“১৯৭১ সালের এদিনে যশোর মুক্ত হয় সকালে। সিলেট মুক্ত হয় বিকেলে। বহু পাক সেনা আত্মসমর্পণ করে সেখানে। পাক সেনারা সুনামগঞ্জ থেকে পিছু হটে। বিনা যুদ্ধে মুক্ত হয় সুনামগঞ্জ। মৌলভীবাজার জেলাও মুক্ত হয় এদিন। মুক্তি ও মিত্র বাহিনীর সাথে কালেঙ্গায় পাক বাহিনীর প্রচণ্ড লড়াই হয়। পাক সেনারা অবস্থান থেকে পিছু হটে।”
আজ ৭ ডিসেম্বর, সোমবার ২০১৫। মুক্তিপাগল বাঙালিদের কাছে চারদিক থেকে বিজয়ের খবর আসতে থাকে। সর্বত্র পর্যুদস্ত হতে থাকে পাক হানাদাররা। বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ। চারিদিকে উড়ছে মানচিত্র খচিত লাল-সবুজের রক্তস্নাত স্বাধীন পতাকা। ১৯৭১ সালের এদিনে দেশজুড়ে চলছিল যুদ্ধের ঘোর ঘনঘটা। সবার মনে তখনো অনিশ্চয়তা- যুদ্ধ কতদিন চলবে? শক্তিশালী পাকিস্তানী বাহিনীকে কি পরাজিত করতে পারবে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা? এদিকে রণাঙ্গ থেকে আসছিল একের পর এক সাফল্য। এদিন সকালে যশোর ও বিকেলে সিলেট হানাদারমুক্ত হয়। সকল জায়গাতেই সামরিক পরাজয়ের মুখে পিছু হটছিল পাকিস্তানী সৈন্যরা।
একাত্তরের ডিসেম্বরের আজকের দিনে বাংলা ও ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় সহযোগিতা চুক্তি। সিদ্ধান্ত হয়, বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী ভারতীয় ইস্টার্ন কমান্ডের অধিনায়ক লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার নেতৃত্বে। এর আগের দিন ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পরিস্থিতির ব্যাখ্যা খুব গুরুত্ব লাভ করে। ইন্দোনেশিয়ার পত্রিকা ইন্দোনেশিয়া রায়া’র ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রকাশিত সংখ্যায় লেখা হয়, পাকিস্তানের উচিৎ বাংলাদেশকে মেনে নেয়া এবং নিজেদের ভুল সংশোধন করা। ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যমেও বালাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে এদিন অভিমত প্রকাশ করা হয়। যেমন- গার্ডিয়ান, দি টেলিগ্রাফ ও টাইমস। ‘গার্ডিয়ান’ পত্রিকার সম্পাদকীয়তে বলা হয়, বাস্তবতা হল, সদিচ্ছা ও আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে জন্ম নেয়া বাংলাদেশকে আর দমিয়ে রাখা যাবে না। এদিন পশ্চিম রণাঙ্গনেও ভারতীয় বাহিনীর ব্যাপক সাফল্য লক্ষ্য করা যায়। ভারতীয় নৌবাহিনীর মাধ্যমে করাচী বন্দর অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। ভারতীয় জঙ্গী বিমান করাচীতে তুমুল হামলা চালিয়ে যাচ্ছিল। পাকিস্তানের আকাশে তাদের অবাধ তৎপরতার প্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান নিরাপত্তার জন্য ইসলামাবাদে প্রেসিডেন্ট হাউজের নিচে ভূগর্ভস্থ বাংকারে আশ্রয় নেন।
১৯৭১ সালের এদিনে যশোর মুক্ত হয় সকালে। সিলেট মুক্ত হয় বিকেলে। বহু পাক সেনা আত্মসমর্পণ করে সেখানে। পাক সেনারা সুনামগঞ্জ থেকে পিছু হটে। বিনা যুদ্ধে মুক্ত হয় সুনামগঞ্জ। মৌলভীবাজার জেলাও মুক্ত হয় এদিন। মুক্তি ও মিত্র বাহিনীর সাথে কালেঙ্গায় পাক বাহিনীর প্রচণ্ড লড়াই হয়। পাক সেনারা অবস্থান থেকে পিছু হটে।
অন্যদিকে ভারতের পথ ধরে প্রতিবেশী দেশ ভুটানও ৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশেকে স্বীকৃতি দেয়। অন্য দিকে ভারত সরকার বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দান করায় পাকিস্তান সরকার ভারতের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের জিওসি লে. জে. আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজীর পরামর্শে জেনারেল ইয়াহিয়া খানকে যুদ্ধ পরিস্থিতির ওপর জরুরি বার্তা পাঠান গভর্নর ডা. এম এ মালিক। বার্তায় রাজনৈতিক সমাধানের পরামর্শ এবং যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেয়া হয়।
জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে মার্কিন প্রতিনিধি দুইবার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব তোলেন; কিন্তু দুইবারই সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেটো দেয়। ফলে বাতিল হয়ে যায় সে প্রস্তাব।
তথ্য সহায়তা. উইকিপিডিয়া, বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিক এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই।