিরামিষ ভূজনকে আমাদের অনেকে ইবাদত মনে করে মহররম মাসের প্রথম দশদিন নিরামিষ খেয়ে থাকেন। যেমন হিন্দু ধর্মের কারো মৃত্যুর পাঁচ দিন, দশ দিন. চল্লিশ দিন পর অনুষ্ঠানকে আমরা অজ্ঞতাবসত আমাদের সাধারন মুসলমান ধর্মের ইবাদত মনে করে থাকেন। তেমন মুসলমানদের আগর-লোবান জ্বালিয়ে মজলিসকে সুঘ্রাণময় করার প্রথাকে হিন্দুরা সকাল বিকালের ইবাদত
মনে করেন।
সম্প্রতি আমাদের প্রতিবেশি ধর্মের উপর হুমকী ধমকী আক্রমনের কিছু ঘটনা দেখে মমনে হচ্ছে তা এদেশের বিরোদ্ধ দেশ -বিদেশের কুচক্রী মহলের গভীর চক্রান্ত। বাংলাদেশকে একটি সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ রাষ্টে পরিণত করতে এই ষড়যন্ত্রগুলো হচ্ছে। অপরদিকে এসব কর্মকান্ডে অনেক সময় মূল অপরাধী ধরা ছুয়ার বাহিরে থেকে যায় আর অনেক নিরপরাধ সাধারন মানুষ হয়রানীতে শিকার হন। ইসলাম নিরপরাধ মানুষ হত্যা করাকে শিরকের পর বড় অপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত করেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কবিরা গোনাহসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড়
গোনাহ হলো আল্লাহর সঙ্গে কাউকে
অংশীদার সাব্যস্ত করা, নিরপরাধ মানুষকে
হত্যা করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া এবং মিথ্যা কথা বলা।’ (বুখারি : ৬৮৭১, মুসলিম : ৮৮) অপর হাদিসে এসেছে : ‘দুনিয়া ধ্বংস করার চেয়েও আল্লাহর কাছে ঘৃণ্যতর কাজ হলো নিরপরাদ মানুষ হত্যা করা।’ (তিরমিজি শরিফ)
প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর (রা.) যখন সিরিয়ায় সেনা পাঠান তখন তাদের ১০টি নির্দেশ দিয়ে দেন। সে নির্দেশ ছিল এই :
১. নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের কেউ যেন
হত্যা না করে।
২. লাশ যেন বিকৃত করা না হয়।
৩. আশ্রম, প্যাগোডা ও কুঠরিতে উপাসনারত সন্ন্যাসী ও তপস্বীদের কষ্ট দেওয়া যাবে না। কোনো উপাসনালয় ভাঙা যাবে না।
৪. ফলবান বৃক্ষ যেন কেউ না কাটে এবং
ফসলের ক্ষেত যেন পোড়ানো না হয়।
৫. জনবসতিগুলোকে (সন্ত্রাস সৃষ্টির
মাধ্যমে) যেন জনশূন্য না করা হয়।।
৬. পশুদের যেন হত্যা করা না হয়।
৭. প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা চলবে না।
(মুসান্নাকে ইবনে আবি শায়বাহ : ষষ্ঠ খণ্ড,
পৃ: ৪৮৭-৪৮৮)
এ নির্দেশাবলি অধ্যয়ন করলে বোঝা যায়
যে ইসলাম যুদ্ধকেও সব হিংসাত্মক কর্মকাণ্ড থেকে পবিত্র করে দিয়েছিল। অথচ সে সময়ে হিংসাত্মক কার্যকলাপ ছিল যুদ্ধের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কাজেই জিহাদ বা ধর্মযুদ্ধের নামেও নিরীহ মানুষ হত্যা করা ইসলাম সম্মত নয়।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস কোন ধর্মপ্রান মানুষ এসব করে না। বিকৃত মস্তিস্কের কিছু লোক অথবা বাহিরের র কিংবা মোসাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে কেউ এই অপকর্মগুলো করছে। এর দ্বারা কাজের সুন্দর পরিবেশ যেমন নষ্ট হচ্ছে তেমনি দেশের ভাবমূর্তি নষ্টের চক্রান্ত হচ্ছে। এই সুগভীর ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে আমাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
অপরদিকে এদেশের কিছু উগ্র হিন্দু সংগঠন বিষয়গুলোকে তিল থেকে তাল বানিয়ে ফুলিয়ে পাফিয়ে প্রচার করেছে, সাথে আছে হলুদ মিডিয়ার অপপ্রচার। গতকাল একটি হিন্দু সংগঠনের হিন্দি ব্যানার দেখে অবাক হলাম। কিছুদিন পূর্বে আমেরিকাতে বসে একটি উগ্র হিন্দু সংগঠন বাংলাদেশে গরু জবেহ নিষেধের দাবী তুলেছে। কেউ নরেন্দ্র মুদির হস্তক্ষেপ কামনা করে পরিস্তিতি জটিল ককরার ষড়যন্ত্রে মত্ত। এদের কে কারা নাচাচ্ছে আর কারা সংখ্যালগু আক্রমন করছে,?সরকার উভয়কে শক্ত হাতে প্রতিরোধ করতে হবে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি রক্ষার স্বার্থে।
আর একটি মুসলিম দেশে সংখ্যালগুদের জান মাল সম্পদ মুসলমানদের কাছে আমানত। তাদের সহযোগীতা করা, বিপদ আপদে পাশে দাড়ানোর আমাদের নৈতিক কর্তব্য। ভারতে মুসলমানরা উগ্র হিন্দুদের দ্বারা নানান ভাবে নির্যাতিত হয়ে থাকেন। অনেকে বলে থাকে ভারতে যা হয় তার তুলনায় তো এখানে কমই হয়। যেনো ভারত আমাদের আদর্শ। তাদের চিন্তাজগতের দীনতা দেখে রাগ নয় ক্ষোভ নয় কেবল করুণা হয়।
ভারতে যা হয় তা আমাদের দেশে করতে হবে কেন। আমাদের আর্দশ হবে ইসলাম।
কদিন আগে ভারতে গরুর মাংস খাওয়া অথবা রাখার অপরাধে ‘আখলাক’
নামে একজন মুসলিমকে পিটিয়ে মারা হয়েছে। আখলাক কে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন ভারতের অনেক বিবেকসম্পন্ন হিন্দু ব্যক্তিত্ব। প্রকাশ্যে গরু খেয়ে, গলায় ” আমি গরু খাই” প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে তারা এ ঘটনার প্রতিবাদ জানাচ্ছে। ৪১জন কবি সাহিত্যিক তাদের অর্জিত রাষ্ট্রিয় সম্মান প্রত্যাখ্যান করেছেন এ বর্বরতার প্রতিবাদে। সুস্থ বিবেক সম্পন্ন মানুষ কখনো উগ্রতা ও কোনপ্রকার সন্ত্রাসী কর্মকান্ডকে সমর্থন করতে পারে না।
সংখ্যালঘুরা বাংলাদেশের শীর্ষ বহু পদে অধিষ্ট। সবোচ্চ নাগরিক সুবিধা ভুগী। এখন সংখ্যালঘু ইসুতে কেউ যেন ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে না পারে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বজায় থাকুক প্রিয় বাংলাদেশে।