বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ সন্ধ্যা ৭:৩৫
Home / প্রবন্ধ-নিবন্ধ / ‘ভাবছি এবার আমি অবসরে যাবো’

‘ভাবছি এবার আমি অবসরে যাবো’

 

রশীদ জামীল::

rashid jamil bookআহাফি

‘ভাবছি এবার আমি অবসরে যাবো’
— কথাটা বলেই, লম্বা একটা হাই তুলে, ঘুম থেকে ওঠার পর মানুষ যেভাবে আড়মুড়ি দেয়, ঠিক সেভাবে একটা আড়মুড়ি দিলেন তিনি। সঙ্গী-সাথীরা কৌতূহল নিয়ে তাকাল উনার দিকে! কেউ কিছুই বুঝতে পারছে না। হঠাৎ লিডার এভাবে কেনো বলছেন, কারণ খুঁজে পাচ্ছে না তারা। ঘটনা কী!
ঘটনা হচ্ছে…
নামের সাথে হাদিস জড়ানো বিবেকের খতনা করানো দাব্বাতুল-ইন্টারনেটরা হাদিসের নামে মায়াকান্নায় ঘেমে অস্থির করে তুলেছে আক্বীদার অস্থিগুলো, অবস্থা সংগীন- ‘ভিক্ষা চাই না মাগো কুত্তা সামলাও’…

শুরুতে যে ভদ্রলোক হাই তুলছিলেন, উনার সাথে পরিচয় করিয়ে দিই। উনার আসল নাম ইবলিস, নিকনেইম শয়তান। ওয়েল-নউন পার্সোনালিটি! বিশাল ক্ষমতাধর। মানুষকে কান ধরে উঠবস করানো উনার বা-হাতকা খেল!

শয়তান খুব অস্থির হয়ে উঠল এক সময়! দিনের পর দিন মেহনত করে একটা লোককে সাইজে আনতে হয়, তারপর নাকে-মুখে-কানে কতো ফু-ফা দেওয়ার পর তবেই তাকে দিয়ে একটা কু-কাম করানো যায়। আর লোকটি কিনা রাতে ঘুম থেকে উঠে ‘মালিক, ভুল করে ফেলেছি, আর করব না, মাফ করে দাও’, বলে ফুসফুস করে কান্দে আর আল্লাহ-ও বলেন, ‘আচ্ছা যা, দিলাম মাফ করে কিন্তু আর করবি না’-কথাটা মনে থাকে যেনো’… এটা কোনো কথা হল!

শয়তান তার এসিস্ট্যান্টদের জড়ো করে বলল, আজ থেকে আমাদের কর্মকৌশল পাল্টে যাবে। কাজ আগেরটাই করব তবে সেটা করব ভিন্নভাবে। গুণিজনেরা ভিন্নকাজ করে না, তারা একই কাজ ভিন্নভাবে করে।

সবাই কৌতূহল নিয়ে তাকালো তার দিকে। কৌতূহলি হলে কী হবে, লিডারেরে প্রতি তাদের আস্থা আছে। তারা জানে লিডার যা করবেন, শয়তান-সম্প্রদায়ের মঙ্গলের জন্যই করবেন। শয়তান বলল,

-তোমরা কি লক্ষ্য করেছো আমাদের কাজের আলটিমেট রেজাল্ট কী আসছে?
-কথাটি আমরা বুঝতে পারছি না বস।
-বুঝতে না পারার তো কিছু নেই। এই যে সারাদিন পরিশ্রম করে মানুষকে দিয়ে আকাম-কুকাম করাও, তারপর কী হয় খবর রাখো?
সবাই চুপ করে রইল। লিডারের মুখের উপর কথা বলতে ভয় পায় তারা। বুড়োমতন একজন গলা খাকারি দিয়ে বলল,

-কিছু মনে করবেন না বস, আপনি আমাদেরকে আকাম করানোর ডিউটি দিয়েছেন, আকাম করার পর সেইলোক কী করে, সেটার খবর রাখার ডিউটি আমাদের দেননি!
-হুম। তুমি ঠিক বলেছ। এই ডিউটি আমি তোমাদের দিইনি তবে আমাকে সব খবর রাখতে হয়। আমি যেমন তোমাদের কাজের আউটপুট সংগ্রহ করি, ঠিক সেভাবে যাকে তোমরা আকামে লাগিয়ে এসেছ, তারও খবর আমাকে রাখতে হয়। শয়তান-সাম্রাজ্য পরিচালনা তো আর এতো সহজ না। যাক, ব্যাপার হল, তোমাদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় যেসব মানুষকে আমি উল্টা-পাল্টা কামে লাগাই, সেই বদগুলো কী করে জানো?
-সবাই একসাথে বলে উঠল, কী?
-কান্নাকাটি শুরু করে দেয়… ‘আল্লাহগো, গোনাহ করে ফেলেছি, ভুল করে ফেলেছিগো আল্লাহ, আর করবো না, মাফ করে দাও’, আর আল্লাহও মাফ করে দেন। তার মানে আমাদের বাড়া ভাতে ছাই, পরিশ্রম প-। বুঝতে পারছো আমি কী বলছি?
-জি বস।
-চিন্তার বিষয়। এটা তো হতে দেয়া যায় না।
-অবশ্যই না।
-আমাদেরকে এখন টেকনিক পাল্টাতে হবে।
-অবশ্যই পাল্টাতে হবে।
-এমনভাবে কাজ করতে হবে, যাতে আল্লাহ আর মাফ করে না দেন।
-কিন্তু বস, আল্লাহর কাছে চাইলে আল্লাহ তো মাফ করেই দেবেন।
-লোকটি যদি মাফ-ই না চায়?
-মাফ তো চাইবেই…
শয়তানের মুখে বিকট হাসিরেখা চিত্রিত হল। সে তার নিকষ-কাল কুশ্রী ঠোঁট-দুটো বাঁকা করে বলল,

-আমি কতবড় ত্যাদড়, সেটা তোমরাও জানো না। এমন চাল চালবো, পাবলিক গোনাহ করবে আবার আল্লাহর কাছে মাফও চাইবে না কারণ, সে বুঝতেই পারবে না কাজটি গোনাহ’র ছিল। তোমরা কি কখনো ক্রিমির ট্যাবলেট দেখেছো?
-এটা আবার কী, লিডার?
-তোমাদের অবশ্য চেনার কথাও না। মানুষের বাচ্চাদের পেটে মাঝেমধ্যে লম্বাটে ধরণের কিছু পোকার জন্মহয়। এগুলোর নাম হল ক্রিমি। সেগুলোকে মারার জন্য এক প্রকার ট্যাবলেট আছে। ট্যাবলেটটি খেতে খুবই বিস্বাদ এবং দেখতেও বিধঘুটে। বাচ্চারা খেতে চায় না। তখন বাচ্চার মা কী করেন জানো?
-কী করেন?
-ট্যাবলেটের চতুর্দিকে গুড়ের প্রলেপ মাখিয়ে খাইয়ে দেন। বাচ্চারা মজা করে খেয়ে ফেলে। ব্যস, কাজ হয়ে গেল। কিছু কী বুঝতে পারলে?
-জি¦, কিছুটা।
-কিছুটা বুঝলে তো হবে না, পুরোটা বুঝতে হবে। মানুষ কিছুটা বুঝে আর বাকিটা না বুঝেই লাফায়। তোমরা তো মানুষ না, তোমরা হলে শয়তান। তোমাদের মধ্যে মানুষের বদ খাসলত চলে আসল কবে থেকে? বুঝিয়ে বলছি শোনো। এখন থেকে আমাদের কাজের ধরণ হবে, মানুষকে আমরা আকাম-কুকাম করাব ঠিকই, তবে সেটা করাব বাইরে গুড়ের প্রলেপ মাখিয়ে, ক্রিমির ট্যাবলেটের মত। গোনাহের কাজগুলোকে আমরা তাদের সামনে তুলে ধরব নেকির কাজ হিশেবে। তারা সেগুলো নেকি ভেবেই করবে। যেহেতু কাজটি যে গোনাহ’র, এটা তারা বুঝবেই না, তাই তওবা করার প্রশ্নই আসে না। ইজ ইট ক্লিয়ার?
-ইয়েস স্যার!
শয়তান স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলল…

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

ঐতিহাসিক এই সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই

খতিব তাজুল ইসলাম: বিগত আড়াইশত বছর থেকে চলেআাসা ঐতিহাসকি একটি ধারাকে মুল ধারার সাথে যুক্তকরে ...