বেশিরভাগ ইসলামী রাজনীতিবিদ, যাদের ইলমী গভীরতা রয়েছে, নিজেদের স্বকীয়তা সম্পর্কে ওয়াকিফহাল এবং সচেতন, তারা একথা বিশ্বাস রেখেই রাজনীতি করেন যে, আমরা গণতন্ত্র মানি না৷ গণতন্ত্রের বেশ কয়টি মৌলিক ধারা সরাসরি কুফুরী আকীদা হওয়ায় গণতন্ত্রে বিশ্বাস স্থাপন করা মু’মিনদের ঈমানের জন্যে আত্মঘাতী৷ একথা মনেপ্রাণে তারা বিশ্বাস করেন৷
কিছু মাডারেট ইসলামী রাজনীতিক আছেন, ইলমের ছিটেফোঁটাও যাদের মাঝে নেই, তারা সম্পূর্ণই গণতান্ত্রিক এবং তারা ইসলামকে গণতন্ত্রের চোখে দেখতে পছন্দ করেন৷ এটা তাদের ইলমের কমতির কারণে হতে পারে, আবার তাগুতী ও কুফুরী শক্তির প্রভাবে নৈতিকভাবে পরাজিত হবার কারণেও হতে পারে৷ ইসলাম নিয়ে এদের হীনম্মন্যতা এবং স্থুল মস্তিষ্কপ্রসূত যুক্তি দেখলে যেমন বড্ড হাসি পায় আবার দুঃখও লাগে৷ তবে এই প্রজাতির লোকদের ব্যাপারে আমাদের কোনো কথা নেই৷ তাদেরকে তাদের হালতের উপর ছেড়ে দেয়া উচিত৷ সময়ই বলে দেবে তারা কোন্ পথ ধরবে?
যারা সুস্থ ধারার ইসলামী রাজনীতি করেন, তারা একথাও খুব ভালো করে বিশ্বাস রাখেন যে, প্রচলিত গণতান্ত্রিক পন্থায় রাজনীতি করে দ্বীন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়৷ তাহলে কী রাজনীতির নামে এরকম সময় নষ্ট করা অযথা? না এটাকে আমরা সম্পূর্ণ অযথা বলি না৷ একে আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুবিধায় স্রেফ সাময়িক প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা বলতে পারি৷ এটাকে মাকসূদে আসলী তথা মূল লক্ষ-উদ্দেশ্য বানিয়ে ফেলা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়৷ দারুল উলূম দেওবন্দের লক্ষ-উদ্দেশ্যের মধ্যে প্রচলিত রাজনীতির কোনো নাম-নিশানাও কেউ দেখাতে পারবে না৷ আরবী শব্দ ‘সিয়াসাত’ আর প্রচলিত গণতান্ত্রিক ‘রাজনীতি’ সমার্থক হিসেবে গণ্য করবার আগে আরবী অভিধান ঘেটে ‘সিয়াসাত’ শব্দের তাহকীক দেখে নেয়ার আহবান জানাবো৷
দীর্ঘদিনের আমার উপলব্ধি বলছে, বর্তমানে ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো যথেষ্ট ইমেজ সঙ্কটে ভুগছে৷ এই পরিস্থিতি দিনদিন অস্তিত্ব সঙ্কটের দিকেই এগুচ্ছে৷ এর পেছনে অনেকগুলো কারণ থাকলেও মৌলিকভাবে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট কারণ চিহ্নিত করা যায়-
এক. ইলমী ইনহেতাত তথা জ্ঞানার্জনের দিক দিয়ে অধঃপতন৷ কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া একটা প্রবাদ চাউড় হয়ে গেছে যে, লেখাপড়ায় দুর্বল ছাত্ররা রাজনীতি করে? নাকি রাজনীতিতে জড়িয়ে ছেলেরা লেখাপড়ায় পিছিয়ে পড়ে? অবশ্যই আমাদের কর্ণধারদের বিষযটি নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবা উচিত৷ যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ইলমের দিক দিয়ে পঙ্গু হয়ে গড়ে না ওঠে৷
দুই. তারবিয়াত, তাযকিয়া তথা আত্মশুদ্ধিমূলক কর্মকাণ্ডের অনুপস্থিতি৷ রাজনীতির সাথে জড়িত থাকা না থাকার প্রশ্ন নেই, আমাদের কয়জনের সুনির্দিষ্ট তা’লীমী মুরব্বী আছেন? কয়জনের ইসলাহী মুরব্বী আছেন? বাংলাদেশের ইসলামী রাজনীতির তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, রাজনৈতিক মুরব্বির দ্বারা ইসলাহী মুরব্বির প্রয়োজনীয়তা পূরণ হয় না৷ যদি পূরণ হতো, তাহলে আমাদের মাঝে এই নোংরামি ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না৷
তিন. গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদের মতো জঘন্য, উম্মাহর জন্যে বিষতূল্য মতবাদসমূহ সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা না থাকা৷ উম্মাহর অধঃপতনের এই সমস্ত কারণগুলো সম্পর্কে দিনদিন আমাদের অজ্ঞতার পরিধি যতই বাড়ছে, হক থেকে আমাদের দূরত্বও ততোই প্রলম্বিত হচ্ছে৷ আমরা যে ক্রমেই হক থেকে দূরে সরে যাচ্ছি, সেই উপলব্ধিটুকুও আমাদের নেই৷ জনসমক্ষে এই কথাগুলো বললে উল্টো অনেক কিছুর ট্যাগও খেতে পারি৷
সাহস করে মনের কিছু অভিব্যক্তি পেশ করলাম এই আশায়; যদি সামান্যতম উপলব্ধিও আমাদের হয়৷