শনিবার, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ বিকাল ৪:৫২
Home / খোলা জানালা / জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে মাদরাসা পড়ুয়াদের এগিয়ে আসা সময়ের দাবি

জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে মাদরাসা পড়ুয়াদের এগিয়ে আসা সময়ের দাবি

Ehsan Bin _Komashishaএহসান বিন মুজাহির ::

বর্তমান যুগ তথ্য-প্রযুক্তির যুগ। ইন্টারনেট-ফেসবুকের মাধ্যমে সারা বিশ্বকে আমরা হাতের মুটোয় এনে ফেলেছি। ইন্টারনেটের মাধ্যমে অতি দ্রুত কোটি কোটি মানুষের কাছে দ্বীনের সঠিক দাওয়াত পৌছে দেয়া সহজতর একটি কাজ। মিডিয়ার সাথে ওলামায়ে কেরামদের অংশগ্রহণ কতটুকু প্রয়োজন তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। তথ্যপ্রযুক্তির এযুগে জনমত গঠন ও নিয়ন্ত্রণে মিডিয়ার ভুমিকা অত্যান্ত অপরিসীম। বর্তমানে মিডিয় মাধ্যমেই সবচেয়ে বেশী ক্ষতির সম্মুখিন সমাজের আলেম-ওলামাগণ। ইসলাম ও আলেম ওলামা বিদ্বেষী হলদে কিছু মিডিয়া সত্যকে মিথ্যা, মিথ্যাকে সত্য, সাদাকে কালো, কালোকে সাদা, তিলকে তাল, তালকে তিল বানিয়ে বাস্তব ও সঠিক ঘটনাকে গোপন রেখে অত্যন্ত সুন্দরভাবে সাজিয়ে বিশ্ববাসীর দরবারে পেশ করছে। মুসলমানদের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সাহিত্য সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে যাতে মোটেও আগাতে না পারে সে জন্য ইহুদী-খৃষ্টান ও তাদের দোসররা বাঁধার পর বাধা সৃষ্টি করার পায়তারায় লিপ্ত। এমনকি তারা প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে প্রধান অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। কাজেই বর্তমানে মিডিয়ায় আলেম-ওলামাদের অংশ গ্রহন সময়ের অপরিহার্য দাবি হয়ে ওঠেছে। কারণ আলেমরা দেশ ও জাতির অতন্দ্র প্রহরী। সকল বিষয়েই তাঁদের পারদর্শীতা অর্জন করতে হবে। বাতিল সম্প্রদায় যখন যেভাবেই আসবে সেভাবেই তাঁদের মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। বাতিল যদি অস্ত্র নিয়ে আসে তাহলে আলেমরাও অস্ত্র দিয়ে তাদের মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। বাতিল যদি লিখনি নিয়ে আসে আলেমরা লিখনির মাধ্যমে এর মোকাবিলা করতে হবে। বাতিল যদি ইন্টারনেট-ব্লগ, ফেসবুকের মাধ্যমে দ্বীনের বিরোধীতা করে অলেম-ওলামারাও বাতিল, নাস্তিকদের বিরুদ্ধে ব্লগে এসকল সাইটো দাত ভাঙা জবাব দিতে হবে। ইসলাম বিদ্বেষীরা যদি ওয়াজ-বক্তৃতা, সেমিনার, এনজিও-সংগঠন নিয়ে ময়দানে আসে আলেম সমাজও তাদের বিরুদ্ধে এগুলোর মাধ্যমেই তাগুতী শক্তির মোকাবিলা করতে হবে। বাতিল ও ইসলামের শত্রুরা যেভাবে ইসলাম ও মুসলমানদের ক্ষতি সাধনে লিপ্ত, তেমনি মুসলমানদেরকেও সেভাবেই দুশমনদের ক্ষতি সাধনে লিপ্ত থাকতে হবে। আর এটাই সচেতনতার পরিচয় ও যুক্তির দাবি। হারাম, নাজায়েজ ফাতওয়া দিয়ে মিডিয়া থেকে দুরে থাকলে চলবে না। বরং বিকল্প মিডিয়া তৈরী করে ইসলাম বিদ্বেষীদের মোকাবিলা করতে হবে। নবীযুগের ঘটনা আমাদেরা জলন্ত প্রমাণ। রাসুলের (সাঃ) এর যামানায় মক্কার ইহুদী-মুশরিক তথা নবী বিরোধীরা ইসলাম ও নবীকে ব্যাঙ্গ- কটুক্তি করে কছিদা-কবিতা লিখেছিলো। রাহমাতুল্লিল আলামিনের কাছে সাহাবায়ে কেরাম এ বিষয়ে নালিশ করলেন এবং প্রতিবাদ করার অনুরোধ জানালেন, তখন রাসুল (সাঃ) সেই যুগের প্রসিদ্ধ কবি হযরত হাসসান বিন সাবিতকে (রাঃ) নির্দেশ দিলেন কবিতা রচনার মাধ্যমে এই কটুক্তির দাত ভাঙা জবাব দেয়ার জন্য । তখন হাসসান (রাঃ) কবিতার মাধ্যমে এই কটুক্তির দাত ভাঙা জবাব দিলেন। কওমী আলেমদের সবিনয়ে বলছি, আপনারা ইন্টারনেট তথা অনলাইন-ব্লগে আসবেন না ,মাদরাসার ছাত্ররা ইন্টারেেনট চালালে তাদের বিরুদ্ধে শক্ত ভুমিকা রাখবেন, শাঁসাবেন! এই যদি হয় তাহলে আপনারা এসকল বাতিলের মোকাবিলা কিভাবে করবেন? ২০১৩ সালে ব্লগে ইসলাম ও রাসুল (সাঃ) বিদ্বেষী নব্য নাস্তিক কুলাঙ্গার, ইসলাম, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ধর্মসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জঘন্য কটুক্তি করেছিলো! এহের কচুক্তি ও কুরুচিপূর্ণ স্ট্যটাস, মন্ত্যব্য ও লেখার প্রতিবাদে গর্জে ওঠলেন এদেশের হক্কানী আলেম-ওলামা ও দেশের সর্বস্তরের সাধারণ মুসলমান। আলেমরা রাজপথে বিক্ষোভ মিছিল, মিটিং- সমাবেশ, লংমার্চ, অবরোধসহ ইত্যাদি কর্মসুচী পালন করলেন। কওমী আলেমদের ঈমানী আন্দোলনে দেশের আপামর জনতা শরীহ হন এবং এত দেশ উত্তাল হয়ে ওঠলো। গ্রেফতার, সহস্রাধিক আহত, শতাধিক নিহতের খবরও পাওয়া গেলো। এতোসব মিছিল, সমাবেশসহ প্রভৃতি আন্দোলনের ফলাফল কি দাঁড়ালো! কোনো নাস্তিক-মুরতাদদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে পেরেছি? ইসলাম ও নবী অবমাননার দায়ে ফাঁসি হয়েছে কোনো নাস্তিকের বন্ধ করতে পেরেছি তাদের নাস্তিক্যবাদী লেখা? ইসলাম ও নবী অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে পরেছি ব্লাসফেমি আইন কার্যকর করাতে? জানিনি একটি প্রশ্নের উত্তরেও হ্যাঁসূচক শব্দ মুখে উচ্চারিত হবে না! একথা বলতে বাধ্য যে, আলেমদের আন্দোলনের ফলে আশাতিত ফলাফল পুরোপুনি অর্জিত না হলেও ফলাফল একদম শূণ্যেও কোটায়ও নয়! কথা হলো এটা, যে ইস্যু নিয়ে আন্দোলনে নামা হলো, রাজপথে রক্ত ঝড়লো, দেশ উত্তাল হলো তাহলে দাবি আদায়ের আগেই আন্দোলন দমে গেলে কেনো? কেনো? আলেমদের দাবি ছিলো ‘ব্লাসফেমি আইন’। এ আইনটি কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনে থামানোর কোনো যুক্তিকথা নাই! অতীতেও দেখেছি আলেম সমাজ দুসাপ্তাহ, মাসখানেক রাজপথের আন্দোলনে গরম থেকে হঠাৎ নীরব হয়ে যান! কাঙ্খিত দাবি আদায়, সংøিষ্ট ইস্যুর সমাধানের আগেই রাজপথের কর্মসূচি অঘোষিতভাবেই স্থগিত করে দেন। কিছু আন্দোলন করতে হয় রাজপথে, কিছু আন্দোলন করতে হয় কাগজে-কলমে, ব্লগে। ইসলাম ও নবী অবমাননা করে যেহেতু ব্লগে ব্লগাররা কলম ধরছিলো তাই যুক্তির দাবি ছিলো নবীপ্রেমিকগণ প্রথমে ব্লগেই এর জবাব দেয়ার! নাস্তিক-মুরতাদ ব্লগের সংখ্যায় কিন্তু খুব কম! নাস্তিকদের তুলনায় ব্লগে আলেম সমাজের অংশগ্রহণ নাই বললেও চলে। ব্লগে যদি আলেমরা না থাকেন তাহলে ব্লগে প্রতিবাদ করবেন দূরের কথা কি হচ্ছে এটা জানবেনই বা কেমনে! আশার কথা হলো, হেফাজতের আন্দোলানের পর থেকে আলেম সমাজ ব্যাপকভাবে অংশ্রগহণ শুরু করছেন। হেফাজতের উত্থানের আগে আলেম সমাজ ব্লগ, ইন্টারনেট, ফেসবুকে ছিলেন না এমন কথাও বলি না, তবে সংখ্যায় ছিলেন খুব স্বল্প। এপ্রসঙ্গটি এখানে উপস্থাপনের উদ্দেশ্য আলেম সমাজের মিডিয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা ও বিমুখতার বিষয়টি চিত্রায়িত করা! একটু চিন্তা করে দেখুন গুটিকয়েক নাস্তিক ব্লগার কয়েকটি সাইটে ইসলাম ও নবীর বিরুদ্ধে লেখালেখি করেছিলো। আমাদের উচিত ছিলো ওদের বিরুদ্ধে ব্লগেই ােলখা, জবাব দেয়া এবং এখানেই সমাধান করা! কিন্তু তা না কনে আমরা রাজপথে নেমে এসেছি! তাই ফলাফল যা হওয়ার তা হয়েছে! অথচ আমাদেরা আন্দোলনের আগে এসকল কুলাঙ্গার ব্লগারদের নাম পরিচয় দেশের কোটি কোটি মানুষ জানতো না। নির্ধারিত কিছুসংখ্যক মানুষেরই ওদের পরিচয় কাছে জানা ছিলো। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে ফাঁসির দাবিতে রাজপথে আন্দোলন ফলে আমরাই ওদেরকে সারাবিশ্বে পরিচিত করে দিয়েছি! নাস্তিকরা কটুক্তি করছে ব্লগে, আর আমরা আন্দোলন করি রাজপথে! কত প্রার্থক্য! অথচ উচিত ছিল কটুক্তি যেখানে হয়েছে জবাব হবে সেখানে। নাস্তিকদের বিরুদ্ধে ব্লগে লিখনির মাধ্যমে পারছি কি আমরা দাত ভাঙা জবাব দিতে? জবাব দেবার কথা বাদই দিলাম, কজন আলেম ব্লগ ও নেট সর্ম্পকে পূর্ণ ধারণাই বা রাখেন? নাস্তিকদের চেয়ে কি এদেশে আলেম ওলামা বেশী নয়? তাহলে কেন আমাদের এ অবস্থা ?

আনুসাঙ্গিক আরেকটি কথা, বিবিসির এক সাংবাদিক হেফাজতের মুহতারাম এক কেন্দ্রীয় নেতাকে প্রশ্ন ছূড়লেন আপনারা পত্র-পত্রিকায় এগুলো দেখে এত বাড়াড়াড়ি করছেন, আপনি ব্লগ সর্ম্পকে কতটুকু জানেন এবং নিজে ব্লগে ওই কথাগুলো পড়েছেন কি? তখন মুহতারাম সহজ সরল ভাষায় ‘না’সূচক শব্দে জবাব দিলেন! তিনি আরও বললেন, ব্লগ কি জানি না তবে এটা ইন্টারনেটের একটি সাইট, আমি নিজে ব্লগে পড়িনি কিন্তু আমার মাদরাসার ছাত্ররা পড়ে আমাকে শুনিয়েছে। পত্র-পত্রিকা থেকে আমরা এগুলো জেনেছি। ওদিন বিভিন্ন মিডিয়াতে কওমীদের হেয় প্রতিপন্ন করে কত অবান্তর নিউজ দেখলাম যা দেখে সত্যিই বিস্মিতি হলাম, হলাম ব্যথিতও। কওমী পড়ুয়া নেট, ব্লগ সর্ম্পকে কোনো কিছইু জানে না এমন বক্তব্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত! কওমী আলেমদের মধ্যেও অনেক ব্লগার, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, সম্পাদক আছেন। কিন্তু হলদে মিডিয়ার চোখে তা কখনো দৃষ্টিগোচর হয় না। মিডিয়া নিয়ে কওমী কিছু আলেমদের মধ্যে এখনো একগুয়েমী আছে যা আজও যায় নি! মিডিয়া বিমুখতা আর নয়!

হে সম্মানিত ওলামায়ে কেরাম! আপনারা জাতির রাহবার। যুগের তথ্য প্রযুক্তির মোকাবিলায় আপনাদের এগিয়ে আসতে হবে। সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গী পাল্টাতে হবে। বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আগাতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমে মাদরাসা পড়ুয়া তরুণ আলেম, শিক্ষার্থীদের আরও বেশি এগিয়ে আসা এযুগের দাবি।
লেখক: সাংবাদিক, আলেম, কলামিস্ট

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...