বিশেষ প্রতিবেদক : দীর্ঘ দিন থেকে দেশের ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলোর কার্যক্রমে স্থবিরতা বিরাজ করছে। বিবধফত-প্রেস বিজ্ঞপ্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে কার্যক্রম। ধর্মীয় ইস্যু ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে যে ইসলামি দলগুলো মাঝে মধ্যেই কর্মসূচি দিত, তাদেরও এখন আর কোনো কর্মসূচি নেই। প্রায় সব দল ও সংগঠনই বলা যায় গৃহবন্দী।
এসব দল ও সংগঠনের নেতারা বলছেন, চাপ-আতঙ্কের কারণেই মাঠের এমনকি ঘরোয়া কর্মসূচিবিমুখ তারা। কোনো কিছু করতে গেলেই অনুমতি নিতে হয়। আর অনুমতি নিতে গেলেই বিপত্তির মুখে পড়তে হচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অনুমতি দেয়া হয় না। পাশাপাশি নানা দিক থেকে হুমকি-ধমকি এবং হয়রানিও শুরু হয়। এমনকি পুরনো মামলায় নাম ঢুকিয়ে দেয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। তবে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, অভ্যন্তরীণ দ্বন্ধ-মতবিরোধও ইসলামি দলগুলোর নিস্কিৃক্রয়তা-গৃহবন্দী হয়ে পড়ার অন্যতম কারণ। বেশির ভাগ দলেই দ্বন্ধ-মতবিরোধ বিরাজ করছে। সৃষ্টি হয়েছে একাধিক ধারা।
দেশের উল্লেখযোগ্য ইসলামি দল-সংগঠনগুলোর মধ্যে মাঠ ও ঘরোয়া কর্মসূচিতে সক্রিয় থাকে, এমন কয়েকটি হচ্ছে দল-সংগঠন হচ্ছে- অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, সম্মিলিত উলামা মাশায়েখ পরিষদ। ২০ দলীয় জোটের অন্যতম প্রধান শরিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নানা বাঁধা-প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও সময় সময় কিছু কর্মসূচি পালন করে থাকে।
মামলা ও গ্রেফতার আতঙ্কে রাজপথের কর্মসূচিতে নেই ইসলামি দলগুলো। বিবৃতি ও প্রেস বিজ্ঞপ্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে তাদের কর্মকা-। ঠিক এ সময় নিজেদের মধ্যে অনৈক্য ও নেতৃত্ব করায়ত্ব করার অভ্যন্তরীণ দলাদলি বেড়েই চলেছে। এ রকম কয়েকটি দলের দায়িত্বশীল নেতাদের দাবি, ইসলামপন্থী দলগুলোর কার্যক্রমের ওপর বিভিন্ন সংস্থার কড়া নজরদারি ও সাংগঠনিক তৎপরতা নিয়ন্ত্রণে বহুমুখী চাপ রয়েছে। এ অবস্থায় মাঠের কার্যক্রম গুটিয়ে তারা এখন অনেকটাই গৃহবন্দি।
সর্বশেষ ঈদুল আজহার আগে রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোয় একই স্থানে কুরবানী করার সরকারি নির্দেশনা এবং বুড়িগঙ্গার তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সময় মসজিদ ভাঙার তালিকা তৈরি কেন্দ্র করে ইসলামি দল ও সংগঠনগুলো কিছু তৎপরতা চালিয়েছিল। এর মধ্যে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরীর একটি অংশ সংবাদ সম্মেলন ও বায়তুল মোকাররম মসজিদে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। এর আগে হজ্ব ও মহানবী সা. সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্যকারী সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর মুক্তির পর বক্তব্য-বিবৃতি ও দু’একটি ঝটিকা বিক্ষোভ মিছিলের মাধ্যমে কয়েকটি সংগঠন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিল। বিদ্যুৎ, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আইন-শৃঙ্খলার অবনতির মতো জরুরি জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সমসাময়িক কালে কোনো কর্মসূচি ছিল না ইসলামি দলগুলোর।
মামলায় বিপর্যস্ত জামায়াত কর্মীরা
ইসলামি দলগুলোর মধ্যে জামায়াতই বেশ শক্তিশালী হলেও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার পাশাপাশি গত কয়েক বছরে নানা ফৌজদারি মামলায় কাবু হয়ে পড়েছে জামায়াত কর্মীরা। এ কারণে এ সংগঠনটিকে আগের মতো আর মাঠ কাঁপিয়ে কর্মসূচি পালন করতে দেখা যাচ্ছে না। এই দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সারা দেশে প্রায় ১৫ হাজার ফৌজদারি মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে। এসব মামলায় অনেকে কারাগারে দিন কাটালেও বাকিরা গা ঢাকা দিয়ে আছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রকাশ্যে দেখাই যায় না। কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরসহ অধিকাংশ জেলায় দলীয় কার্যালয় বন্ধ রাখতে হচ্ছে দলটিকে। এ অবস্থায় গোপনে ও নানা কৌশল অবলম্বন করে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে বলে জানান ঢাকা মহানগর জামায়াতের উচ্চপর্যায়ের একজন নেতা।
ইতোমধ্যে জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় কারাবন্দী ১০ নেতার মধ্যে দু’জনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। কারাগারের বাইরে থেকে এ মুহূর্তে যাঁরা দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে আছেন ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমদ, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি ডা. শফিকুর রহমানসহ ঢাকা মহানগরের নেতারা। গত কয়েক বছরের বিভিন্ন সহিংসতা ও নাশকতার মামলার আসামি হয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন এরা সবাই। জামায়াতের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা দাবি করেন, পরিস্থিতি যত প্রতিকূল হোক, জামায়াত কখনো সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ করে না। পরিস্থিতির আলোকে সতর্কতার সঙ্গে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
অনৈক্য ইসলামী ঐক্যজোটে
মুফতি ফজলুল হক আমিনী রাহ.’র দল ইসলামী ঐক্যজোটের রাজনৈতিক কর্মসূচি নেই কয়েক বছর ধরে। গত রোজায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ রাজনীতিবিদদের সম্মানে ইফতার অনুষ্ঠান এবং সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর গ্রেফতারের দাবিতে দুই শুক্রবার লালবাগে মিছিল করা ছাড়া চলতি বছর ইসলামী ঐক্যজোটের দৃশ্যমান কোনো কর্মসূচি ছিল না। দলটির সহকারী মহাসচিব আহলুল্লাহ ওয়াছেল বলেন, ‘সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে অনেকটা ফোনে ফোনে। জেলার নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগটা রক্ষা করছি।’
ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘আতঙ্কের যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে, এতে মাঠের কর্মসূচিতে যাওয়া যাচ্ছে না। যখনই কর্মসূচিতে যাওয়ার চিন্তা করা হয়, তখনই নানা চাপ আসা শুরু হয়। পুরনো মামলায় জড়ানো হয়।’
দলটির অপর একটি সূত্র জানায়, ইসলামী ঐক্যজোটে সম্প্রতি অনৈক্য দেখা দিয়েছে। মরহুম মুফতি আমিনীর ছেলে আবুল হাসানাত আমিনী ও তাঁর ভগ্নিপতি সাখাওয়াত হোসাইনের সঙ্গে মতবিরোধ চলছে দলের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামী ও মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহর। হাসানাত আমিনী দলের মহাসচিব হতে আগ্রহী। এ বিরোধের পরিপ্রেক্ষিতে গত রমজানে জাতীয় ইসলামী পরিষদ নামে একটি নতুন সংগঠন করেন হাসানাত। সংগঠনটির প্রথম অনুষ্ঠানে পানিসম্পদ মন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির সভাপতিম-লীর সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে প্রধান অতিথি করা হয়। যা ছিল ভিন্ন কিছুর ইঙ্গিতবহ।
দলাদলিতে হয়রান খেলাফত আন্দোলন
মাওলানা মোহাম্মদ উল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর রাহ. প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনে দীর্ঘদিন ধরে অভ্যন্তরীণ বিরোধ চলছিল। হাফেজ্জী হুজুরের বড় ছেলে মাওলানা শাহ আহমদুল্লাহ আশরাফ খেলাফত আন্দোলনের আমীর ছিলেন। বার্ধক্য ও অসুস্থতার কারণে তিনি দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হওয়ায় সম্প্রতি ভোটাভোটিতে তাঁরই ভাই আতাউল্লাহ দলের আমীর নির্বাচিত হন। আর জাফরউল্লাহ খান পুণরায় মহাসচিব হন। যদিও আহমদুল্লাহ আশরাফের বড় ছেলে হাবিবুল্লাহ মিয়াজি মহাসচিব হতে চেয়েছিলেন। মহাসচিব হতে না পেরে তিনি নতুন এ কমিটির বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠান এবং নিজের বাবাকে দলের আমীর বলে দাবি করেন। এসব দলাদলিতে দলীয় কার্যক্রম অনেকটা বন্ধ হয়ে পড়ে। খেলাফত আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব মুজিবুর রহমান হামিদী দাবি করেন, কমিটি নিয়ে সম্প্রতি বিরোধের মীমাংসা হয়েছে। তাঁর দাবি, সাংগঠনিক কাজ চলছে। তবে প্রশাসনের বাঁধা ও হয়রানির কারণে মিছিল-মিটিং করা যাচ্ছে না। ঘরোয়া বৈঠকের কথা শুনলেও পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন এসে উপস্থিত হয়ে যায়।
দলছুট নেতারা আপন গন্তব্যে : নূয়ে পড়েছে সাংগঠনিক শক্তি
শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রাহ.’র মৃত্যুর আগে তাঁর প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে ভেঙে যায়। দলটির অবস্থা এখন অনেকটাই ছন্নছাড়া বলে একাধিক নেতা মন্তব্য করেছেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে দলের অগোচরে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছিলেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের তৎকালীন মহাসচিব হুমায়ুন কবীর। এরপর একারণে তাঁকে দল থেকে বাদ দিয়ে শায়খুল হাদিসের এক ছেলে মাওলানা মাহফুজুুল হককে মহাসচিব করা হয়। এ নিয়ে বিবাদে জড়িয়ে দলটির গুরুত্বপূর্ণ দুই নেতা যারা দলটি ভাঙ্গার নের্তৃত্বে ছিলেন, মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী ও মাওলানা তাফাজ্জুল হক আজিজ জমিয়তে উলামায়ে ইসলামে যোগ দেন। এখন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির সিলেটের প্রিন্সিপ্যাল মাওলানা হাবিবুর রহমান সিলেট অবস্থান করেন। ঢাকার সাথে যোগাযোগ কম থাকায় দলের মহাসচিবসহ মূলধারার নেতাদের সাথে নানা বিষয়ে দূরত্ব বাড়ছে বলে একটি জানাগেলেও পরবর্তীতে দলীয় সুত্রে তা অস্বীকার করা হয়। এ অবস্থায় মাঝেমধ্যে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠানো ছাড়া দলটির সাংগঠনিক কোনো কার্যক্রম নেই। মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী ও মাওলানা তাফাজ্জুল হক আজিজ গংদের দলত্যাগের কারণে এবং দলের অন্যতম কান্ডারী মাওলানা নেযামুদ্দিনের ইন্তেকালে দলটির অবস্থা খুব নাজুক। তারপরও বলা যায় শাইখুল হাদিসের যোগ্য সন্তান মাওলানা মাহফুজুল হক্ব ও মাওলানা মামুনুল হক্বগণ যদি জোরালো ভাবে এগিয়ে আসেন তাহলে এই দলের ভবিষ্যত উজ্জল আছে বলে আমরা ধারনা করতে পারি।
উভয় মজলিস : ঐক্য যখন এতো কাছে, তবু এতো দূরে…
শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রাহ.’র প্রতিষ্ঠিত খেলাফত মজলিস ২০০৫ সাল থেকে দু’ধারায় বিভক্ত। খেলাফত মজলিস (ইসহাক) এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস (হাবিব)। তবে উভয় দলই নিজ নিজ কার্যক্রম তাদের মত করে চালিয়ে যাচ্ছে। বিভক্তির পর বেশ ক’বার ঐক্যের মাধ্যমে সমঝোতার সম্ভাবনা যখনই দেখা দেয়, তখনই কোনো না কোনো কারণে সেটা আর হয়ে ওঠে না। তবে বিভক্ত মজলিসের কারণে তৃণমূলের অনেক নেতা-কর্মী এখনও নিস্ক্রিয়। দল ভাঙ্গার পর থেকে মাঠ পর্যায়ের অনেক নেতা এখন রাজনীতি বিমুখ। সাধারণ মানুষও দলের বিভক্তির কারণে অনেকটা বিরক্ত। এক সময়ের জনপ্রিয় এই দলটি রাজনৈতিক ভাবে দেশে অনেক আশার আলো সঞ্চার করতে সক্ষম হয়েছিলো। এতো কিছুর পরও উভয় মজলিসের মধ্যে শক্তি এবং মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রমের গতিতে কিছুটা এগিয়ে রয়েছে সাবেক মন্ত্রী মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক ও ড. আহমদ আব্দুল কাদেরের নিয়ন্ত্রণাধীন খেলাফত মজলিস। এই দলটি এখন মাঠে ময়দানে খুব একটা সক্রিয় না হলেও নিজেদের সাংগঠনিক কাঠামো মজবুত করতে তৃণমূলে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের ছাত্র সংগঠনটিও গোছালো এবং শক্তিশালী। আবার অপর গ্রুপটি তাদের কার্যক্রম কেবল কওমি মাদরাসা কেন্দ্রিক হওয়ায় সামর্থ্যে কিছুটা হলেও ভাটা পড়েছে।
সর্বপ্রাচীন ইসলামি দল : ভাঙতে ভাঙতে রক্ষা পেল
এদিকে গত ৭ নভেম্বর রাতে ভাঙতে ভাঙতে শেষ পর্যন্ত রক্ষা পেলো ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ। শুক্রবার বিকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে সে বেঠক। বৈঠক থেকে সদ্য সাবেক মহাসচিব, বর্তমান নির্বাহী সভাপতি, মুফতি ওয়াক্কাসসহ তার অনুসারীদের মজলিসে আমেলার (নির্বাহী পরিষদ) বেঠক থেকে বেরিয়ে আসার ঘটনাও ঘটেছিল। নানা নাটকীয়তার পর শেষ সিদ্ধান্ত হয় মহাসচিব মুফতি ওয়াক্কাসকে নির্বাহী সভাপতি ও মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমীকে মহাসচিব করার।
ওই রাতেই জমিয়তের সহ-সভাপতি আবদুর রহীম ইসলামাবাদীর মাধ্যমে মুফতি ওয়াক্কাসের কাছে খবর পাঠানো হয় যে, তাকেই নির্বাহী সভাপতি এবং মাওলানা কাসেমীকে মহাসচিব করা হয়েছে। এই প্রস্তাবে সভাপতি শায়খ আবদুল মোমিনও সায় দিয়েছেন। নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রাপ্ত খবর, যদি সে বৈঠকে মুফতি ওয়াক্কাসকে নির্বাহী সভাপতি না করা হত, তাহলে তাঁর অনুসারীরা পরদিন নতুন একটি জমিয়তের জন্ম দিতেন। সে রকম প্রস্তুতিও তারা নিয়ে রেখেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত রক্ষা পেল দলটি।
ভাঙতে ভাঙতে শেষ পর্যন্ত রক্ষা পেল দেশের সবচে’ প্রাচীন ইসলামি দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ। যদিও বিদেশে ইউরোপে জমিয়ত এখনো তিনটুকরু হয়ে আছে পদের দ্বন্ধে। ইসলামিক আন্দোলনের ইতিহাসে সবচেয়ে কালো যে অধ্যায়টি তা হলো পদের কারণে অনৈক্য। পদ হিংসা লোভ যারা তরক করতে পারেন না তারা কিভাবে উম্মতের কল্যাণ বয়ে নিয়ে আসবেন এই প্রশ্ন বার বার উকি মারে জনমনে।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম সহ কিছু ইসলামিক দল আছে যাদের রাজনীতি শুধু মাত্র কওমি মাদরাসা কেন্দ্রীক। এমনিতে কওমিতে দল আছে ডজনের কাছা কাছি। আর যারা ময়দানের তাদের অন্যতম একটি হলো জমিয়ত। নামই তাদের উলামা কাজ কেমনে হবে জনগণের একটা বৃহত্ত প্রশ্ন। আরো একটি প্রশ্ন আর তা হলো যে দেশের জনগোষ্ঠী সতের কোটি। কওমিতে পড়েন পড়ান মাত্র সর্বোচ্চ পাঁচ শতাংশ। তো তারা পাঁচ শাতাংশের রাজনীতি তাও মাদরাসা কেন্দ্রীক কিভাবে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে নিয়ে পথ দেখাবেন? কোটি কোটি জনগণ স্কুল কলেজ পড়ুয়া তাই তাদের থেকে দুরে রয়ে কোনসে ইসলাম কোথায় তারা কায়েম করতে যাচ্ছেন তা নিয়ে তারা কি আদৌ চিন্তা ভাবনা করে দেখছেন ?
কর্মসূচি নেই ইসলামী আন্দোলনের
চরমোনাইর পীর মাওলানা ফজলুল করীম রাহ.’র প্রতিষ্ঠিত ইসলামী আন্দোলনে প্রকাশ্যে কোন দলাদলি নেই। আবার মাঠে তাদের তেমন কোন কর্মসূচিও দেখা যায় না। কর্মসূচি পালন না করার কারণ জানতে চাইলে ইসলামী আন্দোলন ঢাকা মহানগরীর সভাপতি অধ্যাপক মাওলানা এ টি এম হেমায়েত উদ্দীন বলেন, ‘আগের মতো কর্মসূচি পালন না করার কারণ হচ্ছে, সরকার কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেয় না। অনুমতি না নিয়ে কর্মসূচি পালন করতে গেলে পুলিশ আক্রমণ করে, মামলায় জড়িয়ে নেতাদের গ্রেফতার করে, নানাভাবে হয়রানি করে।’ তিনি বলেন, ‘এই অবস্থায় বক্তব্য বিবৃতি এবং ঘরোয়া অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যতটুকু সম্ভব হচ্ছে বিভিন্ন ইস্যুতে রাজনৈতিক বক্তব্য যাচ্ছে।’
কাগুজে সংগঠনে পরিণত হয়েছে হেফাজত
বছর তিনেক আগে রাতারাতি গড়ে ওঠা কওমি মাদরাসাকেন্দ্রিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক কাঠামো প্রায় ভেঙে গেছে। ২০১২ সালে গঠিত এ সংগঠনটি পরের বছর ৫ মে ঢাকার মতিঝিলে বিশাল সমাবেশ করে দেশ-বিদেশে হইচই ফেলে দিয়েছিল। এখন এটি অনেকটাই কাগুজে সংগঠনে পরিণত হয়েছে। নানামুখী চাপ, বিভক্তি আর হতাশায় সংগঠনটির নেতারা চুপ মেরে গেছেন। মাঝেমধ্যে ধর্মীয় বিষয়ে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেন সংগঠনটির নেতারা। হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মঈনউদ্দিন রুহী দাবি করেন, হেফাজত একেবারে বিনাশ হয়ে গেছে, তা নয়। তবে সরকারি বেসরকারি চাপ, নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা ও সংগঠনের ভেতরে ষড়যন্ত্রের কারণে যতটা দরকার ছিল, ততটা সক্রিয় থাকা সম্ভব হয়নি। আসলে হেফাজতের ভিত্তি ছিলো কলাগাছের মতো। ভিবিন্ন গোষ্ঠী বিভিন্ন স্বার্থ নিয়ে একত্রে জমা হয়েছিলো। সরকার যখন চাপ দিলো তখন তলপি তলপ নিয়ে কেউ লন্ডন কেউ আত্মগোপনে সটকে পড়লো। হেফাজতের আমীর বনেগেলেন কিংকর্তব্য বির্মুঢ়। যারা সমাবেশের দিন পর্যন্ত গদি দখলের স্বপ্ন দেখতো দেখাতো তাদের পলায়নপরতা দেখে জাতি হতবাক। তাই বলা যায় হেফাজত যেন একটা ফার্মের মুরগির মতো যাকে তাড়াতাড়ি বড়া করা হয়েছিলো বুনা করে খেতে!
তথ্যসূত্র: স.বা, বা. ট্রি.