হজরত শাহ হাকীম আখতার সাহেবের ইজাজত প্রাপ্ত বুজুর্গ
হজরত শাইখ আসগর হুসাইন সাহেবের আজকের নূরানী মজলিস থেকে কুড়ানো মুক্তা
কমাশিসা ইউকে ডেস্ক: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার যিনি সারা জাহান সৃষ্টি করেছেন। তিনি এরশাদ করেন: ‘হে ঈমানদারগণ তোমরা আল্লাহকে ভয়কর, এবং সত্যবাদীদের সাথী হও।’ আজকে আমরা এখানে একটি পবিত্র মাহফিলে একত্রিত হয়েছি।যার নাম হচ্ছে জিকিরের মাহফিল। জিকির মানে হলো আল্লাহর ইয়াদ।যদি আমরা আল্লাহকে ইয়াদ করি আল্লাহ আমাদের ইয়াদ করবেন।আর আল্লাহ যাদের ইয়াদ করবেন তাদের কতোনা সৌভাগ্য।
আমি আজকে আপনাদের সামনে ৫টি জিনিসের আলোচনা করবো। যে পাচটি জিনিস আয়ত্বে আসলে আপনি ওলী বা আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে পারবেন।আর যারা আল্লাহর প্রিয় হয় তাদের সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে: ‘নিশ্চয় জেনে রাখো যারা আল্লাহর ওলী তাদের জন্য কোন ডর-ভয় নেই।’ ওলীর দরজা সবার উপরে। ওলীরাই হলেন আল্লাহ তায়ালার কাছের মানুষ। সেই ওলায়েতের দরজা পেতে হলে আপনাকে পাঁচটি কাজ করতে হবে।
প্রথম: জিকির কি মদাওমাত।মানে সদা সর্বদা আল্লাহ পাকের স্মরণ। আল্লাহ পাকের নামের মাঝে এতো মধু যারা ওলী তারাই অনুধাবন করতে পারে কেবল।গুড়ের মিষ্টি আছে আখের মিষ্টি আছে মধুর মিষ্টি আছে। দুনিয়ার সকল মিষ্টি একত্র করলেও আল্লাহর নামের মিটার সমান হবেনা। কারণ এই মিষ্টিতো তিনিই বানিয়েছেন।তাহলে মিষ্টি বানানে ওয়ালার মাঝে কতো মধু আছে তা কি চিন্তা করে দেখেছেন।অতএব সর্বাবস্থায় আল্লাহর নামের জিকির জবানে জারি রাখা।একবার কেহ সুবহানাল্লাহ যদি বলে তাহলে আল্লাহর আরশ পর্যন্ত এই খবর পৌছে যায়।আল্লাহর পবিত্র নামের জিকির সকল উঠা বসায় শুয়ে শুয়ে করা যায়। কাজে কামে চলা ফেরায় বাসে গাড়িতে ড্রাইভিং করার সময় তাসবিহ গুলো আদায় করে নিলেওতো হয়।একবার কেহ যদি লাইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে তখন ওহুদ পাহাড়ের চেয়েও বেশি নেকি তার নামায়ে আমলে লেখা হয়। দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে মসনুল দোয়াগুলো পড়ে নিবেন।ঘর থেকে বাহির হতে প্রবেশ করতে গাড়িতে উঠতে নামতে ঘুমাতে যেতে ও ঊঠার সময় সহ সকল উঠা বসা চলাফেরায় জরুরী দোয়াগুলো পড়াইতো আল্লাহর জিকির। জিকিরের মাধ্যমে অন্তর সাফ হয় মনের কালিমা দূরিভুত হয়।’নিশ্চয় আল্লাহর নামের জিকির ক্বলবের শান্তি দান করে।’ আজকে এতো অশান্তি হায় হায় হওয়ার কারণ হলো আমাদের অন্তর মরুভুমি। তাই অন্তর জগতকে রহমতের বারিষ দিযে ভিজিয়ে উর্বর করতে হবে।ক্বলব বা অন্তর অসুস্থ মানে সারা শরীর অসুস্থ। তাই অন্তরের একমাত্র ঔষধ হলো আল্লাহর নামের জিকির।
দ্বীতীয়: গুনাহওছে মুহাফজত।গুনাহ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা।গুনাহ বা পাপ কাজই হলো আসল দুশমন।গুনাহ থেকে বেচে থাকাই হলো বড় ইবাদত। আল্লাহর নাফরমানি করার নাম গুনাহ।আর নাফরমানি না করার নাম ইবাদত।অতএব গুনাহ তরক করা বা ছাড়াই হচ্ছে আসল কাজ। গুনাহর প্রতি নফরত পয়দা করতে হবে।যদি ভুল ক্রমে গুনাহ হয়ে যায় তাহলে সংগে সংগে তওবা করা। আজকে মানুষের মাঝে গুনার প্রতি লজ্জত থাকার কারণেই বার বার গুনাহ করে।তাই গুনাহর প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করতে হবে। আর তা হয় আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে।
তৃতীয়: আসবাবে গুনাহওছে মুবাইদত। গুনাহর কারণ সমূহ থেকে দূরে সরে থাকা। যে কারণে গুনাহ হয় সেই সমস্ত কারণ সমূহ চিহ্নিত করে তা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখা।সত-সংগে স্বর্গবাস অসৎ-সংগে সর্বনাশ। তাই যেখানে গেলে গুনাহ হবে সেখানে না যাওয়া। যা দেখলে গুনাহ হবে তা না দেখা। এভাবে ভেবে চিন্তে সামনের দিকে পা রাখা।
চতুর্থ: সুন্নাত কি মাওয়াজবত। সুন্নাতের উপর নিয়মিত আমল করা বা পাবন্দী হওয়া।রাসুলের একেকটা সুন্নাত যার কোন তুলনা নেই।এই যে মিসওয়াক আমাদের কজনের সাথে আছে? আল্লাহর রাসুল সাঃ মিসওয়াকের অসংখ্য অগণিত ফায়দা বলেছেন তার মধ্যে গুরুত্বপুর্ণ একটি ফায়দা হলো মিসওয়াককারীর মওতের সময় কালিমা নসীব হয়। সুবহাল্লাহ।উম্মতের উপর কষ্ট না হলে মিসওয়াক করা ওয়াজিব করে দিতেন। আমরা অনেকে দাড়ি রাখি অথচ তা এক মুষ্টি পরিমাণ হয়না।লাভটা হলো কি? থুতনি ও গালের দুনো পাশের মাপ ও এক মুষ্টি হতে হবে।একলক্ষ চব্বিশহাজর আম্বিয়া সকলের দাড়ি ছিলো। একলক্ষ চব্বিশহাজার সাহাবা সকলের দাড়ি ছিলো। দাড়ি ছাড়া কেউ ওলী হতে পারেন না। দাড়ি আমরা মনে করি সুন্নাত। এই সুন্নতের অর্থ হলো তরীকা বা রাসুলের পথ।দাড়ির শরয়ী হুকুম হলো ওয়াজিব। দাড়ি কামানো বা একমুষ্টির কম মানে আল্লাহর রাসুলের কলীজায় হাত দেয়া।
পঞ্চম: আল্লাহ ওয়ালউকি মুসাহিবত। আল্লাহর ওয়ালার সাথী হওয়া।দুনিয়ার কোন দর্শন বা বিদ্যা একথা বলেনা যে বই পড়ে কেউ ড্রাইভিং কিংবা সাতার শিখে নিবে। কোন পাগলেও একথা বিশ্বাস করবেনা। যত বছর ডাক্তারী সে পড়ুক কিন্তু কোন ডাক্তারের পাশে বসে প্রাক্টিকেলি যতক্ষণ না সে দেখেছে কিভাবে ডাক্তারি করতে হয় তথক্ষণ পর্যন্ত সে পুর্ণ ডাক্তার হতে পারবেনা। তাই কিভাবে আমরা ধরে নেই যে এমনি এমনি আমি ওলী আল্লাহ হয়ে যাব? ওয়া কূ-নূ মায়াস সা-দীক্বীন মানে মায়াস সালিহীন। অর্থাৎ সত্যবাদী নেক বান্দাদের অনুসরণ করে তাদের সহবতে থেকে তা অর্জন করতে হয়।ডাক্তার হয় আরেক ডাক্তারের কাছে গিয়ে বিল্ডার হয় আরেক বিল্ডারের কাছে গিয়ে । দুধ ওয়ালার কাছে দুধই মিলে মধু ওয়ালার কাছে মধু। আর আল্লাহ ওয়ালাদের কাছে গিয়ে মিলে আল্লাহর নৈকট্য লাভের পথ।তাই আমাদের জিকিরের অভ্যাস গড়ে তুলা গুনাহ থেকে বাচা গুনাহ থেকে দূর থাকা সুন্নতের ইত্তেবা সহ এই সব গুনাবলী অর্জন করতে হলে আল্লাহর নেক বান্দারদের সাহচর্য্য অবলম্বন করতে হবে।আর এই জিনিসের নামই হলো বাইয়াত। বাইয়াত হচ্ছে সুন্নাত।আমার শাইখ হজরত হাকীম আথতার সাহেব বাইয়াত হয়েছেন হজরত আব্দুল গনী ফুলপুরী সাহেবের কাছে।তিনির ইন্তেকালের পর বাইয়াত হয়েছেন হজরত শাহ আবরারুল হক্ব সাহেবর কাছে। হজরত শাহ আবরারুল হক্ব বাইয়াত হয়েছেন হাকিমুল উম্মাহ হজরত আশরাফ আলী থানভির কাছে। আর তিনি হাজি ইমদাদ উল্লাহ মুহাজিরে মক্কির কাছে। এইভাবে এই সিলসিলা গিয়ে মিলে সাইয়েদুত্তায়েফা হজরত হাসান বসরীর কাছে আর তিনি বাইয়াত হযেছন হজরত আলী কাররামাল্লাহুর ওজহাহুর কাছে আর তিনি বাই’য়াত নিয়েছেন সাইয়েদুল মুরসালীন মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে। অতএব বাইয়াত অহেতুক না ই্হা আমাদের ঈমানী তাকাজা।