এহসান বিন মুজাহির ::
সুদের আরবি হচ্ছে ‘রিবা’। রিবা শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে অতিরিক্ত, বর্ধিত ইত্যাদি। মূলধনের অতিরিক্ত কিছু গ্রহণ করাকে সুদ বলে। ইসলামী অর্থব্যবস্থায় সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য সুদ একটি মারাত্মক অভিশাপ। এতে মানবতা ধ্বংস হয়। বিদায় নেয় মুমিনের পারস্পরিক সহানুভূতি, জন্ম নেয় সীমাহীন অর্থলিপ্সা ও স্বার্থপরতা। অতিরিক্ত লোভ-লালসার কারণে সুদি কারবারিরা তখন মানুষের জানমাল ও ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে থাকে। সুদি কারবারে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ জনগণ। দুঃখজনক হলেও সত্য, বর্তমান যুগে সুদ মহামারী আকার ধারণ করেছে। সমগ্র বিশ্ব আজ এর রাহুগ্রাসে পতিত। সুদের কারণে শোষিত হচ্ছে সমাজ। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিক। সুদি সমাজের লোকেদের সুখ ভোগই হয়ে পড়ে জীবনের প্রধান কর্ম। অবৈধভাবে জনগণের ধনসম্পদ লুটে নেয়ার প্রবণতা প্রবলভাবে দেখা দেয়। টাকাই তাদের কাছে সবচেয়ে বড় বলে মনে হয়। ফলে তাদের হৃদয়ে দরিদ্রের প্রতি দয়ামায়া স্থান পায় না। মানুষের এ রকম অভাবের মুহূর্তকে তারা নিজেদের সবচেয়ে বড় সুযোগ বলে মনে করে। দরিদ্রদের নিজের অর্থ উপার্জনের একমাত্র হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। তাই তো সুদের বোঝা তাদের ওপর চাপিয়ে ধীরে ধীরে নিঃশেষ করে দেয় তাদের বেঁচে থাকার সামান্য আশাটুকুও। সুদের কুফল সমাজ থেকে নিয়ে ধর্মীয় পর্যায়সহ সব ক্ষেত্রেই রয়েছে। সুতরাং সুদ থেকে বেঁচে থাকা অতীব জরুরি। সুদ শোষণের অন্যতম হাতিয়ার। সুদপ্রথা ধনসম্পদকে সমাজের মুুষ্টিমেয় কিছু পুঁজিপতির হাতে কুক্ষিগত করে। সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের সর্বপ্রকার শোষণপ্রক্রিয়া ইসলামে হারাম করেছে।
এ প্রসঙ্গে মহান রাব্বুল আলামিন কুরআনে কারিমে ইরশাদ করেন, ‘আমি ব্যবসাকে হালাল করেছি এবং সুদকে হারাম ঘোষণা করেছি।’ (সূরা বাকারা : ২৭৫)
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়ো না আর আল্লাহকে ভয় করতে থাকো, যাতে তোমরা কল্যাণ অর্জন করতে পারো।’ (ইমরান : ১৩০)।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, ‘যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতে দ-ায়মান হবে, যেভাবে দ-ায়মান হয় ওই ব্যক্তি, যাকে শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে দেয়। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা বলেছে ক্রয়-বিক্রয়ও তো সুদ নেয়ার মতোই। অথচ আল্লাহ তায়ালা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। অতঃপর যার কাছে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে, আগে যা হয়ে গেছে, তা তার। তার ব্যাপার আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল। আর যারা পুনরায় সুদ নেয়, তারাই জাহান্নামে যাবে। তারা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে, (সূরা বাকারা : ২৭৫)।
আল্লাহপাক আরো বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের যেসব বকেয়া আছে, তা পরিত্যাগ করো, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাকো। অত:পর যদি তোমরা পরিত্যাগ না করো, তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়ে যাও। কিন্তু যদি তোমরা তাওবা করো, তবে তোমরা নিজের মূলধন পেয়ে যাবে। তোমরা কারো প্রতি অত্যাচার করো না এবং কেউ তোমাদের প্রতি অত্যাচার করবে না’ (সূরা বাকারা : ২৭৮-২৭৯)
লেখক: সাংবাদিক, কলাম লেখক।