বুধবার, ১১ই ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ সকাল ৭:০৩
Home / প্রতিদিন / কওমী মাদরাসা শিক্ষা: প্রেক্ষিত সমাজ (পর্ব : ২)

কওমী মাদরাসা শিক্ষা: প্রেক্ষিত সমাজ (পর্ব : ২)

Ehsan Bin _Komashishaএহসান বিন মুজাহির ::

ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসার আদলে ১৮০০ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশে কওমী মাদ্রাসার গোড়াপত্তন হয়। ‘কওম’ শব্দের অর্থ জাতি। মুসলিম জাতির অনুদান ও সহযোগিতায় এ শিক্ষা চলে আসছে। এ দেশে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার প্রাক-প্রাথমিক স্তর শুরু হয় শিশুর চার-পাঁচ বছর বয়স থেকে। সর্বোচ্চ স্তরর হলো দাওরায়ে হাদিস। এটিকে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা বোর্ড সাধারণ শিক্ষার স্নাতকোত্তর ডিগ্রির সমমান বলে।
মাদরাসায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ (দেওবন্দের নেসাব বা পাঠ্যসূচী ) ও যুগশ্রেষ্ট বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরাম কর্তৃক প্রণিত শিক্ষানীতি অনুসারে পরিচালিত মাদরাসাগুলো কওমি মাদরাসা নামে পরিচিত। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের আর্থিক সহযোগিতা, পৃষ্টপোষকতা নেই। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সার্বিক সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত হয়ে আসছে। সরকারের পক্ষ থেকে বেতন ভাতা, বিভিন্ন আর্থিক সহযোগিতা এবং সরকার কর্তৃক প্রণীত শিক্ষানীতি অনুসরণে যেসব মাদরাসা পরিচালিত হয়, সেগুলো আমাদের দেশে সরকারি মাদরাসা হিসেবে পরিচিত। দেশের প্রচলিত এই দুই ধারার শিক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম একটি হলো কওমি মাদরাসা। বিশ্বে কওমি মাদরাসা শিক্ষাধারাটি একটি স্বতন্ত্র ও খালিছ দ্বীনি শিক্ষাধারা হিসেবে ব্যাপক সমাদৃত ও সর্বমহলে বহুল প্রশংসিত।
কওমি মাদরাসা শিক্ষা ধারায় শিক্ষার মৌলিক উদ্দেশ্য হলো, মহান আল্লাহ তা’য়ালা ও রাসুলুল্লাহর (সা.) আদর্শ সর্ম্পকে অবগতি লাভ, শরিয়তের বিধি-বিধান সর্ম্পকে জ্ঞাত হওয়া, অর্জিত জ্ঞানের আলোকে নিজের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবন গঠন করে মহান আল্লাহর সন্তুষ হাসিলের মাধ্যমে ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি অর্জন করা। এ শিক্ষা ধারায় শিক্ষাকে আয় উপার্জনের উপায় হিসেবে চিন্তা করার কোনই অবকাশ রাখা হয়নি। যে কারণে শিক্ষার্থীরা নৈতিক উৎকর্ষতা লাভেই একান্তভাবে ব্রতী হয় এবং আহরিত জ্ঞানের আলোকে জীবন গঠনের সাধনায় আত্মনিয়োগ করে।
কওমি শিক্ষাধারায় সংশ্লিষ্ট ওলামায়ে কেরাম ও পীর মাশায়েখগণ যুগ যুগ ধরে নিরবে- নিভৃতে অত্যন্ত নির্মোহ ও নির্লোভ উপায়ে এবং আর্থিক, মানসিক সীমাহীন ত্যাগের বদৌলতে ইসলামের বহুমুখি মহান খেদমত আঞ্জাম দিয়ে আসছেন। কওমি মাদরাসা থেকে সৃষ্ট, আমল আখলাক, স্বভাব চরিত্র, শিক্ষা-দিক্ষা, দক্ষতা-অভিজ্ঞতা, ন্যায়-নিষ্ঠা, সততা-স্বচ্ছতা, সাহসিকতা,আপোষহীনতা ও ত্যাগ-তিতিক্ষায় পরিপুষ্ট। অগণিত ওলামা-মাশায়েখ, পীর-বুজুর্গ, মুফতি, মুফাসসির, মুফাক্কির, মুসান্নিফ, মুহাহিক্কিক, মুবাল্লিগ, মুনাজির, ওয়ায়েজ-বক্তা, ইমাম-খতীব, ইসলামী লেখক, সাহিত্যিক-সাংবাদিক, অনুবাদ ও গবেষকরা বিশ্বের সর্বত্রই সর্বক্ষেত্রে দ্বীন ইসলামের খেদমত অত্যন্ত স্বনামের সাথে স্বহিমায় ভাস্বর হয়ে দ্বিধাহীনচিত্তে বিচরণ করেছেন। যা একমাত্র কওমি শিক্ষানীতিরই (দেওবন্দের নেসাব বা পাঠ্যসুচী) উজ্জ্বল ফসল। কওমি মাদরাসা শিক্ষা ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে সিলসিলা বজায় রেখে আজও সমাজে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা পালনে করে আসছে এবং দেশের রেমিটেন্সে এখন একটি বড় অবদান রয়েছ এই মাদরাসা শিক্ষার্থীদের। এ মাদরাসাগুলো দেশ, সমাজ ও জাতির জন্য যে দূরদর্শি চেতনা, শিক্ষায় সামাজিক ভারসাম্যতা এবং আদর্শ জাতিগঠনে নৈতিক আদর্শের যে অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তা অনস্বীকার্য। কওমী মাদরাসার সিলেবাসে কিছুটা ঘাটতি রয়েইে গেছে যা নিয়ে কওমী অঙ্গনের বড় বড় শিক্ষাবিদ, স্কলারগণ কলাম লিখেছেন, পরামর্শ দিয়ে চলেছেন! কওমি মাদরাসায় সাধারণ শিক্ষার ব্যাপক অন্তর্ভুক্তি সময়ের দাবি। মাদরাসার শিক্ষার্থীর শিক্ষা অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা প্রায়োগিক ক্ষেত্রে কতটুকু কার্যকরি ভুমিকা রাখছে এবিষয়টি এসময় পর্যালোচনার বিষয়। (চলবে) 

লেখক: সাংবাদিক, কলাম লেখক ও তরুণ আলেম

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...