এহসান বিন মুজাহির ::
আজ ১৭ নভেম্বর । উপমহাদেশের নির্যাতিত-নিপিড়িত মানুষের অধিকার আদায়ের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর (রাহ.) ৩৯তম মৃত্যুবার্ষিকী । ১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানী মৃত্যুবরণ করেন।
মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর (রাহ.) শুধু একটি নাম নয়, তিনি এমন একজন ব্যক্তি যিনি সমস্ত রাজনৈতিক মতপার্থক্যের গন্ডিকে অতিক্রম করে আপামর জনমানুষের প্রাণের নিকটতম স্থানে পৌছেছিলেন। অনলবর্ষী বক্তা হিসাবে রাজনৈতিক সভা মঞ্চে তিনি ছিলেন অনন্য সাধারণ। শ্রোতার বুকে আগুন জ্বালীয়ে আন্দোলনে উজ্জিবিত করার যাদুকরি ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন ।
ভাসানী আজীবন জমিদার-জোতদার-মহাজন-সাম্রাজ্যবাদী-আধিপত্যবাদী শক্তির দালালদের বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম করেছেন, উপমহাদেশের আযাদী সংগ্রামে বৃটিশদের বিরুদ্ধে খেলাফত আন্দোলন, মুসলিম লীগ, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে সামনের কাতারে থেকে লড়াই সংগ্রাম করেছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন।
মজলুম জননেতা মওলনা ভাসানী ২০ মার্চ ১৯৭৬ ফারাক্কার পানি সম্যার সমধান না করলে হিন্দুস্থানের বিরুদ্ধে অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দেন। ১৭ এপ্রিল “ফারাক্কা মিছিলে যোগদানের জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। ১১ মে ফারাক্কা অভিমুখে মিছিলের জন্য ইন্দিরা গান্ধীর সাথে ফারাক্কার ব্যাপারে পত্রালাপ করেন। ১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা মিছিল নিয়ে সীমান্তের দিকে অগ্রসর হন। ১৭ মে রাজশাহী সীমান্তের কানসাটে মিছিলের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। বাংলাদেশকে পানি আগ্রাসনের মধ্যে দিয়ে করায়াত্ত করার যে চক্রান্ত হিন্দুস্থান শুরু করেছিল মজলুম এ জননেতা উপলব্দি করতে পেরেছিলেন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে মজলুম জননেতাকে হিন্দুস্থানের আধিপত্যবাদ সরকার নজরবন্দি করে রাখেন। ২২ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে মুক্তি দিলে বিনা পার্সপোটে ভুরুঙ্গামারী সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। মজলুমএ জননেতাকে হিন্দুস্থান সরকার দুটি কারণে নজরবন্দি করেছিলেন। তবুও তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেছিলেন “আমাদের সংগ্রাম সাম্প্রদায়িকতার সংগ্রাম নয়, শোষকের বিরুদ্ধে শোষিত মানুষের সংগ্রাম, শোষক হিন্দু হউক, মুসলমান হউক, যে কোনো সম্প্রদায় বা গোত্রের হউক, তাহাদের বিরুদ্ধে যে কোনো বাধা-বিঘ্নতা নির্যাতন মাথা পতিয়া বরণ করিতে প্রস্তত আছি।
মজলুম এ নেতা কারো রক্ত চক্ষু দেখে ভয় করে জালেমের সাথে আপস করেছেন এমন নজির কেউ দেখাতে পারবে না। তিনি এ কারণেই জালেমের রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করতে সক্ষম হয়ে ছিলেন। এই অবিসংবাদিত বিশ্বনেতা বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রথম প্রকাশ্যে ঘোষনা দিয়েছিলেন এবং স্বাধীনতা লাভের পর আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা সংরক্ষনে আপোষহীন চারনের মতো জীবনের মেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নিজেকে নিঃশেষে নিবেদন করেছেন।
একজন রাজনীতিবিদ হয়েও শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত জনগনের সেবায় নিজের জীবন নিঃশেষে ব্যায় করে গেছেন। মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর বর্ণাঢ্য জীবন থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।
লেখক: যুগ্ন আহব্বায়ক, মৌলভীবাজার অনলাইন প্রেসক্লাব