ইলিয়াস মশহুদ :: ঢাকার ২২ কিলোমিটার উত্তরে তুরাগ নদীর তীরে চলছে তাবলীগ জামাতের ২০১৬ সালের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। আজ শুক্রবার বাদ ফজর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে ৫১তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হয়েছে। এ পর্ব ১০ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। ১৫ জানুয়ারি দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়ে শেষ হবে ১৭ জানুয়ারি।
বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিতে ইতোমধ্যে টঙ্গীর তুরাগ তীরে জড়ো হয়েছেন লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি। ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র জিকিরে এখন মুখরিত পুরো টঙ্গী এলাকা। ইজতেমা দায়িত্বশীল সূত্রে জানা যায়- এবারের বিশ্ব ইজতেমায় দেশের ৩২টি জেলা অংশ নিতে পারবে। বাকী ৩২ জেলা অংশ নিবে আগামী বছর। তাছাড়া আমেরিকা, আফ্রিকা, সৌদিআরব, ভারত, পাকিস্তানসহ প্রায় ১২০টি দেশের ধর্মপ্রাণ মুসল্লি ইজতেমায় অংশ নিতে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ পৌঁছেছেন। এবারের ইজতেমায় দুই পর্ব মিলিয়ে দেশ-বিদেশের ২০ লাখেরও বেশি মুসল্লি অংশ নিবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে মাওলানা ইলিয়াস রাহ. ভারতের উত্তর প্রদেশের সাহরানপুর এলাকায় ইসলামি দাওয়াত তথা তাবলিগের প্রবর্তন করেন এবং একই সঙ্গে এলাকাভিত্তিক সম্মেলন বা ইজতেমারও আয়োজন করেন। বাংলাদেশে ১৯৫০-এর দশকে তাবলিগ জামাতের প্রচলন করেন মাওলানা আবদুল আজিজ রাহ.। বাংলাদেশে তাবলিগ জামাতের কেন্দ্রীয় মারকাজ বা প্রধান কেন্দ্র কাকরাইল মসজিদ থেকে এই সমাবেশ কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালনা করা হয়। পুরো সমাবেশের আয়োজনই করে থাকেন একঝাঁক ধর্মপ্রাণ মুসলমান স্বেচ্ছাসেবক। আর্থিক, শারীরিক সহায়তা দিয়ে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তারা এই সমাবেশকে সফল করতে সচেষ্ট থাকেন।
পুরো সমাবেশস্থলটি একটি উন্মুক্ত মাঠ, যা বাঁশের খুঁটির উপর চট লাগিয়ে ছাউনি দিয়ে সমাবেশের জন্য প্রস্তুত করা হয়। শুধুমাত্র বিদেশী মেহমানদের জন্য টিনের ছাউনি ও টিনের বেড়ার ব্যবস্থা করা হয়। সমাবেশস্থলটি প্রথমে খিত্তা ও পরে খুঁটি নম্বর দিয়ে ভাগ করা হয়। অংশগ্রহণকারীগণ খিত্তা নম্বর ও খুঁটি নম্বর দিয়ে নিজেদের অবস্থান সনাক্ত করেন। তাছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলাওয়ারি মাঠের বিভিন্ন অংশ ভাগ করা থাকে। বিদেশী মেহমানদের জন্য আলাদা নিরাপত্তাবেষ্টনীসমৃদ্ধ এলাকা থাকে, সেখানে স্বেচ্ছাসেবকরাই কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। কোনো সশস্ত্র বাহিনীর অনুপ্রবেশের অধিকার দেয়া হয় না।
বাংলাদেশে তাবলীগ আন্দোলন শুরু হয় ১৯৪৪ সালে। সে হিসেবে এবারকার ইজতেমা ৭১তম। সুদীর্ঘ সাড়ে তিন যুগ ধরে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে বিশ্ব ইজতেমা। ২০১১ সাল থেকে এক সাথে এতো ধর্মপ্রাণ মানুষের সঙ্কুলান না হওয়ায় দু’ পর্বে ইজতেমা চলার সিদ্ধান্ত হয়। সেই ধারাবাহিকতায়ই এবার মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
‘তাবলীগ’ অনুসারীদের একটি বৃহত্তম সমাবেশ বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইজতেমা। তাবলীগ আরবি শব্দ, বালাগ শব্দ থেকে আগত। যার শাব্দিক অর্থ পৌঁছানো, প্রচার করা, প্রসার করা, বয়ান করা, চেষ্টা করা, দান করা ইত্যাদি। পরিভাষায় একজনের অর্জিত জ্ঞান বা শিক্ষা নিজ ইচ্ছা ও চেষ্টার মাধ্যমে অন্যের কাছে পৌঁছানোকে তাবলীগ বলে। তাবলীগ আদর্শ যিনি পৌঁছেন, তাকে মুবাল্লিগ বলে। বিশ্বনবী (স) এ প্রেক্ষিতে বলেছেন, ‘আমার পক্ষ হতে একটিমাত্র বাণী হলেও তা অন্যের কাছে পৌঁছে দাও।’
বর্ণিত আছে যে, আজ থেকে প্রায় ৬ দশক আগে ১৯১০ সালে ভারতের এক জনবিরল অঞ্চল মেওয়াত থেকে হাতেগোনা ক’জন মানুষ নিয়ে হযরত মাওলানা ইলিয়াস কান্ধলভী রাহ. তাবলীগের মেহনত শুরু করেন। তাবলীগের এ মেহনত এখন সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্বব্যাপী সমাদৃত আজকের তাবলীগ জামায়াতের সার্থক রূপকার হযরত মাওলানা ইলিয়াস কান্ধলভী রাহ. ১৩৫১ হিজরি সনে হজ থেকে ফিরে আসার পর সাধারণ মুসলমানদের দুনিয়া ও সংসারের ঝামেলা থেকে মুক্ত করে ছোট ছোট দলবদ্ধ করে মসজিদের ধর্মীয় পরিবেশে অল্প সময়ের জন্য দ্বীনি শিক্ষা দিতে থাকেন। এরই মাঝে একদা তিনি মহানবী সা. কে স্বপ্নে দেখেন এবং মহানবী সা. তাকে দাওয়াত ও তাবলীগের কাজের জন্য নির্দেশ দেন। মহানবীর সা. নির্দেশ মোতাবেক তিনি দাওয়াত ও তাবলীগের কাজের সূচনা করেন। তারপর এ কাজকে আরও বেগবান ও গতিশীল করার জন্য উপমহাদেশের সর্বস্তরের আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ ও বুযূর্গদের কাছে দোয়া প্রার্থনা করা হয় এবং দিল্লীর কাছে মেওয়াতে সর্বস্তরের মুসলমানদের জন্য ইজতেমা বা সম্মেলনের ব্যবস্থা করা হয়।
হযরত মাওলানা ইলিয়াস কান্ধালভী রাহ. এ কর্মপ্রয়াসকে তখন বলতেন ‘ইসালে নফস’ বা আত্মশুদ্ধির প্রাথমিক পাঠ। প্রথমত তিনি টেস্ট কেস হিসেবে ভারতের সাহারানপুর ও মেওয়াত এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে তার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য তুলে ধরেন। তিনি ৬টি বিশেষ গুণ অর্জনের মেহনত করেন জনসাধারণ্যে। সেই বিশেষগুণ হলো : কালেমা, নামায, ইলিম ও জিকির, ইকরামুল মুসলিমিন (মুসলমানদের সেবা) সহীহ্ নিয়ত ও তাবলীগ। অন্য একটি গ্রন্থ সূত্রে জানা যায়, ইলিয়াস রাহ. প্রথমে বর্তমান ধারার এ তাবলীগকে নাম দেন ‘তাহরীকুস সালাত’ বা নামাযের আন্দোলন।
এরপরই ক্রমেই তাবলীগের কার্যক্রম বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের গ-ি ছাড়িয়ে পৌঁছে যায় বিশ্বের সর্বত্র। হযরত মাওলানা আবদুল আজিজ রাহ.’র মাধ্যমে ১৯৪৪ সালে বাংলাদেশে তাবলীগ শুরু হয়। তারপর ১৯৪৬ সলে বিশ্ব ইজতেমা সর্বপ্রথম অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের তাবলীগের মারকাজ কাকরাইল মসজিদে। পরে ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রাম হাজী ক্যাম্পে। এরপর ১৯৫৮ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে, তারপর ১৯৬৫ সালে টঙ্গির পাগারে এবং সর্বশেষ ১৯৬৬ সালে টঙ্গির ভবেরপাড়া তুরাগ তীরে অনুষ্ঠিত হয়। সেই থেকে এ পর্যন্ত সেখানেই ১৬০ একর জায়গায় তাবলীগের সর্ববৃহৎ ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
উল্লেখ্য, তাবলীগ জামায়াতের সদর দফতর দিল্লীতে থাকা সত্বেও এর বার্ষিক সমাবেশের জন্য বাংলাদেশকে বেছে নেয়া হয়। কথিত আছে, তাবলীগ জামায়াতের মুরুব্বিদের বৈঠকে ইজতেমার স্থান নির্ধারণের জন্য নাকি লটারি হয়েছিল, সেই লটারিতে বাংলাদেশের নাম ওঠে। আর সেই থেকেই বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ মহাসমাবেশ এ বিশ্ব ইজতেমা। ভারতের মুম্বাই ও ভূপালে এবং হালে পাকিস্তানের রায় বেন্ডে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হলেও জনসমাগমের বিচারে টঙ্গির বিশ্ব ইজতেমাই বড় এবং বিশ্ব দরবারে বিশ্ব ইজতেমা বলতে বাংলাদেশের টঙ্গিতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইজতেমাকেই বুঝায়।
কথিত আছে, ইলিয়াস রাহ. প্রথম যখন মানুষের কাছে ধর্মীয় প্রচার শুরু করেন, তখন তেমন কোনো সাড়া মিলেনি। তাই তিনি অভিনব এক কৌশল অবলম্বন করেন। তিনি আশপাশের দিনমজুর, শ্রমিক-কৃষকদের ডেকে এনে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রেখে দু’ বেলা খাবার দিতেন এবং তাদেরকে নামায শিক্ষা দিতেন, নামাযের সুরা শিখাতেন, ধর্মীয় বিধি-নিষেধ বর্ণনা করতেন। অবশেষে বিদায় বেলা তাদের প্রত্যেককে মজুরি তথা পারিশ্রমিক দিয়ে দিতেন। এ পদ্ধতি অত্যন্ত ফলপ্রসূ হলো। অল্প সময়ের ব্যবধানেই তার নামাযের আন্দোলনের সদস্য সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেল। মানুষ তখন নিজেরাই অর্থ ব্যয় করে ইলয়াস রাহ.’র পদাঙ্ক অনুকরণ করে দাওয়াতী কার্যক্রম চালাতে থাকেন।
যখন বাংলাদেশে তাবলীগ জামাতের প্রচেষ্টা শুরু হয়, তখন এর নাম ছিলো শুধুই ইজতেমা। যা অনুষ্ঠিত হতো ঢাকার কাকরাইল মসজিদে। ১৯৬৪ সালে কাকরাইলে সর্বপ্রথম বাংলাদেশের ইজতেমা শুরু হয়। ১৯৫৮ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে, তারপর ১৯৬৫ সালে টঙ্গীর পাগারে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। তখন থেকে ধীরে ধীরে এগুতে এগুতেই আজকের টঙ্গীতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইজতেমা। যে ইজতেমায় অংশগ্রহণ করে বিশ্বের প্রায় একশটি রাষ্ট্রের তাবলীগ প্রতিনিধিরা। শিল্পনগরী টঙ্গীতে ইজতেমাকে স্থানান্তরিত করা হয় ১৯৬৬ সালে। আর সে বছর থেকেই তাবলীগ জামাতের এই মহাসম্মেলন ‘বিশ্ব ইজতেমা’ নামে খ্যাতি অর্জন করে। মুসলিম উম্মাহর সর্ববৃহৎ সম্মিলন হজে যেমন বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তের মুসলমানদের সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য আর ঐক্যেও প্রেরণার অভাবনীয় নজির দেখা যায়, বাংলাদেশের বিশ্ব ইজতেমায়ও দেখা যায় মুসলিম ঐক্যের এক অপূর্ব মিলনমেলা। এর ফলে পুণ্যভূমি মক্কা-মদিনার পর তুরাগ তীরে অবস্থিত টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা পরিচিতি লাভ করে বিশ্ব মুসলিমের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিলনকেন্দ্র হিসেবে।
বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় তিন দিনব্যাপী। বর্তমানে দু’ পর্বে ছয়দিন। কিন্তু টঙ্গীতে এর আমেজ থাকে প্রায় মাসখানেক। আর এ ইজতেমার প্রস্তুতি তো তিন/চার মাস আগ থেকেই শুরু হয়ে যায়। সম্পূর্ণ রাজনীতিমুক্ত তাবলীগ আন্দোলনকে বিশ্বের সবচে’ বড় ইসলামী আন্দোলন বলা হয়ে থাকে। পৃথিবীর ছয়টি মহাদেশের কোটি কোটি মুসলমান এ আন্দোলনের সময় বিনিয়োগ করে থাকেন।
যতটুকু জানা যায়, ইজতেমা নিয়ন্ত্রণকারী তাবলীগ জামাতের কোনো সংবিধান নেই। অলিখিত সংবিধানও নেই। তারপরও এ আন্দোলন মুসলিম বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এবং সুশৃঙ্খল আন্দোলন। তাবলীগ জামাতের একটি কেন্দ্রীয় কমিটি আছে। এটিকে বলা হয় মজলিসে শুরা। এ কমিটির কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় না। ২১ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়াও বহু ব্যক্তি এ কমিটির মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করে থাকেন। তাবলীগে যারা অপেক্ষাকৃত বেশি অবদান রেখেছেন, তারাই এ কমিটির আলোচনায় কথাবার্তা বলেন। তবে কে কতো বেশি অবদান রেখেছেন, তা’ নির্ধারণের কোনো মাপকাঠি নেই। তাবলীগ আন্দোলনে ক্ষমতা বা পদমর্যাদার কোনো প্রতিযোগিতা নেই, প্রতিদ্বন্ধিতা নেই। নেতৃত্বের কোন্দল নেই। যিনি একবার কেন্দ্রীয় শুরায় আমির নির্বাচিত হন, তিনি আমৃত্যু সে পদ অলঙ্কৃত করেন। তাবলীগ অনুসারীরা তাদের আমিরকে সম্বোধন করেন ‘হযরত জী’ বলে। ঢাকা মহানগরীতে অবস্থিত কাকরাইল মসজিদ বাংলাদেশ তাবলীগ জমাতের কেন্দ্রীয় কার্যালয় বা হেড কোয়ার্টার।
বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে টঙ্গীতে দু’ মাইল লম্বা যে প্যান্ডেল তৈরি করা হয়, তার জন্যে কোনো চাঁদা অনুদান কারো কাছ থেকে চাওয়া হয় না। স্বেচ্ছাসেবীরা স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে এ সম্মিলনের ব্যয়ভার বহন করে থাকেন। তাবলীগে অংশগ্রহণকারী প্রকৌশলীগণ প্যান্ডেলের একটি নকশা তৈরি করে দেন। বিভিন্ন কল-কারখানা, মিল-ফ্যাক্টরি থেকে আসা লোকজন রড, সিআই সিট, সামিয়ানার চট ইত্যাদি নিয়ে আসেন। ইজতেমা শেষ হওয়ার পর তারা স্ব স্ব জিনিসপত্র খুলে নিয়ে যান।
তাবলীগ আন্দোলন ও বিশ্ব ইজতেমার কোনো প্রেস রিলিজ, প্রকাশনা, প্রচার শাখা নেই। বিশ্ব ইজতেমা কোন্ তারিখে অনুষ্ঠিত হবে, তা’ উল্লেখ করে কোনো প্রেস বিজ্ঞপ্তি ইস্যু করা হয় না। কোনো লিফলেট-পোস্টার ছাপানো হয় না, তবুও লাখ লাখ মানুষ নির্দিষ্ট সময়ের আগে বিশ্ব ইজতেমায় সমবেত হন। ইজতেমা ময়দানে লাখো জনতার উদ্দেশ্যে কে বক্তব্য রাখছেন, তার নাম ঘোষণা করা হয় না। এ ক্ষেত্রে তাবলীগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ “কে বলছেন সে দিকে তাকিও না, কী বলেছেন সেদিকে লক্ষ্য করো” হাদিসকেই ফলো করে থাকেন।
বিশ্ব ইজতেমা মানুষের মধ্যে ব্যাপক ধর্মীয় উৎসাহ-উদ্দীপনা ও আবেগ তৈরি করে। আধ্যাত্মিক প্রেরণার উন্মেষ ঘটায়। বিশেষ করে তিনদিনব্যাপী (উভয় পর্বে) ইজতেমার শেষ দিনের মোনাজাতে অংশ নেয়ার জন্যে যেভাবে মানুষ পাগলের মতো ছুটে যায়, তা সত্যিই ইসলামী আবেগ ও চেতনার বহিঃপ্রকাশ।
বিশ্ব ইজতেমার শেষ দিন কার্যত টঙ্গীকেন্দ্রিক জাতীয় উত্সবে পরিণত হয়। এর প্রভাব এতোটুকু গড়ায় যে, দেশের প্রেসিডেন্ট, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতাসহ বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ কমপক্ষে আখেরী মুনাজাতের দিন হাজিরা দিতে যান।
বিশ্ব ইজতেমার ব্যাপারে মিডিয়াগুলোও নিস্পৃহ থাকতে পারে না। দেশের গণমাধ্যমগুলো বিশেষ করে আখেরী মুনাজাত অনুষ্ঠানটি দেশের প্রধান খবর হিসেবে গুরুত্ব সহকারে প্রচার করে।
তথ্যসূত্র. উ.পি, বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, তাবলীগ জামাতের ইতিহাস।