আজ ২ ডিসেম্বর ২০১৫। বিজয়ের ৪৪ বছর পূর্ণ হল। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে আমাদের এ বিজয় শ্রেষ্ঠতম অর্জন। এর পেছনে রয়েছে লাখ লাখ মানুষের রক্ত ও আত্মত্যাগ। মুক্তিপাগল বাঙালি জাতি এক সাগর রক্তে আর অসংখ্য মা-বোনের ইজ্জত আব্রুর বিনিময়ে এই ডিসেম্বরেই ছিনিয়ে এনেছিল হাজার অনেক দিনের লালিত স্বপ্ন প্রিয় মাতৃভূমি। ১৯৭১ সালের এ মাসেই বিজিত হই আমরা। মুক্ত হয় বাংলার আকাশ-বাতাস। বিশ্বমানচিত্রে স্থান পায় লাল-সবুজের রক্তস্নাত ঝকঝকে এক পতাকা। ৫৬ হাজার বর্গ মাইলের স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।
ঊনিশশ’ একাত্তরে ডিসেম্বর যতই এগিয়ে আসছিল, মুক্তিযুদ্ধের বিজয় যেন ততই তরান্বিত হচ্ছিল। অবস্থা এমন ছিল যে, বিজয় যেন সময়ের ব্যাপার মাত্র। এদিকে পরাজয় সুনিশ্চিত জেনেও চরম নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতায় মেতে ওঠে হিংস্র পাক হানাদার বাহিনী। নভেম্বরের শেষ দিকেই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান জেনারেল নিয়াজী তার রাজাকার, আলবদর ও সেনাবাহিনীকে দেশের চারদিকে ছড়িয়ে দেয় নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ চালাতে কিন্তু তখনও হানাদার বাহিনী বুঝতে পারেনি তাদের পতন অত্যাসন্ন। তারা শীঘ্রই পরাজয়ের খেতাব নিয়ে অপমানিত হয়ে দেশে ফিরছে।
একাত্তরের রক্তক্ষঝরা এই দিনে গেরিলা আক্রমণ থেকে সম্মুখ যুদ্ধের গতি বাড়ে। অপ্রতিরোধ্য বাঙালির বিজয়রথে পাকবাহিনীর নিষ্ঠুর সব পরিকল্পনা খড়কুটোর মত ভেস্তে যেতে থাকে। পরাজয়ের আভাস পেয়ে তৎকালীন পাক প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে চিঠি পাঠান। ইয়াহিয়া তার চিঠিতে যুদ্ধকালীন সাহায্যের আশায় ১৯৫৯ সালের পাক-মার্কিন দ্বিপক্ষীয় চুক্তির এক অনুচ্ছেদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। সীমান্ত এলাকায় পাক জান্তারা সমরসজ্জা বৃদ্ধি করায় ভারতও এর মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করে।
ডিসেম্বরের প্রথম থেকেই ত্রিমুখী যুদ্ধের আশঙ্কা ক্রমেই প্রবল হয়ে উঠতে থাকে। এসব দেখে ভারত সরকার আঁচ করতে পেরেছিল পাকিস্তান নিশ্চিত যুদ্ধ করবেই। ভারত তখন যে রাজনৈতিক সমাধানের চেষ্টা বা আশা একেবারে ছেড়ে দিয়েছিল তা নয়, কিন্তু রাজনৈতিক সমাধানের সঙ্গে সঙ্গে ভারত সামরিক প্রস্তুতিও চালিয়ে যাচ্ছিল। পাক সেনাদের প্রস্তুতি দেখে এবং নাশকতামূলক কাজে লোক ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারত মোটামুটি পরিষ্কার বুঝে ফেলে পাকিস্তান রাজনৈতিক সমাধানের দিকে যাবে না; বরং লড়াই করবে। তাই তখন থেকে ভারতের প্রস্তুতিও জোরদার হয়েছিল।
অন্যদিকে বীর বাঙালির গেরিলা আক্রমণে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে পাক হানাদাররা। যতই সময় গড়াচ্ছিল, গেরিলা আক্রমণ ততই বৃদ্ধি পাচ্ছিল। পাকসেনাদের হাতে তখনও আধুনিক সমরাস্ত্র বিপুল পমিাণে মজুদ থাকায় মুক্তিযোদ্ধারা প্রবল গেরিলা আক্রমণের মাধ্যমে পাকদের পরাস্ত করতে থাকে। মুক্তিপাগল বাঙালির অকুতোভয় লড়াইয়ে পাক হানাদারদের রাতে চলাফেরাও কঠিন হয়ে পড়ে। নিয়াজি বুঝতে পারেন এবার বড় ধরনের কিছু করতে না পারলেই নয়। তাই মার্কিন সাহায্য নিশ্চিত করা, নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি, রাজাকার-আলবদর-আলশামসসহ এ দেশি স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে নিয়ে ব্যাপক নিধনযজ্ঞ চালানোর জঘন্য পরিকল্পনা আঁটতে থাকেন জেনারেল নিয়াজি।
শেষ পর্যন্ত এ ডিসেম্বর মাসেই পর্যুদস্ত হয় হানাদারবাহিনী। রচিত হয় নতুন ইতিহাস। বাংলার আকাশে উদিত হয় নতুন সূর্য।
এটাও পড়তে পারেন
কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ
খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...