জুলফিকার হুসাইন মাহমুদী::
যুগযুগ ধরে চলছে শিক্ষা যোগ্যতার সনদ ও অভিজ্ঞতা পত্র ৷ ইসলামেও তার যতাযত গুরুত্ব রয়েছে ৷ প্রশ্ন হল সরকারি সনদ ও কওমি সনদ নিয়ে ৷ বাংলাদেশের সরকারের কাছে সরকার স্বীকৃত শিক্ষা সনদ ব্যতীত অন্য কোন সনদের কদর বা অনুমোদন নেই ৷ আমরা দেখি দেশে তিন রকম প্রতিষ্ঠান আছে (ক) সরকার স্বীকৃত স্কুল কলেজ (খ) সরকার স্বীকৃত মাদরাসা (গ) স্বীকৃতিহীন কওমি মাদরাসা ৷ প্রথম দু প্রকার প্রতিষ্ঠান সরকারী পদ -পদবী তে নিয়োগ পাওয়ার যোগ্যতা রাখে৷ তৃতীয় প্রকার প্রতিষ্ঠান সরকারী কোন কর্মস্থলে চাকুরী পাওয়া দুরের কথা শিক্ষাটার গ্রহন যোগ্যতাই নেই সরকারের কাছে ৷ প্রশ্ন হল: কওমি অঙ্গনের জন্য সরকারি স্বীকৃতির কোন প্রয়োজন আছে কি না? দেখাদিল দ্বীমত ৷ একদল স্বীকৃতির পক্ষে আন্দোলন করে আরেক দল বলে আমরার সরকারী স্বীকৃতির / সার্টিফিকেটের কোন প্রয়োজন নেই; আল্লাহর স্বীকৃতিই আমাদের বড় ! এ নিয়ে চলছে এখনো এক গুয়েমি ৷
উনাদের কাছে আমার জিজ্ঞাসা যে স্বীকৃতি যদি আল্লাহ-ই দিবেন তাহলে কওমি বোর্ড থেকে সনদ কেন প্রদান করা হয়? ওটা কে দেন? ইহা কি আল্লাহর পক্ষথেকে গায়েবী পাওয়া কোন জান্নাতি সনদপত্র? মুর্খ আর কাকে বলে! নিজের অহমিকা আর আমিত্বকে টিকিয়ে রাখতেই এরকম বকওয়াসী ভাবনা তাদের বলে আমি মনে করি। কওমি মাদরাসা যে ভাবে নিজ স্বকীয়তা বজায় রেখে দ্বীনের খেদমত করে যাচ্ছে তাতো দৃষ্টান্তহীন ৷ দ্বীন শিক্ষার পাশাপাশি জাগতিক কর্মময় শিক্ষা গ্রহন করা কি অপ্রয়োজনীয়? তাওয়াক্কুলের মুনাফি? কুরআন হাদীস বিরুধী? তকদিরের অবিশ্বাসী কিছু? কুরআন হাদিস সুন্নাতে রাসুল আমলে সাহাবাতে কি নিষেধ আছে? না অবশ্যই না ৷ তাহলে বাঁধা কোথায়? বাঁধা আমার একগুয়েমী ৷ আমার স্বার্থ আমার অহংকার আমার পদ ও দুর্নীতি ৷ শুধু বাংলাদেশে কওমি মাদরাসার কর্মস্থল মসজিদ মাদরাসা ৷ বাস্তবতা পর্যালোচনা করলে দেখাযায় সকল মসজিদ ও কওমি ওয়ালাদের হাতে নয় ৷ দোষ একটাই আমাদের একগুয়েমী ৷
আচ্ছা কওমির আলেম উলামারা কি বাংলাদেশের নয়? উনাদের পেঠ পিঠ পরিবার কিছুই নেই ? সরকারি কর্মস্থল কি শুধু জেনারেল ওয়ালাদের জন্য বরাদ্ধ ? আজ আমাদের একগুয়েমীর ফলাফল কী আমরা লক্ষ করছি? সরকারী পদ-পদবীতে নাস্তিকদের জবরদখল বাড়ছে ৷ হিন্দুদের দৌরাত্ব্য প্রায় সকল সেক্টরে ৷ দেখুন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কত জন হিন্দু, সরকারি মেডিকেলে, নার্সিংহোম পোস্টে ,বিচারালয় কোর্ট-কাচারীতে বাতিলের আস্ফালন কি ভাবে বাড়ছে ৷ এটা কি একদিনে হয়েছে ? না না ৷ তিলে তিলে গড়ে উটেছে ৷ কওমির শিক্ষার পাশাপাশি যদি জেনারেলে লেখাপড়ার সুযোগ দেওয়া হত ৷ বা কওমির সিলেবাসের পাশাপাশি কওমির অধিনে কওমির চিন্তা চেতনায় গড়াহত একদল জেনারেল শিক্ষক তাহলে নাজাতের একটা পথ বের হত। অামরাও কি হাটি হাটি পা পা করে গড়ে উঠতে পারিনা ? হয়েছে তার উলটা। জেনারেলে শিক্ষায় গেলেই বহিস্কার ? দেখাযায় গোপনে গোপনে জেনারেলে যারা লিখাপড়া করে সরকারী পদে সমাসীন হয়েছেন উনাদের নিয়ে গর্ব আজ আমরাই করি ৷ আমরা আমাদের ভবিষৎ সন্তানদের মধ্যথেকে যাচাই বাছাই করে একদল মেধাবী উনাদের সাথে পাঠালে কতনা সুন্দর হত ৷ আমি মনে করি ইসলামের প্রথমিক শিক্ষা সকলের জন্য ফরজ ৷
টাইটেল পাশ করা সকলের জন্য ফরজ নয় ৷ হ্যাঁ একদল হক্কানি আলেম তৈরী করা ফরজ ৷ আরো একদল আলিম সকরার পরিচালনায় যোগ্য হিসাবে গড়ে তোলাও জরুরী ৷ আরো একদল গড়ে উঠুক আইন আদালত পরিচালনায় ৷ আরো একদল গড়ে উঠুক প্রশাসনে ৷ আরো একদল গড়ে উঠুক চিকিৎসা বিজ্ঞানে। আরো একদল প্রযুক্তি অনলাইন অফলাইন, সাংবাদিকতা সহ ইত্যাদি ডিপার্টমেন্টে পারদর্শি হউক ৷ তা হলেই ইসলামি বিপ্লব বা মুসলমানদের সফলতা আশা করা যায় ৷ নতুবা শুধু নির্যাতিতই হব ৷ নির্যাতিত হয়ে চিকিৎসার জায়গা পাবনা ৷ বিচার পাবনা । ঝুলতে হবে ফাসি আর ফাসিতে। রাসুলের আদর্শই আমাদের একথা বলেদেয় ৷ খোলাফায়ে রাশীদিনের নীতিই আমাদের উৎসাহ প্রদান করে। উনারা শধু মসজিদ মারদাসা নিয়ে বসে থাকেননি ৷ দেশ পরিচালনা করেছেন ৷ পৃথীবি পরিচালনা করে নমুনা রেখে গেছেন ৷ আমাদের পার্শবর্তী ভারত পাকিস্তানের দিকে দৃষ্টিদিলে আমরা দেখতে পাই হাটি হাটি পা পা করে উনারা এগিয়ে যাচ্চেন ৷ ইউরোপ আমিরিকা সহ পৃথীবির অনেক দেশের উলামারা এগিয়ে চলেছেন ৷ আমাদের প্রয়োজন ঐক্য, একক শিক্ষাবোর্ড, ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি আধুনিক সমন্বয়সাধিত একক সিলেবাস ৷ দেখুন আজ ডক্টর জাকির নায়ক সহ তার দল যে চেয়ারে বসে তার মতাদর্শ বাস্তবায়ন করছে ঐ চেয়ারে যদি কওমি ঘরানার একজন বসতেন কেমন হত? মনে করুন আল্লামা ওলিপুরী / আনসারী/ হবীগঞ্জী সহ দেশের বিজ্ঞ উলামায়ে কেরাম ঐ চেয়ারে বসে কুরআন হাদিস এর আলোচনা করতেন তাহলে কি সঠিক ইসলামটা দেশের জেনারেলদের কাছে পৌছানো সহজ হতনা ? আমাদের শুভবুদ্ধির উদয় হউক । ঘুমন্ত বিবেক কে জাগ্রত করতেই আজ কমাশিসার পথচলা৷
লেখক: মুহাদ্দিস, চিন্তক ও শিক্ষক এবং কমাশিসা পরিবারের সদস্য।