ফাহিম মুহাম্মদ আতাউল্লাহ ::
ইমাম গাযালী র.-এর ছাত্র কালের কথা। তিনি যে মাদরাসায় পড়তেন তা তৎকালীন বাদশাহ ‘নিযামুল মুলক তূসী’ নির্মাণ করেছিলেন। নিযামুল মুলককে তার কোনো একজন সভাষদ জানালেন, জনাব! আপনি যে মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন সেখানের সব ছাত্র তো দুনিয়াদার! দীন শেখার মতো একজনও নেই সেখানে।
বাদশাহ ভাঙা মনে বললেন, আমি এতো টাকা-পয়সা খরচ করি আর ছাত্ররা যদি কিতাব পড়ে দুনিয়াদারই হয় তাহলে কী লাভ? তারচে‘ বরং মাদরাসা বন্ধ করে দেয়াই শ্রেয়। কিছুক্ষণ পর ভেবে বললেন, বন্ধ করে দেয়ার আগে আমি নিজে মাদরাসা পরিদর্শন করে ফাইনাল সিদ্ধান্ত নিবো।
একদিন বাদশাহ কাউকে না জানিয়ে, শাহী পোষাক ছেড়ে মাদরাসায় গিয়ে হাজির হলেন। একজন ছাত্রকে জিজ্ঞেস করলেন, ভাই!! তুমি মাদরাসায় কেনো পড়ছো? ছাত্র জবাবে বললো, আমি মাদরাসায় পড়ার উদ্দেশ্য হলো, বড়ো মুফতি সাহেব হওয়া। কারণ আমার পিতা অমুক স্থানের মুফতি। আমিও মুফতি হবো। যাতে মানুষ আমার সম্মান করে।
:
আরেক জনকে জিজ্ঞেস করলেন, সে জবাবে বললো, আমার পিতা অমুক স্থানের বিচারক। বড়ো হয়ে আমি তাঁর স্থলাবিসিক্ত হবো। ৩য় আরেক জন বললো, বর্তমান বাদশাহ আলেমদের অনেক সম্মান করেন। তাই আমার ইচ্ছা আলেম হবো এবং বাদশার মোসাহেব হবো।
:
এসমস্ত কথা শুনে বাদশাহ ভাবলেন, সত্যিই তো এরা দুনিয়াদার। আমার এতো পয়সা খরচ করার কী ফায়েদা? তারচে‘ এই প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিলেই ভালো হবে।
এই মনোভাব নিয়ে বাদশাহ যখন বেরিয়ে আসছিলেন, দেখলেন দরজার পাশে এক ছাত্র বাতির আলোতে মনোযোগের সাথে পড়ছে। বাদশাহ ভাবলেন, তার সাথেও একটু কথা বলে যাই। তিনি ছাত্রটির নিকটে এসে সালাম দিলেন। ছাত্রটি সালামের জবাব দিয়েই আবার পড়তে শুরু করলো।
বাদশাহ বললেন, কী ব্যাপার? তুমি কি আমার সাথে কোনো কথাই বলবে না? ছাত্রটি বললো, জ্বি জনাব!! আমি এখানে আপনার সাথে কথা বলতে আসিনি।
: তাহলে কেনো এসেছো?
: আমি আমার পরোয়ারদেগারকে সন্তুষ্ট করতে এখানে এসেছি। কিন্তু আমার জানা নেই কীভাবে তাঁকে সন্তুষ্ট করবো? তাঁকে সন্তুষ্ট করার পদ্ধতি এই কিতাবগুলিতে লেখা আছে। তাই আমি এগুলো পড়বো। বুঝে আমল করবো। তাতে আমার প্রভু সন্তুষ্ট হবেন।
বাদশাহ ছাত্রের জবাব শুনো খুশি হলেন। সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ফিরে গেলেন।
সেই ছাত্রটিই ছিলো মনীষী ইমাম গাযালী।
বন্ধুরা!! আমরা যে সকল দ্বীনের কাজ করছি তাতে আমাদের মাকসাদ কি? আল্লাহকে খুশি করা নাকি ভিন্ন কিছু? মনকে প্রশ্ন করা দরকার। কারণ, সামান্য পরিমাণ রিয়া-ই আমাদের সব আমলকে বরবাদ করে দিতে পারে। সামান্য কারণেই পণ্ড হতে পারে আমাদের সব সাধণা। শূণ্য হয়ে যেতে পারে আমাদের সঞ্চয়ের জাম্বিল।
বন্ধুরা!! মাঝে মাঝে মনে চিন্তা জাগে। আখেরাত পাবার আশা করে দুনিয়ামুখী শিক্ষা অর্জন থেকে নিজেকে বিরত রেখেছি। আখেরাত পাবার স্বপ্নে বিভোর থেকে দুনিয়াকে হাতছাড়া করেছি। এখন যদি কোনো বদ আমলের কারণে কিংবা সামান্য পরিমাণ রিয়ার কারণে আমার আখেরাত বরবাদ হয়ে যায় তাহলে আমার চেয়ে বড়ো দূর্ভাগা আর কেউ হতে পারে না। আমিই হয়ে যাবো “খাছিরাতুদ্দুনিয়া অল আখিরাহ”-র চূড়ান্ত মেসদাক।
তাই আসুন!! আমাদের ছোটো ছোটো আমলগুলোও যেনো লিল্লাহিয়্যাতের সাথে হয় সে ব্যাপারে সচেষ্ট থাকার চেষ্টা করি। যত্নবান হতে চেষ্টা করি বে-রিয়া আমলের প্রতি।
আল্লাহ আমাদের সকলকে তৌফিক দান করুন । আমীন।।