শনিবার, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ২:৩৭
Home / ইউরোপ / প্রতিশোধ নয় প্রতিকার চাই

প্রতিশোধ নয় প্রতিকার চাই

খতিব তাজুল ইসলাম::

9-11বিগত শুক্রবার রাত। পরপর কটি বিস্ফুরণ আর ক্লাসিনকুভের গুলিতে কেঁপে ওঠে প্যারিস নগরী। হতবাক সারা পৃথিবীর মানুষ। মুষড়ে পড়ে পুরো ইউরোপবাসী। রক্ত আর রক্ত। যারা মরেছে তারা আদৌ জানেনা যে কোন এক রণাঙ্গনে বসে আছে তারা। এভাবে চুরা গুপ্তা হামলা করে নিরীহ মানুষদের হত্যার মাধ্যমে ইসলামের কোনসে খেদমত হচ্ছে তা আমাদের হিসাব নিকাশের প্রয়োজন আছে বলে মনে করি।

আমাদের অনেকে বিষয়টার ব্যাখ্যা করেছেন যারতার মত করে। ইতিহাসের পাতা উল্টিয়ে অনেকে মনে করিয়ে দিয়েছেন ফ্রান্সের গণহত্যার কথা। আজ এমনি এক পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আমার আপনাদের কাছে জানতে ইচ্ছে করছে আমাদের নিজেদের কথা। মুসলিম বিশ্ব আজ কেন এতো ফতুর? কেন আজ তারা কাফিরদের লুকমার অংশ হয়ে পড়ে আছে অসহায় ভাবে?

paris attack
প্যারিসে হামলার জাগায় শ্রদ্ধা নিবেদন…

আচ্ছা, এইযে ইউরোপ আমেরিক রাশিয়া চায়না সহ সকল পরাশক্তি গুলো কি আসমান থেকে দপ করে বিশাল বিশাল শক্তির বক্স নিয়ে জমিনে নাজিল হয়েছে? তারা তাদের মাঝে কি কোন হানাহানি করেনি? প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তো তাদেরই প্রাণ গেছে বেশী। এইযে জার্মান (হিটলার) যারা অর্ধকোটি ইহুদীকে হত্যা করে আজ আবার ঘুরে দাড়িয়ে গেল কেমন আশ্চর্য্য না? ইহুদী খৃস্টানদের মারামারি ছিলো ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা; কিন্তু আজ তারা একে অপরের বন্ধু। প্রটেস্টান আর কেথলিকদের মাঝে কিনা হাংগামা? তারপরও তারা একটা পর্যায়ে এসে থেমেছে। আমার প্রশ্ন কেবলই কি আমরা অমুসলিমদের দোষ দিয়েই যাবো ? ওরা আমাকে লড়াচ্ছে আমাকে মারছে মার খাবাচ্ছে। আমাকে কিছুই করতে দিতেছেনা। এইযে যত দোষ সকল নন্দঘুষের পরিস্থিতি কতদিন পর্যন্ত চলতে থাকবে তাহলে?

বলুন কার সম্পদ বেশী ইরানের না সৌদীআরবের? কে বেশী স্বাধীন ছিলো সৌদী না ইরান? সকল পরাশক্তিগুলো নাকে খতদিয়ে ইরানকে দমন করতে মাঠে নেমেছিলো। অবরোধের পর অবরোধ। শেষ পর্যন্ত এই অবরোধ ইরানের জন্য সুফল বয়ে আনলো। তারা তাদের নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে শিখলো। আজ সামরিক শক্তির দিক দিয়ে সৌদীআরব ইরানের পাশেও বসার যোগ্যতা রাখেনা। তারা তাদের নিজস্ব সেটেলাইট বসিয়েছে। পাকিস্তান করছেটা কি? একেরপর এক জেহাদী গুষ্ঠীর জন্ম হচ্ছে আর তার মোকাবেলা করে যাচ্ছে তারা। মুসলমান আপসের মাঝে বুঝাপড়া নেই সম্পর্ক নেই। এই মুর্সিকে কে নামালো? সৌদী তাইনা? আর আজ আবার তারা সিসি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে! এতে কী লাভ হলো? কে বলেছিলো সাদ্দামকে ইরানের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে? আবার কুয়েত দখল করতে? আবার এই সৌদীআরব ও বাকী আমীর উমারগণ মিলে সেই উপসাগরীয় যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লেন। না আছে পরস্পরের মাঝে শ্রদ্ধা না আছে বিশ্বাস। প্রতিটি মুসলিম কান্ট্রিতে যারা মসনদে আছে তারা অমুসলিমদের পাঁচাটা গোলাম। নিজেদের অস্তিত্ব বিনাশ করে দুশমনের কথায় লাফালাফি। লিবিয়ায় কারা আত্মঘাতি যুদ্ধ ডেকে এনেছিলো?

gaddafi

মনে পড়ে ইউরোপিয়রা যখন জাতিসংঘের মাধ্যমে গাদ্দাফীর কাছহতে সকল প্রকার বিধ্বংসী মারণাস্ত্র-অস্ত্রসস্ত্র কেড়ে নিলো তখন পত্রিকার হেডলাইনে গাদ্দাফীর ছবি এঁকে আকাশের পরীর ডানা লাগিয়ে বলা হয়েছিলো এখন থেকে জান্নাতের আকাশে এভাবে গাদ্দাফী উড়ে বেড়াবেন বাধাহীন! কতবড় মিথ্যুক? একদশকের মাথায় তারা তাকে ডাইরেক্ট হেভেনে পাঠিয়ে দিয়েছে। এই হচ্ছে তাদের চালাকি। তুমি কেন তাদের চালাকিতে পা দিবে? কেন বোধশক্তি নেই তোমার? তোমার জাতিকে রক্ষা করার সামর্থ্য কেন তুমি অর্জন করতে পারনা? আজ প্রতিটি মুসলিম দেশে বিভিন্ন নামে বেনামে সশস্ত্রসংগ্রাম চলছে। আপনি শোনে আশ্চর্য্য হবেন যে আল-ক্বায়দা আমেরিকার সৃষ্টি। পর্যায়ক্রমে হয়তো মতবিরোধ দেখা দিয়েছে তাদের মাঝে। আফগানিস্তানে কয়টি তালেবানা আছে জানেন? পাকিস্তানে কয়টি? সিপাহে মুহাম্মাদ সিপাহে সাহাবা জইশে মুহাম্মাদ সহ অসংখ্য অগণিত অস্ত্রধারী গোষ্ঠী আছে যাদের ফান্ড কোথা থেকে আসে জানেন? মুসলিম দেশে নিজেদের মাঝে মারামারি লাগিয়ে রাখার মজাটাই আলাদা। আর এই সুযোগটা খুবসযত্নে মুসলমানদের দুশমনরা গ্রহন করেছে। খৃস্টানরা নিজেদের মাঝে একটা বোঝাপড়া করে রেখেছে। তুমি তোমাদের মাঝে বোঝাপড়া করনা কেন? মসনদের লোভ হলো আসল। শুধু মসনদের জন্য বিগত জংগে সিফ্ফিন আর ইয়াজীদী জামানা থেকে এখন পর্যন্ত যত যুদ্ধ আর প্রাণহানী মুসলমানরা মুসলমানদের মাঝে ঘটিয়েছেন তার হিসেব কষলে গোটা এই পৃথিবীকে এই শক্তি দিয়ে তিন তিনবার মুসলমান বানানো যেত।

7-7
৭/৭ লন্ডনের ঘটনা…

আজ বাংলাদেশের কথাই বলুন কে কাকে নাচাচ্ছে? কে কাকে কতল করছে? আপসের এই হানাহানি বন্ধের কোন লক্ষণ আছে? নাই। আশংকা হয়ে দাঁড়িয়েছে যে পুরো এই জাতিকে এখন অমুসলিমের খোরাকে পরিণত হওয়ার।

মুসলমানদের ধংস করতে তাদের প্লান প্রায় চুড়ান্ত। প্রতিটি শতাব্দি এখন কিভাবে যাবে তার সমূহ ছক অনেক আগেই আঁকা হয়েগেছে। এখন বলুন মুসলমানদের প্লান কি? মুসলমানরা কেবল নগদ দেখে। আজই দেখে কালকের খবর রাখার জরুরত মনে করেনা। তারা (অমুসলিমরা) তাদের নিজেদের উপর হামলা চালিয়ে দোষটা মুসলমানের উপর চাপানোর মত জঘন্য কিছু কাজ ইতোমধ্যে কিছু করেছে বাকী গুলো সামনে আছে। ৯/১১ আর ৭/৭ নিয়ে খুব খুশী হয়েছেন? অথচ এগুলো তারাই ঘটিয়েছে। গুজরাটের হামলার আগে সন্ত্রাসী হিন্দুরা ট্রেনের বগিতে নিজেরা নিজেদের লোক দিয়ে গান পাউডার ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পরে মুসলমানদের উপর দোষ চাপালো। যা হবার তাই হলো তদন্তে আসল বিষয় জানা গেলেও তখন কি করার আছে? এই যে সেদিন ভারতে দাদরিতে কোন এক আগুন্তুক এসে মন্দিরে বললো যে অমুকের ঘরের ফ্রীজে গরুর মিট আছে। আর যায় কই? ঘরের মালিককে ঘর থেকে ধরে এনে পিটিয়ে হত্যা করার পর জানাগেল আসলে তা খাসির গোশত গরুর না। কিন্তু যা হবার তাতো হয়ে গেলো না? কেউ এতটুকু গরজ দেখালোনা যে দেখি আসলে গোশতটা গরুর না খাসির?

এভাবে আমরা দেখি বার্মার আরাকানে মুসলিমদের বাস থেকে ধরে টেনে নামিয়ে হত্যা করে মাথা মুন্ডিয়ে গেরুয়া কাপড় পরিধান করিয়ে ফটো তুলে দুনিয়াকে দেখানো হলো যে মুসলমানরা ভিক্ষুকদের হত্যা করেছে?! আর যায় কই! শুরু হলো সারি সারি মুসলমানদের ঘর বাড়ি দোকাপাট জ্বালানোর পালা। অনেক পরে জানাগেল যে না ঐ ঘটনাটা আসলে ভুয়া।

আপনারা ভুলে গেলেন শাপলায় কারা কোরআন পোড়ালো? কারা রাস্তায় গাছ কেটে ফেললো? দোষ শেষে কার উপর চাপানো হলো? এভাবে ইতিহাসে নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রা ভংগের হাজারো ঘটনা আছে। তাই আমাদের অধিক সর্তক থাকা ছাড়া উপায় নাই।

 shaplaঠিক ইউরোপ থেকে মুসলমানদের তাড়ানোর ফন্দি ফিকির কিন্তু চলছে এখন।ফিলিস্তিনের প্রতি ফ্রান্সের সমর্থন ইসরাইল ভাল চোখে দেখছেনা। মুসলমানদের এই বাড়ন্তি দেখে ন্যাশনালিস্টরা কম্পিত। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের পায়তারা খুব সুক্ষ্ণভাবে চলছে। অতএব হুজুগে লাফালাফি করবেন না। সন্ত্রাস সন্ত্রাসই তার কোন জাত কালার বংশ ধর্ম বলতে কিছু নেই। আমাদের এই পলিসি নিয়েই সামনে এগুতে হবে। আপনার সামান্য ভুল একটি জাতির বিরাট ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই মেপে মেপে কথা বলুন। সতর্ক হয়ে মুখ খুলুন। আজকের নগদটা না দেখে আগামী কালের কি প্রতিক্রিয়া কি ফলাফল কি বিপদ বা সুসংবাদ তাই ভাবুন। প্রতিশোধ নয় সমস্যার প্রতিকার নিয়ে কাজ করুন।

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...