৫ এপ্রিল ২০১৩. রাত ১০টা। অবস্থান করছি শাপলা (শহীদি) চত্বর এ। সেই দিন, সেই সময়টি আজ চোখের সামনে ভেসে উঠছে। বারবার ফিরে যাচ্ছি সেই দিনটিতে। বন্ধুদের অনেকেই ছিলেন সেই সময়টায়। এনায়েত ভাই, বাবর, রোকন রাইয়ান, মাসুদুল কাদির, আঃ গাফফারসহ অনেক বন্ধু। কোন প্রকার ভয়-ভীতিহীন সেই সময়টুকু চোখে ভাসছে। দিগন্ত টিভি লাইভ দেখাচ্ছে। হাজার হাজার ছাত্র শিক্ষক, সাধারণ মানুষ দলে দলে আসছে শাপলা চত্বরে। লোকে লোকরণ্য পুরো চত্বর। শত শত তরুণ মঞ্চ পাহারায় নিয়োজিত। ওদিকে আমাদের যেতে দিচ্ছে না। আমরা মাঠে বসে গেলাম। একটি শিল্পী গোষ্ঠীর ছোট্ট ছোট্ট বন্ধুরা আমাদের গান শুনালো।
উপস্থিতির মধ্যে একটা জাগরণ জাগরণ ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নানা উড়োকথা কানে আসছে। সরকার পরদিনের কর্মসূচীতে বাধা দিবে। রাতেই পুলিশ হুমকি ধমকি দিয়ে যাচ্ছে। দিগন্ত টিভিকে লাইভ প্রচার বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়ে বললো- সবাই চলে যান। এখানে রাতে থাকা যাবে না। মানুষের উপস্থিতি দেখে ঠিক এই সময়টাই কোন ভয় কাজ করছিল না। কিন্তু আমরা এটা আঁচ করতে পারিনি, আমাদের জন্য পরবর্তী সকালটা কী অপেক্ষা করছে।
একটি অফিসে রাতটা কোন রকমে কাঠালাম। ভোর হলো। জনতার বাধভাঙ্গা জোযার দেকখ থমকে গেলাম। সরকারের সকল প্রকার বাধা উপেক্ষা করে মানুষ পঙ্গপালের মতো আসছে। আমরা উপলব্দিই করতে পারিনি মানুষ কী পরিমান কষ্টের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।
২০/৩০মাইল দুর থেকে হেঁটে, বুক উঁচু করে পরদিন বিকাল পর্যন্ত যে মিছিলের অগ্রযাত্রা আমি দেখেছি, তা জীবনে কোনদিন ভুলবনা। বাংলার মানুষ ঈমানকে এত ভালোবাসে? বাংলার মানুষ ইসলামকে এত ভালোবাসে? চোখে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করতে পারবে না। সেদিন সরকার শুক্রবার দিন হরতাল ডেকেছিল। সন্ধাকালীন হরতাল। আজিব কারবার। এ সরকারেই সবকিছুই আজীব।
৬এপ্রিল ২০১৩ইং। একটি দিন। একটি ইতিহাস। একটি জাগরণ। মহা জাগরণ। মহা বিপ্লব। মহা বিদ্রোহ। ঐ দিন এমন কোন ত্যাগ নাই, যা এদেশের মানুষ স্বীকার করে নাই। মানুষের অদম্য ইচ্ছার কাছে সবকিছুই যে তুচ্ছ, তা সেদিন বাংলার তৌহিদী জনতা প্রমাণ করেছে। ঢাকার নারী পুরুষ, সেদিন কী পরিমান সাহায্য সহানুভুতি আল্লাহর পথের এই মেহমানদের জন্য করেছিল, তা আপনারা প্রত্যেকেই চাক্ষুস স্বাক্ষী। নতুন করে বলার কিছু নেই। পরদিন সকালে কী ঘটতে যাচ্ছে, আমরা ঠিক এই সময়ে যখন শাপলায় বসেছিলাম, তাঁর কিছুই আঁচ করতে পারিনি।
একটা আফসোস, এখনো আমার মনে। সেদিন, সেই সময়ই আমি লেখক ফোরামের সভাপতি, সেক্রেটারী মহোদয়কে প্রস্তাব করেছিলাম, এই মহাজাগরণটি স্মরণীয় করে রাখার জন্য একটি স্মারক বের করা যায় কি না? কিন্তু আফসোস, কেউ সাড়া দেয়নি। আজো পর্যন্ত এই জাগরণটাকে মলাটবদ্ধ করতে পারিনি। কেউ করেছে শুনিনি। মলাটবদ্ধ করে প্রকাশের জন্য এরচেয়ে বড় আর কী উপলক্ষ্য হতে পারে?
হে শাপলার বন্ধুরা, তোমরা যারা সে সময় আমাদের সাথী হয়েছিলে, তোমাদের সকলকে শাপলার শুভেচ্ছা জানাই। এই মহাজাগরণের ঠিক এক মাস পরে, ঠিক এই সময়ে যে বর্বরোচিত গণহত্যা, গণ নিপীড়ন হয়েছিল সেই সময়টিকেও স্মরণ করি। স্মরণ করি সেই সকল শহীদদের। যারা ইসলামকে ভালোবেসে দজ্জাল বাহিনীর হাতে নিজেদেরকে উৎসর্গ করে দিয়েছেন। তাদের এই কোরবানী যেন কবুল হয়, মহান রবের কাছে সেই প্রার্থণা।