বুধবার, ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং
কমাশিসা পরিবারবিজ্ঞাপন কর্নারযোগাযোগ । সময়ঃ সকাল ৭:৫৭
Home / প্রতিদিন / মিথ্যার হুংকারে সত্যের প্রতিঘাত

মিথ্যার হুংকারে সত্যের প্রতিঘাত

ক্যালিগ্রাফিআবু সাঈদ মুহাম্মাদ ‍উমর ::
বাংলাদেশের আইন বিচার ও সংসদ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা মণ্ডলির সদস্য  কালো বিড়াল খ্যাত বাবু চুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন- “মসিজিদ মাদরাসা বন্ধ না করলে দেশে অরাজকতা থামবে না।”
তার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আসুন ইতিহাস থেকে কিছু জানতে চেষ্টা করি। তারপর না হয়, আমাদের কথা মনের কথা বলবো।
দুই: একদিন একাকী বসে আছেন কা’বা প্রাঙ্গনে হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সা.। বিভোর হয়ে আছেন মহান রবের ভাবনায়। কা’বার পাশ দিয়ে কোথাও যাচ্ছিলো আবু জাহাল। সে যখন দেখলো নবী মুহাম্মাদ সা. একা বসে আছেন। অভ্যাস অনোযায়ী সে রাহমাতুল্লিল আ’লামীন সা.-কে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করে ধৈর‌্যচুত্য করতে চেষ্টা করতে লাগলো। কিন্তু সারওয়ারে কায়েনাত সা.-র ধ্যাণে কোনো ব্যগাত ঘটাতে পারলো না। আবু জাহাল যখন দেখলো এসব করে সর্দার নবী সা.-র কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। তাই সে গালমন্দ করতে লাগলো। গালমন্দ শোনে এতিম নবী সা.-র মন ব্যথিত হলো। রাসূল সা. ফিরে গেলেন নিজ বাড়িতে।
আবু জাহালের এই সব অপকির্তি দূর থেকে এক ক্রীতদাসী দেখলো। সেই ক্রীতদাসী মাজলুম নবী সা.-র প্রিয় চাচা হামজার কাছে তার দেখা ও শোনা ঘটনার বিবরণ দিলো। হামজা মক্কার সাহসী বীরদের একজন ছিলেন। হামজা মাত্রই শিকার থেকে বাড়িতে ফিরছিলেন। কিন্তু প্রিয় ভাতিজার প্রতি আবু জাহালের এহেন আচরণের কথা শোনে ক্রোধে জ্বলে উঠলেন। সৎ ও  সাধু সজ্জন ভাতিজা কী এমন করলো, যার কারণে সবাই  তাঁর উপর এমন অত্যাচার করলো! সে কোন খারাপ কাজটা করলো!
হামজা শিকারের ধনুক কাঁধে আবু জাহালকে খুঁজতে লাগলেন। কা’বার পাশে তাকে পেয়ে গেলেন। সমস্ত ক্রোধ এক করে তিনি ধনুক দিয়ে আবু জাহালের মাথায় আঘাত করতে লাগলেন এবং হুঙ্কার দিয়ে বলতে লাগলেন, “হে নরাধম পাষণ্ড! তুই কি আর কখনো আমার ভাতিজার উপর অত্যাচার করবি? শোনে রাখ, আমি এখনি মুহাম্মদের ধর্ম গ্রহণ করবো। দেখি তুই কী করিস।”
অতঃপর হামজা সরাসরী ভাতিজা মুহাম্মাদ সা.-র কাছে চললেন। তাঁর কাছে গিয়ে বললেন, “হে-ভাতিজা! খুশির সংবাদ, আমি আবু জাহালকে শাস্তি দিয়ে এসেছি।” প্রিয় নবী সা. যা বুঝার বুঝে নিলেন, কিন্তু আনন্দ বা কৃতজ্ঞতার কোনো ভাব-ই তিনি প্রকাশ করলেন না। বরং নবী সা. বললেন, “হে-চাচা! এত আমার অনন্দিত হওয়ার কিছুই নেই। যদি আমি শুনতাম আপনি ইসলাম গ্রহণ করেছেন, তবেই আমি আনন্দিত হতাম।”
ভাতিজার এমন কথায় চাচার হৃদয় নাড়া দিলো। তাঁর মনে পড়লো, মুহাম্মদের ধর্ম গ্রহণ করার কথা তিনি আবু জাহালকে বলে এসছেন। হামজা আর দেরী করলেন না, তিনি পড়তে লাগলেন- “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ”। বলার সময় মনে হচ্ছিলো যেনো কথাগুলো তাঁর হৃদয়ের গভীর থেকে বেরিয়ে এলো।তৎকালিন সময়ে হযরত হামজা রা.-র ইসলাম গ্রহণ মক্কার কাফিরদের জন্য বিরাট ধাক্কা ছিলো।
তিন :ফিরাউনের অভিনব জন্ম নিয়ন্ত্রনের ঘোষনা। হযরত মুসা আ.-র জন্ম মৃত্যুদণ্ড ঘোষনার আওতাভূক্ত বছরে। আতঃপর মুসা আ.-র লালন পালন ফিরাউনের ঘরেই। ছুট্ট শিশুর থাপ্পড় খাওয়া। এরপর সময়ের পরিক্রমায় সেই মুসা আ.-র পিছনে ছুটে নীল নদে ডুবে মরণ বরণ।
তাতারিদের প্রতাপ। মুসলিম জনপদ বিরাণ। রক্তের নহর, লাশের বহর। মৃত মানুষ ঠুকে ঠুকে খেতে ক্লান্ত শকুন। ইসলামী বই-পত্রের ছেড়া পাতা আকাশে উড়ছে এমনভাবে যেনো পাখি উড়ার মতো জায়গাও খালি নেই। কিন্তু আজো সেই ইসলাম ও মুসলমান আছে, তাতারীদের নাম ও নিশান কোথাও নেই।
বৃটিশ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী। সর্ব জায়গায়, সর্বাবস্থায় মুসলিমদের অধিকার খর্ব করা হলো। অন্যদিকে হিন্দুরা ঠিকই সকল সুযোগ সুবিধা পেলো। এক সময় চল্লিশ হাজার আলিম উলামকে ফাঁশিতে ঝুলানো হলো।কিন্তু আফসুস, সেই আলিম উলামা মসজিদ মাদরাসা আজো আছে, ইষ্ট ইন্ডিয়া শুধু ইতিহাসের পাতায়।
সোভিয়ত ইউনিয়ন।তৎকালিন বিশ্ব পরাশক্তি। কী করেনি ইসলাম ও মুসলমান ধ্বংসের জন্য। মসজিদকে বানালো শরাবখানা ও মাদরাসাকে বানালো ঘোড়ার আস্তাবল। মুসলিম যুবক ও যুবতীদের নিয়ে চালালো পৈশাচিক উল্লাস।হায়, সোভিয়ত ইউনিয়ন ভেঙ্গে টুকরো টুকরো। ইসলাম ও মুসলমান এখনো আছে, আছে মসজিদ ও মাদরাস। (তৎকালিন সোভিয়ত ইউনিয়নের ইসলাম বিদ্ধেস বর্তমানে আমাদের দেশে কিঞ্চত হলেও পাওয়া যায়)
বর্তমান পরাশক্তি আমেরিকা। কোনো বর্ণণার প্রয়োজন নেই আশাকরি। ইসলাম ধ্বংস করতে গিয়ে আজ নিজেই তলা বিহীন ঝুড়িতে পরিণত হয়েছে। না পারছে কিছু করতে, না পারছে কিছু বলতে, আর না পারছে জ্বালা সইতে।
চার : বাংলাদেশে আধুনিকতা আর মুক্তমনের দুহাই দিয়ে ইসলামের প্রতি বিদ্ধেষমূলক কার‌্যক্রম অনেক আগে থেকেই চলছিলো। তখনো ব্লগ, ফেইসবুক তথা অনলাইনের কোনো নাম গন্ধও সাধারণের ছিলো না, সেই সময় থেকে। ধীরে ধীরে এসব এলো, ইসলাম বিদ্ধেসীরাও একত্রিত হতে লাগলো। বিভিন্ন ব্লগে, ফেইসবুকে তারা তাদের প্রচার চালাতে লাগলো, সেই সাথে তারা আল্লাহ ও নবী সা. এবং তাঁর পরিবার পরিজনের নামে, ক্বুরআন হাদীসের প্রতি কুৎসা রটাতে লাগলো। খারাপ খারাপ কথা লিখতে লাগলো। এভাবেই এক সময় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাওয়ার আড়ালে ইসলাম বিদ্ধেসীরা প্রকাশ্যে তাদের শক্তির জানান দিতে লাগলো। তখন তাদের প্রতিরোধে আল্লামা আহমদ শফী দা.বা.-র নেতৃত্বে হেফজতে ইসলামের ব্যনারে ইসলাম প্রিয় মানুষেরাও একত্রিত হলো। এরপর শাপলার নির্মমতা! কিন্তু পরবর্তি ইতিহাস…
একবার ঠাণ্ডা মাথায় নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে শাপলার সেই নির্মমতার আগের বাংলাদেশ আর পরের বাংলাদেশের কথা ভাবুন। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় কোথায় পরিবর্তন আসেনি যুবক যুবতীদের মধ্যে। সাধারণ মানুষের মাঝে একটু হলেও কি ইসলাম সম্পর্কে জানার ও মানার আগ্রহ বাড়েনি। ইসলাম বিদ্ধেসীদের দম্ভ কি সামান্য হলেও কমেনি। সুস্থ মস্তিষ্কের লোকদের এ পরিবর্তন চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে না। শুধু তারাই দেখবে না, যারা চোখ থাকিতে অন্ধ কারণ তাদের কপাল মন্দ। (হেফজতের আন্দোলন সফল না ব্যর্থ এটা এখানে বিবেচ্য নয় বিষয় নয়।) আর এখন তো চলছে উম্মাহর জাগরণ, অব্স্থাদৃষ্টে মনে হয় বাংলাদেশও এক্ষেত্রে বেশ পিছেয়ে নেই।
পাঁচ : এবার আপনার কাছেই মন্তব্যের ভার ছেড়ে দিলাম। আপনিই বলুন, মিথ্যার হুংকারে দমে যাবেন, না কি আরো সাহসের সহিত ইসলামের কাজ করে যাবেন। ইতিহাস কিন্তু বলে, যেখানে যত কঠিন বাধা এসেছে  সত্য সেখানে তত বেশী শিকড় গেড়েছে।
আমি আশা করি, এমন দৃঢ় বিশ্বাস করি এই সব কুলাঙ্গারদের হুংকারে, অত্যাচারে আমদের জন্য আনন্দের বার্তা বয়ে নিয়ে আসবে। এদেশে কালিমার পতাকা উড্ডিন হবে।কায়েম হবে খালেফতে রাশেদার আদলে সোনালী শাসন। আল্লাহ আমদের দ্বীনের উপর অটল থাকার তাওফিক দিন। তাঁর দ্বীনের জন্য জীবন ও সম্পদ বিলানোর মন-মানসিকতা দান করুন। আমীন।
লেখক : ব্লগার, অনলাইন একটিভিস্ট

About Islam Tajul

mm

এটাও পড়তে পারেন

কওমি মাদরাসা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ

খতিব তাজুল ইসলাম ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তাঃ কওমি অংগন একটি স্বীকৃত ও তৃণমূল প্লাটফর্ম। দেশ ও জাতির ...