কমাশিসার পক্ষথেকে কিছু লিখিত প্রশ্ন ছিলো বিশিষ্ট্য লেখক গবেষক সাহিত্যিক সৈয়দ মবনুর কাছে যা নিম্নে প্রদত্ত হলো।
প্রশ্ন : কওমী মাদরাসায় বর্তমানে ছাত্ররা কেন আরবিতে দক্ষ হচ্ছেনা ? আরবি সাহিত্য ও আরবি কিতাব-সমূহ কেন আরবির মাধ্যমে পাঠদান হয়না ?
উত্তর : প্রকৃত অর্থে শুধু কওমী মাদরাসায় নয়, বাংলাদেশের কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই কেউ কোন বিষয়ে দক্ষ হচ্ছেন না। যদি হতেন তবে জাতির অনেক পরিবর্তন আমরা অনুভব করতাম। এই না হওয়ার দেখার মতো কারণ, নোট ভিত্তিক পরিক্ষানির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা। কেউ কেউ দক্ষ হচ্ছেন এই পদ্ধতির বাইরে গিয়ে হয়তো পারিবারিক কিংবা ব্যক্তিগত উদ্যোগে। পদ্ধতিগত এই ভুলের পর মৌলিক আরেকটি কারণ, দক্ষ শিক্ষকের অভাব। বিশেষ করে কওমী মাদরাসাগুলোতে ভাল আলেম পাওয়া গেলেও দক্ষ শিক্ষকের খুবই অভাব। আর এই অভাবের মূল কারণ, তারা টাইটেল দিয়ে পূর্ব অভিজ্ঞতা বা প্রশিক্ষণ ছাড়া শিক্ষকতা শুরু করেন। তাদেরকে বিষয়টি অবগত করলে তারা খুব অহংকারের সাথে বলেন যে ষোল বছরে টাইটেল দিলাম, আবার প্রশিক্ষণ দিয়ে শিক্ষকতা করতে হবে! কিন্তু শিক্ষা গ্রহণ আর শিক্ষা দানের অভিজ্ঞতায় যে প্রচুর ব্যবধান, তা তারা অনেকেই বুঝার মতো যোগ্যতা রাখেন না, কিংবা রাখলেও অহংকারিক কারণে স্বীকার করতে চান না। এদেশের মাটি আর মানুষের সাথে কাজ করে আমাদের অভিজ্ঞতায় মনে হয় স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাদরাসাগুলো থেকে মেধাশীল নেতৃত্ব বের করতে হলে আজ জ্ঞান-বুদ্ধি-কর্ম এবং প্রেমের সমন্বয়ে দক্ষ শিক্ষকের খুবই প্রয়োজন।
এখানে আরেকটি সমস্যা হলো, আপনি কষ্ট করেযে পরিশ্রম করেন টাকা খরচ করে যখন একজনকে দক্ষ করে দিবেন তখন আবার সে আপনার প্রতিষ্ঠানে থাকবে না। বিশেষ করে ইংরেজির শিক্ষকরা এনজিও সংস্থা আর বেসরকারী ব্যাংকগুলোর বড় বেতনের লোভ ছেড়ে অল্প টাকায় শিক্ষকতা করতে চান না। হোক তা যত মহান কর্ম। দুঃখজনক হলেও সত্য স্বীকার করতে হবে ভোগবাদি সামাজে টাকা থেকে আর কিছু মহান হয় না। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা আলিয়া মাদরাসাগুলো রাষ্ট্রের সহযোগিতায় তারপরও বড় বেতনসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিতে পারছে। আবার কোন কোন প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে ব্যবসায়িকভাবে, সেখানে টাকা ওয়ালার সন্তানেরা ছাড়া গরীবের ছেলেÑমেয়ের প্রবেশ নিষেধ অর্থনৈতিক কারণে। মাদরাসাগুলো মূলত অভাবী পরিবারগুলোর আশ্রয়স্থল। যে প্রতিষ্ঠানে রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতা নেই, ফ্রি থাকা, খাওয়া এবং শিক্ষা দান করা হয় সেখানে অর্থনৈতিক সংকট থাকবেই। ফলে সেই প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষকের বেতনের জন্য খুব বড় অংকের টাকা বরাদ্দ করা সম্ভব হয় না। দক্ষ আরবির কিংবা ইংরেজির শিক্ষক রাখতে যে ব্যয়, তা অনেক মাদরাসার পক্ষে বহন করা সম্ভব না হওয়ায় ছাত্ররা আরবীতে দক্ষ হতে পারছে না। আবার অনেক ছাত্রÑছাত্রীর মাÑবাপ থাকেন অশিক্ষিত, তারা ইচ্ছে করলেও নিজ সন্তানকে পড়াতে কিংবা সন্তানের পড়ালেখার খবর রাখতে ব্যর্থ হন। শিল্প যে বুঝে না তার কাছে আমার অঙ্কিত চিত্র আর জয়নুল আবেদিনের অঙ্কিত চিত্র দেখতে সমান। তেমনি যে অভিভাবক আরবি জানেন না তার কাছে মসজিদের মোয়াজ্জিনের আরবি পড়ানো আর আদিবের আরবী পড়ানো সামান। তাই তিনি মুয়াজ্জিনকে আরবি পড়ানোর জন্য যে বেতন দেন, সেই বেতন আদিবকেও দিতে চান। ফলে কেউ আর পারিবারিকভাবে আরবিতে দক্ষ হয়ে উঠতে পারছে না। আমাদের দেশে যে সব-জান্তা পদ্ধতির শিক্ষা এখানে ক্লাসে শিক্ষকের পক্ষে মাত্র ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট খুব বেশি পড়ানো সম্ভব হয় না। যদিও একটি ক্লাসে ১২ জনের উপর একজন শিক্ষকের অধিনে রাখা অনুচিৎ, কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠানে তারও অধিক থাকেন। একজন শিক্ষকের পক্ষে ঘরের কাজ এবং বিগত দিনের পড়া পরিক্ষা করে নতুন করে পড়ানোর খুব একটা সময় থাকে না। আবার প্রতিষ্ঠানের পক্ষেও অর্থনৈতিক কারণে একের অধিক শিক্ষক রাখা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে অভিভাবকদের যোগ্যতা ও সচেতনা থাকলে অভাবটা কিছু দূর করা যায়।
আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছে ‘আরবির মাধ্যমে কেন আরবী কিতাবগুলো পাঠদান করা হয় না?’ এই প্রশ্নের উত্তর একটাই যে আরবির মাধ্যমে পাঠদানের জন্য আরবি ভাষার দক্ষ শিক্ষকের প্রয়োজন, যার অভাব বাংলাদেশে প্রচুর রয়েছে। আর এই অভাবের কারণ ইতোমধ্যে কিছুটা আলোচনা করেছি। তা ছাড়া একটি কথা এখানে স্মরণ রাখতে হবে, ভাষা তখনই মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে যখন তা অর্থনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যম হয়। বেদনাদায়ক হলেও সত্য, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরবি ভাষা এখন আর সেই স্থানে নেই। এখন মানুষ শুধু ধর্মীয় কারণে কিংবা মধ্যপ্রাচ্য গেলে আরবি ব্যবহারের কথা চিন্তা করে তা শিখে। নতুবা বাধ্যতামূলক তা অর্থনৈতিক কোন কাজে লাগছে না। আপনি যে কারণে উর্দু শিক্ষার বিরুদ্ধে কথা বলছেন, একই কারণে যারা ইসলামি চেতনার বিশ্বাসী নয় তারা আরবি পড়ার বিরুদ্ধে যুক্তি দেখাচ্ছেন কিংবা যুক্তি দেখছেন। বিষয়টাকে ভাবতে হবে আবেগশূন্য চিন্তা থেকে। এখন যদি এই সমস্যার সমাধান প্রয়োজন মনে করেন তবে মুসলিম সম্পদশালী এবং আলেমদের সমন্বয়ে প্রজেক্ট তৈরি করে আরবিতে দক্ষ করার জন্য পৃথক উদ্যোগ নিতে হবে।
প্রশ্ন : বাংলা ও আরবির চেয়ে উর্দুকে কেন গুরুত্ব দেয়া হয় ? এখনো অনেক মাদরাসার নোটিশ চিঠিপত্র পাঠদান উর্দু হওয়ার কারণ কি ? আর তা কতটুকু যৌক্তিক ?
উত্তর : গ্রামে-গঞ্জে সাবেকি আমলের মুহতামীম ও শিক্ষকদের কর্তৃক পরিচালিত কিছু মাদরাসায় হয়তো এখনও উর্দুর প্রভাব রয়েগেছে। এই রয়ে যাওয়ার অনেকগুলো যৌক্তিক কারণ অবশ্যই রয়েছে। প্রথমত উর্দু ভাষা তৈরির একটা ইতিহাস রয়েছে। তা মূলত সংস্কৃতের প্রভাব থেকে হিন্দিকে পৃথক করে আরবি-ফার্সির কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার একটি আন্দোলন ছিল খাজা মঈন উদ্দিন চিশতি (র.) এর শিষ্য শায়েখ শরফ উদ্দিন গঞ্জে শেকর (র.) এর সময় থেকে। বৃহত্তর ভারতের মানুষের সাথে যোগাযোগের একটি উত্তম মাধ্যম হলো উর্দু কিংবা হিন্দি। উর্দু এবং হিন্দি মূলত একই মায়ের গর্ভের দুই ভাই। এগুলো ভারতের মুসলিম শাসকদের তৈরিকৃত ভাষা। এই ভাষাদ্বয়ের পণ্ডিতেরা কেউ সংস্কৃত অক্ষরে উর্দু লিখেছেন, আর কেউ আরবিÑফার্সি অক্ষরে। কেউ সংস্কৃত থেকে শব্দ ও সংস্কৃতি ধারণ করেছেন, আর কেউ আরবি-ফার্সি থেকে। এখানেই ব্যবধান হয়েছে। বৃহত্তর ভারতে দীর্ঘ মুসলিমযুগে এই ভাষা ছিল সরকারি ভাষা। অতঃপর প্রায় দু’শ বছরের মতো বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে গোটা ভারতবর্ষে মানুষদের সাথে যোগাযোগের ভাষা হয়ে উঠে উর্দু। আবার পাকিস্তানযুগে সরকারি ভাষা হয় উর্দু। ফলে এসবের একটা প্রভাব বৃহত্তর ভারতের মানুষের মধ্যে থেকেই যাবে। তবে আরবি থেকে উর্দুকে গুরুত্ব দেওয়ার বিশেষ কারণ হলো দক্ষ আরবি শিক্ষকের অভাব, যা ইতোমধ্যে আলোচনা করেছি। যেহেতু দক্ষ শিক্ষকের অভাবে আরবিতে দুর্বলতা থেকে যাচ্ছে, আর আরবির পরেই মানসম্মত ইসলামিক বই এখনও বাঙলা থেকে বেশি পাওয়া যায় উর্দু ভাষায়, আরবি থেকে উর্দু ভারতবর্ষের মানুষের জন্য সহজ, তাই মাদরাসাগুলোতে উর্দুকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হতো বা এখনও কোন কোন মাদরাসায় গুরুত্ব দেওয়া হয়। তবে বর্তমানে মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকেরা আরবি-উর্দুতে কাঁচা থাকলেও বাঙলায় বেশ এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। প্রচুর ইসলামিক বই বাঙলায় লেখা কিংবা অনুবাদ হয়েছে এবং হচ্ছে। এখন আমরা দাবি করতে পারি বাংলাদেশের কয়েকটি মাদরাসা ছাড়া বেশিরভাগে আর আগের মত বাঙলা থেকে উর্দুকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন না। বর্তমানে সাধ্যানুসারে আরবিকেও অনেকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছেন।
প্রশ্ন: জাতীয় শিক্ষার সাথে কওমী মাদাসার কোন সংযোগ নেই । সনদের রাষ্ট্রীয় কোন মর্যাদা নেই । এ ব্যাপারে আপনাদের ভাবনা কি ?
উত্তর : এখন একেবারে যোগাযোগ নেই বললে ভুল হবে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেকের যোগাযোগ হচ্ছে। প্রচুর মাদরাসার পক্ষ থেকে এখন প্রাইভেট পরিক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। প্রমাণ হিসাবে আমরা বলতে পারি বিগত বারো বছর থেকে সিলেট শহরের বালুচরস্থ জামিআ সিদ্দিকিয়ার কথা। এখানে ছাত্ররা জাতীয় শিক্ষা বোর্ডের অধিনে পঞ্চম, অষ্টম এবং দাখিলে পরিক্ষা দিচ্ছেন। তারা ভাল ফলাফলও নিয়ে আসছেন। তবে ব্যাপকভাবে তা হচ্ছেনা। এজন্য আমাদের উলামায়ে কেরাম যেমন দায়ী, তেমনি দায়ী সরকারের বৈষম্য-নীতি। বাংলাদেশে কওমী মাদরাসার অনেকগুলো শিক্ষবোর্ড। এই বোর্ডগুলোর মধ্যে কোন সমন্বয় নেই। তারা ওয়াজ নসিহতে বলেন এক হও, নেক হও। কিন্তু তারা একে অন্যকে মান্য করে এক হতে পারেন না। তাদের অনৈক্য সরকারের জন্য বিশাল সুযোগ হয়েছে। তারা এক হলে সরকার না দিলেও জনগণকে সম্পৃক্ত করে আন্দোলনের মাধ্যমে স্বীকৃতি আদায় করতে পারতেন। সরকার তো এমনি নাচনি বুড়ি, এর মধ্যে পেয়েছে হাত-তালি। আলেমদের অনৈক্য সরকারকে সুযোগ করে দিয়েছে নতুন ঝামেলা থেকে দূরে থাকার। আর এই অনৈক্যগুলোর কারণ খুব বড় কিছু নয়, সবই ব্যক্তিগত স্বার্থিক কারণ, আমাকে রেখে যদি ওনি নেতা হয়ে যান। তারা তাদের ক্ষুদ্র স্বার্থে বৃহত্তর স্বার্থ দেখতে পারছেন না। তাদের অনেকের মনোভাব এমন যে, আমি যখন কিছু হচ্ছি না, তবে তোমাকেও হতে দেবো না। সংকির্ণতাজনিত কারণে তাদের দেমাগ এতই ছোট হয়েছে যে, তারা একটি সহজ কথা বুঝতে পারছেন না এক সিড়ি দিয়ে একসাথে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ক’জন উঠতে পারেন? অথচ এখানে ধাক্কা ধাক্কি না করে যদি একজন আরেকজনের পিছনে দাঁড়ান তবে একেরপর অন্য এমনি উঠতে পারবেন।
সরকারের দু’মুখি নীতি এখন প্রায় প্রকাশ্য। ভারত, বৃটেন, আফ্রিকা, পাকিস্তানে মাদরাসায় পড়ে যত সহজে জাতীয় শিক্ষাবোর্ডের অধিনে পরিক্ষা দেওয়া যায় বাংলাদেশে তা সম্ভব হয় না! স্কুলগুলোতে যত সহজে বোর্ডের অধিনে পরিক্ষা দেওয়ার অনুমতি পাওয়া যায় মাদরাসায় তা সম্ভব হয় না সরকারের বৈষম্যনীতির কারণে। সরকারের ব্যবহারে মনে হয় তারা কওমী মাদরাসার সনদকে রাষ্ট্রীয় কোন মর্যাদা দিতে আগ্রহী নয়। এক্ষেত্রে বিএনপি-জামায়াত সরকার এবং আওয়ামীলীগ সরকারের নীতিতে কোন ব্যবধান নেই। বিএনপির সাথে নির্বাচনি জোটে থেকেও শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক চেষ্টা করেছেন কওমী মাদরাসার স্বীকৃতি লাভের। নব্বই বছরের বৃদ্ধ একজন শায়খুল হাদিস এই দাবীতে বায়তুল মোকাররমের সামনে দুতিনদিন অনশন পর্যন্ত করলেন, তবু কাজ হলো না। রাগে ক্ষোভে জামায়াতÑবিএনপি জোট ছেড়ে আওয়ামীলীগের সাথে চুক্তি করলেন বিশেষ কিছু শর্তের ভিত্তিতে। যার মধ্যে কওমী মাদরাসার স্বীকৃতির বিষয়টিও ছিল। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হলো না। এই সব কারণে মনে হয়, সরকারকে কেউ এব্যাপারে নিয়ন্ত্রণ করছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের মাননীয় অর্থমন্ত্রী আবুল মা’আল আব্দুল মুহিত-এর সাথে এনজিওদের এক বৈঠকে কওমী মাদরাসা প্রসঙ্গ আলোচনার বিষয় হয়ে উঠে। মাননীয় অর্থমন্ত্রী এগুলোকে নিয়ন্ত্রণের আশ্বাস দেন এনজিওগুলোকে, যা থেকে প্রমাণিত হয় এদেশে এনজিওগুলো কওমী মাদরাসার বিরুদ্ধে সরকারকে ছাপ দিচ্ছে। এনজিওগুলো যে বিদেশের টাকায় এবং ইঙ্গিতে চলে তা এখন গোপন কিছু নয়। বিদেশী শক্তিগুলো মূলত এনজিও-এর মাধ্যমে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়িত করে। অবশ্য কওমী মাদরাসার বিরুদ্ধে এইসব ষড়যন্ত্র নতুন কিছু নয়। শত্র“দের এই ষড়যন্ত্র কওমী মাদরাসার কোন ক্ষতি করতে পারেনি এবং পারবেও না। কওমী মাদারাসার ক্ষতির জন্য মূলত তাদের মধ্যকার অনৈক্য, অদক্ষতা আর হীনমন্যতা বেশি দায়ি। এখানে প্রশ্নের মধ্যে ‘আপনাদের’ শব্দটা দিয়ে আমার সাথে আর কাদেরকে যুক্ত করেছেন তা জানি না, তবে যদি আমাদের প্রতিষ্ঠান জামিআ সিদ্দিকিয়ার কথা বলেন, তবে বলতে পারি এ কেন্দ্রীক আমাদের কিছু ভাবনা ও পরিকল্পনা আছে, আমরা সেভাবে এগিয়ে যাচ্ছি। সফল হলে বিষয়টা আলোচনায় এমনি আসবে, ইনশাল্লাহ। আমরা এক সময় চেষ্টা করেছি অন্যান্য কওমী মাদরাসাগুলোকেও আমাদের ভাবনায় নিয়ে আসতে, আমরা দক্ষ শিক্ষক তৈরির জন্য শিক্ষক প্রশিক্ষণ কোর্সও চালু করেছি। আগে আমরা খুব প্রচার করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও প্রশিক্ষনের দাওয়াত পৌঁছিয়েছি। কেউ কেউ এগিয়ে আসলেও অনেকে বিষয়গুলোকে বুঝতে পারছেন না। আমরা আশা করছি, তারা না-বুঝলেও তাদের পরবর্তি প্রজন্ম বিষয়টির প্রয়োজনিয়তা ভাল রকমই অনুভব করতে পারবেন। আমরা প্রথমে বৃহত্তর কওমী মাদরাসাগুলো নিয়ে যে চিন্তা করেছিলাম তা থেকে একটু পিছনে আসতে হলো বিভিন্ন কারণে। বিশেষ করে বিষয়টি নিয়ে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়ে যায়। অনেকে মনে করেন আমরা কওমী মাদাসার মূল আদর্শ থেকে সরে যাচ্ছি। অথচ আমরা যে সংস্কারের কথা বলছি তা-ই ছিল দারুল উলূম দেওবন্দের মূল আদর্শ এবং কর্মসূচী। শায়খুল হিন্দ মাহমুদুল হাসান (র.), শায়খুল ইসলাম সৈয়দ হোসেন আহমদ মাদানী (র.) প্রমূখরা যে শিক্ষানীতির আলোকে সিলেবাস তৈরির কথা বলেছেন (এগুলো লিখিত আছে), আমরা চেষ্টা করছি কওমী মাদরাসাগুলোকে সেদিকে নিয়ে যেতে। কথাটা খুবই দুঃখজনক হলেও আমাকে বলতে হচ্ছে, তারা দেওবন্দ ও শায়খুল হিন্দ বা শায়খুল ইসলামের কথা বললেও শিক্ষানীতির ক্ষেত্রে তা অনুসরাণ করছেন বলে মনে হয় না। তারা মূলত নিজেদের গ্রাম্যচিন্তা এবং কর্তৃত্ব বহাল রাখতে মাদরাসাগুলোকে দেওবন্দের মূল লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, নীতি থেকে দূরে নিয়ে গেছেন। আমরা চেষ্টা করছি, নতুন প্রজন্মের সাথে বিষয়গুলো আলোচনার মাধ্যমে আদানÑপ্রদানের। তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারে তারা অবশ্যই উৎসাহি। অন্যদিকে আমরা নিজেদের প্রতিষ্ঠান নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি, যদি সফল হই তবে একটা মেেডল থাকবে সাবার সামনে। অবশ্য এই মডেলে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে দ্বীনি সিলেবাসের সাথে জাতীয় সিলেবাসের সমন্বয় করে পাঠদান এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদেরকে পরিক্ষার ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন, তা খুবই সচেতনতার পরিচয়।
রাষ্ট্র ইচ্ছে করলে খুব সহজে বিষয়টির সমাধান করতে পারতো। সরকার যদি কিছু কওমী শিক্ষিতদের নিয়ে কওমী মাদরাসাগুলোর জন্য একটা বোর্ড তৈরি করে ঘোষণা দিয়ে দিতোÑএই বোর্ডের অধিনে সকল কওমী মাদরাসা পরিক্ষা দিতে হবে। তবে বিষয়টি একেবারে সহজ হয়ে যেতো। আমি জানি যে হুজুররা সরকারের কথায় বোর্ডে যাবেন তাদেরকে অন্যরা সরকারের দালাল ইত্যাদি বলে গালি দিবেন এবং কিছুদিন তারা বিদ্রোহী হয়ে থাকবেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত মানবেন এবং না-মেনে উপায় থাকবে না। শোনেছি, মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ কিছু চেষ্টা করছেন। তিনি চাচ্ছেন প্রথমে একটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি, অতঃপর সেই প্রতিষ্ঠানের অধিনে কওমী মাদরাসাগুলোকে নিয়ে এসে বোর্ড গঠন করতে। তাঁর সাথে আওয়ামীলীগের সুসম্পর্কের কথা সবাই জানেন। আমরা আশা করি এই সুসম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে তিনি গ্রহণযোগ্য এবং সময়োপযোগি একটি কওমী মাদরাসা বোর্ড দাঁড় করাবেন।
প্রশ্ন: জাতীয়ভাবে দেশে প্রাইমারী ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে নাস্তিক ও হিন্দুয়ানী পৌত্তলিক শিক্ষার প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। শিক্ষকদের ৮০% হিন্দু। এ ব্যাপারে আপনাদের কর্তব্য আছে কি?
উত্তর : সরকার কিংবা যারা সরকারে থেকে শিক্ষানীতি প্রণয়ন করছেন তারা বেশিরভাবে সেক্যুলার থাকায় একথা সত্য যে, একটি মুসলিম প্রধান দেশ হিসাবে জাতীয়ভাবে প্রাইমারি এবং উচ্চমাধ্যমিক পাঠ্যক্রমে যেরকম ইসলামি শিক্ষা থাকার কথা, তা নেই। তবে একথাও সত্য নয় যে, জাতীয়ভাবে দেশে প্রাইমারী ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে নাস্তিক ও হিন্দুয়ানী পৌত্তলিক শিক্ষার প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে কিংবা শিক্ষকদের ৮০% হিন্দু। একটি বোর্ডে পাঠ্যক্রম তৈরিতে বিভিন্ন ধর্ম এবং চিন্তার লোকের সমন্বয়ে ‘শিক্ষাক্রম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন সম্পর্কিত টাস্কফোর্স’ গঠিত হয়। ওরা পরিক্ষা নিরীক্ষা করে বাজারে বই নিয়ে আসেন। মাঝেমধ্যে ভুল বশত কিংবা কেউ কেউ ষড়যন্ত্র মূলকভাবে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠির চিন্তা চেতনার উল্টো কোন কোন বিষয় সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত করে ফেলেন, সম্পাদনা বোর্ডে যারা থাকেন তাদের চোখের আড়ালে কিংবা তাদের কারো কারো ইচ্ছায় তা বইতে এসেও যায়। তবে প্রতিবাদ করলে সরকার তা সংশোধন করে। কিছু কিছু বিষয়ে চিন্তার ভিন্নতাও আছেই। আপনি আমি যে বিষয়গুলোকে আপত্তিকর মনে করছি তা হয়তো অন্যরা মনে করছে না, তাই বিষয়টি তাদের কাছে গুরুত্ব পাচ্ছে না। এক্ষেত্রে ইসলামিকদের উচিৎ ছিল পর্যবেক্ষনের জন্য তাদের নিজস্ব একটি শিক্ষা কাউন্সিল বা টাস্কর্ফোস গঠন করা এবং বিষয়গুলোকে সরকারের শিক্ষা কমিশন এবং দেশের জনগণের কাছে গঠনমূলভাবে উপস্থাপন করা। তারা এক্ষেত্রে ব্যর্থ হচ্ছেন বলে আমরা মনে করি। এখানে আরেকটি সমস্যা হলো বাংলাদেশে সবাই সবকিছুকে বিচার করেন দলীয় রাজনৈতিক চিন্তা থেকে, ফলে বিষয়গুলোর আর সমাধান হয় না। এই রোগটি ইসলামিক কিংবা নন-ইসলামিক সবার কাছে আছে। আমাদের উচিৎ কিছু কিছু ক্ষেত্রে সবাইকে সকল রাজনৈতিক চিন্তার উর্ধ্বে বসে চিন্তা করা। দেশ, মানুষ, মাটি সম্পর্কিত আপত্তিকর বিষয়গুলো পরিবর্তনের জন্য গঠনমূলকভাবে বাস্তবসম্মত প্রস্তাব সরকার ও জনগণের সামনে উপস্থাপন করা। শিক্ষকদের ৮০ ভাগ হিন্দু কথাটা সত্য নয়। ৮০ ভাগ মানে ১০ জনে ৮ জন। বাংলাদেশে শতে একটি স্কুলও পাওয়া যাবে না যে, ১০ জনের মধ্যে ৮ জন হিন্দু শিক্ষক। ২০% হওয়াটা যুক্তিসম্মত।
প্রশ্ন: কোন প্রকার জাগতিক কারগরি শিক্ষা না দিয়ে ছাত্রদের নিছক ধর্মীয় শিক্ষা দিয়ে শিক্ষা জীবন শেষ করা হচ্ছে, এতে সীমাহীন প্রতিকুল পরিস্থিতির সম্মুখিন তারা। এ ব্যাপারে আপনাদের ভাবনা কি ?
উত্তর : এখানে ধর্ম বলতে যদি ইসলামকে বুঝান তবে বলবো ইসলামিক শিক্ষাকে আমরা জাগতিক শিক্ষার বাইরে মনে করি না। ইসলাম অন্যান্য ধর্মের মতো নিচক কোন ধর্ম নয়। ইসলাম পূর্ণাঙ্গ একটি জীবন ব্যবস্থা। এখানে যেমন আছে হাসানাত দুনিয়া (দুনিয়ার সুন্দর), তেমনি আছে হাসানাল আখিরাহ (পরকালের সুন্দর)। আর ‘কারিগরি শিক্ষা’ একটি ভিন্ন বিষয়। এর জন্য পৃথক প্রতিষ্ঠান রয়েছে ‘পলিটেকনিক’। মৌলিক শিক্ষার কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে পলিটেকনিকের বিষয় যুক্ত করলে আমও যাবে, চালাও যাবে। এমনি সময় দিয়ে সিলেবাস শেষ করা সম্ভব হয় না, তারমধ্যে কারিগরিশিক্ষা যুক্ত হলে ছাত্রদের উপর বেশি ছাপ হয়ে যাবে। তবে ইচ্ছে করলে কেউ মাদরাসার ছাত্রদের জন্য পৃথক পলিটেকনিক চালু করতে পারেন, যাতে এখান থেকে তাকমিল দিয়ে সেখানে গিয়ে কারিগরি শিখবেন। কিংবা কেউ যদি অর্ধেক পড়ে বাদ দেয় সে ঐ প্রতিষ্ঠানে গিয়ে কারিগরি শিখবে। সেই প্রতিষ্ঠানের নামও ‘কারিগরি মাদরাসা’ দেওয়া যেতে পারে।
প্রত্যেক জিনিষেরই একটা লক্ষ্য উদ্দেশ্য থাকে। প্রচলিত কওমী মাদরাসাগুলো প্রতিষ্ঠারও লক্ষ্য উদ্দেশ্য ছিল ? যেকোন প্রস্তাব দানের সময় এ বিষয়টি আমাদের ভাবতে হবে। মাদরাসা প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্য ছিল কোরআনÑহাদিসকে সঠিতভাবে জানা এবং বুঝা। এখন যারা এখানে কারিগরি শিখার কথা বলছেন, তারা মূলত আবেগ থেকে বলছেন। মানুষ ফার্মেসিতে গিয়ে শুটকি খুঁজে না, মাছ বাজারে গিয়ে ঔষধ খুঁজে না। কিংবা কেউ মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে ইঞ্জিনিয়ার বা আলেম খুঁজে না। বিষয়টিকে বুঝতে হবে। শুধু আবেগ দিয়ে দাবি করলেই হবে না। দাবির সাথে বাস্তবতার মিল থাকতে হবে। সেক্যুলার সমাজের মানুষ বুঝতে পারে না স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়Ñমেডিকেল ইত্যাদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যে ইসলামের বাইরে নয়। তাই তারা এমন দাবি করে। আর আমাদের বাঙালি সমাজে বামরা তো পূর্ণাঙ্গ মূর্খ এক প্রজাতি, ওরা না বুঝেন মার্কসকে, না বুঝের এদেশের মাটি আর মানুষ। ওরা সারাজীবনে একটা জিনিষই ভাল বুঝেছেন বিভিন্ন এম্বেসি কিংবা সরকারের দালালি। জ্ঞান, বুদ্ধি, কর্ম এবং প্রেমকে সমন্বয় করে বিষয়টি ভাবলে স্পষ্ট হবে, পৃথিবীর সব জায়গায়ই বিষয়ভিত্তিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকে। কওমী মাদরাসাও একটি বিষয়-ভিত্তিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আপনি যদি অন্য বিষয়ে চালু করেন তাতে-তো কারো কোন আপত্তি নেই। এই যে মনে করুন, আমি জামিআ সিদ্দিকিয়ায় কিছু বিষয় চালু করেছি, তাতে তো আলেম-উলামারা কোন আপত্তি করছেন না। বরং প্রশংসা করছেন। ক্ষেত্রবিশেষ অনেকে সহযোগিতাও করছেন। আপনারা একটি কারিগরি মাদরাসা চালু করেদিন, সবাই সহযোগিতা করবে। তবে পুরাতনগুলোতে কিছু করার চিন্তা করলে আমও যাবে, চালাও যাবে। আবার আমরা যদি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামের দাওয়াতি কাজ ব্যাপকভাবে করতে পারি তবে সেখান থেকে লেখাপড়া করে যারা বেরিয়ে আসবে তারাতো ইসলামের সেবক-ই হবে। তবে অবশ্যই যদি কোন মাদরাসার ক্যাম্পাস বড় হয়, সম্পদ বিশাল থাকে, তবে তারা মূল শিক্ষাকে বহাল রেখে পাশাপাশি বিভিন্ন শাখা চালু করতে পারেন। জামিআ সিদ্দিকিয়া নিয়ে এমন স্বপ্ন আমাদের অবশ্যই আছে। আমরা আমাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্যে এসব কথা লিখে রেখেছি, বাকি আদায় করার দায়িত্ব মহান আল্লাহর।
প্রশ্ন: অনেকে বলেন কওমীর অর্থনৈতিক কোন ভিত্তি না থাকায় নিছক চাঁদাবাজিতে একটা দৃষ্টিকটু পরিবেশ তৈরী হয়েছে। মানুষ তা নেতিবাচক হিসাবে দেখছে ? আপনি কি মনে করেন ?
উত্তর : প্রথমে এক্ষেত্রে ‘চাঁদাবাজি’ শব্দটা আপত্তিকর। চাঁদাবাজি মূলত সন্ত্রাসের দিকে ইঙ্গিত করে। অনেক সময় শব্দের ব্যবহারিক ত্র“টির কারণে ভাল জিনিষও খারাপ হয়ে যায়। চাঁদা বা জনগণের অর্থনৈতিক সহযোগিতা আর চাঁদাবাজি অবশ্যই এক জিনিষ নয়। তা ছাড়া পৃথিবীর বেশির ভাগ পাবলিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কোন অর্থনৈতিক ভিত্তি থাকে না। এগুলো হয়তো সরকারের নয়তো পাবলিকের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হয়। অবশ্য অনেক প্রতিষ্ঠান স্বনির্ভর হয়ে যায় অনুদানের সম্পদে। তবে অনুদান এককালিন হোক কিংবা খণ্ডকালিন, তা চাঁদা হিসাবেই গণ্য হবে। যারা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করেন তাদের কথা ভিন্ন। আপনি বলছেন ‘মানুষ তা নেতিবাচক হিসাবে দেখছে।’ আমার প্রশ্ন এই মানুষগুলো কারা ? আচ্ছা, কিছু মানুষ কি এগুলোকে ইতিবাচকও দেখছে না ? আরেকটা প্রশ্ন, পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ট মানুষ হযরত মুহাম্মদ (স.) কে কি সব মানুষ ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে ? আসলে একদল মানুষ সর্বদাই থাকবে নেতিবাচক দেখার জন্য, আবার একদল মানুষ থাকবে ইতিবাচক দেখার জন্য। তবে যেভাবে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান বা মানুষ ভিক্ষুকের মতো নির্লজ্জ হয়ে চাদা করেন, যা শরিয়ত সম্মতও নয়, তা বন্ধ করা প্রয়োজন। চাঁদার জন্য কাউকে ছাপ দেওয়া যাবে না, কারো কাছে মাথা নত করা যাবে না, মিথ্যা কথা বলা যাবে না, ছাত্র কিংবা শিক্ষকের অহমকে ভেঙে দেওয়া যাবে না, চাঁদাকে ভিক্ষা কিংবা চাঁদাবাজির সমতুল্য করা যাবে না। ছাত্র শিক্ষকের অহমকে বহাল রেখে মানুষের সহযোগিতায় একটি প্রতিষ্ঠান চলার মধ্যে দৃষ্টিকটু কিংবা নেতিবাচক কিছু নেই।
প্রশ্ন: কওমী থেকে আজকাল গবেষক দার্শনিক চিন্তাশীল মানস তৈরী হচ্ছেনা বলে অভিযোগ আছে ?
উত্তর : শুধু কওমী মাদরাসা কেন? আমাদের পরাধিন যুগে সৃষ্ট সকল শিক্ষা পদ্ধতি আর নীতির কারণে আমরা কোথাও কিছু করতে পারছি না। বাংলাদেশের সর্বপ্রকার শিক্ষা পদ্ধতিতে ত্র“টি রয়েছে। এই ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষা দিয়ে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমলা, কামলা, চামচা বের হচ্ছে, বের হচ্ছে মেধাশূন্য সনদদারী একদল শিক্ষিত বলদ। কোন প্রতিষ্ঠান গবেষক দার্শনিক চিন্তাশীল তৈরি করতে পারে না। আমরা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীক যে গবেষকদের দেখি ওদের বেশিরভাগ হয়ে থাকেন হালের বলদের মতো ফরমায়েশের চাকর, ওদের মুখে আর বুকে শুধু ঘাস থাকে। তারা ঘাসকে শুধু পাঁজাতে জানেন। কিন্তু হরিণের মতো সারা জঙ্গল স্বাধীনভাবে ঘুরে বুকে কস্তুরি ধারণ করতে পারেন না। আল্লাহ অবশ্য বলদও তৈরি করেছেন খুব জরুরী কাজের জন্য। তবে হরিণের কাজ বলদ দিয়ে হয় না। আমাদের উচিৎ জ্ঞান, বুদ্ধি, কর্ম ও প্রেমের আলোকে দেশের শিক্ষা পদ্ধতি এবং নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসা। যদি আমরা পরিকল্পিতভাবে এই কাজটি করতে পারি তবে আশা করা যায় আগামীতে কিছু কস্তুরি পাওয়ার।
প্রশ্ন: লিল্লাহ জাকাত সাদাক্বাত কুরবানীর চামড়া গরিবের হক্ব। সেখানে কওমীর আয়ের একমাত্র উৎস তাই। ইহা কি সামাজিক ভাবে হ্যায় হচ্ছেনা ? গরীবরা বঞ্চিত হচ্ছেনা ? আলেমদের মর্যাদা ক্ষুন্ন হচ্ছেনা ?
উত্তর : লিল্লাহ জাকাত সাদাক্বাত কুরবানীর চামড়া গরিবের হক বলেই তো কওমি মাদরাসায় এগুলো সংগ্রহ করে গরিবের ছেলে মেয়েদের লেখা-পড়া এবং থাকা খাওয়ার কাজে ব্যবহার করা হয়। তা সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার কোন কারণ হতে পারে না। বরং তা গর্ব ও সোয়াবের কারণ যে, লিল্লাহ জাকাত সাদাক্বাত কুরবানীর চামড়ার টাকা পরিকল্পিতভাবে গঠনমূলক শিক্ষা কাজে ব্যয় হচ্ছে। এতে গরীবরা বঞ্চিত হওয়ার কথাই আসে না, বরং এই টাকা যদি মাদরাসাগুলো সংগ্রহ করতো না তবে গরীবের ছেলে মেয়েরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হত। আর আলেমদের মর্যাদা ক্ষুন্ন হওয়ার প্রশ্ন আসছে কেন এখানে ? অনেক গরীবের ছেলে এই টাকার বিনিময় আলেম হচ্ছেন। আর যারা ধনী তারা তো আর এই টাকা খাচ্ছেন না। আসলে ইসলামে এই সব অহংকারি বিষয়ের কোন গুরুত্ব নেই। ইসলামে সবাই মর্যাদার ক্ষেত্রে সমান। এখানে ওমর-আবু বকর যা, বেলাল এবং খাব্বাবও তা। মর্যাদাটা নির্ভর করে আমলের উপর। মাওলানা নুর উদ্দিন গহরপুরী খুবই গরীব ছিলেন, তিনি নিজে আমাদেরকে বলেছেন কীভাবে কষ্ট করে লেখাপড়া করেছেন, কিন্তু যোগ্যতা ও আমলের কারণে দেশের বড় বড় ধনীরা, সরকারি মন্ত্রী আমলা, শিক্ষিত সমাজ তাঁর পদষ্পর্শ নিয়ে ধন্য হতেন। এটাতো আমাদের সামনের ঘটনা। এভাবে হাজারো ঘটনা বর্ণনা করা যাবে। তাই বিষয়টাকে মর্যাদা ক্ষুন্নভাবে না দেখে মর্যাদা বৃদ্ধির পথ বলে বিবেচনা করলেই হয়। আমার বাবা একজন ধনী মানুষ, না আমি এজন্য গর্বিত নয় যে আমি ধনী বাবার ছেলে। আমি গর্বিত একটি কওমী মাদরাসা চালাতে, দেশের গরিব মানুষদের ছেলে মেয়েদের লেখা পড়ার ব্যবস্থা করতে আমি ফকিরের বেশে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে যাই। কেউ কেউ হেয় করলেও বেশির ভাগ মানুষ এজন্য আমাকে স্নেহ এবং শ্রদ্ধা করে। আমি যখন আমার ব্যক্তিগত কাজে কোথাও যাই তখন এত আনন্দ পাই না যত আনন্দ পাই আল্লাহ রাসুলের পথে ফকির বেশে মানুষের দুয়ারে যেতে। আমার বাবার বিশাল সম্পত্তির মধ্যে বসে আমি কোনদিন নিজকে বড় করে দেখতে পারিনি, কিন্তু যখন মাদরাসার কাজে কোথাও যাই তখন নিজকে বাদশা মনে হয়। বিশ্বাস করুন, বাদশাদের বাদশা আল্লাহর পথে ফকির হতে পারার মধ্যেই মূলত ইজ্জতÑমর্যাদা। তবে কেউ যদি এখানে নিয়তে বেশ-কম করে তবে শেষ।
প্রশ্ন: এই প্রজন্ম যাদের আপনারা গড়ে দিচ্ছেন তাদের কর্মস্থল কোথায় ?
উত্তর : দেখুন, ওয়াতার যুকু মানতাশাউ বিগায়রি হিছাব। আল্লাহ যাকে চায় তাকে বেহিসাব রিজেক দান করে। বিশ্বাস করুন, মাদরাসা শিক্ষায় শিক্ষিতরা মোটেও বেকার নয়। আপনি খবর নিয়ে দেখুন বাংলাদেশে বেকার যুবকদের মধ্যে কতজন মাদরাসা শিক্ষায় শিক্ষিত আর কতজন স্কুল-কলেজের শিক্ষায় শিক্ষিত ? এটাতো প্রেমিক আর প্রেমিকার খেলা। এটা সাধারণ জ্যামিতি কিংবা আল-জাবিরের হিসাবে আসবে না। বোখারি শরিফের হাদিস : যারা বিশ্বাস করে আল্লাহ রাজ্জাক, ইয়া রাজ্জাকু জিকির করে এবং তার রিজেকের কিছু অংশ আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে তার কোনদিন রিজেকের অভাব হবে না। হযরত ওমর বিন খাত্তাব (রা.) জেরুজালেম যাওয়ার পথে একটি মাঠ অতিক্রম কালে তাঁর গোলামকে বলেন আমি এই মাঠে ছাগল রাখালি করতাম। তা আমি পারতাম না। আমার বাবা আমাকে মারতেন। আমার ফুফু আমাকে বলতেন, ছাগল রাখালিটাই পারিস না, জীবন চালাবে কীভাবে? দেখ, আজ হযরত মুহাম্মদ (স.) এবং কোরআনের সংস্পর্শে আমি শুধু ছাগল নয়, অর্ধদুনিয়া চালানোর যোগ্যতা অর্জন করে নিয়েছি। চিন্তা করুন বিষয়টি! যারা কোরআন হাদিসের সংস্পর্শে এলো তাদের কর্মস্থলের অভাব হবে না ইনশাল্লাহ। তারপরও যে একেবারে নেই তা কিন্তু নয়। আজকে দেশের বড় বড় বিল্ডিং আর শিয়ার হোল্ডিং-এর মালিকেরা অনেকই কওমী মাদরাসার শিক্ষায় শিক্ষিত।
প্রশ্ন : কওমীতে যারা পড়ান তারা ৪০/৫০ বছর খেদমতের পরও কোন পেনশন-বোনাস কিছুই নেই। শেষ জীবন বড় কষ্টে মানবেতর ভাবে চলে। তা কি আপনাদের নজরে পড়ে ? কিছু ভাবছেন ?
উত্তর : কওমী মাদরাসার শিক্ষকদেরকে যদি পেনশন দেওয়া সম্ভব হতো তবে অবশ্যই আমরা আনন্দিত হতাম। যেখানে প্রতিদিন ছাত্রদের থাকা খাওয়া এবং প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জরুরী আনুষাঙ্গিক বিষয়গুলো চালাতে এবং মাসের শেষে শিক্ষককে বেতন দিতে হিমশিম খেতে হয় সেখানে পেনশনের বিষয়টি ভাবা খুবই কষ্টকর। কওমী মাদরাসা হলো অলাভজনক বেসরকারী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখানে সরকারী কোন অনুদান নেই। প্রকৃত অর্থে পাবলিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে পেনশন কোথাও নেই। দেশ বিদেশে যে সব সরকারী কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পেনশন দিয়ে থাকে তারা মূলত ইন্সুরেন্স পদ্ধতিতে তা করে। ইন্সুরেন্সের টাকা তারা বেতন থেকে নিয়ে যায়। ইন্সুরেন্স বিষয়টা কতটুকু শরিয়তসম্মত ? তা অবশ্য ভাবতে হবে। আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানে মাঝেমধ্যে এই পেনশনের বিষয়টি নিয়ে ভাবি এবং আলোচনাও করি। মধ্যখানে একবার ‘শিক্ষক কল্যাণ তাহবিল’ গঠনের উদ্যোগও নিয়েছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল এই তাহবিলে কিছু টাকা জমিয়ে রেখে অতঃপর যে শিক্ষক একাধারে তিরিশ বছর আমাদের প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করবেন তাকে অবসর জীবনে পেনশন বা এককালিন কিছু সহযোগিতা করবো। কিন্তু এখানে অসুবিধা হলো, কওমী মাদরাসাগুলোতে শিক্ষক রাখা কিংবা বিদায়ের কোন স্থায়ি এবং কেন্দ্রীয় নীতিমালা কিংবা আইন নেই, ফলে শিক্ষকরা যখন তখন যাওয়া-আসা করেন। আরও অনেক সমস্যা আছে। যতক্ষণ পর্যন্ত কওমী মাদরাসাগুলো একটি নির্দিষ্ট বোর্ডেও অধিনে গিয়ে স্থায়ি এবং কেন্দ্রীয় নীতিমালা অনুসরণ করবে না ততক্ষণ পর্যন্ত আবেগ দিয়ে অনেক কিছুই ভাবা যাবে, কিন্তু বাস্তবায়ন করা যাবে না।
প্রশ্ন: কওমী ইসলামী ব্যাংক করতে অসুবিধা কি ? সুদী ব্যাংকে লেনদেন করে সুদের সহযুগী হচ্ছেন নাতো ?
উত্তর : ইসলাম তো আর ইসলামই। এখানে ‘কওমী ইসলামী’ আবার কি? সুদ থেকে বাঁচতে ইসলামী ব্যাংকের খুবই প্রয়োজন। বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে ইসলামী ব্যাংক রয়েছে। এই ব্যাংকগুলো শরিয়াহ ভিত্তিক পরিচালিত হচ্ছে। অবশ্য যতক্ষণ পর্যন্ত রাষ্ট্রে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হবে না ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংকিং চালু করা সম্ভব নয়। তারপরও মন্দের ভাল, আরো প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। কিন্তু ব্যাংকতো আর চাইলেই প্রতিষ্ঠা করা যায় না। এখানে টাকা প্রয়োজন। প্রয়োজন সরকারী অনুমতির।
প্রশ্ন: পাকিস্তানের দারুল উলুম করাচি উচ্চমাধ্যমিকে দাখেলার জন্য মেট্রিক লাজেম করেছেন । আপনাদের করতে অসুবিধা কি ?
উত্তর : পৃথিবীর সব স্থানেই তাদের নিজস্ব নিয়মে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তির জন্য মাধ্যমিক অর্থাৎ মেট্রিক সমতুল্য সনদ জরুরী। তবে আপনি যে কথা বলতে চেয়েছেন তা একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতির প্রতি ইঙ্গিত করেছেন, আর এই পদ্ধতিতে পাকিস্তানের কওমী মাদরাসাগুলো তাদের রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত। বাংলাদেশে এই স্বীকৃতি নেই। এখানেই আমাদের কওমী মাদরাসাগুলোতে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তিতে মেট্রিককে বাধ্যতামূলক করতে অসুবিধা। তবে আমাদের জামিআ সিদ্দিকিয়ায় মাধ্যমিকে ভর্তি হতে হলে প্রাইমারী এবং নাইনে ভর্তি হতে হলে অষ্টমের সরকারী সনদ জরুরী হয়। আমরা উচ্চমাধ্যমিকে যাইনি, গেলে অবশ্যই এখানেও ভর্তি হতে মেট্রিক বা দাখিল পাশের সনদ জরুরী হবে।
প্রশ্ন: আলেম সমাজকে আত্ম নির্ভরশিল করতে আপনাদের চিন্তা ভাবনা আছে কি ?
উত্তর : কাউকে কেউ আত্ম নির্ভরশিল করতে পারে না যদি সে নিজ উদ্যোগে না হয়। এখানে খুদি বা অহমের বিষয় রয়েছে। আমরা শুধু আলেমদের কথা বলছি কেন? আমাদের বলা উচিৎ গোটা মানব-সমাজ কিংবা বাঙালী সমাজের কথা। সবার মধ্যে জ্ঞান, বুদ্ধি, কর্ম এবং প্রেমের সমন্বয় করে অহম জাগাতে হবে। অহম ছাড়া কোন মানুষ আত্ম নির্ভরশিল হওয়ার চিন্তা করতে পারে না। আলেম সমাজের মধ্যে যঅিবশ্য এক্ষেত্রে সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা অস্বীকার করা যাবে না। আমরা শুধু আলেমদের কথা বলছি কেন? আমাদের বলা উচিৎ গোটা মানব-সমাজের কথা। আমরা চেষ্টা করছি মানুষের মধ্যে অহম জাগাতে।
প্রশ্ন: গলিতে গলিতে টাইটেল মাদরাসা ? এটা কীভাবে দেখছেন ? পাশ ফেইলের বালাই নেই সবাই টাইটেল পাশ ? এতে কি কওমির মান বাড়ছে ?
উত্তর : গলিতে গলিতে এখন শুধু টাইটেল মাদরাসা নয়, স্কুল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ও পাওয়া যায়। তারপরও সীটের অভাবে ভর্তি হতে পারছে না মানুষ। পাশ ফেইলের বালাই নেই কথাটা সত্য নয়। মাদরাসাগুলোতে অনেক কঠিন পরিক্ষা দিতে হয় এবং পাশ ফেইল রয়েছে। তবে তা সত্য, এই পাশ ফেইল দিয়ে সরকারি কোন চাকুরি পাওয়া যাবে না। অবশ্য তাও সত্য, মাদরাসাসমূহ প্রতিষ্ঠা হয়নি সরকারি চাকুরির জন্য, এগুলো প্রতিষ্ঠা হয়েছিল কোরআন হাদিসের জ্ঞানকে সমাজের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। আর এক্ষেত্রে কওমী মাদরাসাগুলো সফল। যেহেতু নিজ লক্ষ-উদ্দেশ্যে তারা সফল, তাই তাদের মান হ্রাসের সুযোগ তেমন একটা নেই।
প্রশ্ন: ডজনে ডজনে বোর্ড ! বোর্ডে ঐক্যমত কেন নেই ?
উত্তর : চিন্তার ঐক্য না হয়ে বোর্ডের ঐক্য হবে না। বিকল্প পথ হলো সরকারের লাঠি দিয়ে কেন্দ্রীয় একটি বোর্ড গঠন করে ছাপিয়ে দেওয়া। এবিষয়গুলো আমি ইতোমধ্যে আলোচনা করেছি।
প্রশ্ন: জেলা পর্যায়ে ১টি টাইটেল মাদরাসা। ১টি বিশাল ইউনিভারসিটির মত হউক । তা কি সমর্থন করেন ?
উত্তর : করতে পারলে অসমর্থনের কোন কারণ নেই।
প্রশ্ন: অনেকে বলেন যে কওমী ফারেগীনদের বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় তারা বেরিয়ে পেটের ফিকিরের জন্য মাদরাসা মক্তব খুলে বসে ? যেখানে পড়ালেখার মান নেই, বাধা দেয়ার কেউ নেই, তা কি সত্য ?
উত্তর : কওমী ফারেগীনদের বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় তারা বেরিয়ে পেটের ফিকিরের জন্য মাদরাসা মক্তব যদি খুলে তবে তাতো মহান আল্লাহ পাকের রহমত। দিনদিনে মাদরাসা-মসজিদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। হোক তা পেটের ফিকির, তবুও ভাল। আপনি যে সনদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির কথা বলছেন, তাও তো পেটের ফিকির থেকে বলছেন! পৃথিবীতে সকল ইহকালিন সভ্যতার ক্রমবিকাশ ঘটেছে মূলত পেট আর সেটের (যৌনতার) ফিকির থেকে। আর যেখানে মানের প্রশ্ন সেখানে আমি বলবো, অর্থনৈতিক সমস্যা মাথায় থাকলে খুব বেশি মান দেওয়া সম্ভব নয়। তবু যা আছে তা না-থাকা থেকে ভাল। এই থাকার জন্য অনেকই লেখা-পড়ার করতে পারছেন। না থাকলে অনেক গরীব মানুষ লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত হতো।
প্রশ্ন: বিলেত আমেরিকায় মাত্র ১২ বছরে কোন কোন প্রতিষ্ঠান ১০ বছরে মেট্রিক সহ টাইটেল পাশের ভাল ব্যবস্থা আছে । মুসলিম দেশে তা কেন অসম্ভব ?
উত্তর : অসম্ভবটা কে বলেছে? সবদেশেই তা সম্ভব। বৃটেনে যে ছয় বছরে বেরি মাদরাসায় টাইটেল দেওয়া হয় তার মূল হিসাবটা কিন্তু ছয় নয়, বরং ১২ বছর। প্রাইমারীর পরে তারা ভর্তি করে, এখানে নার্সারীসহ ছয় বছর, অতঃপর ছয় বছরে জিসিএসসি সহ টাইটেল। এই পদ্ধতিতে সিলেটের বালুচরস্থ আমাদের জামিআ সিদ্দিকিয়াও। আমাদের দাখিল পর্যন্ত দশ বছর, এই দশ বছরের মধ্যে জালালাইন পর্যন্ত কওমীর ক্লাস শেষ হয়ে যায়। অতঃপর দু বছরে টাইটেল।
সৈয়দ মবন