শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রাহ. প্রতিষ্ঠিত জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া থেকে প্রতি বছর দু’বার প্রকাশিত হয় বাংলা ও আরবি দেয়ালিকা। ‘আলোর মিছিল’ ও ‘আল হাদি’ নামে পত্রিকা দুটি রাহমানিয়া ভবনে ঢুকলেই নজর কাড়ে। ঝকঝকে সাদা কাগজে সুন্দর হস্তাক্ষরে লেখা সমকালীন প্রবন্ধ, ফিচার, ভ্রমণকাহিনী, গল্প, স্মৃতিকথা ও ছড়া-কবিতা পাঠে আগ্রহী করে তুলে যে কাউকে। প্রতিটি লেখায় রঙ-তুলিতে আঁকা নান্দনিক প্রচ্ছদ আলাদা আকর্ষণ তৈরি করে।জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ থেকে প্রকাশিত হয় ‘ইনসানিয়াত’ নামে বাংলা ও আরবি দেয়াল পত্রিকা। আল্লামা কাজী মুতাসিম বিল্লাহ’র হাত ধরে সূচনা হওয়া দেয়াল পত্রিকাটি সাহিত্য মানে বেশ উর্ত্তীণ। ‘ইনসানিয়াত’ প্রতি বছর তিনটি সংখ্যা বের করে। ১ম টি ঈদুল আজহা উপলক্ষে। ২য় টি প্রথম সাময়িক পরীক্ষার ছুটি পরবর্তী সময়ে। ৩য় সংখ্যাটি খতমে বুখারি অনুষ্ঠানের আগে আগে।
‘নব জাগরণ’, ‘হাসসান বিন সাবিত’ ও ‘প্রতিভা’ নামে একাধিক দেয়ালিকা বের করে লালবাগের জামিয়া কুরআনিয়া আরাবিয়ার শিক্ষার্থীরা। তরুণ লিখিয়েদের সৃজনশীল গদ্য আর শিল্পীদের তুলির আঁচড়ে প্রতিটি দেয়ালিকা হয়ে ওঠে ঝরঝরে ও দৃষ্টি নন্দন। সংখ্যায় একাধিক হওয়ার সুবাধে বহু তরুণ লিখিয়ে অংশগ্রহণ করতে পারে লালবাগের দেয়াল পত্রিকায়।
শৈল্পিক তুলিতে আঁকা ঝকঝকে কাগজে দেয়ালিকা বের করে মিরপুরের জামিউল উলুম মাদরাসা। লাইটিং আর সুন্দর ফ্রেমবন্দী দেয়ালিকাটি দূর থেকে দৃষ্টি কাড়ে দর্শকের। পবিত্র ঈদুল আজহা ও সিরাতুন্নবী সা. কে কেন্দ্র করে বের হওয়া দেয়ালিকাটির নাম ‘আল বয়ান’।
এছাড়াও রাজধানীর লালমাটিয়া মাদরাসা থেকে ‘আন নূর’, মাদরাসা দারুর রাশাদ মিরপুর থেকে ‘আর রাশাদ’, শেখ জনূরুদ্দিন রাহ. দারুল কুরআন চৌধুরীপাড়া মাদরাসা থেকে ‘দিশারী’সহ অন্যান্য মাদরাসা থেকে প্রকাশিত দেয়াল পত্রিকাগুলো কওমি ছাত্রদের সাহিত্য চর্চায় বেশ উৎসাহিত করে। এসব দেয়ালিকায় লিখেই সূচনা হয় বাংলা সাহিত্যে পথচলা। দেয়ালিকার লেখকরা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও মাসিক পত্রিকায় লেখক, সাংবাদিক কিংবা সম্পাদক হিসাবে সুনামের সঙ্গে কাজ করে চলছেন। তাই- লেখালেখির হাতেকড়ি এ দেয়াল পত্রিকাগুলো আরও সমৃদ্ধ হয়ে উঠুক। যুগ যুগ ধরে টিকে থাকুক ধবধবে সাদা দেয়াল জুড়ে- এমনটাই প্রত্যাশা হাজারো তরুণ লিখিয়েদের।
সিলেটের শীর্ষ ইসলামি বিদ্যাপিঠ, ঐতিহ্যবাহী জামেয়া তাওয়াক্কুলিয়া রেঙ্গা থেকে অনিয়মিত বাংলা-আরবী মাসিক ‘আল আরকান’ দেয়ালিকা এবং আরবি প্রিন্ট প্রকাশনা ‘ত্রৈমাসিক বদরে মুনীর’ প্রকাশিত হয়। দেয়াল পত্রিকায় তরুণ লিখিয়েদের নিয়ে বৃহদাকারের আল আরকানে ছাপা হয় সৃজনশীল সব লেখা। বৈচিত্রের সমাহারে ভরপুর এ দেয়াল পত্রিকার প্রচ্ছদ, মেকাপ, ডিজাইন যেন নন্দিত কোনো শিল্পীর তুলির আঁচড়ে সাজানো! যে কেউ একনজর দেখেই মুগ্ধ না হয়ে পারেন না।
সিলেটের অন্যতম আরেক বিদ্যাপিঠ, প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমান প্রতিষ্ঠিত জামেয়া মাদানিয়া কাজিরবাজার থেতক নিয়মিত মাসিক ‘কাফেলা’ নামে বাংলা ও আরবী দেয়াল পত্রিকা প্রকাশ হয়। সিলেটের দেয়াল সাহিত্যে প্রথম সূচনা ‘কাফেলা’র মাধ্যমে। নান্দনিক কারুকার্যে দেয়ালটি যে কারো মন জুড়িয়ে দিতে পারে।
বরেণ্য বুযূর্গ আল্লামা নূর উদ্দীন আহমদ গহরপুরী রাহ. কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত জামেয়া হুসাইনিয়া গহরপুর থেকে ‘আন নূর’ দেয়ালিকা নিয়মিতপ্রকাশ হয়। মাদরাসার প্রিন্সিপাল, তারুণ্যে অহংকার মাওলানা মুসলেহুদ্দীন রাজু এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। দেয়ালটির বিন্যাস সত্যিই অসাধারণ।
এছাড়া জামেয়া নূরিয়া ইসলামিয়া ভার্থখলা থেকে প্রকাশিত অনিয়মিত ‘আন নূর’ জামেয়া মাহমুদিয়া সুবহানীঘাট থেকে ‘আল মাহমুদ’ জামেয়া মাদানিয়া আঙ্গুরা মুহাম্মদপুর থেকে ‘আল হিলাল’ জামেয়া ইসলামিয়া এশায়াতুল উলূম ফতেহপুর থেকে ‘আল এশাআত’ও তালিকায় উল্লেখ করার মত। এগুলো ছাড়াও আরো অসংখ্য কওমী মাদরাসা থেকে মাসিক,ত্রৈমাসিক, ষাম্মাসিক, বার্ষিক দেয়াল পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে।
লেখক : ফিচার লেখক