সময় সুযোগের অভাবে নিয়মিত স্ট্যাটাস লিখতে না পারলেও প্রায় নিয়মিতই অন্তত ঢু মারি ভার্চুয়াল জগতে৷ এখানকার রংবেরঙের হাসি-কান্না আর সত্য-মিথ্যার সংবাদগুলো দেখি৷ অনেক সময় নানারকম প্রতিক্রিয়াও তৈরি হয় মনে ৷ অধিকাংশ সময় সেগুলো ব্যক্ত করার আগেই মিলিয়ে যায় বিস্মৃতির অন্তরালে৷
গত কয়েকদিন আগে একটা ভিডিও ক্লিপ দেখলাম বাংলাদেশের মিডিয়াবিখ্যাত ইসলামিক স্কলার কাজী ইবরাহীম হাফিজাহুল্লাহর৷ তাতে তিনি একটি গবেষনা উপস্থাপন করেছেন৷ তার এই গবেষনার মাধ্যমে চলমান একটি বিতর্কিত বিষয়ে তৃতীয় মাত্রা যোগ হয়েছে বলে আমার মনে হল৷
এতোদিন বিতর্ক শুনেছি মানুসের গলায় ব্যবহৃত “টাই”এর উদ্ভব, প্রচলন ও ব্যবহারের ইতিহাস নিয়ে ৷ অনেককে বলতে শুনি, টাই নাকি খ্রীষ্টানদের ধর্মীয় বিশ্বাস বিতর্কিত ক্রুশের রূপান্তরিত কালচার ৷ সুতরাং সে হিসেবে টাই শুধু বিজাতীয় কালচারই নয়, বরং স্পষ্ট এক কুফরী কালচার৷ অপর দিকে এর বিপরিতে ঐতিহাসিক সুত্রের বরাতে ভিন্ন তথ্যও শুনতে পাই ৷ কোন এলাকায় নাকি মুসলিম অভিযানের পর শীতের প্রকোপ থেকে আত্মরক্ষার জন্য মুসলিম সৈনিক/নাগরিকরাই সর্বপ্রথম গলায় টাই জড়ানোর সংস্কৃতির উদ্ভব ঘটায় ৷ এবিষয়ে আমার নিজস্ব ইলম অপর্যাপ্ত থাকায় এসংক্রান্ত আলোচনায় অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকাই শ্রেয় মনে করি এবং আরো মনে করি, যারা আমার মত সুনির্দিষ্ট প্রমাণের বিষয়ে অজ্ঞ তাদের সকলেরই নিরব থাকা চাই ৷ যাক সে কথা ৷
এত দিন শুলাম “টাই” মুসলিমদের উদ্ভব না খ্রীষ্টানদের উদ্ভব- তা নিয়ে বিতর্ক! কিন্তু কাজী ইবরাহীম সাহেব মনে হল এই বিতর্ক ছাপিয়ে সরাসরি পবিত্র কুরানের আলোকে “টাই” প্রমাণ করার কসরত করলেন৷ ইনিয়ে বিনিয়ে طى থেকে “টাই” বা আঞ্চলিক নোয়াখালীর ভাষায় “তাও” করা বা ভাজ করার অর্থ বের করলেন৷
এক ভাষার শব্দ ঈষৎ পরিবর্তন হয়ে অন্য ভাষায় ব্যবহার হতেই পারে৷ পৃথিবীর প্রতিটি ভাষাতেই এমন নযীর খুঁজে পাওয়া যাবে ৷ ভাজ করা অর্থের আরবী “তই” থেকে ইংলিশ “টাই” বা নোয়াখালীর “তাও” হতেও পারে আবার নাও হতে পারে ৷ তই থেকে টাই হয়েছে বিষয়টি যেহেতু কোনো সহীহ হাদীসের দ্বারা প্রমাণিত নয় তাই সেটা কেউ ইচ্ছা করলে মানতেও পারে, নাও মানতে পারে৷ কিন্তু কথাতো সেটা না, কথা হল, টাই ব্যবহার করা নিয়ে বিতর্কের সমাধান কী?
তই দিয়ে টাইয়ের বৈধতা প্রমাণের চেষ্টা দেখে ছোটকালের এক মামার গল্প মনে পড়ে গেল – আমার এক দূরসম্পর্কের মামা ছিলেন “নাসির মামা ” যেমন রসিক তেমন ফাযিল ৷ ছোটকালে নাকি কিছু দিন মাদরাসায় পড়েছিলেন ৷ সেই সুবাদে কেউ একজন তাকে একবার অনুরোধ করলেন, ভাই আমার ছেলের জন্য একটা নাম ঠিক করে দিন৷
কেমন নাম?
কুরআনে আছে এমন নাম৷
অনেক চিন্তা করে বললেন, নাম রাখো “খান্নাস”৷ এটা পবিত্র কুরআনে আছে৷
“মিন শাররিল ওয়াসওয়াসিল খান্নাস”৷
তাই বলি কি! কুরআনে তো খাননাস আছে৷ শাইতান আছে৷ ফিরআউন আছে৷ জাহান্নাম আছে৷ তইও আছে৷ তাতে “টাই”এর বৈধতা অবৈধতার কী প্রমাণ হলো?
কুরআনের তই তো কেয়ামতের ধ্বংসযজ্ঞের বিবরণ৷ তাতে উল্টো “টাই” ধ্বংসের প্রতিক বলে সাব্যস্ত হবে না তো আবার? আমার আবারও কেন যেন শুধু সেই ফাযিল মামার গল্পটা মনে পড়ছে আর পেট ফেটে হাসি আসছে…৷
লেখক : যুগ্ন মহাসচিব, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস [ফেসবুক থেকে নেয়া]