এহসান বিন মুজাহির ::
ছোটবেলায় যার সুমধুর আজানের কন্ঠ ও তিলাওয়াতে কুরআন রেডিও-টিভির কল্যাণে কানে পৌছতো সেই ব্যাক্তি হলেন বিশ্ববরেণ্য ক্বারী উবায়দুল্লাহ (হাফিজাল্লাহু)। বাংলাদেশ বেতারে প্রচারিত কারী উবায়দুল্লাহর সুমধুর কন্ঠের আযান এবং তিলাওয়াত শুনেননি এমন মানুষ বাংলাদেশে সম্ভবত একজনও পাওয়া দুষ্কর! যিনি যাদুকরি কন্ঠে বিশুদ্ধ তিলাওয়াতে কুরআনের মাধ্যমে লাখ-লাখ শ্রেুাতাদের মোহিত করেছে তিনি আজ ৯ বছর ধরে অসুস্থাবস্থায় দিনাতিপাত করছেন। আর্ন্তজাতিক ক্বারী আলহাজ্ব মাওলানা উবায়দুল্লাহকে নিয়েই আজকের নিবন্ধ।
কুরআনুল কারীমের শিল্পী, অসংখ্য মানুষ গড়ার কারিগর, এদেশের হাজারো আলেম, ক্বারীর উস্তাদ মাওলানা ক্বারী উবায়দুল্লাহকে দেখার আজ কেউ নেই! আমরা কত বড় নিমক হারাম! আমরা গুণীদের কদর করতে জানি না। যে দেশে গুণীর কদর নেই সে দেশে গুণী জন্মে না’। এই কথাটি এভাবে বললে আমাদের জন্য বেশি উপযোগী হয় তা হলো, ‘যে দেশে গুণীর কদর নেই সে দেশে গুণীরা থাকে না’। আমাদের দেশে কুরআনের ক্বারী, হাফেজে কুরআন এবং ইসলামী স্কলারদের কদর করা হয় না। জীবদ্দশায় যেভাবে না, তেমনি মরণের পরও না। গানের শিল্পীদের যেভাবে মুল্যায়ণ করা হয় তাদের জীবদ্দশায়, তেমনি মৃত্যুর পরও। বামপন্থি লেখক-সাহিত্যিক-নাস্তিকদের বেলায় সরকারের আন্তরিকতায় শেষ নেই! কুরআনের ক্বারী, বিজ্ঞ আলেম, ইসলামী সাহিত্যিক, হাফেজে কুরআন এবং ইসলামী স্কলারদের বেলায়ই শুধু সরকারের পৃষ্টপোষকতার অভাব। এটা আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশের জন্য বড় দুর্ভাগ্য! সে দুঃখটা আমাদের কোনো দিন ঘুচবে কি?
আমাদের আর একটি অদ্ভুত প্রবণতা হলো জীবিতাবস্থায় কোনো গুণীর কদর না করলেও মৃত্যুর পর তাঁর জন্য প্রশংসার ও আবেগের বন্যায় ভাসিয়ে দিই। তাঁকে তখন আমরা কত না অভিধায় বিভূষিত করি, কত মরণোত্তর পুরস্কারে অভিষিক্ত করি। কিন্তু বেঁচে থাকতে হয়তো কোনো দিন তার খোঁজ খবরই কেউ নেয়নি, কিংবা সুনামের পরিবর্তে তাকে বদনামের কালিমাতে হেয় প্রতিপন্ন করেছে। এধরণের ভন্ডামিতে আমরা খুবই এগিয়ে। আর সে জন্যই প্রতিভাবানদেরকে বেশি দিন আমরা কাছে পাই না, বা ধরে রাখতে পারি ন। কেননা প্রতিভা এমনই একটা বিষয় যার পৃষ্টপোষকতা দরকার, অন্যথায় সে অনুকুল স্থানই খুঁজে নেয়। গুণী কাকে বলে? ভালো গায়ক হলে তিনি গুণী হন। ভালো কবি বা কথাশিল্পী হলে তিনি গুণী হন। কিন্তু যিনি সুললিত কন্ঠে বিশুদ্ধ উচ্চারণে পবিত্র তেলাওয়াতে কুরআনের মাধ্যমে অগণিত ধর্মপ্রাণ মানুষকে মুগ্ধ করেন সেই ক্বারী কি গুণী নন? দেশের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে যে, সবাই গুণী শুধুমাত্র তাঁরা ব্যতিত, যারা আলেমে দ্বীন, হাফেজে কুরআন, মুফতি, মুহাদ্দিস, ইসলামী সাহিত্যিক, ইসলামী স্কলার এবং কুরআনের ক্বারী! তারা গুণী ব্যক্তি নন। যদি তা না হয় তাহলে দীর্ঘদিন ধরে গুরুতর অসুস্থ আর্ন্তজাতিক ক্বারী ওবায়দুল্লাহর খোঁজ-খবর রাখছেন না যে কেউ? বিগত অর্ধ শতাব্দী ধরে কুরআনের এ ক্বারী সুমধুর কন্ঠে বিশুদ্ধ তেলাওয়াত ও আজানের মাধ্যমে দেশ-বিদেশের অগণিত ধর্মপ্রাণ মুসলমানদেরকে মোহিত করেছিলেন, কিন্তু আজ তিনি মানবেতর দিনাতিপাত করছেন।
ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি জাতীয় দৈনিক এবং কয়েকটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ক্বারী উবায়দুল্লাহ ২০০০ সালে প্রথমবারের মত হৃদরোগে আক্রান্ত হন। ওই সময় চিকিৎসা করার পর তিনি সুস্থ হন। এর ছয় বছর পর ২০০৬ সালে ঢাকার বাইরে একটি ওয়াজ মাহফিলে যাওয়ার সময় পান্থপথ এলাকায় ব্রেনস্ট্রোকের শিকার হলে তাকে শমরিতা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অধ্যাপক ডা. দ্বীন মোহাম্মদের তত্ত্বাবধানে দু’মাস চিকিৎসা নেন তিনি। এসময় চলাচলের শক্তি হারিয়ে ফেলেন। পরবর্তীতে তাকে ভারতের কলকাতায় নিয়ে এএমআরআই হাসপাতালে অধ্যাপক জিকে পুস্তির তত্ত্বাবধানে ১৫ দিন চিকিৎসা দেয়া হলে তিনি কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠেন। ধীরে ধীরে চলাফেরা করতে শুরু করেন তিনি। দু’বছর পর ২০০৮ সাল থেকে পরপর তিন বছর ব্রেনস্ট্রোকের শিকার হন। দু’বছরপর ২০১২ সালে সর্বশেষ ব্রেনস্ট্রোকে আক্রান্ত হন। তখন থেকেই রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের বাসায় অসুস্থ অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন তিনি।
ক্বারী উবায়দুল্লাহ ১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় উপজেলার কোদালা গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা মাওলানা শাহ মেহেরুজ্জামান ইসলামাবাদী। উবায়দুল্লাহ ছোট বেলা থেকেই এলাকার মাদরাসা-মসজিদ, পাশ্ববর্তী মহল্লার ওয়াজ-মাহফিল, উৎসব-পার্বণ, সমাবেশ-সম্মেলনে কুরআন তেলাওয়াত করতেন। ধীরে ধীরে তিনি সুললিত কন্ঠের ক্বারী হিসেবে পরিচিতি ও অধিক প্রসিদ্ধি লাভ করতে লাগলেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন মাদরাসা-মসজিদ, ওয়াজ-মাহফিল, উৎসব-পার্বণ,সভা- সেমিনার, সমাবেশ-সম্মেলনে কুরআন তেলাওয়াতের জন্য আয়োজকরা তাকে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ করতেন। তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে সুমধুর কন্ঠ ও সূরের মাধ্যমে বিশুদ্ধ তেলাওয়াত উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে অগণিত শ্রেুাতা-দর্শকদের মুগ্ধ করতেন। সরকারি বিভিন্ন অনুষ্ঠানসহ নানা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাকে আমন্ত্রণ করা হতো কুরআন তেলাওয়াতের জন্য।
ক্বারী উবায়দুল্লাহ ছোট বেলায় তার পিতার কাছে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের পর রাজধানীর লালবাগ মাদরাসায় ভতি হন। সেখানে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রাহ.) এবং পরবর্তীতে শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের (রাহ.) কাছে বুখারি শরীসহ বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা লাভ করেন।
১৯৬২ সালে তিনি তাকমীল পাশ করলে শায়খুল হাদীস তাকে লালবাগ মাদরাসাতেই শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে বোখারী শরিফ পড়ানোর দায়িত্ব দেন। ওই বছরই মাত্র ১৮ বছর বয়সে নাজিমুদ্দিন রোডে অবস্থিত রেডিও পাকিস্তান কেন্দ্রে প্রথম কোরআন তেলাওয়াত করেন ক্বারী উবায়দুল্লাহ।
ক্বারী উবায়দুল্লাহ ১৯৬২ সাল থেকে ঐতিহ্যবাহী চকবাজার শাহী মসজিদে খতিবের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছিলেন। অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর থেকে নামাজ পড়াতে না পারলেও তাকে নিয়মিত সম্মানী দিয়ে যাচ্ছে মসজিদ কর্তৃপক্ষ।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালেই সরকার ক্বারী উবায়দুল্লাহকে থাকার জন্য একটা বাড়ি বরাদ্দ দেয়। তাকে চকবাজার মডেল থানার চাঁদনীঘাট এলাকার গৌর সুন্দর রায় লেনের ৩৩/৩৭ নম্বর বাড়ির সাড়ে ৮ কাঠার মধ্যে ৪ কাঠা জমির বন্দোবস্ত দেয়া হয়। এই বাড়িতেই ২ স্ত্রী, ২ ছেলে ও ৬ মেয়েকে নিয়ে বসবাস করতেন ক্বারী উবায়দুল্লাহ। বিভিন্ন সরকারের সময়ে বাড়ির বরাদ্দ পাওয়া অংশটি তার নামে সাব-কবলা দলিল করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও পরে আর তা করেনি। এর মধ্যেই বরাদ্দের মেয়াদ ফুরিয়ে যায়। এই সুযোগে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের গেজেটভূক্ত বাড়িটি মামলা ও জালিয়াতির মাধ্যমে দখল করে নেয় স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল। সেখানে একটি বহুতল বাড়ির নির্মাণ চলছে। অন্যদিকে বৃদ্ধ বয়সে গৃহচ্যুত হয়ে পথে দাঁড়ানো ক্বারী উবায়দুল্লাহ বাধ্য হয়ে মূল ঢাকা শহর ছেড়ে বুড়িগঙ্গার ওপারে কামরাঙ্গীরচরে চলে যেতে হয় তাকে। কামরাঙ্গীরচরের নিজামবাগ এলাকার মাতবর বাজারে স্ত্রীর নামে কেনা জমিতে শাশুড়ির নামে প্রতিষ্ঠিত আক্তার বানু নূরানী মাদ্রাসা। এই মাদ্রাসার ভবনেই এসে আশ্রয় নেন ক্বারী উবায়দুল্লাহ ও তার স্ত্রী। ইতোমধ্যে ছেলে ও মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। তারা নিজেদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত আছেন। অনেক কৃতিত্বের অধিকারী হলেও মাত্র ৭১ বছর বয়সেই ভেঙে পড়েছেন ক্বারী উবায়দুল্লাহ। (২৮মে’১৫-সময়বার্তা টুয়েন্টিফোর ডট নেট)
ক্বারী উবাইদুল্লাহ শুধু একটি নাম নয়ম তিনি এই দেশের সম্পদ। ১৯৬’র এক মাহেন্দ্রক্ষণে রেডিও পাকিস্তানে তেলাওয়াত করেছেন ক্বারী উবায়দুল্লাহ। ১৯৬৫ সালে শুরু হওয়া পাকিস্তান টেলিভিশন যত দিন ছিল ততদিন ক্বারী উবায়দুল্লাহ সুমধুর কন্ঠ দিয়ে মাতিয়ে রেখেছিলেন অগণিত ধর্মপ্রাণ মানুষকে। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশ বেতারে প্রথম যে তেলাওয়াতে কুরআনের সুর ধ্বনি বেজে উঠল সেটিও কারী উবায়দুল্লাাহর কণ্ঠে, ‘জালিকাল কিতাবু লা রাইবা ফিহ’। ক্বারী উবায়দুল্লাহর তেলাওয়াতের মাধ্যমে ১৯৭৫ সালে বিটিভি উদ্বোধন হয়েছিলো। বাংলাদেশ পার্লামেন্টের সেই উদ্বোধনী অধিবেশন থেকে ৯ম পার্লামেন্ট পর্যন্ত আমাদের জাতীয় সংসদসহ গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানসমুহকে কুরআনের মধুর তেলাওয়াতে আচ্ছন্ন করে রেখেছিলেন তিনি। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, নিউমার্কেট, হোটেল শেরাটনসহ জাতীয় অসংখ্য স্থাপনার উদ্বোধন হয়েছে তার তেলাওয়াতের মাধ্যমে। তার যাদুকরি কন্ঠে কোরআনের তেলাওয়াত করে দেশও জাতির জন্য বয়ে এনেছেন বিরল সম্মানও মর্যাদা । কারী উবায়দুল্লাহ সৌদি আরব, কাতার, দুবাই, লিবিয়া, বাহরাইন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, পাকিস্তানসহ বিশ্বের অন্তত ২০-২৫টি দেশে আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় বারবার প্রথমস্থান অর্জন করে বাংলাদেশের জন্য বয়ে আনেন বিরল মর্যাদা। সৌদি বাদশাহ ফয়সাল ও খালেদ দুইবার তাকে কোরআনের শিল্পী বা কারী হিসেবে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করেন। কারী উবায়দুল্লাহর সুমধুর তেলাওয়াত বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানকেও প্রায় জুমাবার টেনে নিয়ে আসত চকবাজার শাহী মসজিদে। নামাজের পর শেখ মুজিব কারী উবায়দুল্লাহর বুকে বুক লাগিয়ে কারীকে সম্মান করতেন এবং নিজেও সম্মানিত হতেন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ছিলেন কারী উবায়দুল্লাহর ছাত্র। তিনি দীর্ঘদিন তার কাছে কুরআন শিক্ষা করেন। প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন জেনারেল জিয়া কখনও কখনও শুধু কুরআন তেলাওয়াত শোনার জন্য তাকে বঙ্গভবনে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে আসতেন। (-বুধবার, ২৮মে’১৫, দৈনিক ইনকিলাব)
ক্ষণজন্মা এই কারীর তিলাওয়াতের সুনাম ও সূরশিল্পের কথা হয়তো আমরা অনেকেই জানি। কিন্তু এর বাইরেও তিনি তাকওয়া ও ইখলাসে পূর্ণ একজন মহান ব্যক্তিও। এত এত কৃতিত্বের অধিকারী কিন্তু তাঁর মাঝে নেই কোন ধরণের অহঙ্কার। সাদা মনের সহজ-সরল ইখলাসপূর্ণ একজন আলেম তিনি। মানুরাজধানীর মাদরাসায়ে দারুর রাশাদে একবার কারী উবায়দুল্লাহকে বুখারী শরীফের উদ্বোধন উপলক্ষে আমন্ত্রণ করা হলো। তিনি উপস্থিত হয়ে তিলাওয়াত করলেন। অনুষ্ঠান শেষে বিদায় নিয়ে যাওয়ার সময় মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা সালমান নদভী তাঁকে হাদিয়ে দিতে চাইলেন। তিনি উল্টা নিজের পকেট থেকে ৫০০টাকার দু’টি নোট বের করে মাদরাসার জন্য দান করলেন। এছাড়াও অনেকে আলেমদের কাছ থেকে শুনেছি তিনি মাদরাসার কোন প্রোগ্রামে অতিথি হয়ে আসলে সাধারণত টাকা পয়সা নিতেন না। বরং উল্টে দান করে আসতেন। দেশ-জাতির কল্যাণে তিনি নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন নিবিষ্টভাবে। মুখলিস এই ক্বারী টাকা কামাই বা রুজি-রুটির জন্য কোনরূপ ধান্ধা করেন নি কখনো। সেই মহান গুণী, কুরআনের ক্বারী ৬ বছর যাবত প্যরালাইসিসে আক্রান্ত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আগের মতো সেই সুর নেই তার কণ্ঠে। কথা বলেন হাতের ইশারা-ইঙ্গিতে। কেউ ক্বারী উবায়দুল্লাহর দু:সময়ে কেউ তার খোঁজ খবর নিচ্ছে না। দেশে গানের শিল্পীসহ নানা ক্ষেত্রের মানুষের অসুখে-বিসুখে গণমাধ্যম ও সুধীজনের ব্যাপক সংবেদনশীল আচরণ করে। কিন্তু বাংলাদেশের কুরআনের কারীর প্রতি এত অবহেলা! এ লজ্জা কি দেশের নয়? কিন্তু এখন কেউই তাঁর খোঁজ-খবর রাখছে না!
সরকার-বিারোধী দলের কথা আপতত না হয় বাদই দিলাম, ওলামায়ে কেরাম এবং কুরআনপ্রেমিকরা অন্তত তাঁকে স্মরণ রাখা উচিত ছিলো। গুনী এই মানুষটি রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের এক জীর্ণ কুটিরে কোন রকম জীবিতাবস্থায় দিনাতিপাত করছেন! কিন্তু ওখানে তিনি ভাল নেই। ভাল থাকার সুযোগও নেই। এমনকি বেঁচে থাকার সুযোগও ক্রমে সংকুচিত হয়েআসছে। তাঁর বর্তমান অবস্থা মুসলিম উম্মাহর জন্যে অশেষ হতাশার। আফসোস! সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের দেশে কুরআনের কারীর কোন মুল্য নেই!
অপরদিকে আমাদের দেশে রয়েছে অনেক গুণীজন ও মেধাবী মানুষ। তাদের আমরা সম্মান করতে পারিনি। অনেক সময় দেখা গেছে যেখানে অর্থ ব্যায় করার প্রয়োজন নাই সেখানে অর্থ ব্যায় করি, অথচ মেধাবী, গুণী ব্যাক্তরা অনাহারে, অবহেলায়, বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে। সিনেমার নায়ক-নায়িকাদের সামান্য অসুস্থ হলেই সরকারি ব্যবস্থাপনায় উন্নত চিকিৎসা করা হয়, দেশে না হলে বিদেশে পাঠিয়ে হলেও সুস্থ করে তোলার তদবির করা হয়। আমাদের একটি বড় সমস্যা হচ্ছে আমরা মেধাবী ও গুণীজনদের সম্মান করতে জানি না। কুরআনের কারী, দেশের বিশিষ্ট গুণী দীর্ঘদিন ধরে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তাকে সুস্থ করে তোলার রাষ্ট্রীয় কোন উদ্যোগ নেই। অথচ এই কারীর তেলাওয়াত ছাড়া সংসদের একটি অধিবেশনও শুরু হতো না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শহীদ জিয়াউর রহমানও কারী উবায়দুল্লাহর তেলাওয়াতের ভক্ত শ্রেুাতা ছিলেন। বঙ্গবন্ধু আর শহীদ জিয়ার অনুসারী কেউই আজ তার খোঁজ রাখেছন না!
যে কারীর তেলাওয়াতের আকর্ষণে কুরআনবিমুখ মানুষ কোরআনের আলোর পরশে ধন্য হয়েছে। আজ সেই মানুষ জীর্ণ কুঠিরে অন্ধকারে আচ্ছন্ন! যাই হোক অনেক সময় গড়িয়েছে এখনো নিভে যায়নি কুরআনের এই শিল্পীর প্রাণবাতি। এমন মহান মানুষের দায়িত্ব নেওয়াটা রাষ্ট্রের কর্তব্য। তার উন্নত চিকিৎসার জন্য রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে। আসুন সকলে মিলে তার মৌলিক প্রয়োজনসহ মিটিয়ে দেয়ার চেষ্টা করি।
লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট, আলেম