ফারহান আরিফ::
কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা-সংস্কৃতি,সিলেবাস ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কমাশিসা পরিবার লেখালেখি করায় অনেকের গা জ্বলছে। কমাশিসার নাম ধরে মুখে যা আসছে বলে যাচ্ছেন। কমাশিসার সিরিজ গুলোকে চটি বই আখ্যায়িত করে এবং যারা কমাশিসায় লেখছেন তাদেরকে অজ্ঞান মূর্খ বলে বিদ্রুপাত্বক কথা বলছেন। এমনকি যারা কওমি মাদ্রাসার সংস্কার নিয়ে লেখালেখি করছেন তাদেরকে কওমি মাদ্রাসার শত্রু উপাধী দিয়ে এদের লেখা বয়কট করতে পরামর্শ দিচ্ছেন। আসলে যারা আড়াল থেকে না বুঝে কমাশিসা কে নিয়ে সমালোচনা করছেন, সত্যিকারার্থে তাদের কমাশিসা সম্পর্কে একটুও ধারনা নাই।কমাশিসার মিশন, কমাশিসার টার্গেট, কমাশিসার চিন্তা ও ভবিষ্যৎ আন্দোলন সম্পর্কে তাদের ধারনা নাই বললেই চলে। আজ যারা গাজ্বলা কথা দিয়ে কমাশিসাকে প্রতিহত করার চেষ্টা করছেন তারা আসলেই না বুঝে তা করছেন। বুঝলে হয়ত সহযোগিতা না করলেও সমালোচনা করতেন না। শত বাঁধা আসুক কমাশিসা তার মিশন চালিয়ে যাবে, কওমি মাদ্রাসা গুলোকে একটা পর্যায়ে না আনার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত পরিশ্রম করে যাবে ইনশা আল্লাহ। যে যাই বলুক, কমাশিসা আন্দোলনের ঢেউ আঘাত হানতে শুরু করেছে।তা চলছে চলবেই। এতে আমরা একটু বিচলিত ও কুন্ঠিত নই। কমাশিসা পরিবারের উদ্দেশ্য মহৎ ও কল্যাণকর থাকায় আমরা ওদের কথায় মনে কিছু নিবনা। আমরা তাদের শুভবুদ্ধি উদয়ের অপেক্ষায় আছি, তারা একসময় বুঝতে পারবে সেই আশায় বসে আছি।
এক শ্রেণির তরুণ আলেম আমার পিছু নিয়েছেন, আমাকে নিয়ে সমালোচনার ফেণা তুলছেন। আমি এতে বিন্দুমাত্র ও ব্যতীত হইনা। আমাদের কথা বাদ দিলাম, আমরা তরুণ, অজ্ঞান মূর্খ মেনেও নিলাম। কমাশিসার প্রতিষ্টাতা ও পরিচালক সাহেবকে কি বলবেন, তাঁকেতো আর এসব কথা বলতে পারবেন না। এসব কথা বলার দুঃসাহস করতে পারবেন না। সবার দৃষ্টিতে খতিব তাজুল ইসলাম সাহেব এমন এক ব্যাক্তিত্ব এমন এক গবেষক ও গাইডবুক, যদি কওমিরা তিনির কদর জানে আমি বলব তিনি কওমির ভাগ্যাকাশে আমাদের জন্য এক আশির্বাদ ও অমূল্য রতন। একটা গাইড বুক, একটা সাজেশন্স ও একটা প্রতিষ্টান। আজ কওমি প্রতিষ্টান গুলোকে যুগোপযোগী করতে, একবিংশ শতাব্দির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে, যুগের চাহিদা মেটাতে, বর্তমান ডিজিটাল জামানায় ছাত্রদের ধ্যান-ধারনা পুষ্ট সিলেবাস প্রণয়নের জন্য তিনি যে স্বপ্ন দেখতেছেন এবং আমাদেরকে দেখাইতেছেন তা সত্যি যুগের শ্রেষ্ট পদক্ষেপ ও সুচিন্তা। খতিব তাজুল ইসলাম সাহেব দীর্ঘদিন যাবৎ নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, আমি স্যারকে সাধুবাদ জানাই। আল্লাহ তালা স্যারকে দীর্ঘদিন আমাদের মাঝে বাঁচিয়ে রাখুন! তিনির ধ্যান-ধারনা, চিন্তা-চেতনা এযুগের সেরা সাহসী উচ্চারণ, সময়ের যুগান্তকারী আহবান। তিনি যে নীরব আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন, তরুণ প্রজন্মের মেধাবী বিচক্ষণ আলেম সমাজ তাঁর ডাকে সাড়া দেওয়া শুরু করেছেন। আমাদের উচিৎ তিনির এই প্রচেষ্টাকে সামনে নিয়ে যেতে সর্বাত্বক সহযোগিতা প্রদান ।
সেদিন এক ভাই ফেসবুকে খুব গরম হয়ে কমাশিসার সিরিজ গুলোকে চটি বই বলে আখ্যায়িত করে শ্রুতাহীন সামিয়ানার নীচে বসে এক ওয়াজ ফরমাইলেন। ভাবছিলাম তিনি মনে হয় কোন শায়খে ফানি বা বৃদ্ধ লোক হবেন, যিনি আধুনিকতা, যুগের চাহিদা, এ প্রজন্মের ছাত্রদের ধ্যান-ধারনা সম্পর্কে গাফিল। পরে সব খুঁজাখুঁজি করে দেখতে পেলাম যে, না, তিনি তরুণ প্রজন্মের উদীয়মান যৌবনদীপ্ত এক নামের আলেম, যার মগজ দুইশত বছর আগেকার মানুষের নিউরন দিয়ে তৈরী।যে কীনা একটা মাদ্রাসায় পড়ানোকে চন্দ্র ও মঙ্গল জয়ের গর্ব করছেন। অথচ যার যবান থেকে সংস্কারের কথা বাহীর হওয়া সময়ের দাবী ছিল, কিন্তু বেচারা পুরাতন ভাতের প্রেমিক তা আগে জানা ছিলনা। তিনি নাকি দুইশত বছর আগের পাল্লা দিয়ে এ জামানার সব কিছু পরিমাপ করে চলতে চান। আগেকার যুগের ঘোড়া, গাধা ও গরুর গাড়ি দিয়ে এশিয়ান হাইওয়ে দিয়ে শ্বশুর বাড়ি ভেড়াতে চান। কি আশ্চর্য! উনার কি চোখে মহর মারা হয়েছে যে, এযাবৎ কালের কল্প কাহিনী সিস্টেম গুলো তিনির নজরে আসছেনা? বেচারা যুবকের ওয়াজ নছিহত শুনে অনেক হাসি পেলাম। অথচ উনি আমার মত পঁচিশ ছাব্বিস বছরের উদীয়মান তরুণ। ভাবছিলাম তিনির লেখায় একটা কমেন্ট করব, পরে অনেক কিছু ভেবে চিনতে আর করিনি।
আরেকটা পোস্টে দেখলাম কমাশিসার কর্মকে ষড়যন্ত আখ্যায়িত করে আকাবীর আসলাফের সোনালী বাণী প্রচারে বেচারা আটঘাট বেঁধে মাঠে-ময়দানে নেমেছেন। মনে হয়েছিল আকাবির আসলাফ দেরকে আমরাই মেরে ফেলেছিলাম সেই জামানায়, আজ তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে কমাশিসাকে ফাঁসিতে ঝুলাতে চান। কমাশিসা কোন দিন আকাবির আসলাফকে মায়নাস করেনি, তাদের চিন্তা-চেতনাকে বলি দিতে চায়নি। আমরা তাদের চিন্তা-চেতনাকে শ্রদ্ধা করি। আমাদের উত্তরসুরী আকাবির আসলাফ রা না থাকলে হয়ত কওমি মাদ্রাসার কোন অস্তিত্ব থাকতনা আজ। আল্লাহ তালা তাঁদেরকে শান্তিতে রাখুন। আজ যারা বিভিন্ন কওমি মাদ্রাসার সিস্টেম, কওমি মাদ্রাসার কেন্দ্রীয় বোর্ডগুলো পরিচালনা করছেন তারা অবিশ্যই এযুগের শ্রেষ্ট দিকনির্দেশক ও কওমির মাথার তাজ। তাঁদেরি পৃষ্টপোষকতা মেহনত মুশাক্ষাত ও পরিশ্রমে আজো বাংলার স্থানে স্থানে কওমি মাদ্রাসা নিজস্ব স্বকিয়তা বজায় রেখে ইলমে ওহির নুর ছড়াচ্ছে।আমি তাদেরকে কখনই খাটো করছিনা,রযথাযুগ্য সম্মান দিয়ে বলতে চাই যে, বর্তমানে কওমির কান্ডারিরা আকাবির আসলাফের দেওয়া সিলেবাস ইত্যাদিকে পুঁজি করে আজ অবধি চালিয়ে যাচ্ছেন। আকাবিরদের হাতে গড়া দরসে নেজামির সিলেবাসকে গনিমত ও ফরজ মনে করে স্বাচ্ছন্ধবোধ করছেন। দরসে নেজামিতে কোন ধরনের হেরফের করা হউক এটাকে তারা গুনাহ ও গুমরাহির কাজ বলে মনে করেন। তাই তারা দরসে নেজামিতে কোন প্রকার রদবদল করতে নারাজ। এ জন্যই দুইশত বছর পরে এসেও নিজেদের রুচি ইচ্ছা অনিচ্ছাকে কাজে লাগাতে পারেন নি।পারেন নি যুগের চাহিদাকে একটুও অনুভব করতে। পারেন নি একবিংশ শতাব্দির মুজেজাকে অনুধাবন করতে।
আমার দৃষ্টিতে তাঁরা দরসে নেজামি ও আকাবির আসলাফের পরাজিত সন্তান। পিতার রেখে যাওয়া সম্পত্তি নিয়ে পুত্রের গৌরব। নিজে কিছু করার যোগ্যতা রাখেন না। হয়তো তাঁদের কাছে এই সিলেবাস গুলো ধরে রাখা ফরজ ওয়াজিব হতে পারে কিন্তু তারা কি ভুলে গেছেন সেই কথা? সময় ও কালের অবস্থানে মাসআলাও পরিবর্তন হয়? আগে ফতুয়া দেওয়া হত টেলিভিশন দেখা সম্পুর্ন হারাম ও নাজায়িজ। আর এখন সেটেলাইট টিভি মিডিয়ায় ইসলাম কে তুলে ধরা সময়ের দাবী। আগে বৃটেনে যাওয়া ও বৃটেনের টাকাকে হারাম বলা হত, বলা হত যে, বৃটেনে খৃষ্টানরা বসবাস করে আর তাদের সাথে উঠাবসা ও তাদের টাকা পয়সা আনা জঘন্যতম হারাম। এখন বৃটেনের টাকা ব্যাতীরেকে কওমি মাদ্রাসা অচল। শুধু তাই নয়, এদেশের যতবড় মাপের আলেম ও বুজুর্গানে দ্বীন আছেন তাঁদের ছেলে-মেয়ে নাতি-নাতনীকে বৃটেনে সেটেল করার জন্য মরিয়া হয়ে আছেন। প্রতিবছর শত শত আলেম বৃটেন না গেলে বাড়িতে বিল্ডিং তুলতে পারেন না ও পেটের ভাত হজম হয়না। আমাদের আহলে ইলিমদের মাঝে-ও তাঁদের কাজ কর্মে পরিবর্তন লক্ষনীয়। আংগুল দিয়ে হাজারটা আমি দেখাতে পারব। নিজ মতলবের সব কিছুতেই তাঁরা পরিবর্তন আনছেন, সব কিছু পরিবর্তন করছেন সময় ও যুগের চাহিদা অনুভব করে, কিন্তু করছেন না কওমি মাদ্রাসার সিস্টেম ও সিলেবাস সংস্কার। এখানে কীযে এমন সমস্যা, কীযে সুমধুর রহস্যের ঝুলি লুকিয়ে আছে আমি বুঝিনা। হয়ত বয়স কম অজ্ঞান মুর্খ হওয়ায় বুঝিনা। আমার কথা বাদ দিলাম, খতিব তাজুল ইসলাম সাহেবের পরিকল্পনায় কমাশিসার পক্ষথেকে যে আন্দোলন বর্তমানে অব্যাহত রয়েছে এ আন্দোলন কে টেকানোর জন্য এক শ্রেণির আলেম নীল নকশা এঁকে যাচ্ছেন। তাদের সেকেলে চিন্তা ভাবনা নিয়ে তারা আমাদেরকে শত্রু ভাবছেন। তারা মনে করছেন কওমিতে আধুনিকতার রঙ লাগানো যাবেনা। এরকম আধুনিকতার পরশে তাদের সব কিছু বিনষ্ট হয়ে যাবে। ছাত্রদের চিন্তা-ভাবনা ধ্যান-ধারনা কাজ কর্ম সব অন্যদিকে চলে যাবে। কমাশিসা গবেষণার দৃষ্টিতে কওমির ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছে অন্যভাবে। আধুনিকতা দুই প্রকার (১) নষ্ট আধুনিকতা, যার ছুঁয়া পেয়ে ছাত্ররা পথহারা হবে। (২) মঙ্গলময় আধুনিকতা, যার পরশে ছাত্ররা একবিংশ শতাব্দির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে। সুতরাং যে আধুনিকতার মধ্যে খয়ের ও বরকত আছে আমরা সেই আধুনিকতার রঙ দিয়ে কওমিকে সাজাতে চাই। আল্লাহ তালা সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন-(আমিন)
লেখকঃফারহান আরিফ। এম সি,কলেজ সিলেট।কওমি টইটেল।