বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ১০:৫০
Home / আন্তর্জাতিক / আসাম নির্বাচন ও ‘কিং মেকার’ বদরুদ্দিন আজমল

আসাম নির্বাচন ও ‘কিং মেকার’ বদরুদ্দিন আজমল

resize_1459821424কাজী আবুল কালাম সিদ্দীক ::

এপ্রিল থেকে আসামসহ আরও কয়েকটি রাজ্যে বিধানসভা ভোট শুরু হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে ভোট হবে ছয় দফায়, সাত দিনে। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে। আর আসামে এক সপ্তাহ ধরে দুই দফায় দুই দিনে ভোট হবে। পশ্চিমবঙ্গে ভোট শেষ হবে ৫ মে, আসামে ১১ এপ্রিল। সবক’টি রাজ্যের ভোট গণনাই ১৯ মে (একদিনে) হবে। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন এ দুইটি রাজ্যসহ পাঁচটি রাজ্যের নির্বাচনী নির্ঘণ্ট প্রকাশ করেছে। বিবিসি।
আসাম নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়া সব দলেরই প্রচুর আশা-ভরসা। গেল লোকসভার সাফল্যকে অবলম্বন করে আসাম গণপরিষদ ও বোরোদের দল বিপিএফের সঙ্গে জোট করে নির্বাচন করছে বিজেপি। ২০১১ সালের নির্বাচনে এ তিন দল আলাদা নির্বাচন করে সব মিলে ৩৪ শতাংশ ভোট ও ২৭টি আসন পেয়েছিল। কংগ্রেস একা পেয়েছিল সাড়ে ৩৯ শতাংশ ভোট ও ৭৮টি আসন। মাওলানা বদরুদ্দিন আজমলের এআইইউডিএফ পেয়েছিল ১২.৩ শতাংশ ভোট ও ১৮টি আসন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে বিজেপির সিনিয়র নেতারা আসামে বিভিন্ন উপলক্ষে তুমুল গতিতে প্রচারণা চালান। দলের সভাপতি সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য বা কংগ্রেস থেকে আসা হিমন্ত শর্মার বদলে সামনে নিয়ে আসেন এক সময়ের ডাকসাইটে ছাত্রনেতা সর্বানন্দ সোনোয়ালকে। এতে করে মুসলিম ভোট নিয়ে কংগ্রেস আর সারা ভারত সংযুক্ত গণতান্ত্রিক মোর্চার (এআইইউডিএফ) ভোট ভাগাভাগির মাঝে উগ্র জাতীয়তাবাদী হিন্দু ভোট একত্রীকরণ উদ্দেশ্য। কিন্তু আসামে এ নেতাকে মানতে নারাজ অনেকেই। কংগ্রেসও এটাকেই কাজে লাগাতে চাইছে। ফলে বিজেপি শিবিরের চিন্তা বাড়ছে। বিহিত কারণেই তারা দোসরের সন্ধানে ছিল মরিয়া। এক সময় বামদের ঘনিষ্ঠ অসম গণপরিষদকে ক্ষোভ-বিক্ষোভের মাঝে ২৪টি আসন ছেড়ে দিয়েছে তারা। বড়ো পিপলস পার্টির হাঙ্গাব্রা গোষ্ঠীকে ছেড়ে দিয়েছে ১৬টি আসন। এমনকি বদরুদ্দিন আজমল না করে দিলেও নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে এসেও বিজেপি তার দিকে হাত বাড়িয়ে রেখেছিল।
কেন বিজেপির মতো একটি বড় দল একজন দেওবন্দি আলেমের দিকে হাত বাড়িয়ে রেখেছিল? কে তিনি? কী তার কৃতিত্ব? এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে ভিন্ন দুইটি অনুষ্ঠানের দুইটি উদ্ধৃতির দিকে কান পাতা যাক। আসামের ধুব্রি এলাকায় এক জনসভায় মাওলানা বদরুদ্দিন আজমল ২০০৫ সালে অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (এআইইউডিএফ) প্রতিষ্ঠার সময় কংগ্রেস নেতা ও আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ বলেছিলেন, ‘বদরুদ্দিন আজমল কে?’ এরপর বোরোল্যান্ড টেরিটোরিয়াল কাউন্সিলের চারটি আসনে জয়লাভ করে এআইইউডিএফ। সেখানে আসাম রাজ্যের ক্ষমতাসীন কংগ্রেস কোনো আসন পায়নি। এরপর নওগাঁও জেলার ধাইংয়ে এক সমাবেশে এআইইউডিএফের প্রধান মাওলানা বদরুদ্দিন আজমল বলেন, ‘তরুণ গগৈ কে?’
তরুণ গগৈকে আজমলের পাল্টা জবাব দেয়ার সাহস আসামের রাজনীতির নতুন শক্তির আগমনের আভাস দেয়। তীক্ষè রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পাশাপাশি রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে আজমলের বিস্ময়কর উত্থান হয়েছে। সুপ্রিমকোর্ট বিতর্কিত অবৈধ অভিবাসী (ট্রাইব্যুনাল দ্বারা নির্ধারিত) আইনটি (আইএমডিটি) বাতিল করে দেয়। আইনটি বাতিল করতে সর্ব আসাম ছাত্র ইউনিয়নের নেতা ও বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সর্বানন্দা সোনোয়াল দীর্ঘ আইনি লড়াই চালান। কিন্তু আইনটি অভিবাসীদের প্রতি হয়রানির বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করত। কংগ্রেস সরকার অভিবাসীদের সুরক্ষার জন্য আইনটি করেছিল।
২০১১ সালে তরুণ গগৈ যখন বারাক ভ্যালিতে গিয়ে ‘হিন্দু অভিবাসী’দের সুরক্ষার কথা বলেন, এ সময় মুসলিম অভিবাসীদের রক্ষার জন্য আজমল র‌্যালি করেন। ২০০৬ সালে এআইইউডিএফ ১০টি আসন পেয়েছিল; কিন্তু ২০১১ সালে ১৮টি আসন পেয়ে আসামের রাজনীতিতে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আবির্ভূত হয়। পূর্ব এশিয়া থেকে ইউরোপ, ৩৪টি দেশে বিস্তৃত বিশাল আতর সাম্রাজ্যের অন্যতম কর্ণধার মাওলানা বদরুদ্দিন আজমল। লোকশ্রুতি রয়েছেÑ মূলত আসামের ৩৬ শতাংশের বেশি সংখ্যালঘু ভোটারই তার ভরসা। অর্থাৎ মুসলিমরাই তার ভোটব্যাংক।
এ ধারণাতেই বিরোধীদের অভিযোগ, আজমল শুধু একটি সম্প্রদায়ের লোকের স্বার্থ সুরক্ষা করে। আজমল এ দাবি স্রেফ উড়িয়ে দেন। তথ্যও আজমলের পক্ষে কথা বলছে। ২০০৬ সালের নির্বাচনে এআইইউডিএফ ৭৩টি আসনে প্রার্থী দেয়। তাদের মধ্যে ৩৮ জনই ছিলেন অমুসলিম। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে দলটির ১১ আসনের প্রার্থীদের মধ্যে ছয়জন ছিলেন অমুসলিম।
ক্লাস এইট অবধি ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করার পর ধর্মপ্রাণ ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে বদরুদ্দিন উত্তর প্রদেশে ইসলামী শিক্ষার বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসায় পড়াশোনা শুরু করেন। মাস্টার্সও করেন ইসলামিক থিওরির ওপর। ধর্মচর্চা, ব্যবসার পাশাপাশি সমাজসেবা ছিল তার মূল বিষয়। শাইখুল ইসলাম হুসাইন আহমদ মাদানির জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের প্রতি তার আস্থা ছিল প্রথম থেকেই।
১৯৮২ সালে মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষার প্রসারে গড়ে তোলেন এনজিও মারকাজুল মাআরিফ। পরে অবশ্য সেই সংগঠনই নাম পাল্টে হয় আজমল ফাউন্ডেশন। চারটি দাতব্য হাসপাতাল ছাড়াও বিভিন্ন সেবামূলক কর্মকা-ের সঙ্গে যুক্ত এ সংস্থার সঙ্গে কাজ করার পাশাপাশি ২০০২ সালে তিনি জমিয়তের আসাম রাজ্য সভাপতি নির্বাচিত হন। বাংলাভাষী মুসলমানদের ওপরে ক্রমাগত বিষোদ্গারের জবাব দিতে প্রায় এক যুগ আগে তৈরি হয় অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (ইউডিএফ)। আজমল বলছিলেন, আসাম গণপরিষদ তো ১০ বছর ক্ষমতায় ছিল। অবৈধ অভিবাসীদের কতজনকে চিহ্নিত করতে পেরেছে তারা? বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসীদের ইস্যুটি ভোটের আগেই সুযোগ বুঝে তোলা হয় বারবার। এখন বিজেপিও সে একই কায়দা নিয়েছে। বিজেপি এটা নিয়ে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করছে। ধর্মীয় আর জাতিগত বিভাজন আসামের ভোট প্রচারের একটা প্রায় অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে থেকেছে সব সময়ই।
আসামে সাম্প্রদায়িক ইস্যু চাঙ্গা করে ফায়দা পেতে চায় বিজেপি ও তার শরিক দলগুলো। নির্বাচনের আগেই কয়েক দফা দাঙ্গা বাধিয়েছে তারা। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সব সীমান্ত অনুপ্রবেশ ঠেকানোর জোর হুশিয়ারিও দিয়েছেন তারা। ব্রিটিশ আমলে অবিভক্ত বাংলা-আসাম প্রদেশ থাকাকালে অনেক বাঙালি হিন্দু-মুসলমান আসামে বসতি গেড়েছে।
তাদের মধ্যে মুসলমানদের সেটেলার বানিয়ে নাগরিকত্ব হরণের উসকানি দিচ্ছে বিজেপি জোট। সেই উসকানিতে কতটা কী হয় এখনই বলা যাচ্ছে না। এ সংকটের সঠিক সমাধান ও যথাযথ সুরাহায় কে দ্রুত এগিয়ে আসবেন? আজমল না অন্যরা?
১৯ মে কে পরবেন বিজয়মাল্য? সর্বানন্দ সোনোয়াল, তরুণ গগৈ নাকি বদরুদ্দিন আজমল? ফল জানতে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে আরও দেড় মাস! নূরবিডি ডটকম।

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...