মুফতি রাশিদুল হক::
হাদীস শরীফে দাড়ি সংক্রান্ত ছয়টি শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। সবগুলো শব্দই দাড়ি বড় করার প্রতিনিধিত্ব করে। দাড়ির ক্ষেত্রে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লমের নিজের আমল কী ছিলো তাও আমরা বিশুদ্ধ সূত্রে জানতে পারি। হযরত জাবের ইবনে সামুরা রা. বলেন: “রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দাড়ি মুবারক ঘন ছিল।” হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সাখবারা ও হযরত খাব্বাব ইবনে আরাত রাযি. এর কথোপকথন দ্বারাও নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাড়ি দীর্ঘ হওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হয়। (বুখারী ১/১০৩,১০৫) হযরত আব্দুল্লাহ রা. হযরত খাব্বাব রা.-কে প্রশ্ন করলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোহর ও আসরের নামাজে কেরাত পড়তেন কি? তিনি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ, তিনি আসরের নামাজে “কেরাত পড়তেন।” হযরত আব্দুল্লাহ রাযি.-এর প্রশ্ন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসরের নামাজে উচ্চস্বরে কিরাত পড়তেন না। তাহলে তাঁর কেরাত পড়ার বিষয়টি কীভাবে বোধগম্য হতো? হযরত খাব্বাব রাযি. জবাবে বললেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দাড়ি মুবারক নড়া-চড়ার দ্বারা বুঝতাম যে, তিনি কেরাত পড়ছেন। (আবু দাউদ, বজলুল মাজহুদ ২/৪৪) একথা দিবালোকের মত স্পষ্ট যে, দাড়ি যথেষ্ঠ পরিমাণ লম্বা হলেই তা কেরাত পড়ার সাময় নড়া-চড়া করে। ছোট দাড়ি কেরাত পড়ার সময় নড়া-চড়া করার প্রশ্নই ওঠে না।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অজু-গোসলের সময় দাড়ি খিলাল করতেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। এর দ্বারাও বুঝা যায় যে, তাঁর দাড়ি মুবারক বড় ছিল। কেননা ছোট দাড়িতে খিলাল সম্ভব নয়। আর তার প্রয়োজনও নেই। কেননা তাতে এমনিতেই পানি পৌঁছে যায়। সাহাবায়ে কেরাম প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আমলগুলো প্রত্যক্ষভাবে দেখেছেন এবং সুন্নাতের উপর যথাযথভাবে আমল করতেন। তাদের আমল থেকেও দাড়ি দীর্ঘ করার প্রমাণ পাওয়া যায়। ইমাম বুখারী রহ. সুন্নাতের উপর নিজেকে কুরবানকারী প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাযি. এর আমলকে এ ব্যাপারে শরীআতের মাপকাঠি হিসেবে পেশ করেছেন। এ ব্যাপারে তাঁর আমলটি পেশ করে ইমাম বুখারী বলেন: ‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাযি. হজ্জ বা উমরার শেষে দাড়ির এক মুষ্টির অতিরিক্ত অংশ ছেঁটে ফেলতেন’। (বুখারী: ২/ ৮৭৫) শরীয়তের আরো অন্যান্য নির্ভরযোগ্য দলিলের আলোকে ফুকাহায়ে কেরাম লিখেছেন: “পুরুষের জন্য এক মুষ্টি পরিমাণ দাড়ি রাখা ওয়াজিব। কোনো শরয়ী ওজর ব্যতিরেকে দাড়ি মু-ন করা হারাম। এ প্রকার কাজে লিপ্ত ব্যক্তি ফাসেক। দাড়ি ছেঁটে এক মুষ্টির কম করে রাখা ‘মাকরূহে তাহরীমী’। এরূপ কাজে অভ্যস্ত হওয়া ফিস্ক। এটি উম্মতের সর্বজন স্বীকৃত একটি মাসআলা।” (দাড়ি ও আম্বিয়ায়ে কেরামের সুন্নাত: ৩১) পরিণত বয়সে দাড়ি পুরুষের সৌন্দর্যের প্রতীক। নারীদের মাথার চুল মু-ন যেমন সৌন্দর্যহানি ঘটায়, ঠিক তেমনি দাড়ি মু-নও পুরুষের সৌন্দর্য বিনষ্ট করে। দাড়ি মুণ্ডন করা একটি নিকৃষ্ট কাজ। এটি আল্লাহ প্রদত্ব অপরূপ সৌন্দর্যের বিকৃতিকরণের নামান্তর।
মুফতি রাশিদুল হক, সিনিয়র মুহাদ্দিস ও শিক্ষাসচিব, নরাইবাগ ইসলামিয়া মাদরাসা, ঢাকা।