মানুষের গায়ের রং ও দৈহিক কাঠামো যেমন পরিবর্তন সম্ভব নয়, তেমনি অনেকে মনে করেন, মানুষ যে প্রবৃত্তি ও মানসিকতা নিয়ে বেড়ে ওঠে এর পরিবর্তনও কখনো সম্ভব নয়। অথচ মেধাবীরা মনে করেন, মানসিকতার পরিবর্তন সম্ভবত কাপড় পরিবর্তনের চেয়েও সহজ।
একদিন সকালে সে ব্যবসায়ী তার দোকানে যাচ্ছিল। তার পরণে ছিল সাদা জুব্বা আর মাথায় ছিল সাদা পাগড়ি। পথিমধ্যে সে চারজনের একজনের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হলো। সে তার সঙ্গে সালাম বিনিময় করে পাগড়ির দিকে তাকিয়ে বললো, ‘আপনার হলুদ পাগড়িটা তো বেশ চমৎকার!’ ব্যবসায়ী বললো, আরে! তুমি অন্ধ হয়ে গেলে নাকি? সাদা পাগড়িকে হলুদ পাগড়ি বলছ কেন? লোকটি বললো, আপনি ভুল করছেন? পাগড়িটি আসলে হলুদ। তবে হলুদ হলেও আপনাকে বেশ চমৎকার লাগছে।
ব্যবসায়ী আর বেশি কথা না বলে সামনের দিকে হাঁটতে লাগল। একটু অগ্রসর না হতেই ঐ চারজনের আরেকজন এসে সালাম দিয়ে তার পাগড়ির দিকে তাকিয়ে বলল, মাশাআল্লাহ! আপনি তো আজ চমৎকার পোশাক পরেছেন। পোশাকটি আপনাকে খুব মানিয়েছে। বিশেষ করে এ সবুজ পাগড়িটিতে আপনাকে অন্যরকম লাগছে।
ব্যবসায়ী তখন নিজের পাগড়ির দিকে তাকিয়ে ভালোভাবে দেশে নিশ্চিত হয়ে বলল, ‘আপনি ভুল দেখছেন। আমার পাগড়িটি সবুজ নয়, সাদা।’ সে বলল, না না, এটা সাদা নয়, আমি হলফ নিয়ে বলছি এটা সবুজ। তবে সবুজ হলেও চিন্তার কারণ নেই। এটা বেশ সুন্দর। এরপর সে ব্যবসায়ী চিৎকার করে বলল, আমার পাগড়ি সবুজ নয় সাদা। এটা বলতে বলতে সে তার পাগড়ির বিভিন্ন অংশ নাড়াচাড়া করে দেখতে লাগল। পিঠের ওপর থেকে পাগড়ির প্রান্তদেশ টেনে নিয়ে ভালোভাবে দেখলো। নাহ, সাদাই তো দেখা যাচ্ছে। এরপর সে সোজা তার দোকানের সামনে গিয়ে তালা খোলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এর মধ্যেই তৃতীয়জন এসে বললো, ‘আজকের পোশাকটা তো আপনাকে বেশ ভাল লাগছে। বিশেষ করে আপনার এ নীল পাগড়িটার জুড়ি মেলা ভার।’
ব্যবসায়ী তখন নিজের পাগড়ির দিকে আরেকবার তাকিয়ে বলল, ভাই! আমার পাগড়ির রঙ তো সাদা।’ লোকটি বলল, আপনি ভুল করছেন। আপনার পাগড়ির রঙ নীল। তবে এটা সুন্দর মানিয়েছে আপনাকে। এ নিয়ে কোন চিন্তা করবেন না। এ কথা বলে সে চলে গেল।
এ দিকে সে একা একা বলে চললো, আমার পাগড়ি সাদা। আমার পাগড়ি সাদা। বারবার সে পাগড়িটি নেড়ে-চেড়ে দেখতে লাগল। ব্যবসায়ী কোনভাবেই তার দৃষ্টি পাগড়িটি থেকে সরাতে পারছিল না। এরই মধ্যে চতুর্থজন এসে বলল, মাশাআল্লাহ! আপনাকে অভিনন্দন। এ লাল পাগড়িটি আপনি কোত্থেকে কিনছেন?
এটা শুনে সে ক্ষিপ্ত হয়ে বলল, আরে ভাই! কী আবোল-তাবোল বকছেন? আমার পাগড়ি তো নীল।’
‘এ তো দেখছি লাল।’
ব্যবসাযী তখন চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলো আর বলতে লাগল, ‘আমার পাগড়ি সাদা। না, আমার পাগড়ি লাল।’ একটু পরে সে আবার বলল, আমার পাগড়ি সবুজ। না বরং এটা নীল। না না, এটা তো কালো।’ কিছুক্ষণ চুপ থেকে সে হাসতে শুরু করলো। এরপর কাঁদতে লাগল। এরপর সে হঠাৎ লম্ফঝম্ফ দিতে লাগল।
ইবনে হাযম বলেন, পরবর্তীতে আমি দেখেছি এ ব্যবসায়ী স্পেনের অলি-গলিতে পাগল হয়ে ঘুরছে আর ছোট ছোট বাচ্চারা তার দিকে পাথর ছুঁড়ে মারছে।’
এ চারজন যদি তাদের দুরভিসন্ধিমূলক কূটকৌশল দিয়ে একজন মানুষের প্রকৃতি পরিবর্তন করে দিতে পারে, তার বিবেক-বুদ্ধি বিকৃত করে দিতে পারে তাহলে আপনি কেন ওহীর আলোয় আলোকিত ও নববী পাঠশালায় চর্চিত আচরণ দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে মানুষের মনের গতি আল্লাহর দাসত্বের দিকে ঘুরিয়ে দিতে পারবেন না?
সফলতা অর্জন করতে হলে নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতার সর্বোত্তম ব্যবহার করুন। যদি বলেন, ‘না, আমি পারব না।’
আমি বলব, কমপক্ষে চেষ্টা করুন।’
যদি বলেন, ‘কীভাবে চেষ্টা করতে হয় তা আমি জানি না।’
আমি বলব, ‘তাহলে আগে শিখুন।’
নবী কারীম সা. তো বলেছেন, জ্ঞান লাভ হয় কেবল শেখার মাধ্যমে। আর সহনশীলতা অর্জিত হয় অধ্যবসায়ের মাধ্যমে।
সূত্র : ইনজয় ইউর লাইফ