আমাদের অন্তরের মধ্যেই তো ইসলাম ধর্ম নেই আর সংবিধানে থেকে লাভ কি?
‘সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল’ সংক্রান্ত বিভিন্ন পোষ্টে এরকম চটকদার যুক্তি দেখিয়ে বেড়াচ্ছে একদল মানুষ। অনেকে বলে “এরা হলো হিন্দু সম্প্রদায়ের ফেইক আইডি। আমাদের আন্দোলন থেকে বিরত রাখতে ওরা মুসলিম নাম ব্যবহার করে চটকদার যুক্তি দেখাচ্ছে।”
এরা কারা এই নিয়ে বিতর্ক না করে আসুন দেখি সংবিধানে ইসলাম না থাকলে কি কি হবে, এবং থাকলে উপকারীতা কি সে বিষয়ে আলোকপাত করা যাক। লেখাটি বড় হলেও একটু মনযোগ দিয়ে পড়বেন।
সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকার সুফল:
দল মত নির্বিশেষে সবাই এবিষয়ে একমত যে, বাংলাদেশে যে কয়টা দৈনিক পত্রিকা আছে এর মাঝে ‘প্রথম আলো’ পত্রিকাটি ইসলামের শত্রু। ইসলাম ধ্বংসের এমন কোন ষড়যন্ত্র নাই, যা তারা করে নাই। আমাদের প্রিয় নবী সা: এর ব্যঙ্গচিত্র অংকন করার মত জগন্য খারাপ কাজ ও তারা করেছে। কিন্তু আপনি কি জানেন, প্রথম আলো পত্রিকায় প্রথম দিকে ইসলামি একটা পৃষ্টা ছিলো? এখন সে পৃষ্টা নেই, তবে ইসলামি একটা করে কলাম লিখে। শুধু প্রথম আলোই নয়, বাংলাদেশে যত পত্রিকা আছে, উপরের পৃষ্টায় যতই ইসলাম বিরোধী লেখা থাক, ভিতরে অন্তত একটা করে কলাম থাকে। কিন্তু কেন সেটা কি জানেন? কারন এদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। ইসলাম নিয়ে লিখতেই হবে। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিল হলে কোন পত্রিকায় ইসলামি কলাম থাকবে না।
শুধু কি পত্রিকা? টিভি চ্যানেলেও একই অবস্থা। ঘন্টার পর ঘন্টা ইসলাম নিয়ে সমালোচিত অনুষ্ঠান প্রচারিত হলেও ইসলামিক অনুষ্ঠান প্রচার করে, হোক সেটা আধা ঘন্টার। এর ও একমাত্র কারন এদেশের সংবিধান।
শুধুই কি ইসলামিক অনুষ্ঠান? যতই কুরুচিপূর্ণ অশ্লীল অনুষ্ঠান হোক না কেন, আজানের সময় হলে সে অনুষ্ঠান বন্দ করে আজান প্রচার করতে বাধ্য প্রতিটা চ্যানেল, কারন এদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিল হলে কোন চ্যানেলেই আজান প্রচারিত হবে না।
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম আছে বলেই সংসদ অধিবেশনে আজানের সময় বিরতী দেওয়া হয়। সংসদ সদস্যরা নামাজ পড়ুক বা না পড়ুক, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম আছে বলে নামাজের বিরতী দেওয়া হয়। সংসদ অধিবেশন শুরু হয় কোরআন পাঠের মধ্য দিয়ে।
শুক্রবারে সাপ্তাহিক ছুটি কারন রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। শব-ই বরাত, মহররম, ফাতেহা ইয়াজদহাম, ঈদেমিলাদুন্নবী, আখিরি চাহার সোম্বা ইত্যাদি সরকারী ছুটি এর একমাত্র কারন এদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম।
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম না থাকলে কি হবে:- কাজ্জাব লতিফ সিদ্দিকী যখন ইসলামের রোকন নিয়ে কুমন্তব্য করলো, প্রতিবাদে এদেশের তৌহিদি জনতা আন্দোলন করলো। বিচার হোক বা না হোক, আমি আপনি প্রতিবাদ জানাতে পেরেছি। আপনি ইউরোপের কোন কান্ট্রিতে যান, সেইম ঘটনায় কোন প্রতিবাদ করতে পারবেন না।
ওদের প্রশাসন বলবে ‘এটা বাকস্বাধীনতা’।
প্রতিবাদে আন্দোলন করলে বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের দ্বায়ে আপনাকে উলটো গ্রেফতার করবে। তসলিমা নাসরিন, হুমায়ুন আজাদ, লতিফ সিদ্দিকী এদের বিরোদ্ধে আন্দোলন করতে পেরেছে একমাত্র কারন এদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিল হলে প্রকাশ্যে নাস্তিকরা ইসলামকে গালিগালাজ করবে, আমি আপনি টু শব্দটি করতে পারবো না। ওদের বাকস্বাধীনতা বলে চালিয়ে দিবে। নাস্তিকতার প্রতিবাদ করলে বাকস্বাধীনতার হস্তক্ষেপের দরুন আপনাকেই জেলে ডুকাবে।
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিলের সাথে সাথে, এক মুহুর্ত কাল বিলম্ব না করে এদেশের সকল ইসলামি দল/ ইসলামি রাজনীতি নিষিদ্ধ করে দিবে। জামায়াত শিবির, ইসলামি শাষনতন্ত্র আন্দোলন, ইসলামি ঐক্যজোট, খেলাফত সহ সকল ইসলামি দল নিষিদ্ধ হয়ে যাবে।
সাবধান, সাবধান, সাবধান
সব থেকে বড় বিষয়টা বলতে ভুলেই গেছি। কোরআন বিরোধী ‘নারীনীতিমালা আইন’, কোরআন বিরোধী ‘সম্পত্তি বন্টন নীতিমালা আইন’ ইত্যাদি যে সকল আইন পেন্ডিং আছে, সে আইন কেন প্রণয়ন হচ্ছে না জানেন? আপনি কি মনে করেন আপনাদের হুমকি ধামকির বিবৃতি শোনে সরকার ভয়ে এসব আইন পাস করছে না? তবে আপনি ভুল ধারনা করে বসে আছেন। এসব হুমকি ধামকির বিবৃতি সরকার ভয় পাবে তো দুরের কথা, ওদের কান অব্দি পৌছে না।
তাহলে আইন পাস করে না কেন? এর কারন ওদের সংবিধানের ধারা সাংঘর্ষিক হয়ে যায়। প্রতিটা আইন পাস করার আগে যাছাই বাছাই কমিটি ঘটন করে তারা পর্যালোচনা করে। যাচাইবাছাই কমিটি এই মর্মে রিপোর্ট দিয়েছে ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রেখে ইসলাম বিরোধী আইন পাস করানো হলে, ভবিষ্যতে কেউ রীট করলে নতুন আইন অটোমেটিক বাতিল হয়ে যাবে।’ তাই তারা রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিল করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। আর এ কারনেই নতুন ইসলাম বিরোধী আইন গুলি পেন্ডিং আছে।
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিল হলে, ইসলাম বিরোধী শত আইন পাস হলেও প্রতিবাদ করা যাবে না। প্রতিবাদ করলে সেটা হবে বে আইনি।
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিল হলে লতিফ সিদ্দিকীরা ইসলাম ও প্রিয় নবী সা: কে গালিগালাজ করবে, প্রতিবাদ করলে বাক স্বাধীনতায় আঘাতের দায়ে গ্রেফতার হতে হবে।
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিল হলে কবির চৌধুরীরা আজানকে বেশ্যার ডাকের সাথে তোলনা করবে, তসলিমারা কোরআন কে ভুল বলে আল্লাহকে গালিগালাজ করবে, প্রতিবাদ করলে সেটা হবে বাকস্বাধীনতা হরন।
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিল হলে সংবাদপত্রে ইসলাম এর বিরোদ্ধে লেখালেখি হবে, টিভি টকশোতে ইসলামের বিষদাগার করা হবে, প্রতিবাদ করলে সেটা হবে মিডিয়ার স্বাধীনতা হরন।
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিল হলে এদেশেও পর্নো ছবি বৈধতা পাবে, পতিতাবৃত্তি পেশার মর্যাদা পাবে।
সব থেকে বড় কথা, সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবার বাতিল হয়ে রবিবার হবে। হিন্দুদের ধর্মানুভুতিতে আঘাত এর দায়ে কোরবানি নিষিদ্ধ হবে। আধুনিক শিক্ষার অজুহাতে মাদ্রাসা বন্দ হবে।
এরকম লক্ষ লক্ষ সমস্যা দেখা দেবে। কাজেই এখনো সময় আছে,, সবাই সোচ্চার হোন, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিল হলে সবাই একযোগে রাস্তায় নেমে পড়ুন। যারা পোষ্টের প্রথম লাইনের মত চটকদার যুক্তি দেখাবে ওরা সব নাস্তিকদের দালাল, ওদের বয়কট করুন।
লেখক : ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক । shomoybarta24.net