আকাবির-আসলাফ- ২২
মাওলানা নোমান আহমদ ১৯৬১ সালে চাঁদপুরের কচুয়ার খিড্ডায় জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক পড়াশোনা সম্পন্ন করেন নিজ গ্রামে। মাধ্যমিক পর্যায়ের পড়াশোনা করেন চট্টগ্রামের পটিয়া মাদরাসায়। আর উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী এবং ভারতের বিশ্ববিখ্যাত দ্বীনি প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম দেওবন্দে। পড়াশোনা শেষ করার পর থেকে তিনি নিয়োজিত ছিলেন শিক্ষকতায়। হাদিস, ফিকাহসহ ইসলামিয়াতের উচ্চতর বিষয়গুলো তিনি পড়াতেন। ঢাকার মোহাম্মদপুরের ঐতিহ্যবাহী জামিয়া রাহমানিয়ায় তিনি প্রায় ২৮ বছর মুহাদ্দিস পদে কর্মরত ছিলেন। দেশের প্রায় প্রতিটি প্রান্তে তাঁর ছাত্ররা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন। ঢাকার আরও কয়েকটি দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। নিজেও গড়েছেন কয়েকটি উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
মাওলানা নোমান আহমদ শিক্ষকতার পাশাপাশি অনবরত লিখেছেন। সিহাহ সিত্তাহ বা বিশুদ্ধ হাদিসের ছয়টি গ্রন্থের ব্যাখ্যা তিনি লিখেছেন। ইসলামি অর্থনীতি, সমাজব্যবস্থা, ইতিহাস, রাজনীতি এবং দ্বীনের নানা দিক নিয়ে রচিত তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা অর্ধশতাধিক। তাঁর কয়েকটি বই কওমি মাদরাসার পাঠ্যভুক্ত। উর্দু-আরবি ভাষা থেকে অনর্গল অনুবাদ করতেন তিনি। বাংলার পাশাপাশি আরবি-উর্দু ও ফারসি ভাষায় তাঁর বিশেষ দক্ষতা ছিল। নিজে লিখতেন এবং অন্যদেরও লেখার প্রতি উৎসাহিত করতেন। বিশেষ করে কলম হাতে তুলে নেয়ার জন্য আলেমদের নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করতেন। ক্লাসে তিনি দ্বীনি বিষয়ে লেখালেখির ফজিলত সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনা করতেন। তাঁর আলোচনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অনেক আলেম লেখক হয়েছেন। বিশেষ করে তিনি তরুণ লেখকদের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। নানাভাবে তাদেরকে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিতেন।
বিভিন্ন আলোচনায় মাওলানা নোমান আহমদ বলতেন, মুসলমানদের সর্বপ্রথম শিক্ষা দেয়া হয়েছে কলম দ্বারা। সুতরাং তাদের সর্বপ্রথম কর্তব্য হলো কলমকে আঁকড়ে ধরা। যেদিন থেকে মুসলমানরা কলমকে ছেড়ে দিয়েছে সেদিন থেকে তারা দুর্গতির শিকার হয়েছে। আলেমদেরকে লেখালেখির প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে গিয়ে তিনি বলেন, যে আলেম লেখক নন তিনি আটকুঁড়ে। কোরআনের ভাষায় লেখা হলো ‘কাশাজারাতিন তাইয়্যিবাহ’ অর্থাৎ পবিত্র বৃক্ষের মতো, যার শিকড় অনেক গভীরে এবং শাখা-প্রশাখাগুলো আসমান পর্যন্ত বিস্তৃত। তিনি ছাত্রদের ইতিবাচক মানসিকতা গড়ে তোলার প্রতি তাগিদ দিতেন। নিজে এক মুহূর্ত সময়ও নষ্ট করতেন না; ছাত্রদেরও সময় কাজে লাগানোর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। শিক্ষাবর্ষের শুরুতে সময়ের মূল্যায়ন নিয়ে তিনি দীর্ঘ আলোচনা করতেন। তাঁর প্রতিটি ক্লাসে ছাত্ররা জীবন গড়ার মতো অমূল্য সম্পদ পেতো। এজন্য তিনি ছিলেন সবার প্রিয় শিক্ষক। কোনো যশ-খ্যাতি ও কূটচালের পেছনে না পড়ে তিনি মনোযোগী ছিলেন নীরব সাধনায়। এজন্য সর্বমহলের কাছে ছিল তাঁর গ্রহণযোগ্যতা ও স্বীকৃতি। তাঁর ইন্তেকালে সবাই নীরবে চোখের অশ্রু ফেলেছেন; হৃদয়ের গভীরে দুঃখ অনুভব করেছেন। আল্লাহ তাঁর কবরকে নুরে ভরপুর করে দিন। আমিন।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট, বহু গন্থ প্রণেতা।