কমাশিসা ডেস্ক :: দণ্ডের পর দুই মন্ত্রীর মন্ত্রিত্ব থাকা না থাকা নিয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞ, আইনজীবী, সাবেক বিচারপতি, সাবেক আইনমন্ত্রী ও বিশিষ্টজনদের মধ্যে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়ে গেছে। রাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল, সংসদের ডিপুটি স্পিকার, ড. শাহদীন মালিক, খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার শফিক আহমদ, বিচারপতি নজরুল ইসলামসহ বিশিষ্টজনদের সংবিধানের আলোকে মন্তব্যের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যে চলছে ব্যাপক তর্কবিতর্ক সমালোচনা-পর্যালোচনা। স্যাটেলাইট টিভি মিডিয়াগুলো এ রায়কে ‘ব্রেকিং নিউজ’ হিসেবে প্রচার করছে। অনলাইন মিডিয়া ও দৈনিক পত্রিকার মিডিয়া ভার্ষণগুলো ঘণ্টায় ঘণ্টায় নিউজের কলেবর বাড়াচ্ছে। টকশোগুলোতে অন্য সব খবরকে ছাপিয়ে গেছে দুই মন্ত্রীর খবর। সেখানে দলবাজী-দলদাসী এবং পক্ষ-বিপক্ষ মতামত আসছে। দুই মন্ত্রীর দ-ের খবর প্রচারে বিদেশি মিডিয়াগুলোও গুরুত্ব দিচ্ছে। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথুরিয়া সর্বত্র চলছে দুই মন্ত্রীর মন্ত্রিত্ব থাকা না থাকা নিয়ে আলোচনা। রাজধানীর আদালত পাড়া থেকে শুরু করে অফিস-আদালত, বাস-ট্রেন-স্টিমার, হাটবাজার, শিক্ষালয়, মিডিয়া অফিস, পাড়া-মহল্লা, ক্লাব-পাঠাগার সবখানের আলোচনার প্রধান বিষয়বস্তু দুই মন্ত্রীর দণ্ড। আদালতের রায়ের পর দুই মন্ত্রীই হচ্ছেন টক অব দ্য কান্ট্রি। শুধু তাই নয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার, ব্লগ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সবখানে দণ্ডপ্রাপ্ত দুই মন্ত্রীর মন্ত্রিত্ব থাকা না থাকা নিয়ে মতামত প্রদান, সমর্থন ও সেটা নিয়ে তুমুল বিতর্ক চলছে। প্রায় সব মিডিয়ায় দুই মন্ত্রীর দণ্ড নিয়ে সাধারণ মানুষ ও পাঠকরা মন্তব্য করেছেন। তবে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি দৈনিকে দুই মন্ত্রী ইস্যুতে পাঠক মতামতের কয়েকটি মন্তব্য হুবহু এমন, ১. ‘মন্ত্রিত্ব ও লজ্জা এক সাথে থাকতে নেই’ ২. ‘সাবেক মন্ত্রী ড. মখা আলমগীরকে দেখেছি কীভাবে আদালত অবৈধ বলার পরও ৫ বছর এমপি পদ আকড়ে ধরে মন্ত্রিত্ব করেছেন।’ ৩. ‘বিনা ভোটে অটো এমপিরা মন্ত্রী হয়ে এগুলো তোয়াক্কা করবে’ ৪. ‘বিচার বিভাগকে স্যালুট’ ৫. ‘বিচারের বাণী প্রকাশ্যে হাসছে, ধন্যবাদ আপিল বিভাগ’ ৬. ‘যেখানে হলমার্কের চার হাজার কোটি টাকা অর্থমন্ত্রীর কাছে কোনো টাকাই নয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ হাজার কোটি টাকা চুরি এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি দিল্লিবন্ধু মতলুবের কাছে ছিঁচকে চুরি মনে হয়, সেখানে মাত্র ৫০ হাজার টাকা!’ ৭. ‘এটা আসলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডাকাতি থেকে মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরানোর চেষ্টা’ ৮. প্রধানমন্ত্রী ক’দিন আগে বললেন বিএনপির চেয়ারপার্সন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত দু’জনই আসামি। ওরা (বিএনপি) আসামিীছাড়া লোক পেল না নেতা নির্বাচন করার? এখন তাঁর মন্ত্রিসভায় ১৪ বছরের সাজাপ্রাপ্ত মোফাজ্জল হোসেন মায়া ছাড়াও আরও দু’জন কামরুল ইসলাম ও মোজাম্মেল হক যোগ হলো। বিএনপি মামলার আসামিকে নেতা বানিয়ে অপরাধ করলে সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের মন্ত্রিসভায় রেখে প্রধানমন্ত্রী কী পুণ্যের কাজ করেছেন!’ (বঙ্গবন্ধু আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি ছিলেন) ৯. ‘সরকারি চাকরি বিধিতে কোনো কর্মকর্তার ১০০০ টাকার বেশি জরিমানা হলে তিনি তার পদে অযোগ্য বিবেচিত হন এবং চাকরিতে ইস্তফা দিতে বাধ্য থাকেন। এই দু’জনের ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা হয়েছে। আদালতের এমন শাস্তির পরও কী তারা মন্ত্রী থাকার নৈতিক যোগ্যতা রাখেন? সরকারের কী এই মন্ত্রীদের অপসারণ করা উচিত নয়? সুপ্রিম কোর্ট জনগণের শেষ আশ্রয়স্থল। জনগণ বিচারপতিদের কাছ থেকে এ রকমই সাহসিকতা আর সততা প্রত্যাশা করে’। আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক আইন মন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমদ বলেছেন, ‘দুই মন্ত্রীর মন্ত্রিত্ব থাকা না থাকার বিষয় প্রধানমন্ত্রীর উপর নির্ভর করছে।’ অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, দুই মন্ত্রীর মন্ত্রিত্ব থাকা না থাকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রিসভা’। আওয়ামী লীগের এই দুই শুভার্থীর মন্তব্য নিয়ে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে যেভাবে দেশকে পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে; সেখানে আইন-নীতি নৈতিকতা প্রশ্ন তোলা কী খুব গুরুত্বপূর্ণ?’ আদালত অবমাননার অভিযোগে অব্যাহতি চাওয়া দুই মন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ও মোজাম্মেল হকের ব্যাখ্যা গতকাল খারিজ করে দিয়ে আপিল বিভাগ প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছে। আগামী ৭ দিনের মধ্যে জরিমানার এ অর্থ জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। জরিমানা না দিলে তাদের ৭ দিন করে কারাভোগ করতে হবে। এরপর থেকেই দণ্ডিত হওয়া দুই মন্ত্রীর মন্ত্রিত্ব থাকছে কিনা, কিংবা মন্ত্রিত্বের শপথ ভঙ্গ হয়েছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের ২ (ঘ) বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হবার এবং সংসদ-সদস্য থাকিবার যোগ্য হবেন না, যদি তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হইয়া অন্যূন দুই বৎসরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তাহার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বৎসরকাল অতিবাহিত না হইয়া থাকে এবং একই অনুষ্ঠেদের (২) (ঙ) বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হইবার এবং সংসদ-সদস্য থাকিবার যোগ্য হইবেন না যদি তিনি ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ যোগসাজশকারী (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদেশের অধীন যেকোনো অপরাধের জন্য দণ্ডিত হইয়া থাকেন।’ দণ্ডিত দুই মন্ত্রীকে নিয়ে বিতর্ক চলছে। তবে মন্ত্রীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তারা আপিল করবেন। দেখা যাক কী হয়। তবে তর্কবিতর্ক যে অব্যাহত থাকবে সেটা বোঝাই যাচ্ছে। ইনকিলাব।
দুই মন্ত্রীকে রিভিউ করতে বললেন প্রধানমন্ত্রী
আদালত অবমাননার দায়ে দণ্ডিত খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে রিভিউ করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী তাদের এই নির্দেশ দেন। বৈঠক শেষে খাদ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের কাছে এ তথ্য জানিয়েছেন। শীর্ষ নিউজ।
আদালত অবমাননার দায়ে দণ্ডিত খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে রিভিউ করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী তাদের এই নির্দেশ দেন। বৈঠক শেষে খাদ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের কাছে এ তথ্য জানিয়েছেন। শীর্ষ নিউজ।