বেশ কিছু দিন থেকে মনের ভিতর বাংলাদেশের সরকার, মিডিয়া এবং সচেতন-বিবেকবান মুসলমানদের প্রতি অনেক আবেগ-অভিমান ঘৃণা জমে আছে; কিন্তু বলতে বা লিখতে সময় এবং সাহস পাচ্ছি না। কারণ আমি নামী-দামী বা কোন ক্ষমতাবান মানুষ নয়; সাধারণ একটা ছেলে।
একটা কথা হল, আমাদের দেশ স্বাধীন হলেও এদেশের মানুষ আজ একধরণের পরাধীন। এ বিষয়ে সংক্ষেপে কিছু লিখব। আমাদের দেশ ৯০% মুসলমানদের দেশ। এদেশের সরকারও মুসলমান। কিন্তু ৯০% মুসলমানদের দেশে আজ মুসলমানরাই সব চেয়ে বেশি লাঞ্ছিত-অপমানিত হচ্ছে। তার চেয়ে বেশি দুঃখের ব্যাপার হল, গত বছর এই ৯০% মুসলমানদের দেশে আখেরি নবী হযরত মুহাম্মাদ সা. (যিনি এই দুনিয়ায় না আসলে আপনে আমি আসমান জমিন এই দুনিয়া কিছুই সৃষ্টি হতো না) কে নিয়ে কিছু নাস্তিক-মুরতাদ শয়তানরা আজেবাজে কথা বলার পরও তাদেরকে গ্রেফতার করতে কয়েক মাস অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু এই দেশের সরকার এবং আমাদের জাতির পিতাকে নিয়ে অল্প কিছু বাজে কথা বলতেই সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। এ ব্যাপারে আমি কি বলব, আপনারা জনগণ আমার চেয়ে ভাল জানেন। কারণ এগুলো শত-হাজারবার নিউজ পেপারে এসেছে। এগুলো বলতেও ভয় হয়। কারণ আজ মুসলমান বেশি কিছু বললেই রাজাকার যুদ্ধাপরাধী! হায়রে দেশ, হায়রে মানুষ, হায়রে বিবেক।
আসল কথা যেটা বলতে চেয়েছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ আমি গত চার বছর যাবত সংযুক্ত আরাব আমিরাতে কর্মরত আছি। এই দেশে প্রতি রমজান মাসে আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে। এ প্রতিযোগিতা প্রায় ৯০টা দেশের হাফেয সাহেবানরা অংশগ্রহণ করে থাকেন। আর সে প্রতিযোগিতায় আমাদের দেশেরও একজন হাফেজ সাহেব আসেন। এই দেশে থাকার সুবাদে আমি অদম প্রতি রমজান মাসে হাফেজ সাহেবদের মধুর কণ্ঠে আল্লাহর মহান কালাম শোনার জন্য যাই। আর যেদিন আমার দেশের ছেলে শুমধুর কণ্ঠে কোরআন তেলাওয়াত করে তখন অন্য দেশের মানুষ বিশেষ করে আরব দেশের মানুষ অবাক হয়ে তাকিয়ে তাকে তাঁর দিকে। সে দিন অন্য মানুষের সাথে আমি নিজেও খুশি এবং আনন্দের স্রোতে ভেসে যাই। কারণ দেশকে ভালোবাসি বলে সে আমার দেশের অহংকার, আমার দেশের গর্ব। সে দেশকে সবার সামনে উজ্জ্বল করে দিয়েছে। আর দেশের সম্মান উজ্জ্বল মানে তো আপনি-আমার সম্মান উজ্জ্বল।
কিন্তু আফসোস, এই সম্মান ক’জনে জানে আর ক’জন দেখে? কারণ দেখানোর অভাব। কিন্তু কেন? আমাদের দেশে কি মিডিয়া নেই। আমাদের সরকার কি এতোই গরীব হয়ে গেছে যে, এত বড় সম্মান উপার্জনের কাজে একটা মিডিয়া দিতে পারে না বা আমার দেশের মিডিয়া কি এতোই গরীব যে তাঁরা এই কাজটা করতে পারে না ? হ্যাঁ বন্ধুগণ, আমার দেশের সরকার বা মিডিয়া যদি গরীবই হয়ে থাকে তাহলে আইপিএল খেলায় এতো মিডিয়া কিভাবে যায়। যেই খেলায় শুধু দুনিয়ার সম্মান এনে দিতে পারে; আখেরাতের নয়। আর আমার দেশের মাদ্রাসার ছাত্র শুধু দুনিয়ার সম্মান নয়; আখেরাতের সম্মান নিয়ে আসতে পারে। যে দেশের জন্য এতো কিছু করেত পারে আমরা কেন তাঁর জন্য কিছুই করতে পারি না। সে মাদ্রাসার ছাত্র বলে নয় তো?
অনেক অমুসলিম দেশের ৫ থেকে ৭ জন করে মিডিয়া ব্যক্তি বা মিডিয়া যেতে পারে তাদের দেশের সম্মান মানুষের সামনে তোলে ধরার জন্য। আর আমরা ৯০% মুসলমান দেশের হয়ে পারি না একটা মিডিয়া আমাদের হাফেজ তাজুল ইসলামের সাথে দিতে। যেই হাফেজ তাজুল ইসলাম ৮৯ টা দেশের হাফেজদের সাথে প্রতিযোগিতা করে সেরা দশ জনদের মধ্য থেকে ৬ নাম্বারে পাস করে দেশের এত সম্মান উজ্জ্বল করলো। কোথায় আজ আমার দেশের সচেতন মানুষ?
আমার দেশের সরকার এবং মিডিয়ার প্রতি একটা অনুরোধ, আগামী বছর যেন আমাদের দেশ থেকে যে হাফিজ সাহেব আসুক না কেন উনার সাথে যেন একজন মিডিয়ার লোক দেওয়া হয় ।
আর একটা কথা আপনাদের কে না বলে পারছি না। ধন্যবাদ জানাই সংযুক্ত আরাব আমিরাতের সরকারকে এতো সুন্দর দেশ গড়ার জন্য। শ্রদ্ধা জানাই এই দেশের আইন কানুনকে। কারণ আমার দেশের কোন একটা জনসভায় একজন প্রভাবশালী এমপি বা মন্ত্রী যদি যায়, সে জনসভায় বিশেষ মানুষ ছাড়া একজন চেয়ারম্যান বা এলাকার একটা মেম্বারও যেতে পারে না। আর কত শত পুলিশ তো আছেই। কিন্তু গত রমজানের এই প্রতিযোগিতায় পুরস্কার বিতরণ করতে সংযুক্ত আরাব আমিরাতের সরকারের ছেলে শেখ হামদান সাহেব উপস্তিত হয়েছিলেন। পুরস্কার বিতরণের হলের ভিতর আমার মত শত শত সেই দেশের কাজের লোক হাজির হতে কোন বাধার সম্মুখীন হতে হয় নি। এমনকি ৫-১০ জন পুলিশ ও দেখলাম না।
আর কিছু লেখে আপনাদের সময় নষ্ট করবো না। আমার লেখার মধ্যে কোন ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
লেখক : মোঃ মাহমুদ আল হাসান, কমাশিসা সংযুক্ত আরাব আমিরাত প্রতিনিধি