বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ৮:৫৯
Home / অনুসন্ধান / জাগতিক ভোগ-বিলাস ত্যাগী কাতার প্রিন্সের সংক্ষিপ্ত ও বিস্ময়কর পরিচিতি…

জাগতিক ভোগ-বিলাস ত্যাগী কাতার প্রিন্সের সংক্ষিপ্ত ও বিস্ময়কর পরিচিতি…

12524299_1682597365350108_2209156898163677823_nআজিজুল হক ::

নয়া যামানার নয়া পথিক, পথ হারিয়ে ছুট না দিগ্বিদিক। কাতারের শেখ হাম্মাদ বিন খলিফা এর সাবেক আমির প্রায় দু’দশক ধরে নিজের দক্ষ-দূরদর্শী শাসন দ্বারা কাতারকে নিয়ে গেছেন বিশ্বের সর্বোচ্চ আসনে। বর্তমান আমীর তাঁর ছোট ছেলে শায়খ তামীম বিন হামাদ বিন খলিফা আল সানী। বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক তথ্যমতে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ধনী দেশ কাতার। আইএমঅএফ এর তথ্যমতে মাথাপিছু সর্বোচ্চ আয়ের দেশ। প্রাকৃতিক গ্যাস ভাণ্ডারে কাতারের অবস্থান তৃতীয়। ১৯৭২ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই সেখানে রাজতান্ত্রিক শাসন চলছে। কাতারের ঐতিহ্য ও শাসনরীতি অনুযায়ী দেশটির ক্রাঊন প্রিন্স বা যুবরাজ পরবর্তী আমির হন। যুবরাজ হন সাধারণত আমিরের বড় ছেলে। সে রীতি অনুযায়ী পরবর্তী খলিফা হওয়ার কথা ছিল শেখ হামাদ বিন ফাহাদ বিন আব্দুল আযীয আল সানির। কিন্তু না! সবাইকে অবাক করে দিয়ে ভবিষ্যতের আমির নিজের যুবরাজের পদটি ছেড়ে দেন তার ছোট ভাই শেখ তামিম বিন হামাদ বিন খলিফা আল সানির জন্য। (বর্তমান আমীর) তিনি বেছে নেন অন্য এক পদ। রাজ পরিবারের অঢেল বিলাস বৈভব ছেড়ে তিনি নিতান্ত সাধারণ মানুষের মতো নেমে পড়েন আলোর পথে, আল্লাহর পথে। যুবক বয়সেই তিনি তাবলিগের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন ওৎপ্রোতভাবে। ছেড়ে দেন রাজকীয়
সমস্ত ভোগ-বিলাস। বেরিয়ে পড়েন মানুষের দ্বারে দ্বারে ইসলামের আলো পৌঁছে দিতে। ইসলামের দাওয়াত নিয়ে কাজ করার তাগিদে তিনি ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মুরব্বিদের সাহচর্যে থেকে নিজেকে আমূল বদলে ফেলেন। শুরু করেন দেশ-বিদেশে দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে তিনি একাধিকবার এসেছেন বাংলাদেশে।
চাপাইনবাবগঞ্জ, টেকনাফ ও ময়মনসিঙ্গহে তিনি গ্রামে-গঞ্জে, পথে-ঘাটে দাওয়াতের উদ্দেশ্যে ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি একজন আরব হিসেবে। তাঁর জামাতের কয়েকজন ছাড়া কেউ জানতো না তার পরিচয়। এমনকি বাংলাদেশস্থ কাতার দূতাবাসও জানতে পারেনি তাঁর বাংলাদেশে অবস্থানের কথা। বেশ কয়েকবার তিনি এসেছেন এই ইজতেমায়।
রাজ-পরিবারের অতীব গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়েও তিনি নিজের জন্য তিনি দু’টি পাসপোর্ট ব্যবহার করেন। একটি রাজকীয় কোন সফরে যান তখনই শুধু রয়েল পাসপোর্টি ব্যবহার করেন। অন্যথায় তিনি সবসময় তিনি সাধারণ কাতারি পাসপোর্টটি ব্যবহার করেন। ইমিগ্রেশনের লোকজনও তাঁর এই সাধারণ পাসপোর্টে তাঁকে চিনতে পারে না। তার সাধারণ চলেফেরার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, তিনি সবসময় মিডিয়ার একেবারে অন্তরালে থাকেন। তাই তাঁর বর্তমান বা দু’এক দশকের কোন ছবি মিডিয়ার কাছে নেই। তার সঙ্গে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে দাওয়াতের কাজে সময় লাগানো একজন তাবলিগি সাথী নিজের নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কোন মসজিদে যখন যুবরাজ শেখ ফাহাদ যেতেন তখন জামাতের আমির তাকে যদি সমাজের নেতৃস্থানীয় কোনো লোক যেমন, এলাকার চেয়ারম্যান, বড় ব্যাবসায়ী, রাজনৈতিক নেতার কাছে তশকিলে পাঠাতে চাইতো তিনি তাদের কাছে না গিয়ে এলাকার নিম্নশ্রেণীর কাছে যেতে পছন্দ করতেন। নেতৃস্থানীয় ব্যাক্তির বদলে তিনি ছুটে যেতেন সাধারণ রিক্সাওয়ালা, পান বিক্রেতা, কৃষক, শ্রমিকদের কাছে। তাদের পাশে বসে,তাদের হাত ধরে দ্বীনের কথা শোনানোর জন্য নিয়ে আসতেন মসজিদে। নিজ হাতে তাদের আপ্যায়ন করাতেন। এভাবেই তিনি নিজের রাজকীয় অহমকে মিটিয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের আত্মশুদ্ধির কল্যাণে। আরবি, ইংরেজী, ফ্রেঞ্চ, জার্মানি, উর্দুসহ কয়েকতি ভাষায় পারদর্শী এই যুবরাজ রাজ-পরিবারের সদস্য হলেও ব্যক্তিগতজীবনে অত্যন্ত সরল জীবনযাপন করেন।
বর্তমানে উপমহাদেশের তাবলিগওয়ালা মানুষজন অনেকেই তাঁর পরিচয় জেনে যাওয়ায় তিনি দক্ষিণ এশিয়া সফর কমিয়ে দিয়েছেন। তিনি আফ্রিকা মহাদেশে কয়েক বছর একাধারে মেহনত করেছেন নিরলসভাবে। আফ্রিকার প্রায়
প্রতিটিদেশে তিনি দাওয়াতে তাবলিগের মিশন নিয়ে ছুটে গেছেন বহুবার। বর্তমানে তিনি আরব, ইউরোপ ও আমেরিকায় বেশি কাজ করছেন। আরবের কোন দেশেই তাবলিগ-জামাত উপমহাদেশের মতো মসজিদ কেন্দ্রিকভাবে করার অনুমতি নেই।
সেখানে কাজ করতে হলে তাবলিগ জামাতের জন্য আলাদা কামরা করে নিতে হয়। কিন্তু শুধুমাত্র যুবরাজ শেখ ফাহাদের কারণেই আরবের মধ্যে কেবল কাতারে সাধারণভাবে মসজিদ ভিত্তিক তাবলিগ করার অনুমতি আছে। কাতারের ধর্মমন্ত্রণালয় বিভিন্ন সময় নানা অজুহাতে তাবলিগের উপর খড়্গহস্ত হতে চেয়েছে, কিন্তু শুধু তাঁর কারণে কাতার সরকারের তাবলিগ বিরোধী কোনো কর্মসূচি গ্রহণে সাফল্য লাভ করেনি। তাঁর দাওয়াতের কারণে কাতারের উঁচুস্তরের অনেক মানুষ তাবলিগ জামাতের সাথে যুক্ত হয়েছেন।
তাদের মধ্যে রাজ পরিবারের অনেক সদস্য যেমন আছে তেমনি আছে ধনাঢ্যরা। তার প্রমাণ পাওয়া যায় এবার ইজতেমা উপলক্ষে কাতার থেকে আগত মেহমানের বহর দেখে। তিনটি বিমান রিজার্ভ করে তার তুরাগ তীরের ইজতেমায় এসেছেন। এই তিনটি বিমান ইজতেমার কয়েকদিন বাংলাদেশের বিমানবন্দরেই অবস্থান করে। ইজতেমা শেষ করে তদের নিয়েই তা উড়ে যায় কাতারে। রাজ-পরিবারের মাঝেও তিনি তাবলিগের দাওয়াত ছড়িয়ে দিয়েছেন। তার চাচাতো ভাই শেখ নাসের যুক্ত হয়েছেন তাবলিগের এই নিঃস্বার্থ দাওয়াতি কাজে। কাতারের সাবেক ধর্মমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহও বর্তমানে তাবলিগের কাজে নিজের সর্বস্ব দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। শোনা যায়, সৌদি বাদশাহ নাকি সন্ত্রাসবাদের অজুহাত তুলে অনেকবার কাতারের বাদশাহ হাম্মাদ বিন খলিফাকে তার দেশে তাবলীগের কার্যক্রম গুটিয়ে ফেলার জন্য উপদেশ দিয়েছেন। কিন্তু কাতারের আমির সৌদি বাদশাহকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, কোনভাবেই তিনি তাঁর দেশে তাবলিগের কার্যক্রমে কোনো হস্তক্ষেপ করবেন না। কেননা, তিনি উপলব্ধি করেছেন, পৃথিবীতে একমাত্র এইন একটি জামাত অনন্য পদ্ধতিতে নিঃস্বার্থভাবে ইসলামের খেদমত করে যাচ্ছে। উপরন্ত তিনি সৌদি বাদশাহকে বলেছেন, সৌদি আরবে তাবলিগের ওপর যে সমস্ত বিধি-নিষেধ আছে তা তুলে দিয়ে তাদেরকে বেশি করে কাজ করার সুযোগ করে দেয়া উচিৎ। প্রসাদ ছেড়ে আল্লাহর পথে চলে আসা এই যুবরাজ এভাবেই নিজের জীবনকে ইসলামের খেদমতে সঁপে দিয়েছেন। তিনি যেন এ যুগের ইবরাহীম ইবনে আদাম রাহ.। এই বৎসরও বিশ্ব ইজতেমায় এসেছেন এবং ইজতেমার পর মসজিদে মসজিদে দাওয়াতের কাজে বেরিয়ে পড়েছেন। আল্লাহ তাঁর দীর্ঘ হায়াতে তৈয়েবা নসীব করুন, আ-মী-ন। (সংগৃহীত)

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

বিকৃত যৌনতায় দিশেহারা জাতি: সমাধান কোন পথে?

শাইখ মিজানুর রাহমান আজহারী: বাংলাদেশে প্রায় প্রতিদিন কোথাও না কোথাও ধর্ষণ হচ্ছে। নারীকে বিবস্ত্র করা ...