যৌন বিষয়টা এখন নতুন যুগে পদার্পণ করছে বলে আমি মনে করি। এখানে দুটো বিষয়; যৌন কামনা আর মানব প্রজনন। মানব প্রজননের কথায় প্রথম আসি। ক্লোন পদ্ধতিতে যৌন সংস্রব ছাড়াই শিশু জন্ম দান সম্ভব। দুনিয়াতে ক্লোনের ডাক্তাররা একটি ভেড়ির জিন থেকে ক্লোন করে আরেকটি ভেড়ির জন্ম দিয়েছে। তারা বলছে মানব ক্লোনও নাকি এরকম সম্ভব। ভ্রুণ স্থানান্তর একেবারে যেন পুরনো বিষয়। সেদিন দেখলাম, ভারতে নানীর পেট থেকে নাতিনের জন্ম। অর্থাৎ মেয়েটার অপরিপক্ষ ভ্রুণ তুলে এনে নানীর পেটে ধারণ করা হয়েছে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে।
ইউরোপে আজকাল ডালভাতের মতো বিষয় হলো, কোন প্রকার সেক্সুয়াল এফেয়ার্স ছাড়াই মেয়েরা শিশু জন্ম দিচ্ছে। বাইরে থেকে ডাক্তাররা উর্বরকৃত ভ্রুণ ঢুকিয়ে দেয় কাঙ্খিতদের উদরে। এভাবে পুরো বিষয়টা যেন এখন উলট-পালট হতে চলেছে। মানুষ তার বিচিত্র মনোভাবকে ইচ্ছামাফিক বদলাচ্ছে। হরমোন ইনজেকশন দিয়ে পুরুষগুলো নারীতে; নারী পুরুষে রূপান্তরিত হওয়া একটা স্বাভাবিক ঘটনা।
প্রতিটি কর্মের একটা যুগসূত্র আছে। এসব রীতিবিরুধী কাজের মূল উপাদান হলো সমকামিতাকে প্রতিষ্ঠিত করা। বর্তমান শতাব্দির জঘন্য কাজ হলো সমলিংগের বিবাহকে বৈধতা দান। দেশে দেশে তারা তোড়জুড় চালাচ্ছে যাতে তা প্রতিটি সমাজ গ্রহণ করে নেয়। এমনকি জাতিসংঘের বিভিন্ন এইডের সাথে একটা শর্ত থাকে যে সমকামিদের অধিকার প্রদান। সমকামি নারীরা তারা তাদের বংশ বিস্তারের বিষয়টা প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছে হাসাপতালের সার্জারির মাধ্যমে। সমকামি পুরুষরা কি করে এবার দেখা যাক। হয়তো তাদের প্রয়োজনে টেস্টটিওব শিশু হবে। মানে কোন মানুষের শরীর ছাড়াই মেশিনের মাধ্যমে বাচ্চা উৎপাদন করা হবে। বস্তুত এই বিকৃত মানসিকতার অধিকারীরাই এখন ক্ষমতার শীর্ষে। অর্থ এবং পাওয়ার তাদের হাতে। গায়ের জোরে হলেও তা ইমপ্লিমেন্ট করতে চায়।
সবচেয়ে ভয়াবহ খবর হলো, ইউরোপের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিশুদের যৌন শিক্ষার পাঠের সাথে সমকামিতাও একটা বৈধ যৌনকর্ম বলে সে শিক্ষা চালু করছে বলে কানে খবর এসেছে। মূল ব্যাপার হচ্ছে, ইউরোপসহ সকল উন্নতবিশ্বের হাতে সম্পদের পাহাড়; শক্তির অহমিকা। যেখানে ধর্ম-আধ্যাত্মিকতা বলতে কিছু নেই। তারা নিজেরাই নিজেদের খোদা ভাবতে শুরু করেছে। তার একটা কারণ হলো, তাদের এই উন্নত চিন্তা, প্রখর মেধা ও বিজ্ঞান মনস্কার জগতে খৃস্টধর্ম তাদের সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে সক্ষম হয় নি। খৃস্টধর্মের বাহুল্য মতবাদ ত্রিত্ববাদ এবং যিশুর তিরোধান ইত্যাদি বিষয় তাদের মনোজগতকে সংশয়ী করে তুলেছে। তারা ভাবে, ধর্ম মানেই অতিশয় কাল্পনিক কিছু কেচ্ছা-কাহিনী। যুক্তির বাইরে কিছু অসংলগ্ন বিষয়। এ কারণেই ইউরোপিয়রা শতকরা ৯৫% স্যাকুলার বা ধর্মবিমুখ। তাদের সংসদ যা বলে দেশ সেভাবেই চলে। গীর্জা কি বললো না বললো তাতে কিছু যায় আসে না।
পশ্চিমাদের কাছে খৃস্টবাদ একটা ট্রাডিশন। একটা পরিচয়, একটা আইডেনডিটি মাত্র। বড়দিনে গান গাওয়া, কেক কাটা, পাদ্রীদের বিবৃতি দান আর সাজ-সজ্জাই সার। খৃস্টবাদের অসারতার কুফলই হলো আজকের ইউরোপের নৈরাজ্যবাদিতা। ইসলামকে সত্য জেনেও তারা মেনে নিতে পারছে না পুরনো চলে আসা রীতির প্রতি আসক্তির কারণে। কোটি কোটি মানুষ ইউরোপ-আমেরিকায় যারা খৃস্টবাদের উপর বিরক্ত হয়ে পৃথিবীর সকল ধর্মকে সমানভাবে দেখতে শুরু করে। কিছু গোপন ও প্রকাশ্য অর্গানাইজেশন আছে যারা ইসলামের বিরুদ্ধে কাল্পনিক বিষোদগার ছড়াতে ব্যস্ত। সেজন্য সংগত কারণেই তারা ইসলামকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পায় না। যারা পায় তারা শাহাদা পড়তে হয়ে যায় পাগলপারা।
সেদিন দেখলাম কোন এক চার্চ কর্তৃপক্ষ সমকামি বিয়ে পড়িয়ে দিচ্ছেন। প্রথম প্রথম শোনতাম তারা কিছু প্রতিবাদ করতো। এখনতো বিয়েই পড়িয়ে দিচ্ছে! তাহলে প্রতিবাদ করবে কে?
ঘটনাক্রমে একদিন এক সমকামি পুরুষের সাথে দেখা হলো। সাহস করে তার কাছ হতে কিছু বিষয় জানতে চাইলে সে রাজি হলো। বললাম, আচ্ছা আর যাই হোক তুমি কি শিশু পছন্দ কর না? বললো- হ্যাঁ, করি। তাহলে তোমার সন্তান হবে কেমনে? বললো, আমার নেই অন্যের তো আছে। বললাম, আচ্ছা তাহলে পৃথিবীর সকল মানুষ বা অধিকাংশ যদি তোমার মতো সমকামি হয় তাহলে পরিস্থিতিটা কেমন দাঁড়াবে বলো? মানব প্রজনন বন্ধ হয়ে গেলে মানব সভ্যতারও তো ইতি ঘটবে না? সে শুধু হাসলো আর আমতা আমতা করলো কিছুক্ষণ। বললো, এটা কেবল আমার ইচ্ছা, আমার স্বাধীনতা।
এই লাগামহীন স্বাধীনতাই আজ মানুষের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষ যখন নিজেকে নিজের খোদা আবিস্কার করে, তখন তার মাঝে আর ইবলিছ শয়তানের মাঝে কোন তফাত থাকে না।
ইস্ট লন্ডনের কোন এক দোকানে বসে কিছু ফটোকপির কাজ সারছিলাম। দোকানদার আমার পূর্ব পরিচিত। হাতের ইশারায় বাইরে দেখিয়ে বললে,ন ঐ যে দেখছেন বাংগালী মেয়েরা, ওরা লেসবিয়ান। জোড়ায় জোড়ায় মেয়েগুলো রাস্তার ফুটপাত দিয়ে হাঁটছে। স্ববিস্ময়ে অবাক হতবাক হয়ে পাল্টা প্রশ্ন করলাম, আপনি কিভাবে বুঝলেন যে ওরা তাই? তিনি কুদরতি হাসি হেসে বললেন, হুজুর আপনারা ঘুমে আছেন! তাদের ঠোঠ পালিশ, গাল পালিশ, চোল কাটা, লেবাস, চলন-বসন ইত্যাদি নাকি আলাদা। আসমান ভেংগে যেন মাথায় পড়লো।
না এইতো ক’মাস আগে কোর্টে একটি ট্রায়াল হলো। সমকামি মা ও তার শেতাঙ্গ নারী সঙ্গী মিলে তার আপন মেয়ে সন্তানটাকে তারা হত্যা করে ফেললো পথের কাঁটা মনে করে। বাংলাদেশি এই নারীর বিবাহিত জীবনে এই মেয়েটি জন্মেছিলো। স্বামীকে ছেড়ে শেতাঙ্গ নারীকে নিয়ে তিনি সাজিয়েছিলেন সংসার।বিকৃত মানসিকতা আর কাকে বলে? আজকাল প্রায়ই শোনা যায়, মা বাবা জোর করে ছেলেকে বিয়ে করিয়েছেন। ছেলে ঘরে থাকে কম। আর ঘরে আসলে বা থাকলেও স্ত্রীর প্রতি কোনো আসক্তি নেই। মেয়েটির জীন্দেগী কাটছে ক্রন্দনে। দোয়া-দুরুদ আর তাবিজ-তদবিরের পিছনে ছুটছেন তারা।
এক মা এসে একদিন বললেন, হুজুর আমার মেয়ের জন্য খুব জরুরী ভিত্তিতে তাবিজ লাগবে! কেন কি হয়েছে? বললেন, মেয়ে শুধু ঘরের এক কোণে বসে থাকে আর ঝিমায়। কারো সাথে কথা বলে না, চোখ দুটো লাল লাল। জীন লাগছে হুজুর, জীন লাগছে আমার মেয়ের সাথে।
হুজুরের পানি পড়া, তাবিজ কিছুই কাজে লাগছে না। অবশেষে ডাক্তারের কাছে। মেয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে চায় না। কোনমতে নেয়া হলো ধরে-বেধে। ডাক্তার খুব দ্বীনদার মানুষ ছিলেন। তিনি বুঝতে পারলেন, কোন জীনে পেয়েছে তাকে। মেয়েটাকে সাময়িক হাসপাতালে ভর্তির জন্য প্রেসক্রিপশন করলেন আর বললেন, সব ঠিক হয়ে যাবে। ভাল হলে তাকে নিয়ে আসবেন। মাদকাসক্তির ভয়াল থাবা থেকে রক্ষার জন্য মেয়েটা শুকরিয়া জানালো। তিনি তাকে নসীহা করলেন। ইসলামের বিধিবিধান সম্পর্কে তাকে অবহিত করলেন। সে অনেক্ষণ কাঁদলো, আল্লাহর কাছে তওবা করলো। এভাবে ক’টি মেয়ে তাহলে সুপথে আসতে পারছে? মদ-মাদক, হিরোইন, মারিজুয়ানা, জুয়া হলো অবাধ যৌনাচারের ঘনিষ্টতম কর্মসূচি। এজন্য মুসলিম যুবসমাজকে নষ্ট করতে ঘটানো হচ্ছে মাদকের বিস্তার।
ইসলামের পুতপবিত্র আদর্শ থেকে মানুষ দূরে সরে যাচ্ছে না; বরং মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে সেই শিক্ষা থেকে। তাই প্রত্যেক অভিভাবকের নৈতিক ও আবশ্যিক দায়িত্ব হবে নিজ সন্তানের ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখা। কে কোন ইজমের আসক্তিতে পড়ছে সে ব্যাপারে যদি পূর্ব থেকে সর্তক না হন শেষবেলায় আর করার কিছু থাকে না। বিশেষ করে যারা দ্বীনের দাঈ বা আলেম-ওলামাগণ অবশ্যই সে বিষয়ে জাতিকে সর্তক করবেন।
উন্নত বিশ্বে বসবাস যেমন সুখকর; তেমনি প্রতিনিয়ত দোজখের দরজা খোলা। এই প্রজন্মকে আগলিয়ে রাখতে হলে প্রয়োজন সমন্বিত প্রয়াস। শুধু শিক্ষিত নয় প্রশিক্ষিত অভিভাবকের প্রয়োজন অনুভব করি পদে পদে। (চলবে)
আরও পড়ুন
যৌনশিক্ষা ও আমাদের করণীয় (১ম পর্ব)
যৌনশিক্ষা ও আমাদের করণীয় (২য় পর্ব)
যৌনশিক্ষা ও আমাদের করণীয় (৩য় পর্ব)
যৌন শিক্ষা ও আমাদের করণীয় (৪র্থ পর্ব)