রবিবার, ৬ই অক্টোবর, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ রাত ১:৫২
Home / পরামর্শ / কমাশিসার ২১ দফা (৬ নং দফা)

কমাশিসার ২১ দফা (৬ নং দফা)

শতভাগ টিসি ব্যবস্থা চালু করুন। দশমের পর অকৃতকার্য ছাত্রকে উপরের শ্রেণিতে ভর্তি বন্ধ করুন।

খতিব তাজুল ইসলাম ::

tc-1TC  মানে ট্রান্সফার সার্টিফিকেট। এক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে চাইলে পূর্বের প্রতিষ্ঠান থেকে লেখাপড়ার রেকর্ড-সনদপত্র বা ট্রান্সফার সার্টিফিকেট থাকা খুবই জরুরী। আপনি যে প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করেছেন সে প্রতিষ্ঠানের নৈতিক দায়িত্ব আপনাকে ট্রান্সফার সনদ প্রদান করা। এতে ফিস গ্রহণ করে হলেও তা প্রদান করা জরুরী। তাতে দুটো ফায়দা।

১. নতুন প্রতিষ্ঠানে ভর্তিচ্ছুক ছাত্রের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ সহজে জানতে পারবে যে, এই ছাত্রের অবস্থান কোথায়। সত্যিই সে লেখাপড়া করেছে কি-না, আর করলে কতটুকু। তাছাড়া তার নৈতিক-চারিত্রিক, আদর্শিক বিষয়টুকুও সামনে আসবে।

২. টিসি ব্যবস্থা থাকলে কেনো সে প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করছে, করলে যৌক্তিক কোনো কারণ আছে কি-না সে ব্যাপারে অভিভাবক এবং সংশ্লিষ্ট উসতাজগণও তাকে পরামর্শ দিতে সক্ষম হবেন।

বর্তমানে প্রায় কোনো মাদরাসায়ই টিসি ব্যবস্থা নেই; তাই চলছে যাচ্ছেতাই অবস্থা। কিছু মাদরাসায় ছাত্রের আকাল। কর্তৃপক্ষ যেকোনো মূল্যে কিছু ছাত্র জমায়েত দেখাতে চান। উস্তাদগণের চাকুরি, মুহতামিমের খুঁটি টিকিয়ে রাখতে চাই ছাত্র। শোনা যায়, কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান ফুসলিয়ে-ফাসলিয়ে টাকা কালেকশনের মতো জাহান্নামের ডর আর জান্নাতের সু-সংবাদ দিয়ে ছাত্র জড়ো করেন। পড়ার ছাত্র না বখাটে ছাত্র, মেধাবী না গাধা প্রকৃতির ছাত্র কোনো বাছ-বিচার নেই। এসব প্রতিষ্ঠানে আসলে লেখাপড়া মুখ্য নয়; আছে কিছু স্বার্থ রক্ষার ব্যাপার।

স্বেচ্ছাচারিতা যেন একটি আদর্শে পরিণত হয়েছে আজকাল। আগেকার আমলে প্রতিষ্ঠানে থাকতো উস্তাদের কদর এখন সেই জায়গা দখল করেছে ছাত্ররা। কারণ এক উস্তাদ চলে গেলে ১০জন মিলাতে বেগ পেতে হয় না। কচুপাতার পানি যেভাবে বাতাসে একটু নড়লেই পড়ে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের চাকুরির অবস্থাও তেমনি। পাশ-ফেইলের বালাই নেই লিস্টে নাম আর মাঝে মধ্যে বদনি হাজির থাকলেই হলো। এই পরিস্থিতিতে টিসির মত বিষয়ের কথা কে শুনবে? তাক্বওয়া, খোদাভীতি আজকাল যাদুঘরে গিয়ে তালাশ করতে হবে মনে হয়। নতুবা নুন্যতম দ্বীনের মহব্বত, খওফে খোদা থাকলে আজ পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গড়াতো না।

অনেক ছাত্রের মনে এখন এমনও প্রশ্ন জাগছ- দেখলামতো, যারা ১৪-১৫ বছর পড়ে কি করছেন! ২-৩ সিড়ি টপকেও অনেকে এগিয়ে গেছেন। সাতে আর সাতাইশে যখন হিসাব সমান তাই ছাত্রদের এখন টপকানো হলো পছন্দের তালিকায়। তারা ইবতেদাইয়্যাহ পড়ে নিম্নমাধ্যমিক ছেড়ে উচ্চমাধ্যমিকে গিয়ে ভর্তি হয়। কেউ যায় নিম্নমাধ্যমিক পড়ে সোজা ফজিলতে। আর ছানুভিয়া পড়ে ২-৩ ক্লাস টপকানোতো এখন একটা জায়েয-দৃষ্টিনন্দন তরিকায় পরিণত হয়েছে। আসলে ছাত্রদের খারাপ বলে লাভ নেই। তাদের কিছু ঘিলু আছে একথা প্রমাণ করে এই টপকানো। তারা স্বচক্ষে দেখছে না টপকিয়ে কে কি করছেন। টপকিয়েও সমান। তাহলে টপকানো আর সময় বাচানো সমান হলো না?

একজন বহুল পরিচিত মুহাদ্দিসের ঘটনা। বর্ণনা করছেন আরেক মুহাদ্দিস। তিনি আমার সম্মানিত উস্তাদও। তিনি ছিলেন বেফাকের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় নেগরানে আ’লা। সেই বহুল পরিচিত মুহাদ্দিস সাহেবের ছেলেও মুখতাছার জামাতে ফাইনাল পরীক্ষা দিচ্ছেন। পরের বছর আবার নেগরানে আ’লা হয়ে তিনি সেই একই সেন্টারে এসে দেখলেন, ঐ ছেলেটি এবার মিশকাত জামাতের ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, বেটা! ঘটনা কি? গতবার মুখতাসার জামাতের পরীক্ষায় অংশ নিতে দেখলাম; এবার দেখি একবছর টপকে উপরের ক্লাসে? মানে মিশকাত জামাতে। সে উত্তর দিলো, হুজুর ! আমি জানি না, আব্বাকে জিজ্ঞেস করুন!

তিনি ছেলের বাবাকে পেয়ে জিজ্ঞেস করলেন যে, হজরত! এ কি ঘটনা? হজরত মুহাদ্দিস দামাত বারাকাতুহুম জবাব দিলেন যে, জনাব! বেঁচে থাকলে অনেক পড়া হবে এখন তাড়াতাড়ি টাইটেলের দরকার। লন্ডনি মেয়ে একটা পেয়েছি; সেটা ধরতে হবে। নইলে অন্য কেউ শিকার করে নিবে!

এবার ভাবুন! ছেলেকে লন্ডনি মেয়ে বিয়ে করতে হবে, তাই টপকানো দরকার। আমরা কোথায় কোন সমাজে বসবাস করছি? একজন বিখ্যাত মুহাদ্দিসের যদি অবস্থা আর কাণ্ড এই হয় তাহলে অন্যদের কি অবস্থা?tc-2

টাইটেল পাশ নিয়ে এসব আজগুবি তামাশা বন্ধ হওয়া উচিত। সবাইকে টাইটেল পর্যন্ত পড়ালেখা করতে হবে,  আমভাবে এমন দরজা খোলা রাখাই হলো একধরনের বিভ্রান্তি।

তাই আমাদের দাবী হলো, কোনোক্রমেই দশমের পর যারা অকৃতকার্য তাদের উপরের জামাতে ভর্তি হতে দেয়া যাবে না। সংস্কার পরবর্তী সিলেবাস মজবুত, টেকসই, মানানসই হবে। তাই টিসি অনুসরণ করলে খামাখা টপকানো বন্ধ হবে। টাইটেলের মান বাড়বে। ঐক্যের প্রক্রিয়াও তরান্বিত হবে। উম্মাহর মাঝে সমঝোতার মনোভাব সৃষ্টি হবে।

কওমি মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থায় গতি সঞ্চার করা, জ্ঞানের বিস্তৃতি ঘটানো, মেধার বিকাশ, বিচক্ষণ আলেম-ওলামা ও চিন্তাশীল ব্যক্তিত্ব তৈরি করতে হলে টিসির বিকল্প নেই। আর দশমেই অকৃতকার্যদের থামিয়ে দেয়াই হলো বুদ্ধিমানের কাজ।

আরও পড়ুন

১ম দফা : একক কওমি শিক্ষাবোর্ড বাস্তবায়ন করুন।

২য় দফা :  আধুনিক শিক্ষার সমন্বয় সাধিত সিলেবাস প্রণয়ন করুন।

৩য় দফা : ইসলামি শিক্ষা (মাদরাসা শিক্ষা) ও জাগতিক শিক্ষা (স্কুল শিক্ষা)কে দশম শ্রেণির পর আলাদা করুন। ইবতেদাইয়্যাহ ও মুতাওয়াসসিতা তথা প্রাইমারি ও নিম্নমাধ্যমিক বিভাগকে অধিক গুরুত্ব দিন।

৪র্থ দফা : আধুনিক আরবি ভাষাশিক্ষা ব্যবস্থা চালু করুন; বাংলা ইংরেজির গুরুত্ব দিন।

৫ম দফা :মানসিক ও শারীরিক টর্চারমুক্ত সৌহার্দপূর্ণ পাঠদান ব্যবস্থার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ইসলামী তাহযিব-তামাদ্দুনে আগ্রহী করে গড়ে তুলুন।

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...