আসুন আমরা সুজন সম্পর্কে একটু জানি
সুজন ছেলেটার সাথে আমি আড়াই বছর ধরে ক্লাস করেছি। ওর সাথে আমার হাতে গোনা কয়েকটা দিন বাক্য বিনিময় হয়েছে। প্রচণ্ড পরিমাণ ইন্ট্রোভার্ট একটা ছেলে। রাজনীতি করার ভয়ে অটোরিকশা চালকের ছেলে হয়েও সে হলে থাকতো না। ক্লাসের কোন ছেলে বলতে পারবেনা ও কারো সাথে গলা উচু করে কোনদিন কথা বলছে। পড়াশোনায় ছিল তুখোড় মেধাবী। স্কুল কলেজে কখন দ্বিতীয় হয়নাই। বিশ্ববিদ্যালয়ে তার ফলাফল ছিল ৩.৫০ এর উপরে। একজন আদর্শবান ও চরিত্রবান ছাত্র বলতে যা বুঝায় সে ছিল তাই।
ভোট কেন্দ্রে কি করছিল সুজন?
সুজনের দাদা এবারের ইউ পি নির্বাচনের মেম্বার পদপ্রার্থী। আচ্ছা আপনিই বলুন আপনার পরিবার কেউ নির্বাচন করলে আপনি ভোট কেন্দ্রে থাকতেন না? তাতে কি আপনার রাজনীতিবিদ হবার দরকার আছে? না নেই এবং সুজন শুধুমাত্র এই কারনে সেদিন ভোট কেন্দ্রে ছিল।
হত্যাকাণ্ড এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা
আমরা ১৫ জন সুজনের বাড়ি গিয়েছিলাম। চেষ্টা করেছি সত্য ঘটনা বের করার। কথা বলেছি যাদের চোখের সামনে সুজনকে নির্মমভাবে খুন করা হয়েছে ।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বলা ঘটনা আমি আমার বিবৃতিতে বলছিঃ সুজন আসরের নামাজ পড়ে যখন ভোটকেন্দ্রে যায়, তখন ভোটের ফলাফল ঘোষনা করা হয়। ফলাফলে বলা হয় ওর দাদা নির্বাচিত হয়েছে। এর কিছুখন পরেই আবার ঘোষনা করা হয় না ওর দাদা নির্বাচিত হয়নাই বরং তার বিপরীত পদপ্রর্থী নির্বাচিত হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই সুজন সহ সবাই ঘটনার সুষ্ঠ নিষ্পত্তির দাবিতে পুনরায় ভোট গননার অনুরোধ করে। কিন্তু পুলিশ এবং প্রিজাইডিং অফিসার পুনরায় ভোট গননায় অস্বিকৃতি জানায়। তখন এই অনৈতিক কাজের প্রতিবাদ করে সুজন সহ বাকি সবাই। তখন কোন পূর্ব সতর্কতামূলক ঘোষনা না দিয়েই পুলিশ অফিসারের নির্দেশে সরাসরি ৩ রাউন্ড গুলি করে যার একটি ভেদ করে যায় সুজনের কণ্ঠস্বর। যে গুলিটি করা হয়েছিল একহাত দূর থেকে।
ঘটনা বিবেচনার জন্য কয়েকটি পয়েন্ট মার্ক করে দিলাম
১. পুলিশ বলছে ব্যালট বক্স নিয়ে পালিয়ে যাবার সময় গুলি করা হয়েছে, তবে গুলি সুজনের সামনের অংশে কিভাবে লাগলো?
২. কোন হত্যাকাণ্ড ঘটলে পুলিশের প্রথম দায়িত্ব সুরতাহল বা পোস্টমার্টেম নিশ্চিত করা। কিন্তু সুজনের পোস্টমার্টেম করার বেলায় পুলিশের এত অনিহা কেন। তারা কেন বারবার পোস্টমার্টেম না করার জন্য উতসাহিত করছিল?
সুজন হত্যা ও মিডিয়া রহস্য
আমাদের কষ্ট হয় যখন দেখি দেশের গুরুত্বপূর্ন পদে নিয়োজিত সাংবাদিক ভাইয়েরা ঘটনার পুর্নাঙ্গ বিবরন না জেনে সুজনকে ব্যালট বাক্স ছিনতাইকারী বানিয়ে দিল। আমার বিশ্বাস সাংবাদিক ভাইয়েরা সঠিক ঘটনা জানিয়ে সুজন হত্যার সুষ্ঠ তদন্তের দাবি জানাবেন।
এগিয়ে আসুন সুষ্ঠ বিচারের দাবিতে
সুজনের লাশের ছবিটা দিয়ে দিলাম। বুকের পাশে জ্বলজ্বল করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগোটা।বুকের মধ্যে ধ্বক করে ওঠেনা? বিবেকের কাছে নিজেকে দায়বদ্ধ মনে হয়না? যদি হয় তবে আসুন, ওর খুনের সুষ্ট তদন্ত ও বিচারের দাবিতে আর একবার নিজের কন্ঠটা শক্ত করি। ও শুধু আমাদের সুজন না, সুজনই ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয়, সুজনই ছিল ভবিষ্যতের বাংলাদেশ।