মঙ্গলবার, ২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ সন্ধ্যা ৭:৪০
Home / প্রতিদিন / অমানুষদের কবলে আজ আ-মরি বাঙলা ভাষা

অমানুষদের কবলে আজ আ-মরি বাঙলা ভাষা

indexরফাহিম বদরুল হাসান ::

বাচ্চাদের সাথে সময় কাটাতে ভীষণ ভাল লাগে। তাদের সাথে খেলাধুলা, গল্প কিংবা আড্ডাকে স্বার্থহীন, পাপহীন এবং নির্ভেজাল মনে হয় সবসময়। আনন্দে হাসে প্রাণ খুলে হাসে, কাউকে খুশি করতে হাসে না। কষ্ট পেলে স্পষ্ট ফুটে ওঠে, লুকোচুরি করে না। অতি অল্পেই খুশিতে টইটম্বুর হয়, আনন্দে আটখানা হয়। দেশে থাকাকালীন সবসময় ছোটদের ক্রিকেটের বল কিনে দিতাম, তাদের সাথে খেলাধুলায় নেমে তাদের আনন্দকে আরো প্রাণবন্ত করতে চেষ্টা করতাম।

ফ্রান্সে আসার পর নেশাটা যায় নি। শত ব্যস্ততার মাঝেও কাজের ফাঁকে ছুটির দিনে বাচ্চাদের সাথে সময় কাটানোর পাশাপাশি আরবি শেখানোর জন্য কিছু বাঙালি বংশোদ্ভূত শিশু-কিশোর বের করলাম। আরবি শেখানোর পাশাপাশি বাঙলা ভাষাটাও শেখানোর চেষ্টা করি। টার্গেট, এদেরকে নাড়ির সাথে জুড়ে দেয়া। আরবি শিখার মাধ্যমে যাতে “মুসলিম” জাত ধারণ করতে পারে, এবং বাঙলা শিখার মাধ্যমে তাদের পূর্বপুরুষের দেশ, ভাষা সম্পর্কে ধারণা থাকে। বাচ্চারাও দারুণ এনজয় করে শেখে। অনেক সময় বাঙলা ভাষাকে এতোই গুরুত্ব দিত যে, তাদের বই-খাতায় বাঙলা নাম লিখা দেখা যেত।

কাওসার। আমার ১২ বছর বয়সী ছাত্র। কুর’আন কারীম বিশুদ্ধভাবে দেখে পড়তে পারে, এবং বেশ কয়েকটি সুরাও মুখস্থ করেছে। তাই তাকে বাঙলা শেখাতে একটু বেশি সময় দিচ্ছিলাম। হঠাৎ একদিন এসে বলল, সে আর বাঙলা শিখবে না। তার বাবা নিষেধ করেছেন।
আমি তো আকাশ থেকে পড়লাম। ছেলেকে আরবি পড়াতে এসে ফ্রি’তে অন্য একটি বিষয় শেখাচ্ছি, খুশি হওয়ার কথা, উল্টো নিষেধ করলেন! প্রথমে তো খুশিই হয়েছিলেন। নিশ্চয়ই স্কুলের পড়ালেখা বাদ দিয়ে বাঙলা নিয়ে সময় কাটাচ্ছে, তাই নিষেধ করেছেন।

পরে কাওসারের বাবার মুখ থেকে “নিষিদ্ধের কারণ” শুনে লজ্জা এবং ঘৃণায় চোখ নামিয়ে নিলাম। তার কথাটি ছিল এরকম- “দরকার নাই ভাষা শেখার। ভাষা শিখতে গিয়ে ছেলের কারেক্টার নষ্ট করে লাভ নাই। সে বাঙলা শেখার জন্য Google’এ সার্চ দেয়। যেই “অ” লিখতে যায়, related search আসে অশ্লীল ছবি, “ক” লিখতে যায়, নিচে আসে কাকিমা রেপ, “খ” দিতেই related search দেখায় “খারাপ ছবি। একবার “মা” লিখে সার্চ দিয়েছিল, যেসব বাক্য চোখে পড়ল, আস্তাগফিরুল্লাহ! ছেলেটি পড়তে পারে নি, আল্লাহ বাঁচিয়েছেন। কখনো বিশ্রী গল্প, কখনো বিশ্রী ছবি! কেন এরকম আসে? অন্য ভাষায় “মা’’ কিংবা “চাচি” লিখলে তো এসব আসে না!”

বিদেশে এলে দেশাত্মবোধ বেড়ে যায়। আপন মাটি, ভাষা, সংস্কৃতি ইত্যাদির প্রতি একটা অসম্ভব টান তৈরি হয়। এটা শুনতাম। যখন বিদেশে এলাম, অনুধাবন করলাম। অন্য সভ্যতা, সংস্কৃতির সাথে নিজের সভ্যতা, সংস্কৃতির তুলনা করি। বিদেশী (বন্ধুটাইপ) অনেকের সাথে দেশ, ভাষা ইত্যাদি নিয়ে প্রায়ই বিতর্ক হয়। বিভিন্ন ভাবে আমার দেশ, ভাষা, সংস্কৃতিকে সভার উপরে রাখতে চেষ্টা করি। কিন্তু রক্তের দামে কেনা ভাষা আজ কিছু চরিত্রহীন, লম্পট এবং অমানুষের কারণে কলুষিত হচ্ছে।

বর্তমানে অনলাইনে কোনো মানুষ বাঙলা ভাষা বিষয়ে ধারণা নিতে সার্চ করলে মোটামুটি একটা “রাবিশ জাতি” হিসেবে আবিষ্কার করতে পারে। মা,খালা, বোন জাতীয় অতি পবিত্র শব্দগুলোও কিছু বাঙালি মানুষ (?) দূষিত ফেলেছে।

নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করি, ভার্চুয়াল জগতে কি মানুষের সংখ্যা বাড়বে না, কিংবা অনলাইনের (সেই) বাঙালি এক্টিভিস্টরা কি মানুষ হবে না?

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...