ধরা যাক—
হাটহাজারী মাদরাসায় দাওরা পাস ছেলেদের জন্য এক বছরের ‘ভিডিওগ্রাফি এন্ড সিনেমাটোগ্রাফি’ কোর্স চালু করা হয়েছে…
ধরা যাক—
ফরিদাবাদ মাদরাসায় চালু করা হয়েছে ‘স্ক্রিপ্ট রাইটিং এন্ড স্ক্রিনপ্লে’র একটা বছরব্যাপী কোর্স…
ধরা যাক—
লালবাগ মাদরাসায় ইফতা ক্লাসে দু বছরের জন্য চালু করা হয়েছে ‘ভিডিওগ্রাফিক্স এন্ড অ্যানিমেশন’ কোর্স…
ধরা যাক—
রাহমানিয়া এবং মালিবাগে চালু হয়েছে ‘ফিল্ম মেকিং এন্ড অ্যাক্টিং’-এর দুই বছরের বিশেষ কোর্স…
ধরা যাক—
জামিল মাদরাসা ও দরগাহ মাদরাসায় চালু হয়েছে ‘কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এন্ড ওয়েব ডেভেলপিং’ কোর্স…
ধরা যাক—
চরমোনাই মাদরাসা এবং দারুল আরকামে চালু হয়েছে ‘ফাইন আর্টস এন্ড গ্রাফিক্স ডিজাইন’ কোর্স…
কথাগুলো শুনতে কেমন লাগছে? অত্যন্ত বদ লাগতেছে, বুঝতে পারছি। কিন্তু বদ লাগার কারণটা কী? কারণ হলো— এসব গোনাহর কাজ এবং বিধর্মী-মুশরিকদের কাজ। মাদরাসার পবিত্র আঙ্গিনায় এমন ধর্মবিরোধী কাজ-কারবার, ছি ছি ছি…
মেরে ভাই ও দোস্ত বুজুর্গ!
একদিন আমরা মাইকে আজান নাজায়েজ বলেছি, একদিন বাংলাকে হিন্দুদের ভাষা বলেছি, একদিন টিভি-রেডিওকে শরিয়ত অসম্মত বলেছি, একদিন ভিডিওগ্রাফিকে হারাম বলেছি।
কিন্তু সুখের কথা হলো, এসবই বিজ্ঞ আলেমদের ফতোয়ায় অধুনা সমাজে জায়েজ হয়েছে।
কিন্তু দুঃখের কথা হলো, আমাদের জায়েজ ফতোয়া দিতে দিতে টিভি আর ভিজ্যুয়াল মিডিয়ায় ছেয়ে গেছে পাপের সাম্রাজ্য। মুসলিম শিশুরা আপনি আমি না চাইলেও দেখছে— ডোরেমন, টম এন্ড জেরি, ছোটে ভিম, কৃষ্ণা, গনেশ, কিরণমালা, কুংফু পান্ডা, আইস এজ, হোটেল ট্রানসালভানিয়া, অ্যাভাটার-এর মতো ইসলাম সাংঘর্ষিক হাজারও কার্টুন বা অ্যানিমেশন।
সুতরাং আপনি না চাইলেও এসব সমাজে বন্যার পানির মতো হু হু করে ঢুকে পড়েছে। শিশুরা বাসায় রাতে দেখছে কৃষ্ণা, সে সকালে মক্তবে যাবে কোন দুঃখে! সারাদিন তার মজা করার জন্য কার্টুন নেটওয়ার্ক আর পোগো হাজারও ভিডিও নিয়ে হাজির, কায়দা-সিপারার প্রতি তার আগ্রহ আসবে কোত্থেকে?
কিন্তু যদি সে টিভিতে অ্যানিমেশন দেখতো উমর ইবনুল খাত্তাব, খালিদ বিন ওয়ালিদ, তারিক বিন জিয়াদ, বখতিয়ার খলজি, সালাহউদ্দিন আইয়ুবির…
কিংবা কার্টুনের চরিত্রগুলো হতো রাবেয়া বসরি, বায়েজিদ বোস্তামি, বনি ইসরাইল, আসহাবে কাহাফ, নুহের প্লাবন, আসহাবে ফিল, সিন্ধু বিজয়ের… তাহলে মকতব আর কায়দা-সিপারা, নামাজ-রোজা আর ধর্মের প্রতি ভালোবাসা মন থেকেই সৃষ্টি হতো।
কিন্তু আমাদেরই গাফলতির কারণে এসব শিশুরাই বড় হয়ে তৈরি হচ্ছে আসিফ মহিউদ্দীন, জেবতিক আর পিয়াল বাবাজি। দোষটা তো একচুয়ালি আমাদেরও কম না।
কথাগুলো আবোল তাবোলই হয়তো, তবে এর প্রয়োজনীয়তা এবং প্রতিক্রিয়া মোটেও আবোল তাবোল নয়। বাংলাদেশের প্রতিটি বড় মাদরাসাতেই এই কোর্সগুলো অন্তর্ভুক্ত করা এক প্রকারের ফরজে কেফায়া হয়ে গেছে। সমাজের কেউ আদায় না করলে গোনাহগার আমরা সবাই হবো।
বিজ্ঞ প্রিন্সিপ্যাল মহোদয়গণ কি বিষয়টি ভেবে দেখবেন?