খতিব তাজুল ইসলাম::
জনাব মুফিজুর রাহমান ফারুক। আমাদের এলাকার একজন নম্র ভদ্র শিক্ষীত উদার মনোভাবের একজন সৃজনশীল মানুষ। সিলেট বালাগঞ্জ ইউনিয়নের মজলিসপুর গ্রামের কৃতি সন্তান। বাংলা-পোষ্ট নামে বাংলা ও ইংরেজী ভাষায় সপ্তাহিক একটি ট্যাবলেয়ট পত্রিকার মহাপরিচালক। পিছনে কয়েক প্রগ্রামে আমাকে দাওয়াত করেছেন কিন্তু যেতে পারিনি। এবার টেক্সট পেয়ে ভাবলাম যাবো অবশ্যই যাবো। আজ ছিলো সোমবার ২১শে ডিসেম্বরের বিকাল বেলা। লন্ডনের একটি কমউনিটি হলে সাড়ে ৫টায় শুরুর কথা থাকলেও এসেছি সাড়ে ৬টায় শুরু হয়েছে ৭টায়। পবিত্র কালামে পাকের তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হলো। স্বাগত বক্তব্য নিয়ে আসলেন আয়োজক ও সভাপতি জনাব মুফিজুর রাহমান ফারুক সাহেব। পরিচালনা করছিলেন সলিটসিটর তারেক চৌধুরী। বাংলাদেশে দুতাবাসের প্রেস সেক্রেটারী নাদিম সাহেব উপস্থিত ছিলেন। লন্ডনের বাংলা মিডিয়ার সাংবাদিক বৃন্দের অনেকেই হাজির হয়েছিলেন। অনেক মুক্তিযুদ্ধাগণ উপস্থিত থেকে তাদের সেদিনের অভিজ্ঞতার কথা ফুটিয়ে তুলেছেন। অনেকে আক্ষেপ করে বলেছেন যে, আমরা স্বাধীনতার যুদ্ধ করেছিলাম পাকিস্তানী শোষকদের হাত হতে মুক্তি পেতে। কিন্তু দেশ আজ দেশীয় শোষকেদের হাতে বন্দী। যে রাজনীতিবিদদের দেশ গড়ার কথা ছিলো তারা আজ পকেট ভারি করার হীন লোটপাটে লিপ্ত। মুক্তিযুদ্ধা আজিজুল কামাল সাহেবও তিনির বক্তব্যে কিছু মুক্তিযুদ্ধাদের অনিয়মের কথা তুলে ধরেন। আত্মসমালোনা এখন সময়ের দাবী বলে অনেকের বক্তব্যে উঠে আসে।
বিশেষ করে বিয়ানিবাজার নিবাসী বাবু হোসাইন নামের মুক্তিযুদ্ধা পরিবারের একভাইর কান্না বিজড়িত কণ্ঠের কথা গুলো অন্তরে বিদ্ধ হচ্ছিলো বর্শার মতো করে। তার বাবা ও বড় ভাইকে অত্যন্ত্য নির্মম ভাবে রাজাকাররা ধরে নিয়ে হত্যা করেছে।
স্বাধীন একখন্ড ভুমি লাল সবুজের পতাকা ও বাংলা ভাষার মতো গুরুত্ব পুর্ণ সম্পদ যাদের ত্যাগ ও কুরবানীর বিনীময়ে অর্জিত হয়েছে তাদের রূহের মাগফেরাত কামনা করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের শহীদানদের শ্রদ্ধাভের স্মরণ করা হয়। দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে যেন আমরা কমন ইস্যুতে সবাই এক হতে পারি এমন বক্তব্য ও এসেছে। অনেকে বলেছেন যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার চেতনা মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধা এসব নিয়ে যেন আমরা আর বিরোধে জড়িয়ে না পড়ি। ইহা এখন জাতীয় সম্পদ। কোন বিশেষ দলের সম্পদ নয়। আমাদের কমন ইন্টারেস্ট এবং জাতীয় ইস্যুতে সবাই এক হতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করা থেকে বিরত থাকার আহব্বান জানান।
আমাকে কিছু কথা বলার অনুরোধ করেন। দাঁড়িয়ে অতি সংক্ষেপে যে জিনিসটি বলার চেষ্টা করেছি তা হলো- বাংলাদেশে যে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিলো তাকি ছিলো ইসলামের বিরুদ্ধে? পাকিস্তানী হানাদাররা ইসলামকে ব্যবহার করে বাংলাদেশের সহজ সরল মুসলমানদেরকে হত্যা করার মিশনে নেমেছিলো হিন্দু তকমা দিয়ে। আজকে আইএস যেভাবে ইসলামকে ব্যবহার করে খুনের রাজত্ব কায়েম করেছে ঠিক তেমনি পাকসেনারা সেই কাজটিই করেছে। আমেরিকার ডলারের গায়ে যদি লিখা থাকতে পারে আমরা গডে বিশ্বাস করি আর বাইবেল নিয়ে সংসদে শপথ নিতে পারে তাহলে একজন মুসলমান হয়ে কেন আমরা ইসলাম তথা নিজের ধর্মকে সামনে নিয়ে আসতে পারবোনা? বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রাহমান তিনি নিজেই ইসলামি ফাউন্ডেশন কায়েম করেছিলেন। মুসলিম বিশ্বের সাথে সুসম্পর্ক তিনিই স্থাপন করেছিলেন।
আমরা হলাম স্বাধীনতা উত্তর প্রজন্ম। আজ আমারা বিড়ম্বনায় আছি। স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে সন্দিহান। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণে যেখানে তিনি পরিস্কার ভাষায় বলেছেন “এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম। রক্ত দিয়েছি আরো রক্ত দিবো এদেশের মানুষকে মুক্ত করেই ছাড়বো ইনশাআল্লা।” তাহলে মুক্তি সংগ্রামের ডাকতো তিনি দিয়েই ফেললেন। তাই তাকে তার সঠিক মর্যাদা আমাদের দিতেই হবে। আজ ৪৪ বছর পেরিয়েও আমরা স্বাধীনতাটাকে খুঁজছি। অসহায় নিরন্ন নির্যাতিত মানুষের আহাজারিতে বাংলার আকাশ বাতাস এখন ভারী। ২লক্ষ মা বোনের ইজ্জতের বিনীময়ে অর্জিত স্বাধীনতার এই প্রহরে কেন আমাকে শোনতে হচ্ছে ধর্ষিতা বোনের করুণ আর্তনাদ? তাই আমাদের বিবেককে জাগিয়ে তুলতে হবে। আমরা আজ পর্যন্ত একটি স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা পেলাম না। পেলামনা স্বাধীন একটি প্রশাসন। পেলামনা স্বাধীন একটা চিকিতসা ব্যবস্থা।এভাবে চলতে পারেনা চলতে দেয়া যায়না। তাই আসুন স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলি। গণমানুষের মুক্তির সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করি।