বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ সকাল ৬:১৪
Home / ইতিহাস ঐতিহ্য / ইরানের স্থাপত্য বিস্ময় : তাব্রিজের ‘নীল মসজিদ’

ইরানের স্থাপত্য বিস্ময় : তাব্রিজের ‘নীল মসজিদ’

Blue-Mosqueইরানের অন্যতম ঐতিহাসিক নগরী তাব্রিজ। ইরানের পূর্ব আজারবাইন প্রদেশের এ নগরীর নাম নানা কারণে বারবার ইতিহাসে উচ্চারিত হয়েছে। আর এ নগরেই রয়েছে ইসলাম ও ইরানের স্থাপত্যকলার অনেক অপূর্ব নিদর্শন। এ রকম একটি অপরূপ নিদর্শনের নাম ‘নীল মসজিদ।’ কেউ কেউ একে ‘টারকোয়েজ অব ইসলাম’ ‘ইসলামের ফিরোজা নিদর্শন’ হিসেবে অভিহিত করে থাকেন। এ মসজিদ ভবনের বাহির ও ভেতর ভাগ আচ্ছাদিত হয়েছে মনোরম নীল ও ফিরোজা রংগের টাইলস দিয়ে।
পনের শতকে এ মসজিদ নির্মিত হয়েছিল। সে সময় শিয়া তুর্কি সম্প্রদায় ‘কারা কোইনলুর’ নেতা জাহান শাহের আদেশে এ অনবদ্য স্থাপনা তৈরি হয়। প্রতিদ্বন্দ্বি সম্প্রদায়ের হাতে নিহত হওয়ার পর, এ মসজিদের দক্ষিণাঞ্চলে সমাধিস্থ করা হয় তাকে। ‘কারা কোইনলুর’ সম্প্রদায় ১৩৭৫ থেকে ১৪৬৮ সাল পর্যন্ত বর্তমান আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, তুরস্কের পূর্বাঞ্চল এবং ইরাক পর্যন্ত শাসন করেছে। ‘কারা কোইনলুর’ শাসকদের মধ্যে সবচেয়ে খ্যাতি লাভ করেছিলেন জাহান শাহ। ১৪৩৮ থেকে ১৪৬৭ সাল পর্যন্ত তিনি দক্ষিণ ককেশাস এবং ইরানের আজারবাইজান শাসন করেন। আনাতোলিয়ার পশ্চিমাঞ্চল, বর্তমান কালের ইরাকের প্রায় পুরোটা ও মধ্য ইরান পর্যন্ত তিনি তার শাসনের বিস্তার ঘটিয়েছিলেন। তাব্রিজকে নিজ সাম্রাজ্যের রাজধানী করার পর তিনি নির্মাণ করেন এই ‘নীল মসজিদ’ ।

এই স্থাপনার মূল কমপ্লেক্স নির্মিত হয় ১৪৬৫ সালে ইজ্জতদ্দিন কায়াপুচির সময়ে। সে সময়ে এখানে একটি বিদ্যালয়, একট গণ-হাম্মাম ও গ্রন্থাগার নির্মিত হয়েছিল।

মনোরম নক্সাকাটা টাইলস ও ইটের সমন্বয়ে নির্মিত মসজিদ। এককালে এ সব নক্সায় মসজিদের পুরোটাই আচ্ছাদিত ছিলো। বেশির ভাগ টাইলসই হলো নীল ও ফিরোজা বর্ণের তবে তাতে কালো ও সাদার ছোপ দেয়া ছিল। মসজিদের মূল প্রবেশ দ্বারে পবিত্র কোরআনের আয়াত উৎকীর্ণ ছিল। আর এসব আয়াত উৎকীর্ণ করা হয়েছিল তুলুথ ও কুফিক হরফে। মসজিদের সিংহদ্বারে লিপিবন্ধ হয়ে আছে, আজারবাইজানের অন্যতম খ্যাতিমান ক্যালিওগ্রাফার বা লিপিশিল্পী নেয়ামতউল্লাহ ইবনে মোহাম্মদ বাভাবের নাম। তিনিই এ মসজিদের অভূতপূর্ব টালিগুলোর নক্সা-শিল্পী ছিলেন। এই সিংহদ্বারে জাহান শাহের নামও উৎকীর্ণ হয়ে আছে। এককালে এটি স্বর্ণ মণ্ডিত ছিল। মসজিদের মূল অংশের উর্দ্ধভাগে পুরো সুরা আল ফাতাহ লিপিবদ্ধ হয়েছে। দুই গম্বুজ বিশিষ্ট এ মসজিদের তিন পাশ ঘিরে খিলানের সারি রয়েছে। মসজিদটির দক্ষিণাঞ্চলে দু’টি সুদীর্ঘ মিনার রয়েছে। মসজিদের মূল অংশের প্রবেশ দ্বারে ফার্সি কবিতা উৎকীর্ণ করা হয়েছে। মসজিদের দক্ষিণাঞ্চলে ছোট একটি কক্ষ রয়েছে। এটি জাহান শাহের ব্যক্তিগত কক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। মর্মর পাথরে নির্মিত এ কক্ষে তুলুথ লিপিতে পবিত্র কোরআনের বাণী লেখা রয়েছে। আর এ বাণীর প্রেক্ষাপট অলংকৃত হয়েছে জ্যামিতিক নক্সায়।

মূল ভবনের যে অংশ এখনো টিকে আছে তা থেকে দেখা যায়, অতীতের সোনালি দিনগুলোতে মসজিদ ফিরোজা এবং ষড়ভূজাকৃতি টাইলসে আবৃত ছিল। এ টাইলসে জ্যামিতিক নক্সাসহ ফুল-পাতা ও নানা বাণী খচিত ছিলো। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মসজিদের ছাদের ভেতরের দিকে অতীতে স্বর্ণমণ্ডিত ও মসজিদের মেঝ মর্মর পাথরে নির্মিত ছিল । নীল মসজিদের দক্ষিণে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কক্ষে জাহান শাহ ও তার ঘনিষ্ঠ জনদের সমাহিত করা হয়েছে। সমাধিসৌধের পুরোটাই উচুঁমানের মর্মরে আচ্ছাদিত এবং এখানে পবিত্র কোরআনের চিরন্তনী বাণী লিপিবদ্ধ হয়ে আছে।

১৭৭৯ সালের প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পে প্রায় গোটা স্থাপনাই ধ্বংস হয়ে যায়। সে সময় এর সামনের অংশ ও কয়েকটি খিলান কেবল ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল। ১৯৭৩ সালে এ মসজিদ পুনর্গঠনের প্রকল্প নেয়া হয়। ভূমিকম্পের পর থেকে এ পুনর্গঠন প্রকল্প শুরুর আগ পর্যন্ত ধ্বংস্তুপের মধ্য থেকে স্বর্ণ ও মর্মর পাথর যথেচ্ছ লুটের শিকার হয়েছে।

কালের ভ্রূ-কুটি উপেক্ষা করে আজ মসজিদের যে অংশ রক্ষা পেয়েছে তা অতীতের সেই সুবিশাল ও অনবদ্য সৌন্দর্য সৌকর্য তুলে ধরছে। তৈমুর বংশীয় শাসকদের মহৎ এক শিল্প কর্মের নিদর্শন হয়ে আছে তাব্রিজের এই ‘নীল মসজিদ।’ আজ এই মসজিদ প্রাঙ্গণ মুখরিত হয়ে ওঠে দেশি-বিদেশি হাজারও পর্যটকের পদভারে

About Abul Kalam Azad

mm

এটাও পড়তে পারেন

আদালতের ওপর বিশ্বাস ভেঙে গেছে: সায়্যিদ মাহমুদ মাদানী

নাজমুল মনযূর: আদালতের ওপর বিশ্বাস ভেঙেছে ইংরেজ খেদাও আন্দোলনে অংশগ্রহণ করা সেই মুসলমানদের। এমন কথাই ...